দেখ না যেমন আলেক লতা- 'আলেক লতা' শব্দবন্ধটির রূপকার্থ বুঝিয়ে দাও। কবি তাঁর সান্নিধ্য চেয়েছেন কেন?
উত্তর: আলেক লতা-র অর্থ: উদ্ধৃত শব্দবন্ধটি লালন শাহ্ রচিত আক্ষরিক অর্থে পরজীবী উদ্ভিদকে বোঝায়, যা বিশালাকার বৃক্ষদেহকে জড়িয়ে জীবনধারণ করে। অন্তর্নিহিত অর্থে, 'আলেক লতা' হল অলখ-নিরঞ্জন, নিরাকার পরমাত্মা- যাঁর স্বরূপ অলৌকিক, অপার্থিব। যিনি জীবাত্মার মাঝে অধিষ্ঠান করেন। মানবদেহকে জড়িয়েই যাঁর প্রাণপ্রতিষ্ঠা। বাউল দর্শনে 'পরমাত্মা'- কে মনের মানুষ, সোনার মানুষ, আলেক সাঁই, অলখ-নিরঞ্জন, অচিন পাখি ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
সান্নিধ্যলাভের আকাঙ্ক্ষা: সত্যসন্ধানী, মরমি কবি, বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের আজীবনের স্বপ্ন ছিল, মানুষের পৃথিবী হবে মানবধর্মের চারণক্ষেত্র। তাই মানুষের মধ্যে তিনি সন্ধান করেছেন অনুভূতিপ্রবণ। চিরআকাঙ্ক্ষিত মানুষকে মনের মন্দিরে লাভ করে অপরিসীম আনন্দ লাভ করেছেন তিনি।
দীর্ঘ বিরহের সময় তাঁর শেষ হয়েছে। তাই তিনি সখীর কাছে কৃষ্ণপ্রেমের অনিবার্যতার কথা ঘোষণা করেছেন। কবি বিদ্যাপতির রাধা চঞ্চল। বিরহ তাঁর কাছে অন্তহীন সত্য নয়। দুঃখকে অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত সুখের নাগাল পেয়েছেন রাধা। ত্যাগের মধ্যে দিয়ে প্রেমের মাধুর্যে তিনি বিশ্বাসী নন, রাধা ভাবলোকে প্রিয়সঙ্গ লাভকরেন চিরন্তন প্রেমসৌন্দর্যে তাঁর আগ্রহ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই বিদ্যাপতির রাধাকে 'সত্বয়', 'লীলাময়ী' আখ্যা দিয়েছেন। লীলাময়ী রাধার অন্তহীন প্রেমতুয়া পাঠ্য 'ভাব সম্মিলন' পদটিকে তাৎপর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।