welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আবহাওয়া মানচিত্র (Weather Map)

আবহাওয়া মানচিত্র (Weather Map)


যে মানচিত্রের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন আবহাওয়াকেন্দ্রে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্যকে নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন ও সংখ্যাগত মানের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়, তাকে আবহাওয়া মানচিত্র বলা হয়। আবহাওয়ার উপাদানগুলি যেহেতু প্রতিনিয়ত বদলে যায় তাই কোনো দেশের আবহাওয়া দপ্তর প্রতিদিন আবহাওয়া মানচিত্র প্রস্তুত করে। তাই একে দৈনিক আবহাওয়া মানচিত্র (Daily Weather Map)-ও বলে। দৈনিক আবহাওয়া মানচিত্রে যে সমস্ত প্রতীক চিহ্নের ব্যবহার করা হয় সেগুলি বিশ্ব আবহাওরা সংস্থা (WMO) কর্তৃক নির্ধারিত। এই অধ্যায়ে ইতিপূর্বেই এই সমস্ত প্রতীকচিহ্ন সম্বন্দ্বে আলোচনা করা হয়েছে।

 দৈনন্দিন আবহাওয়া মানচিত্র পাঠের উদ্দেশ্য (Objective of Daily Weather Report Interpretation)

1. আবহাওয়ার উপাদানগুলি যেহেতু নিয়ত পরিবর্তনশীল, তাই আবহাওয়া মানচিত্র দ্বারা প্রতিদিনের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে রাখা ও সচিত্র উপস্থাপনা করা হয়।

2. প্রতিদিনের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে একনজরে জ্ঞান লাভ করা হয় আবহাওয়া মানচিত্রের সাহায্যে।

3. আবহাওয়া মানচিত্রের সাহায্যে কোনো নির্দিষ্ট দিনের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়ার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।

4. আবহাওয়া মানচিত্র দ্বারা আবহাওয়ার উপাদানগুলি বিশ্লেষণ করে আগামী 24 ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেওয়া হয়।

• দৈনন্দিন আবহাওয়া মানচিত্র বিশ্লেষণ পদ্ধতি (Method of Interpretation of Daily Weather Report)

দৈনন্দিন আবহাওয়া মানচিত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত উপাদানগুলির তথ্য বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা থাকে। সাংকেতিক চিহ্নগুলিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ ও সেইসঙ্গে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে কোনো অঞ্চলের নির্দিষ্ট দিনের ও নির্দিষ্ট সময়ের আবহাওয়া সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায়। তাই আবহাওয়া মানচিত্র অর্থাৎ আবহাওয়ার উপাদানগুলিকে কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় তা নিচে আলোচনা করা হল-

(ক) ভূমিকা: সাধারণত তারিখ, দিন ও সময় এবং দেশের বা অঞ্চলের নাম লেখা হয়।

(খ) বায়ুর চাপ: বায়ুর চাপ সম্বন্দ্বে সামগ্রিক ধারণা অর্থাৎ বায়ুর চাপের পরিমাণ (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন), চাপের পার্থক্য, কোন দিক থেকে বায়ুর চাপ কোন্ দিকে বাড়ছে বা কমছে প্রভৃতি বিষয় জানানো হয়।

1. উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের অবস্থান: (i) কোন অংশে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ ক্ষেত্র গঠিত হয়েছে, (ii) চাপের পরিমাণ কত, (iii) উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কক্ষের আকৃতি ও গঠন, বিস্তার, প্রধান অক্ষ ও গৌণ অক্ষের দৈর্ঘ্য, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি, (iv) উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ প্রভৃতি উল্লেখ করতে হয়, (v) মানচিত্রে বায়ুর চাপের অবস্থান দেখাতে হয়।

