welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য (Regional diversity of India)

ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য (Regional diversity of India)


প্রতিটি অঞ্চলরেই নিজস্ব কিছু স্বাতন্ত্র্যতা থাকে, যেগুলি ভৌগোলিক বৈচিত্র্য প্রদর্শন করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলিকে অবিচ্ছেদ্য একটি সম্পর্কে বেঁধে রাখে। এই দিক থেকে বিচার করলে, আমাদের দেশ ভারত হল পৃথিবীর এমনই একটি "ক্ষুদ্র সংস্করণ” যেখানে ভৌগোলিক পরিসরের বৈচিত্র্যপূর্ণ ধারা আবহমান তাল থেকেই অত্যন্ত স্পষ্টরূপে বিদ্যমান। যদিও কখনো কখনো তীক্ষ্ণ বৈচিত্র্য' শব্দটি সমন্বয়ী ভাবধারার পরিবর্তে আঞ্চলিক পার্থক্যের উপর জোর দিয়ে দেশের অখন্ডতাকে যথেষ্ট দুর্বল করে দেয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন ভৌগোলিকদের বৃষ্টিভালাতে ভারতের অখণ্ডতা বা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ী ভাবধারাগুলিই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।


■ ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের ধারণা (Concept of Regional Diversity at India):

ভৌগোলিক পরিসরে ভারতের প্রাকৃতিক (ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদনদী, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি) এবং অপ্রাকৃতিক (জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, লিঙ্গা প্রভৃতি) উপাদানগুলির সমারোহ দেশের বৈচিত্র্যকে বহুমুখীভাবে প্রকাশ করে থাকে।

বৈচিত্রোর দিক থেকে সমগ্র বিশ্বে ভারতকে একটি অন্য দেশরূপে গণ্য করে অনেকেই বলে থাকেন, সম্পূর্ণ ভারতকে জানা মানেই সমগ্র বিশ্বকে জেনে নেওয়া। বহু প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি ভারত তার নিজস্ব একাধিক বৈচিত্র্যকে সার্বিকভাবে সংরক্ষণ করে আসছে। এই বিষয়টির কথা মাথায় রেখেই প্রাচীন বিষ্ণুপুরাণে স্পষ্টতই বলা হয়েছে-


বৈচিত্র্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক (Some notable aspects of Diversity):

ভারত বিভিন্ন দিক থেকে তার বৈচিত্র্য মেলে ধরেছে বলেই বিশ্বের দরবারে একটি তাৎপর্যপূর্ণ আঞ্চলিক স্বীকৃতি বজায় রাখতে পেরেছে। কারণ, প্রায় 100 টিরও বেশি সংবিধানস্বীকৃত ভাষা, 700 টিরও বেশি বিভিন্ন উপজাতি, বিশ্বের প্রতিটি প্রধান ধর্ম এবং বহুমুখী সংস্কৃতির আধার হল আমাদের এই উপমহাদেশ। প্রায় 130 কোটি মানুষের আবাসস্থল এই দেশটির জাতি, ধর্ম, রীতিনীতি, সামাজিক কাঠামো, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা যথেষ্টভাবে বিদ্যমান। যে সমস্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদান সমগ্র দেশটিকে "বিশ্বের অন্যতম প্রতীক" করে তুলেছে, তার কয়েকটি রূপ হল-

1. ভূপ্রাকৃতিক ও নদনদীর বৈচিত্রা (Physiographicand river diversity)

 ভারতের 3,287,263 বর্গ কিলোমিটার এলাকাটিকে ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনুসারে সাধারণত পাঁচটি প্রধান ভাগে শ্রেণিবন্ধ করা হয়েছে, যেমন-

