ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি"- 'বরনারি' শব্দের অর্থ কী এবং কাকে 'বরনারী' বলা হয়েছে? তাঁকে 'বরনারি বলার কারণ কী?
উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত পাঠ্য 'ভাব সম্মিলন' কবিতার ভণিতা অংশে ব্যবহৃত 'বরনারি' শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠ রমণী।
যাকে বলা হয়েছে: আলোচ্য পদে শ্রীরাধিকাকে 'বরনারি' বলা হয়েছে। বরনারি বলার কারণ: পাঠ্য ভাব সম্মিলন' পদে শ্রীরাধিকাকে বিদ্যাপতি বরনারি বলে সম্বোধন করেছেন। কারণ শ্রীরাধিকা হলেন শ্রীকৃষ্ণের সখীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কারণ একমাত্র শ্রীরাধিকাই হ্লাদিনী শক্তির অধিকারী। তাই অভিন্ন সত্তা রাধিকা ও শ্রীকৃষ্ণ কখনোই বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়। ২। বৈয়ব সাহিত্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু বা নায়িকা হলেন শ্রীরাধা। তিনি শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তিরূপা অর্থাৎ তিনি সচ্চিদানন্দ কৃষ্ণের আনন্দ আস্বাদনের শক্তিস্বরূপ। রাধা, কৃষ্ণেরই অংশ। রাধার মাধ্যমেই কৃষ্ণ, প্রেমে মগ্ন P হন। তিনি আর রাধা কোনো পৃথক সত্তা নন। কৃষ্ণের আহ্লাদিনী শক্তিকে বলা হয় হ্লাদিনী শক্তি, রাধা কৃষ্ণের আরাধিকা (যিনি স্বয়ং কৃষ্ণ কর্তৃক আরাধিতা)।
শ্রীচৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে বৈয়ব সাহিত্য প্রাক-চৈতন্য ও চৈতন্যযুগে বিভক্ত হয়েছে। প্রাক-চৈতন্যযুগের সাহিত্যে রাধার প্রেম ছিল নই লৌকিক অনুভূতির। কিন্তু উত্তর চৈতন্যযুগের রাধাপ্রেম সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক এবং বৈয়বসাহিত্য অনুসারে ব্রজগোপিনিদের মধ্যে রাধাই সর্বশ্রেষ্ঠ। কৃষ্ণপ্রেমে সকল বাধা অতিক্রম করে শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য তিনি কুল-মান মর্যাদা সর্বস্বত্যাগ করেছেন। বৈয়ব রসশাস্ত্রের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ উজ্জ্বলনীলমণি'-তে বলা হয়েছে, চন্দ্রাবলী ও রাধার মধ্যে শ্রীরাধাই সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠা। রাধার প্রেমই কৃষ্ণের সৌন্দর্য, মাধুর্যকে বিকশিত করেছে।