মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হব্যি"- সোনার মানুষের বিশেষত্ব বুঝিয়ে দাও। সোনার মানুষ হতে গেলে কী কী বাধা আসতে পারে?
উত্তর: সোনার মানুষের বিশেষত্ব: আলোচ্য অংশটি 'লালন শাহ ফকিরের গান' পাঠ্য গীতিকা থেকে গৃহীত। আলোচ্য গীতিকায় লালন ফকির বলেছেন মানুষ তো পালিত ও বর্ধিত। এইভাবেই সে মানবীয়। সোনার মতোই সে এইভাবেই সে শোভমান ও মানবদীপ্তিতে ভরপুর। সংসারে তার পৌরুষগুণ ছড়িয়ে পড়ে। অথচ সমাজ-সংসার শ্রেণি পছন্দ করে। শ্রেণিবিন্যাসে মানুষের মনুষ্যোচিত গুণ নষ্ট হতে থাকে। এমন আশ্রয়ে মানুষ কেবল বেঁচেবর্তে থাকে। এই বেঁচে থাকাকে তারা ভালোবাসতে শেখে না। মহাকাল তাদের ভিতরে প্রবেশ করে মরণের ঘরে নিয়ে যায়।
কিন্তু যারা বেঁচে থাকাকে ভালোবাসতে চায়, আদর্শকে প্রশ্রয় দেয়-তারা সময়ের ভিতরে ঢুকে গিয়ে বেঁচে থাকা জীবনকালটুকুকে যোগ্য অর্থেই নির্মাণ করে চলে। তারা চিনতে ও জানতে পারে নির্মল জীবনের গৌরবান্বিত অধ্যায়কে। এটাই সোনার মানুষের বিশেষত্ব।
বাধাসমূহ: সোনার মানুষ হতে গেলে কবির পরামর্শ- মানুষ ভজনা করতে হবে, মানুষকে স্বীকার করতে হবে। আর মানুষকে স্বীকার না করলেই তো কঠিন বাধা। মানুষকে ছাড়লে বা উপেক্ষা করলে মানবের মনুষ্যত্বই মিথ্যা হয়ে যায়। মানুষের ভিতরের যে মানুষ-আকার অন্তরাত্মা তার গুণকীর্তন দূর হয়ে গেলে, সোনার মানুষ হওয়ার পথে বাধা আসে। তাই মানুষ ছাড়লে চলবে না।
মানুষকে মানুষ-গুরুর কৃপা পেতে হবে। তিনি আচার্য এবং উপদেশক- তিনি পথ দেখান। সুতরাং, মানুষ-গুরুর কৃপাধন্য না হলে সোনার মানুষ হওয়া যায় না।
তীব্র বাধা অবশ্য ঈশ্বরের নামে সংস্কারের দোসর হয়ে ওঠা। মাথা মুণ্ডণ করে জাতে ওঠা আচারসর্বস্ব আচরণ। তুচ্ছ আনুষ্ঠানিকতা ঈশ্বরলাভে বাধা বইকি! তাই আচার ছেড়ে মানুষ-আকারে মন দিতে হবে। মানবপ্রেমেই মানবজীবনের মুক্তি।