(i) উত্তরের সুবিশাল পার্বত্য অঞ্চল,

(ii)উত্তরে নদীর পলিগঠিত সমভূমি অঞ্চল,

(iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল,

(iv) পশ্চিমের মরুভূমিময় অঞ্চল, এবং

(v) উপকূল ও দ্বীপপুঞ্জীয় অঞ্চল।

ভারতে অবস্থিত নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য ভূভাগটি পশ্চিমে জম্মু-কাশ্মীর থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। হিমালয়ের পশ্চিম, মধ্য এবং পূর্ব প্রান্ত বরাবর এখানকার প্রধান তিনটি আঞ্চলিক শ্রেণিতে কাশ্মীর, কাংড়া, তেহরি, কুমায়ুন প্রভৃতি উপত্যকা, নাঙ্গা, কামেট, মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো একাধিক উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ এবং নেপাল, সিকিম, ভুটানের মতো বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের বিস্তীর্ণ উর্বর ও উৎপাদনশীল সমভূমির অংশটি হিমালয় থেকে বয়ে আসা সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং তাদের বিভিন্ন উপনদী, শাখানদী বাহিত পলি দ্বারা গড়ে উঠেছে। অতি প্রাচীন শিলা গঠিত অংশটি হল মধ্য ভারত যেখানে দাক্ষিণাত্যের মালভূমি নিয়ে গঠিত। এখানে পশ্চিমঘাট এবং পূর্বঘাট পর্বতমালা দাক্ষিণাত্যের দুই পাশে প্রসারিত যা নীলগিরিতে মিলিত হয়েছে। বালুকাময়, পাথুরে অনুর্বর অংশটি রাজস্থানের পশ্চিমাংশ জুড়ে অবস্থিত। সর্বশেষ ভূপ্রাকৃতিক অংশটি ভারতের বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের তীরবর্তী স্থলভূমি তথা সমুদ্র উপকূলভাগ বরাবর গড়ে উঠেছে।

এছাড়াও, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে প্রায় পাঁচশোটিরও বেশি ছোটো-বড়ো-মাঝারি নদনদী, তাদের উৎসস্থল, প্রবাহপথ, অববাহিকা, মোহনা, শাখানদী, উপনদী, নদী তীরবর্তী প্রাকৃতিক ভূদশ্যগুলি যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানকার নদ-নদীগুলির মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী, মহানদী, নর্মদা, তাপ্তি প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জালের মতো ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন নদ-নদীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাবেশের জন্যই ভারতকে নদীমাতৃক দেশরূপে অখ্যায়িত করা হয়।

একবনীয় ও জটিল প্রকৃতির যা এখানকার জনজীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম। সাধারণত বিষুব অঞ্চল থেকে হালগাইন, কিংবা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মরু অঞ্চলের মধ্যে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ু তাপমাত্রা, স্থানীয় বা হাকস্মিক প্রবাহিত বাতাস, বৃষ্টিপাত, ঋতুর ছন্দ, আর্দ্রতা বা শুদ্ধতার মায়া প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। প্রকৃতিগত দিক থেকে ভারতের এই জলবায়ুকে প্রধান ছয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- ক্রান্তীয় মৌসুমী, ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক সাভানা, উর্দু মন্ত্র, আর্দ্র উপক্রান্তীয়, উদ্বু আর্দ্র স্টেপ এবং পার্বত্য জলবায়ু। অন্যদিকে জলবায়ুর ঋতুভিত্তিক সমারোহে এদেশে উঁচু মার্চ শ্রীষ্মকাল, শুদ্ধ শীতকাল, নির্দিষ্ট ঋতুতে বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টির মধ্যে সাময়িক বিরতি, দীর্ঘকালীন উন্নতা, আকস্মিক ঘূরিতড় প্রভৃতিও লক্ষ্য করা যায়। বৈচিত্র্যের নিরিখে ভারতের জলবায়ুর আরও কয়েকটি নিদর্শন রয়েছে, যেমন-

(।) দেশের মধ্যভাগের জলবায়ু শুষ্ক ও চরমভাবাপন্ন হলেও, উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন প্রকৃতির।

(ii) জুন মাসে রাজস্থানের তাপমাত্রা যেখানে প্রায় 48°-50°C থাকে, তখন কাশ্মীরের পাহলগামে তাপমাত্রা -22°C-এ পৌঁছায়।

(iii) ডিসেম্বরের রাতে, জম্মু ও কাশ্মীরের ব্রাস বা কার্গিলে তাপমাত্রা -40°C-এ নেমে গেলেও, তিরুবনন্তপুরম বা চেন্নাইতে এই সময় তাপমাত্রা প্রায় 20°C-22°C থাকে।

