welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নাতিশীতোয় তৃণভূমি জলবায়ু (Temperate Grassland Climate)

নাতিশীতোয় তৃণভূমি জলবায়ু (Temperate Grassland Climate)


নাতিশীতোয় তৃণভূমি জলবায়ু মধ্য-অক্ষাংশের মরু জলবায়ু ও আর্দ্র জলবায়ুর অন্তর্বর্তী বলয়ে দেখা যায়। নাতিশীতোয় মন্ডলের মহাদেশগুলির অভ্যন্তরভাগ এই জলবায়ুর অন্তর্গত। মহাদেশীয় অবস্থানের জন্য সামুদ্রিক প্রভাব থেকে এই অঞ্চল বঞ্চিত। চরম মহাদেশীয় অবস্থা জলবায়ুগত পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই জলবায়ু স্ত্রেপ জলবায়ু বা মধ্য অক্ষ্যংশীয় মহাদেশীয় জলবায়ু নামেও পরিচিত।

• ভৌগলিক অবস্থান (Geographical Location)

• অক্ষাংশগত অরাধান এই জলবায়ুর অক্ষাংশগত বিস্তার সব মহাদেশে সমান নয়। এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় এই জলবায়ু 35° 55° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব ইউরোপে এটি 40°-60° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিন গোলার্ধে স্তেপ জলবায়ু 35°-50° দক্ষিণ অক্ষাংশে দেখা যায়।

1. ইউরেশিয়া: পশ্চিমে ইউরোপের ইউক্রেন সমভূমির অন্তর্গত কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী অংশ থেকে বৃহৎ রাশিয়ার সমভূমি অতিক্রম করে পূর্ব এশিয়ার আলতাই পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত মঙ্গোলিয়ার উচ্চভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব-পশ্চিমে এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় 3,200 কিমি।

2. উত্তর আমেরিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পশ্চিমে রকি পর্বতের পাদদেশ থেকে পূর্বে নাতিশীতোয় পর্ণমোচী অরণ্যের সীমানা পর্যন্ত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে এর বিস্তার কানাডার দক্ষিণ অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা থেকে টেকসাস পর্যন্ত।

3. দক্ষিণ আমেরিকা: আর্জেন্টিনার অন্তর্গত আন্দিজ পর্বতের পূর্ব ঢালের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত

4. আফ্রিকা: দক্ষিণ আফ্রিকার ডাকেন্সবার্গ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত।

5. ওসিয়ানিয়া: অস্ট্রেলিয়ার মারে-ডার্লিং অববাহিকা ও নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ-দ্বীপের ক্যান্টারবেরি সমভূমি।

6. এশিয়া: কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তানে অবস্থিত মাঞ্চুরিয়া সমভূমি।

• জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of the Climate):

1. উন্নতা-সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:


i. মহাদেশের অভ্যন্তরভাগে অর্থাৎ, সামুদ্রিক প্রভাব থেকে অনেক দূরে অবস্থানের জন্য এই জলবায়ু অঞ্চলে শীত খুব তীব্র এবং গ্রীষ্মকাল তুলনামূলকভাবে বেশ উন্ন

(ii) শীত ও গ্রীষ্মের চরম অবস্থার জন্য উন্নতার বার্ষিক প্রসর অনেক বেশি। এর পরিমাণ সাধারণত 30°-40° সেঃ।

(iii) শীতকালে বরফের আবরণের জন্য বাতাসের তাপমাত্রা কমে যায়। জানুয়ারি মাসের গড় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের 15°-20° সেঃ নিচে থাকে।

(iv) উত্তর আমেরিকায় গ্রীষ্মকালে উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উদ্ভবায়ু আসে বলে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক রকমের বেশি হয়।

(v) অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপ ও সংলগ্ন মধ্য অক্ষাংশীয় এশিয়া সামুদ্রিক অবস্থান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় এসব অঞ্চলের গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি থাকে। এই জলবায়ু অঞ্চলে (উত্তর গোলার্ধে) জুন মাসের গড় তাপমাত্রা 18°-26° সেঃ-এর মধ্যে থাকে।

(vi) দক্ষিণ গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ম মন্ডলে সীমিত স্থলভাগ থাকার জন্য নাতিশীতোয় তৃণভূমিতে জলবায়ুর ঋতুকালীন চরমভাব লক্ষ করা যায় না।

(vii) দৈনন্দিন উয়তার প্রসর যথেষ্ট বেশি থাকে

2. বায়ুপ্রবাহসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য:

(i) মধ্য-অক্ষাংশীয় তৃণভূমি অঞ্চলে ক্রান্তীয় ও মেবু বায়ুপুঞ্জ উভয়ই সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেজন্য সাধারণত আবহাওয়ার অনিয়মিতভাবে পরিবর্তন ঘটে থাকে।

(ii) মাঝে মাঝে মধ্য-অক্ষাংশীয় ঘূর্ণিঝড এই অঞ্চলে উপদির ৩য় এবং তুষারপাতের সঙ্গে প্রবল তুষার ঝড (blizzard) ঘটায়।

(iii) গ্রীষ্মকালে ধুলোবালিপূর্ণ গরম বাতাসের ঝড় বইতে থাকে

3. মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট:

(i) মধ্য-অক্ষাংশীয় স্তেপ জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় অধঃক্ষেপণের পরিমাণ 20-50 সেমি।

(ii)বৃষ্টিপাত অত্যান্ত পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চয়তায় ভরা। বৃষ্টিপাতের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। যে বছর বৃষ্টিপাত হয়। তার পরের কয়েক বছর ধরে খরা চলতে থাকে। অধিকন্তু কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম অধঃক্ষেপণও হয়ে থাকে।

(iii) মোট অধঃক্ষেপণ সম্ভাব্য বাষ্পীভবন অপেক্ষ। অনেক কম হয়. 