2. সমপ্রেষরেখা বিস্তারের প্রবণতা :(i) সমপ্রেষরেখাগুলি আঞ্চলিকভাবে কোন্দিক থেকে কোন্দিকে বিস্তৃত হয়েছে উল্লেখ করতে হয়। (ii) জলভাগ ও স্থলভাগের বিস্তারের তারতম্য উল্লেখ করতে হয়। (iii) প্রবণতা দেখে লুপ, ট্রাফ ও ট্রাফ অক্ষ নির্ণয় এবং এগুলির দৈঘ্য ও ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করতে হয়। (iv) অনুরূপভাবে col, wedge প্রভৃতি মানচিত্রে এঁকে বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ করতে হয়।

3. বায়ুর চাপ চাল: (i) চাপের হ্রাস বা বৃদ্ধির অভিমুখ উল্লেখ করতে হয়। (ii) প্রোফাইল অঙ্কন করে চাপের পরিবর্তন।দেখানো এবং এর হার নির্ণয় করা হয়। (iii) চাপ ঢালের হার অনুযায়ী খাড়া, মৃদু, অতিমৃদু ইত্যাদি চাপ ঢাল অঞ্চল নির্ণয় করে মানচিত্র প্রস্তুত করতে হয়। (iv) বিভিন্ন চাপ ঢাল অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তাদের ভৌগোলিক ব্যাপ্তি, চাপ ঢালের পরিমাণ ইত্যাদি সম্বন্দ্বে আলোচনা করতে হয়। (২) বিশেষ প্রয়োজন হলে একাধিক প্রোফাইল এঁকে চাপ ঢালের প্রকৃতি উল্লেখ করতে হয়।

৩) বায়ুপ্রবাহ: বায়ুপ্রবাহের দিক ও বায়ুর গতিবেগ সম্বন্দে সাধারণ পরিচয় দেওয়া অর্থাৎ প্রধান বায়ুপ্রবাহের দিক উল্লেখ করা, সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন গতিবেগ উল্লেখ করা প্রয়োজন।

1.বায়ুপ্রবাহের দিক: (i) বায়ুপ্রবাহের দিকের পরিসংখ্যা অনুযায়ী 'উইন্ডরোজ' আঁকা। (ii) উইন্ডরোজ দেখে উপমহাদেশকে প্রধান বায়ুপ্রবাহ অঞ্চলে ভাগ করে মানচিত্র প্রস্তুত করা। (iii) প্রধান প্রধান বায়ুপ্রবাহ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান ও চাপের পার্থক্যের সঙ্গ্যে প্রবাহ অভিমুখের কার্যকারণ সম্পর্ক উল্লেখ করা প্রয়োজন।

2. বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ: (i) বিভিন্ন গতিবেগসম্পন্ন বায়ুর ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী আয়তলেখ (Histogram) আঁকা।(ii) আয়তলেখ অনুযায়ী উপমহাদেশকে বিভিন্ন গতিবেগ (শান্ত, হালকা, তেজি বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি) অঞ্চলে ভাগ করে মানচিত্র প্রস্তুত করা। (iii) কার্যকারণ সম্পর্ক উল্লেখপূর্বক বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা। (iv) নিম্নচাপ (Dipression-D), গভীর নিম্নচাপ (Deep Dipression-D.D), ঘূর্ণিঝড় (Cyclonic Storm-CS) প্রবল ঘূর্ণিঝড় (Severe Cyclonic Storm-SCS) ইত্যাদি আবহাওয়া সংক্রান্ত বিশেষ ঘটনা মানচিত্রে থাকলে সেগুলি সম্বন্দ্বে পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সেগুলির অবস্থান, বিস্তার, আকৃতি, গঠন, উৎপত্তির কারণ, ভ্রমণের দিক, তীব্রতা ইত্যাদি সম্বন্ধে লিখতে হয় ও প্রোফাইল এঁকে দেখাতে হয়। (খ) বায়ুর চাপ ঢালের সঙ্গেঙ্গ বায়ুপ্রবাহের গতিবেগের সম্পর্ক একটি ট্রানজেক্ট চার্টে এঁকে সেই সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করতে হয়।