(IV) মেঘালয়ের মৌসিনরামে বার্ষিক 1400 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হলেও, রাজস্থানের জয়সলমেরে বার্ষিক 12 সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয় না।

(ঘ) গোয়া, হায়দ্রাবাদ, ভুবনেশ্বর এবং পাটনার মতো জায়গাগুলিতে জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বৃষ্টিপাত ঘটলেও আগ্রা, দিল্লি, চন্ডীগড় প্রভৃতি প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে।

(ঘ)) ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোনে বিধস্ত, অন্যদিকে পশ্চিম হিমালয়ের বেশির ভাগ এলাকা পশ্চিমী ঝঞ্জার দ্বারা প্রভাবিত।

(2) মৃত্তিকা ও স্বাভাবিক উদ্ভিদগত বৈচিত্রা (Past diversity of soil and natural plants) 

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের মৃত্তিকার প্রাধান্য রয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (ICAR) মৃত্তিকাকে ৪টি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। এগুলি হল-(i) পলিমাটি, (ii) কালো মাটি, (iii) লোহিত মাটি, (iv) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, (৮) পার্বত্য বা বনের মৃত্তিকা, (VI) শুদ্ধ মরুভূমির মৃত্তিকা, (vii) লবণাক্ত এবং ক্ষারীয় মুক্তিকা এবং (viii) জলাভূমির পিট বা বগ মৃত্তিকা। এই সমস্ত মৃত্তিকা, জলবায়ু এবং স্থানীয় দুপ্রকৃতির তারতমোর নিরিখে ভারতে একাধিক বৈচিত্রাপূর্ণ স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিন্যাস গড়ে উঠেছে, যেমন-

(1) সমভূমি অঞ্চলগুলিতে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী উদ্ভিদ, (ii) মরুভূমিতে শুদ্ধ কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদ, (iii) পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে সরলকীিয় বা আল্লীয় উদ্ভিদ, (iv) উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

প্রসঙ্গাত ভারতের প্রধান মৃত্তিকাকেন্দ্রিক এই সকল স্বাভাবিক উদ্ভিদগুলির বিন্যস্ত শোভা এবং ব্যবহারিক প্রকৃতি আঞ্চলিক পরিসরে যথেষ্ট বৈচিত্র্য এনেছে জীব (3) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Biodiversity) : জীব প্রজাতির বণ্টনগত দিক থেকেও ভারত সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে একটি অন্যতম বৈচিত্র্যময় দেশ। বিশেষ করে ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদের বিভিন্নতার জন্যই ভারত বিশ্বের প্রধান মেগাডাইভারসিটি অঞ্চলের অন্যতম ক্ষেত্রে উপনীত হয়েছে। ভারতের অরণ্য, জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ ও সমুদ্রে কিংবা নদী বা হ্রদের জলমগ্ন পরিবেশে যে সমস্ত জীব প্রজাতির সমাবেশ দেখা যায়, তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল নিম্নরূপ-

(i)সমগ্র পৃথিবীর মোট আবিষ্কৃত 2.5 লক্ষ উদ্ভিদ প্রজাতির প্রায় 45,000 রয়েছে এই ভারতে।

(ii) সমগ্র পৃথিবীর মোট আবিষ্কৃত 15 লক্ষ প্রাণী প্রজাতির প্রায় 75,000 এখানেই পাওয়া যায়।

(iii) ভারতে 350 প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, 1200 প্রজাতির পাখি, 453 প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।

সমগ্র পৃথিবীর স্তন্যপায়ীর প্রজাতির বৈচিত্র্যের নিরিখে ভারত সপ্তম, পাখি প্রজাতির ক্ষেত্রে নবম ও সরীসৃপের ক্ষেত্রে পঞ্চম স্থান অধিকার করে থাকে।

(৫) ভারতে ২টি বৃহৎ জীব-ভৌগোলিক অঞ্চল, চটি জীবভূমি, 10টি জীব-ভৌগোলিক প্রদেশের উপস্থিতি দেখা যায়। ভারতের প্রধান 10টি জীব-ভৌগোলিক প্রদেশের 25টি উপজৈব অঞ্চলকে সারণির আকারে উপস্থাপন করা হল।