(iv) অধঃক্ষেপণের পরিমাণ এক বছর থেকে অন। বছরে যথেষ্ট পার্থক্য হয়।

(v)বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বণ্টনে যথেষ্ট তারতম্য লক্ষ করা যায়। কোনো স্থানে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়, আবার কোনো কোনো স্থানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টি ও তৃষারপাত হয়.

• স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation)

স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন। এই জলবায়ু অনঞ্চলে খর্বকায় তৃণ ও লতাগুল্ম জন্মায়। বৃক্ষ-জাতীয় উদ্ভিদ কম জন্মায়। দেশের অভ্যন্তরভাগে দিগন্তবিস্তৃত তৃণভূমি দেখা যায়। বিভিন্ন মহাদেশে এই তৃণভূমি পৃথক পৃথক নামে পরিচিত, যেমন- উত্তর আমেরিকায় Prairies), ইউরেশিয়ায় স্তেপস (Stepps), হাঙ্গেরিতে পুস্তা "ustaz), এভিন আমেরিকার আজেন্টিনা ও উরুগুয়েতে পম্পাস (Pampas), দক্ষিণ আফ্রিকায় ভেল্ড (Veld), অস্ট্রোন নিউজিল্যান্ডে ক্যান্টারবেরি (Canterbury) ডাউনস (Downs) এবা

বিভিন্ন মহাদেশের তৃণভূমির বৈশিষ্ট। সংক্ষেপে না করা হল।

(ক) ইউরেশিয়ার স্তেপস:

(i) অরণ্যে ওক, ম্যাপল, অ্যাসপেন, উতালা ইত্যাদি বৃক্ষের মিশ্র বনভূমি গড়ে উঠে।

(ii) মনতানে স্তেপে উন্মুক্ত তৃণভূমি দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 44-50 সেমি। এই তৃণভূমিতে ফেস্ক (৫২% cues) ও পালক গোত্রীয় তৃণ (feather grass) জন্মায়।

(iii) তৃণ স্তেপের অংশে ঘাসই প্রধান.

(iv) প্রায় শুষ্ক অঞ্চলের জেরোফাইট স্তেপের অংশে কম বৃষ্টিপাতের জন। (30-35 সেমি) মবুজাতীয় তণ ও স্বল্পজীবী গুল্ম জন্মায়।

(খ) উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চল

(i) এই অঞ্চলের দীর্ঘ তৃণযুক্ত অংশে 1.5-2.5 মিটার দীর্ঘ তৃণের মাঝে মাঝে ওক ও হিকরি গাছ দেখা যায়

(ii) মিশ্র প্রেইরি অংশে মাঝারি ও খর্বকায় তৃণের সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।

(iii) খর্বকায় তৃণভূমি অংশে প্রধানত 60 সেমি উচ্চতাবিশিষ্ট তাগর সমাবেশ ঘটেছে।

(গ) দক্ষিন আমেরিকার পম্পাস অঞ্চল

(i)আদ্র কম্পাস অংশ দীর্ঘকায় তৃণ দেখা যায়

(ii) প্রায় আর্দ্র পম্পাস অংশের মরুপ্রায় জলবায়ুতে খর্বকায় তৃণভূমি গড়ে উঠেছে.

(ঘ) আফ্রিকার ভেল্ড অঞ্চল

(i) থেমেডা ভেল্ড অংশে 65-75 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে লোহিত তৃণ সমৃদ্ধ তৃণভূমি গড়ে উঠেছে

(ii) সোর ভেল্ড অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ তৃণ জন্মায়। থেমেডা ভেল্ডের সঙ্গে এই তৃণভূমি গড়ে উঠেছে।

(iii) আলপিও ভেল্ড অংশটি 2000-2500 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে থেমেডা তৃণই প্রধান।

(ঙ) অস্ট্রেলিয়ার ডাউনস অঞ্চলে তৃণের সঙ্গো ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ দেখা যায়। এখানে নাতিশীতোয় দীর্ঘকায় ও খর্বকায় তৃণভূমি এবং মরু জাতীয় তৃণভূমি গড়ে উঠেছে।

(চ) নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি তৃণভূমি মূলত খর্বকায় তুসক তৃণ এবং গুচ্ছাকার তৃণ নিয়ে গড়ে উঠেছে

• প্রাণীগোষ্ঠী (Animals) নাতিশীতোয় তৃণভূমি অঞ্চলে বিভিন্ন মৃদভেদী প্রাণীদের মধ্যে ছুঁচো, ইঁদুর, তীক্ষ্ণদও বিশিষ্ট ভিসকাচা, মারা, বেজি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া খরগোস, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি তৃণভোজী ও শকুন ঈগল, নেকড়ে, বাজপাখি, মেরু বিড়াল ইত্যাদি মাংসাশী ও শিকারী প্রাণী লক্ষ করা যায়। আস্ট্রেলিয়ার নাতিশীতোয় তৃণভূমি ডাউন্সে ক্যাঙারু দেখা যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01