(3) মেঘাচ্ছন্নতা: (i) মেঘের সাধারণ বণ্টন সম্বন্ধে বলা। (ii) মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণে ফ্রিকোয়েন্সি নির্ণয় ও আয়তলেখ আঁকা। (iii) Isonep মানচিত্র আঁকা অর্থাৎ সম্পূর্ণ মেঘাবৃত, আংশিক মেঘাবৃত, মেঘহীন ইত্যাদি অঞ্চলে ভাগ করা।(iv) মেঘ সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করে মেঘের আঞ্চলিক বন্টন সম্বন্ধে আলোচনা করা প্রয়োজন।

(4) বৃষ্টিপাত: (i) বৃষ্টিপাতের বণ্টন সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা। (ii) সমবর্ষণরেখার সাহায্যে ভারী বর্ষণযুক্ত অঞ্চল, হালকা বর্ষণযুক্ত অঞ্চল, বৃষ্টিহীন ইত্যাদি অঞ্চলে ভাগ করে মানচিত্র প্রস্তুত করা। (iii) প্রতিটি অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের কারণ ও বণ্টনের ব্যাখ্যার প্রয়োজন।

(5) সমূদ্রের অবস্থা: (i) সাংকেতিক অক্ষর বা চিহ্ন দেখে সমুদ্রের বিভিন্ন অংশের প্রকৃতি উল্লেখ করা এবং বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা প্রয়োজন। (ii) মানচিত্র এঁকে সাংকেতিক চিহ্নগুলিকে সমুদ্রের ওপর যথাযথ স্থানে বসাতে হয়।

(6) অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা: (i) কুয়াশা, ধোঁয়াশা, তুহিন, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি, বজ্র, ঝড়, বিদ্যুৎঝলক ইত্যাদি ঘটনাগুলি কোন্ স্থানে ঘটেছে তার কারণ উল্লেখ করে, মানচিত্রে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে দেখাতে হয়।

(7) ট্রানজেক্ট চার্ট অঙ্কন: (i) বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাতের মধ্যে সম্পর্ক দেখানের জন্য উপযুক্ত স্বান নির্বাচন করে ট্রানজেক্ট চার্ট প্রস্তুত করা প্রয়োজন। (ii) এই চারটি উপাদানের মধ্যে যে সম্পর্ক বর্তমান তা বিশ্লেষণ করতে হয়।

(8) আবহাওয়ার পূর্বাভাস: স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার বিচ্যুতি দেখে পরবর্তী 24 বা 48 ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে হয়। এক্ষেত্রে দিন-রাতে তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি, মেঘাচ্ছন্নতা, আঞ্চলিক বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ, সমুদ্রের অবস্থা ইত্যাদি সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিতে হয়।

ভারতে দৈনন্দিন আবহাওয়া মানচিত্র প্রস্তুতি (Preparation of Daily Weather report in India) ভারতের দৈনিক আবহাওয়া মানচিত্র প্রস্তুতের দায়িত্ব রয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (Indian Meteorological Departeme বা IMD)। IMD 1875 সালে কলকাতায় প্রথম স্থাপিত হয়। পরে এর প্রধান কার্যালয়টি 1905 সালে সিমলায় এবং 1928 সালে পুনেতে স্থানান্তরিত হয়। তবে 1944 সালে প্রধান কার্যালয়টি নতুন দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে এর নাম হল মৌসম ভবন। সারা ভারত জুড়ে IMD-র 6টি আঞ্চলিক দপ্তর ও 559 টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। এগুলির মধ্যে 125টি কেন্দ্র স্বয়ংক্রিয় (Automated)। এই কেন্দ্রগুলি প্রতিদিন ভারতীয় প্রমাণ সময় (Indian Standard Time বা IST) অনুযায়ী সকাল ৪:30-এ আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। এই সংগৃহীত তথ্য থেকে দৈনন্দিন আবহাওয়া মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় যা পুনের আবহাওয়া দপ্তর (IMD, Pune) থেকে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে ভারতে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার করা হয়।