(4) ধর্মীয় বৈচিত্র্য (Religious Diversities): ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও এখানে বসবাসরত মানুষদের বিভিন্ন ধর্মের প্রতি বিশেষ আনুগত্য বা বিশ্বাস ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে যথেষ্ট উন্মুক্ত করেছে। আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, সারা বিশ্বে মোটামুটি যে চার হাজারেরও বেশি ধর্ম রয়েছে তার বেশকিছুকে এদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী দীর্ঘকালযাবৎ অনুসরণ তথা মেনে আসছে। ভারতে ধর্মীয় বৈচিত্রা রয়েছে বলেই এখানকার মানুষ কিছুটা হলেও একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে পরস্পরের সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল হতে পেরেছে। দেশের প্রধান ধর্ম হল হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ ধর্ম এবং আরও অনেক কিছু। এই সমস্ত ধর্মীয় ক্ষেত্রগুলির আবার বেশ কয়েটি উপবিভাগ রয়েছে, যেগুলিকে অবলম্বন করে ভারতে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি স্বতন্ত্রতা বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনধারায় চিরকাল বজায় রেখেছে। যেমন, হিন্দুধর্মে শাক্ত, শৈব, বৈয়ব শ্রেণি, ইসলাম ধর্মে শিয়া, সুন্নি শ্রেণি, বৌদ্ধ ধর্মে হীনযান, মহাযান, জৈন ধর্মে দিগম্বর, শ্বেতাম্বর প্রভৃতি এক-একটি পৃথক ধর্মাবলম্বী শ্রেণির ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় ভাবধারা থাকলেও, এরা প্রত্যেকেই একে অপরের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে অত্যন্ত খোলা মনে যে যার ধর্ম অনুশীলনে লিপ্ত থাকে। এইভাবে ভারতের ধর্মীয় বৈচিত্র্য আন্তর্জাতিক স্তরে যথেষ্ট ঐতিহ্য বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে।

2011 খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুযায়ী ভারতবর্ষে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রধান রূপ এবং বণ্টন নিম্নলিখিত সারণিতে উপস্থাপন করা।

(5) জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্য। Population Diversity):

বিশালায়তন ভারতের জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্য যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো। এদেশের অনুমানিক প্রায় 130 কোটির বেশি জনসংখ্যা মোট ২৪টি অঙ্গরাজ্য এবং ৪ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান করছে। সামগ্রিক বিচারে ভারতীয় ভূখণ্ড পৃথিবীর মোট স্থলভাগের প্রায় 2.42%-এর অন্তর্গত হলেও, এখানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় 17.5% বসবাস করছে। বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতের মোট জনসংখ্যা ইউরোপ অথবা আফ্রিকা মহাদেশের তুলনায় বেশি। এদেশের জন বণ্টনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়, তার কয়েকটি হল-

(1) ভারতের প্রায় অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী বিক্ষিপ্তভাবে গ্রামে বাস করলেও, বাকি জনগোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে কিংবা শহুরে এলাকায় বসবাস করে থাকে।

(ii) এদেশে বিক্ষিপ্ত জনবসতির অধিকাংশ জনগোষ্ঠী দেশের মধ্যভাগ, পশ্চিমভাগ ও হিমালয় অঞ্চলে দেখা গেলেও, ঘন জনবসতিপূর্ণ বেশিরভাগ অঞ্চল ভারতের নদীগঠিত পলিময় সমভূমিতেই সর্বাধিক কেন্দ্রীভূত।

(iii) ভারতের সামগ্রিক জনসংখ্যার প্রায় 50% কোনও না কোনও নদীতীরবর্তী সমভূমি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে।

(iv) ভারতের উপকূলীয় ও সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনসংখ্যা এবং জনঘনত্ব উভয়ই যথেষ্ট পরিমাণে বেশি।

(v) স্বাধীনতার পূর্বকাল পর্যন্ত ভারতে গ্রামীণ জনসংখ্যার প্রাধান্য থাকলেও স্বাধীনতার পর দ্রুত নগরায়ণের হাত ধরে।

