'ছুটি' গল্পের কাহিনিতে বিশ্বম্ভরবাবুকে যে ভূমিকায় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পে বিশ্বম্ভরবাবু ছিলেন ফটিকের মামা। কাহিনিতে তাঁর সক্রিয়তা খুব বেশি না থাকলেও বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রটি কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে
দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন: পশ্চিমের কাজ থেকে বহুকাল পরে দেশে ফিরে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর 'বিদেশি নৌকা' করে এসেছিলেন ফটিকের মা অর্থাৎ তাঁর বোনকে দেখতে। এই ঘটনায় গল্পের কাহিনি নতুন খাতে প্রবাহিত হয়, কারণ ফটিকের মার কাছে ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনোযোগ ইত্যাদির কথা শুনে তিনি তাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করানোর প্রস্তাব দেন। এই সিদ্ধান্তের জন্য নিজের স্ত্রীর গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। কিন্তু বিশ্বম্ভরবাবুর এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বিধবা বোন ও ভাগিনেয়-র প্রতি তাঁর দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার নিদর্শন।
স্নেহপরায়ণ: পরবর্তীতে বিশ্বম্ভরবাবুর এই স্নেহপরায়ণতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে যখন অসুস্থ ফটিক কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় সেই সময়ে। ফটিককে উদ্ধারের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ যখন ফটিককে উদ্ধার করে আনে তখন বিশ্বম্ভরবাবুকে দেখা যায় প্রায় কোলে করে ফটিককে অন্তঃপুরে নিয়ে যেতে। এই ঘটনাতেও তাঁকে নিজের স্ত্রীর গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয়। ফটিকের অসুস্থতা যখন বেড়ে উঠেছে, তার মায়ের অনুপস্থিতিতে বিশ্বস্তুরবাবুই ফটিকের কাছে বসে তার শীর্ণ তপ্ত হাত নিজের হাতের ওপর তুলে নিয়েছেন। দিন কেটে গিয়েছে, কিন্তু ফটিকের রোগশয্যার পাশে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর বোন আসা পর্যন্ত বসে থেকেছেন।
শেষকথা: সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে উদারতা, স্নেহপরায়ণতা ও সন্তানবাৎসল্যের যে নিদর্শন বিশ্বম্ভরবাবু দেখিয়েছেন তা তার চরিত্রকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।হয় অতিরিক্ত স্নেহকাতরতা। যদিও তা তার কাছে অতি দুর্লভ বস্তু। তার চেহারা এবং ভাব "অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতো হইয়া যায়।" এই সংকটই গভীরভাবে ঘনিয়ে এসেছিল ফটিকের জীবনে। তার মামি তেরো বছরের এই অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলেটির উপস্থিতি একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর স্নেহহীন চোখে ফটিক যেন এক 'দুগ্রহের মতো' উপস্থিত হয়েছিল এবং ফটিক তা নিজেও বুঝতে পারত। স্নেহকাতর ফটিক তাই তার মায়ের জন্য আকুল হয়ে উঠত এবং সম্ভবত এই বিরূপ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই সে 'ছুটি'র সন্ধান করেছিল। এ হল বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত এক কিশোরের নিজেকে আলাদা করে নেওয়ার আকুলতা, মনস্তাত্ত্বিক সংকটে নিজের মতো করে সমাধান খুঁজতে চাওয়া।