• ভারতে আবহাওয়ার ঋতুগত বৈশিষ্ট্য (Seasonal Characteristics of Indian Weather) ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMI)) মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের ভিত্তিতে চারটি ঋতু চিহ্নিত করেছে। এগলি হল-

1. গ্রীষ্মঋতু বা প্রাক্-মৌসুমি ঋতু (Summar or Pre-monsoon season)

2. বর্ষাকাল বা মৌসুমি ঋতু (Rainy or Monsoon Season)

3. শরৎকাল বা প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি ঋতু (Autumn or Retreating Monsoon Season)

4. শীতকাল (Winter Season)

নিচে এই চার ধরনের ঋতুর স্থায়িত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আলোচনা করা হল-

1. গ্রীষ্মঋতু বা প্রাক-মৌসুমি ঋতু (Summer or Pre-monsoon Season)

• স্থায়িত্ব প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রাক-মৌসুমি ঋতু স্থায়ী হয়।

• বায়ুর চাপ স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপ কক্ষের অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। নিম্নচাপ ছোটো ছোটো কক্ষে ভারতবর্ষের মালভূমি অঞ্চলে কিংবা রাজস্থানের পশ্চিমে অবস্থান করে। গ্রীষ্মের শেষভাগে এই চাপকক্ষগুলি পশ্চিম ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সরে গিয়ে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রীষ্মের প্রথম ভাগে বায়ুর চাপের পার্থক্য 10-12 মিলিবার পর্যন্ত হয়। কিন্তু গ্রীষ্মের শেষার্ধে তা বাড়তে থাকে। সমপ্রেষরেখাগুলি মাঝারি দূরত্বের ব্যবধানে বিন্যস্ত হয় বলে বায়ুর চাপ ঢালও মাঝারি প্রকৃতির হয়।

• বায়ুর প্রবাহ অধিকাংশ বায়ু দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। বায়ুর গতিবেগ মাঝারি থেকে তীব্র হয়। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে ধুলিঝড় এবং অসম ও গাঙ্গোয় সমভূমি অঞ্চলে কালবৈশাখীর আবির্ভাব ঘটে।

• মেঘাচ্ছন্নতা পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল, অসম উপত্যকা ও নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এছাড়া ভারতবর্ষের অন্যত্র আকাশ পরিষ্কার থাকে। স্থানীয়ভাবে কোনো কোনো অংশে আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকে।

• অধঃক্ষেপণ: অসম উপত্যকা ও নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে। পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। এই ঋতুর শেষভাগে অর্থাৎ প্রাক্-মৌসুমি পর্যায়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে অথবা ছোটোনাগপুর মালভূমির ওপর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

2. বর্ষাকাল বা মৌসুমি ঋতু (Rainy or Monsoon Season)

• স্থায়িত্ব: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ুর আগমন দ্বারা বর্ষাকালের সূচনা হয়। এই ঋতু জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বায়ুর চাপ স্থলভাগে নিম্নচাপ ও জলভাগে উচ্চচাপ অবস্থান করে। নিম্নচাপ কক্ষ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়। চাপের পরিমাণ ক্রমশ দক্ষিণে জলভাগের দিকে বাড়তে থাকে। চাপের পার্থক্য প্রায় 14 থেকে 20 মিলিবার পর্যন্ত হয়ে থাকে। উত্তর ভারতে সমভূমির ওপর ট্রাফের অবস্থান লক্ষ করা যায়। চাপ ঢাল বেশি হয়।

• বায়ুর প্রবাহ ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ স্থানে বায়ু পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়। বায়ুর গতিবেগ মাঝারি থেকে তীব্র থাকে। কখনো কখনো মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের অগ্রগতি বা উপস্থিতি NLM (northern limit of monsoon) রেখা দ্বারা সূচিত করা হয়।

• মেঘাচ্ছন্নতা পুরোপুরি বর্ষার সময়ে ভারতবর্ষের সমগ্র আকাশ মেঘাছন্ন থাকে। বর্ষার প্রারম্ভে মৌসুমি বায়ু যে অঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হয়, সেই পর্যন্ত আঞ্চলিকভাবে আকাশ মেঘে পূর্ণ থাকে।