(6) সংস্কৃতিগত বৈচিত্রা (Diversity of Culture): বৈচিত্র্যময় জাকজমকপূর্ণ বহুমুখী সংস্কৃতির ধারা অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সংস্কৃতির পীঠস্থান করে তুলেছে। এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক জনসম্প্রদায়ের প্রচলিত জীবনধারা, লোকাচার, স্থাপত্য, শিল্পকলা, পোশাকপরিচ্ছদ, খাদ্যগ্রহণ, ঐতিহ্য সংরক্ষণের দিকগুলি বিভিন্ন কারণে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।

(7) জাতপাতের বৈচিত্র্য (Caste diversity): সাধারণত পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট রস্তের বন্ধনে আবন্ধ পরিবার বা বৃত্তিকেন্দ্রিক মানুষের স্বতন্ত্র শ্রেণি তথা গোষ্ঠী কাঠামোই হল জাত ব্যবস্থা। অধ্যাপক M. N. Shrinivas ভারতের জাত ব্যবস্থাকে কর্মের ধারণা এবং ধর্মের ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন। জন্মসূত্রে অর্জিত জাতপাতের উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ বা বর্ণ বৈচিত্র্য পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই লক্ষ্য করা যায়। তবে, এই জাত বা 'caste' শব্দটি পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে বিভ্রান্তিকর হলেও, ভারতের ক্ষেত্রে এটিকে জাতি সত্ত্বা অক্ষুণ্ণ রাখার নিরিখে অত্যন্ত ঐতিহাপূর্ণ মনে করা হয়।

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় বর্ণ তথা জাতপাত সংক্রান্ত বৈচিত্রা অতি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। বৈদিকযুগে ভারতের জাত ব্যবস্থা প্রকট হয়ে উঠেছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রর মধ্যে দিয়ে। তৎকালীন এই চারটি শ্রেণির মধ্যে ব্রাহ্মণরা ছিল উচ্চবর্ণের সম্প্রদায়ভুক্ত। এরা দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূজা, উপাসনা বা যাগযজ্ঞের কাজ করে সমাজে সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠান করত। অন্যদিকে, ক্ষত্রিয়রা যুদ্ধে অংশগ্রহণ, বৈশ্যরা ব্যবসাবাণিজ্যের কাজে লিপ্ত থাকত। তবে, তৎকালীন কুমোচ্চ বৈদিক সমাজে সবচেয়ে অসহায় এবং বঞ্চিত অবস্থায় দিন কাটাতে হত শূদ্রদের। সেখানে শূদ্রদের মধ্যে জেলে, তাঁতি, কামার, কুমোর, গোয়ালা, ধোপা, তেলি, দরজি সহ একাধিক নিম্ন প্রাথমিক ক্ষেত্রের কর্মী শ্রেণি রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের সমাজব্যবস্থায় জাতপাতের ভেদাভেদ পবিত্র, অপবিত্র, অস্পৃশ্য, শূদ্র, অতিশূদ্র প্রভৃতির দ্বারা কোনো জনগোষ্ঠীর বংশানুক্রমিক পরিচয়কে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেয়। অবশ্য, এই ধরনের জাত ব্যবস্থা শুধু হিন্দু বৈদিক সমাজেই নয়, ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির মধ্যেও সমানভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন- মুসলমানদের মধ্যেও কয়েকটি পৃথক জাতের প্রাধান্য চোখে পড়ে। যেমন-সৈয়দ, শেখ, মুঘল, পাঠান প্রভৃতি। একইভাবে, ভারতের খ্রিস্টান এবং শিখ সম্প্রদায়ের কোনও কোনও মানুষের মধ্যেও জাতের প্রভেদ বা স্বতন্ত্র জাতের প্রতি বিশেষ আগ্রহ যথেষ্টভাবে বিদ্যমান।বর্তমানে, ভারতীয় সমাজকাঠামোয় প্রায় 3500টিরও বেশি পৃথক জাতের সন্ধান মেলে, যার মধ্যে শুধুমাত্র তফসিলী জাতের সংখ্যা 751টি। এর থেকে একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার, ভারতে জাতপাতের শ্রেণিগুলিই সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ .














একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01