welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নগরীয় এলাকা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন(Urban area, Planning and development)

নগরীয় এলাকা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন(Urban area, Planning and development)

বিভিন্ন নগরীর এলাকার সাধারণ পরিচর (General identity of different Urban area):

আধুনিক সভ্যতার মেরুদণ্ডরূপে শহর বা নগরকেন্দ্রিক পরিসরগুলিতে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনাকে ঘিরে উন্নয়নের অনুক্রমিক ধারাবাহিকতা অনিবার্যভাবেই পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল প্রায় প্রতিটি দেশে মানুষের উৎকৃষ্ট জীবনমান রক্ষা, সর্বোচ্চ পরিসেবা প্রদান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পৌরক্ষেত্রগুলি পরিপূর্ণ অবদান রেখে থাকে। বিশেষ করে, একটি শহর বা নগরের পরিপূর্ণ অবকাঠামো, উচ্চমানের ভোগ্যপণ্য, সর্বোচ্চ সহায় সম্পদের যোগান, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রভৃতি সুষম উন্নয়নকে সর্বদা কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতায় নিয়ে যায়। এখানে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ শহর তথা নগর পরিকল্পনার প্রকৃতি, পর্যায়, কাঠামোগত নকশা এবং নগর প্রকৌশলী বিভিন্ন স্থানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উন্নয়ন সাপেক্ষে উপস্থাপন করা হল।

সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বের যাবতীয় পৌরক্ষেত্রগুলিকে আমরা শহর (Town), নগর

(City), নগরাঞ্চল (City region) প্রভৃতি বিভিন্ন

নামে জেনে এসেছি। উল্লেখ্য এই শব্দগুলি প্রায় সমার্থক বা কাছাকাছি হলেও, ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্য এদের মধ্যে পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যেমন-

1. শহুরে গ্রাম (Urban village): সাধারণত ঐতিহ্যবাহী কোনও গ্রামীণ বিভিন্ন ব্যাবসাকেন্দ্রিক এলাকা, যেখানে পৌর গুণসম্পন্ন সামান্য কিছু পরিসেবা লক্ষ্য করা যায়, তাকে শহুরে গ্রাম বলা হয়। এই ধরনের মিশ্র শহুরে গ্রামগুলি স্বল্প ঘন, পরিবেশবান্ধব এবং আশেপাশের গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে বিশেষভাবে সক্ষম। যেমন-

পূর্ব লন্ডনের "Brick lane" এলাকা।

2. প্রাক-পর্যায়ের পৌর এলাকা (Infantile Municipality or Eopolis): গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার ভাঙনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা শহুরে বসতির গুরুত্বপূর্ণ আদি ক্ষেত্রটি হল প্রাকৃত্পর্যায়ের পৌর জনপদ বা ইয়োপলিস (Eeopolis)। এই পর্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সীমিত যোগাযোগ এবং সামান্য পরিসেবাযুক্ত নগরসমাজ গড়ে ওঠে।

3. শহর (Town): শহর শব্দটি জার্মান শব্দ "Zaun" অথবা ডাচ শব্দ "tuin", নয়তো বা প্রোটো জার্মান শব্দ "tunan" থেকে উদ্ভূত। অনুমান করা হয়, প্রাচীন ইউরোপের নরম্যান জাতিগোষ্ঠীর মানুষের দ্বারা এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক সীমানা বিশিষ্ট ক্ষুদ্র বা মাঝারি আয়তনবিশিষ্ট স্বল্প জনবহুল পৌরক্ষেত্র শহর নামে পরিচিত।

4. নগর (City): 'City' শব্দটি ল্যাতিন শব্দ "Civitas" থেকে উদ্ভূত যা সভ্যতা বা 'civilization' ধারণার পরিপূরক। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে শহর এবং নগরের ধারণা ছিল যথেষ্ট অস্পষ্ট। তাই, এদের কাছে শহর বা নগর উভয়ই ছিল উন্নত পরিসেবা প্রদানকারী একটি বিশেষ এলাকা। মধ্যযুগীয় সমাজে শহর বলতে সাধারণত কোনও গোষ্ঠীবদ্ধ পরিবার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং নগর বলতে সমষ্টিগত সম্প্রদায় অথবা জনসমাবেশের একটি বিশেষ উৎকর্ষ স্থলকে ইঙ্গিত করা হত।