• অধ্যক্ষেপণ বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বণ্টন লক্ষ করা যায়।

3. শরৎকাল রা প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি ঋতু (Autumn or Retreating Monsoon Season):

স্বায়িত্ব দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হতে শুরু হলেই মৌসুমি বায়ু পিছু হটতে থাকে। ফলে শরৎকালের সূচনা হয়। এর স্থায়িত্ব অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

• বায়ুর চাপ এই ঋতুতে বায়ুর চাপের ক্রমান্বয়ে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে না কিংবা নির্দিষ্ট কোনো অবস্থানে উচ্চচাপ বা নিম্নচাপ অবস্থান করে না। বর্ষার পরে স্থলভাগে নিম্নচাপ ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং উচ্চচাপ ক্রমশ তার স্থান দখল করতে থাকে। ফলে অনেক ছোটো ছোটো নিম্নচাপ কক্ষ গঠিত হয় ও সেই সঙ্গে দু-একটি উচ্চচাপ কক্ষও গঠিত হয়। এই সময় স্থলভাবে নিম্নচাপ কক্ষের মাঝে মাঝে উচ্চচাপ কক্ষ দেখা যায়। নিম্নচাপ কক্ষগুলি ছোটো হতে থাকে ও উচ্চচাপ কক্ষগুলি ক্রমশ বড়ো হতে থাকে। ভারত উপমহাদেশের একেকবারে উত্তর-পশ্চিমে উচ্চচাপ কক্ষগুলি গাঙ্গোয় উপত্যকা, দাক্ষিণাত্য মালভূমি, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে ছড়িয়েছিটিয়ে অবস্থান করে। উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম থাকে।

• বায়ুর প্রবাহ উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কক্ষগুলি এলোমেলোভাবে অবস্থান করায় অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু উপকূল ছাড়া বায়ু সর্বত্র এলোমেলোভাবে প্রবাহিত হয়, বায়ুপ্রবাহের নির্দিষ্ট কোনো দিক থাকে না। অন্ধ্র ও তামিলনাড়ু উপকূলে বাতাস উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়।

• মেঘাচ্ছন্নতা পূর্ব উপকূল ও সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল ছাড়া আকাশ সর্বত্র মেঘহীন থাকে। উক্ত দুটি অঞ্চলে সব ধরনের মেঘে ঢাকা আকাশ (1/3 থেকে সম্পূর্ণ মেঘাবৃত) লক্ষ করা যায়।

• অধ্যক্ষেপণ গালোয় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার এবং পূর্ব উপকূলের কোনো কোনো স্থানে খুব সামান্য পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়।

4. শীতকাল (Winter Season)

• স্থায়িত্ব উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু সারা ভারতবর্ষ দখল করে শীতকালের সূচনা হয়। এর স্থায়িত্ব ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

• বায়ুর চাপ: স্থলভাগে উচ্চচাপ ও জলভাগে নিম্নচাপ কক্ষের অবস্থান লক্ষ করা যায়। ভারত উপমহাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে উচ্চচাপ কক্ষ অবস্থান করে। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের দক্ষিণে ও ভারত মহাসাগরের ওপর নিম্নচাপ কক্ষের অবস্থান লক্ষ করা যায়। শীতকালে বায়ুর চাপের পার্থক্য (উচ্চচাপ নিম্নচাপ) সাধারণত 6 থেকে ৪ মিলিবার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সমপ্রেষরেখাগুলি বেশি দূরে দূরে অবস্থান করে এবং চাপ ঢাল মৃদু হয়।

• বায়ুর প্রবাহ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বায়ু উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। অবশ্য অধিকাংশ সময়ে বায়ুপ্রবাহ থাকে না বললেই চলে। তবে, কোনো কোনো স্থানে বাতাস অতি মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01