বায়ুপ্রবাহ (Wind)
বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়। বায়ুর এই অনুভূমিক সঞ্চালনকে বায়ুপ্রবাহ বলে। বায়ুপ্রবাহের দুটি বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা আবহাওয়া মানচিত্র বিশ্লেষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বায়ুপ্রবাহের দিক ও অপরটি বায়ুর গতিবেগ। প্রদত্ত আবহাওয়া মানচিত্রে বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিবেগ সম্বন্ধে যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হল-
1. বায়ুপ্রবাহের দিক (Wind Direction):
বায়ু যেহেতু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় তাই কোনো অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের দিক নির্ভর করে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের অবস্থানের ওপর। এ ছাড়া কোরিওলিস বল ও কেন্দ্রমুখী বল বায়ুপ্রবাহের দিককে নিয়ন্ত্রিত করে। প্রদত্ত আবহাওয়া মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে বায়ু বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হলেও পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আগত বায়ুই প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুর পরিসংখ্যান (Table: 1.1) ও এর থেকে অঙ্কিত Wind Rose চিত্র (চিত্র: 1.5) থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে, মোট আবহাওয়া কেন্দ্রের 26-67% কেন্দ্রে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ বায়ুপ্রবাহ নেই। সর্বাধিক প্রাধান্য বিস্তারকারী বায়ু পশ্চিম (26.67%) ও দক্ষিণ-পশ্চিম (21-11%) দিক থেকে প্রবাহিত হয়েছে। এদের সম্মিলিত প্রভাব মোট ভূভাগের 47-78% এলাকাকে প্রভাবিত করছে। এ ছাড়া অন্যান্য দিক থেকে প্রবাহিত বায়ুর শতকরা হার বেশ কম। তবুও এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিম (11-11%) দিক থেকে প্রবাহিত বায়ু উল্লেখযোগ্যভাবে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। প্রদত্ত তালিকা ও windrose অনুযায়ী ভারতবর্ষকে বায়ুপ্রবাহের দিক অনুযায়ী নিম্নলিখিত বায়ুপ্রবাহ অঞ্চলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল-
(ক) পশ্চিমি বায়ুপ্রবাহ অঞ্চল (West Wind Zone):
• প্রভাবিত এলাকা: সমগ্র পশ্চিম ভারত জুড়ে বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বলয়টি উত্তরে রাজস্থান থেকে আরম্ভ করে দক্ষিণে কর্ণাটক পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে পড়ছে রাজস্থানের পশ্চিমভাগ, সমগ্র গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্য। এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম অংশ, তেলঙ্গানার দক্ষিণ-পশ্চিম ভাগ ও মধ্যপ্রদেশের দক্ষিণ ভাগের সামান্য অংশ এই বায়ুপ্রবাহ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
• সৃষ্টির কারণ: প্রধানত উত্তর মধ্যপ্রদেশে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ কক্ষের কারণে এই অঞ্চলের বায়ু পশ্চিমমুখী। এই বলয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য বিস্তারকারী বায়ুপ্রবাহ অঞ্চল।
(খ) দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহ অঞ্চল (South-West Wind Zone):
• প্রভাবিত এলাকা: এই বলয়টি ভারতের সমগ্র পূর্ব উপকূল জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। দক্ষিণে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা উপকূল হয়ে পূর্বে দক্ষিণবঙ্গের উপকূল পর্যন্ত এই বলয়টি প্রসারিত। এ ছাড়া তেলঙ্গানার অধিকাংশ এলাকা ও ছত্তিশগড়ের দক্ষিণ ভাগ উক্ত বলয়ের মধ্যে পড়ে।
• সৃষ্টির কারণ: উত্তর মধ্যপ্রদেশে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের আকর্ষণে ও কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ুর এই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহ প্রাধান্য লাভ করছে। প্রাধান্যের দিক থেকে উক্ত বলয়টি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
(গ) উত্তর পশ্চিম বায়ুপ্রবাহ অঞ্চল (North-West Wind Zone):
• প্রভাবিত এলাকা: সমগ্র পাঞ্জাব, লাক্ষাদ্বীপ, হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, রাজস্থানের পূর্বাংশ ও মধ্যপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ জুড়ে এই বলয়টি বিস্তার লাভ করেছে।
• সৃষ্টির কারণ: প্রধানত উত্তর মধ্যপ্রদেশে সৃষ্ট হওয়া নিম্নচাপের কারণে এই বলয়টির সৃষ্টি। প্রাধান্যের দিক থেকে বলয়টি তৃতীয় স্থানাধিকারী।