পাঠ্য গীতিকায় মানুষ ভজার কথা কেন উল্লিখিত হয়েছে? মানুষ ছেড়ে দিলে কী হবে?
অথবা, 'মানুষ ভজলে কী কী ঘটবে? মানুষ ছাড়লে কী হতে পারে?
উত্তর: মানুষ ভজনায় যা ঘটবে: লালন ফকির রচিত 'লালন শাহ্ ফকিরের গান' শীর্ষক পাঠ্য গীতিকাটি মানবপ্রেমের বন্দনাগীতি। প্রকৃত ঈশ্বর বিরাজ করেন মানুষের অন্তরে। তাই মানুষকে ভালোবাসার অর্থ ঈশ্বরকে ভালোবাসা। সুতরাং, 'মানুষ ভজলে' সোনার মানুষ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ মানবে পরিণত হওয়া সম্ভব। মানুষের অন্তরে বসবাসকারী ঈশ্বরকে একবার চিনতে পারলে, তাঁর স্পর্শ পেলে তবেই ভক্ত-সাধক 'সোনার মানুষ'-এ পরিণত হবেন। মানুষের মধ্যে প্রস্ফুটিত দ্বি-দল চক্রে অর্থাৎ আজ্ঞাচক্রে মানবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনে সোনার মানুষের স্বর্ণপ্রভা লাভ করা যায়।
মানুষ ছাড়া-র পরিণতি: মানুষের মধ্যেই বিরাজ করেন পরম আরাধ্য মনের মানুষ। অথচ মানুষ আপন ঘরে তাঁর সন্ধান না করে অন্যত্র তাঁকে খুঁজে বেড়ায়। সাধনপথের এই ভ্রান্তিই সমাজে কুসংস্কার, বৈষম্য, ভেদাভেদ, জাতি-ধর্ম-বর্ণের বিচার তৈরি করে। সমাজ e কলুষিত হয়। ফলত, মানবতাবোধের অবক্ষয় ঘটে। কিন্তু ঈশ্বরপ্রাপ্তি অধরাই থেকে যায়।
মানুষ ভজনা তথা মানবপ্রেম ব্যতীত সাধকের উত্তরণের অন্য কোনো পথ নেই। লালন ব্যাকুল সাধককে সতর্ক করেছেন, মানুষের সান্নিধ্য ত্যাগ করলে আপন সত্তা তথা মনুষ্যত্ব হারাবে বাউল। মনের মানুষ ঈশ্বর নিহিত আছেন মানুষেরই মধ্যে, তাই তাঁকে নিজের মধ্যে না খুঁজে অন্যত্র খুঁজতে যাওয়া বৃথা। মানুষ-গুরুর কৃপাদৃষ্টিতেই সিদ্ধিলাভ সম্ভব। মানুষকে অবহেলা করলে বাউল সাধকের সকল সাধনাই শূন্য, নিষ্ফল।