মানুষ-গুরু কৃপা হ'লে / জানতে পাবি।"- 'মানুষ-গুরু' কে এবং বাউলসাধনায় তাঁর গুরুত্ব কোথায়? মানুষ-গুরুর কৃপায় কী জানা যাবে?
উত্তর: লালন ফকির রচিত 'লালন শাহ্ ফকিরের গান' পাঠ্যটিতে উল্লিখিত 'মানুষ-গুরু' হলেন বাউলমতে, গুরু বা সাঁই অর্থাৎ যিনি সিদ্ধপুরুষ।
মানুষ-গুরু'র গুরুত্ব: সাধনা ও তথাকথিত ধর্ম শব্দটি একার্থক নয়। সনাতন ধর্ম হিন্দু-ইসলাম-খ্রিস্টান। কিন্তু সাধনা হল সুফি-সহজিয়া-বাউল-ফকির-তন্ত্রসাধনা ইত্যাদি। সাধকরা পরমাত্মার সন্ধানী। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, ঈশ্বরের চেয়ে মানুষই বড়ো। মনে করেন, মানবদেহেই পরমাত্মার বাস। কিন্তু পরমাত্মার অনুভব সাধারণের সাধ্যে নেই। এইজন্যই অন্যান্য সাধক সম্প্রদায়ের মতোই বাউল দর্শনেও প্রাধান্য পেয়েছে গুরুবাদ। এই গুরু মানুষ-গুরু, সিদ্ধপুরুষ, গুরুর নির্দেশমতো সাধন-ভজনই মনের মানুষকে পাওয়ার একমাত্র পথ। গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করলে গুরুই মুক্তির পথ দেখান। লালন তাই অন্য এক গানে বলেছেন
"ভবে মানুষ-গুরু নিষ্ঠা যার সর্বসাধন সিদ্ধ হয় তার।"
যা জানা যাবে: বাউল মতাদর্শ গুরুবাদী। গুরুর কাছে দীক্ষাগ্রহণ ও গুরুর নির্দেশমতো পথে না চললে, সাধন-ভজন না করলে বাউল হওয়া যায় না। গুরুই মুক্তিদাতা। তাঁর নির্দেশিত পথেই বদ্ধজীব মানুষ মুক্তজীবে রূপান্তরিত হয়। গুরু সিদ্ধপুরুষ। তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করেছেন। তাই তিনিই পারেন ব্যাকুল ভক্তকে সঠিক পথে চালনা করে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করাতে।
লালন নিজেও তাঁর গুরু সিরাজ সাঁইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বারবার। গুরুর চরণই বাউলের একমাত্র আশ্রয়। 'মানুষ-গুরু'-র কৃপায় আত্মা মিলিত হয় পরমাত্মার সঙ্গে। গুরুই তার যোগসূত্র। তাই গুরুবাদী বাউলসাধনা গুরুকৃপা প্রার্থনা করে।