এপ্রসঙ্গে, RB বলেছেন, "Waen a town has reached the stage of 1,00,000

population, it is known as city বস্তুত, কোনো একটি স্থানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মিথোস্ক্রিয়া এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি একটি শহরকে ক্রমেই জনবহুল নগরে উপনীত করে। যথেষ্ট প্রসারিত এই নগরীয় পরিসরে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায় (প্রায় 1 লক্ষ বা তারও বেশি)।

1973 খ্রিস্টাব্দে Brutzkus নগরের আরও কয়েকটি বিশেষত্ব তুলে ধরেন। এগুলি হল- (১) নগরে শিল্পকারখানার সর্বাধিক সমাগম ঘটবে। (b) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমরূপে রেলপথ, নদীপথ ও বিমানবন্দর প্রভৃতি প্রাধান্য পাবে। (c) কারিগরী সেবার উন্মুক্ত সুযোগসুবিধা থাকবে। (এ) প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র এবং সরকারি দপ্তরের অবস্থান লক্ষণীয়। (৫) উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী এবং নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন পণ্যের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ থাকবে। (৫) নগরগুলি বিদেশি বিনিয়োগকে সর্বদা আকর্ষণ করবে। (৫) জনসংখ্যার নিরিখে নগরগুলির আয়তন ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হবে। যেমন-

(i) ছোটো নগর (Small city): 1 লক্ষ থেকে 2 লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট (যেমন- ব্যারাকপুর)

(ii) মাঝারি নগর (Medium city): 2 লক্ষ থেকে 3 লক্ষ জন সংখ্যাবিশিষ্ট (যেমন-কামারহাটি),

(iii) বড়ো নগর-(Large city): 3-4 লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট (যেমন- ভাটপাড়া)।

 নগর এলাকা (Urban area): বিশ্বের প্রতিটি শহর বা নগর সর্বদা একটি নির্দিষ্ট একক এলাকায় সমৃদ্ধি লাভ করে। সেই কারণে একটি শহর বা নগরের বিকাশ সংক্রান্ত ধারনায় তার পার্শ্ববর্তী আঞ্চলিক বা পরিসর একত্রে নগর এলাকারূপে জনপ্রিয়তা পায়।

নগর এলাকা সম্পর্কে R.E.Dickinson বলেছেন-"a functional economic space consisting of a core city and its surrounding geographical catchment area for labor and services, comprising smaller cities and towns" অর্থাৎ এটি একটি কার্যকরী অর্থনৈতিক স্থান, যা মূল শহর এবং তার আশেপাশের ভৌগোলিক ধারণ এলাকা সমেত শ্রম ও পরিসেবার জন্য, ছোটো শহর এবং নগরগুলির অংশ নিয়ে গঠিত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 1905 খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত পরিকল্পনাবিদ Pattric Geddes সর্বপ্রথম গ্লাসগো নগর এলাকার বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত আলোকপাত করেছিলেন। 1914 খ্রিস্টাব্দে।

বিখ্যাত ফরাসী ভৌগোলিক Andre Allix নগর এলাকা বা নগরাঞ্চল প্রসঙ্গেঙ্গ "Umland" শব্দটিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রয়োগ ঘটান। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পরিকল্পনাবিদ Northam নগরাঞ্চল বোঝাতে "Sphere of Influence" -ধারণাটিকে সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, কোনও একটি শহরের প্রধান কেন্দ্রটি সমৃদ্ধির "Focus" হলেও, সেখান থেকে যত প্রান্তিক অঞ্চলগুলির দিকে যাওয়া যায়, কেন্দ্রীয় শহরের প্রভাব ততই ক্রমশ কমতে থাকে। 1930 খ্রিস্টাব্দে জার্মান ভৌগোলিক Walter Christaller তাঁর "central place theory" টিতে নগরাঞ্চলের ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গটিকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করেছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01