welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং উন্নয়ন (Regional diversity and development in India)

ভারতে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং উন্নয়ন (Regional diversity and development in India)


'বৈচিত্র্য' শব্দটিকে আমরা যে ভাবেই ব্যবহার করিনা কেন, এটি সর্বদা কোনও একটি অঞ্চলের কার্যকরী ভৌগোলিক তথা মনুষ্যকেন্দ্রিক উপাদানগুলির ভিন্নতর মাত্রাকে সমষ্টিগতভাবে প্রকাশ করে থাকে। অবশ্য, ভারতের আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যটিকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে, যেগুলি মূলত জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত প্রেক্ষাপটে অন্যতম বিবেচনাযোগ্য।

ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক বিবেচনার ক্ষেত্রটিকে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাখ্যা করা যায়।


আঞ্চলিক বৈচিত্রা এবং উন্নয়নের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি(Positive Perspectives on Regional Diversity and Development):

ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশগুলির মধ্যে একটি। এখানকার আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই উন্নয়নের নিরিখে যথেষ্ট ইতিবাচক মনে করেন। তাদের মতে, বৈচিত্র্যের একাধিক সমারোহ রয়েছে বলেই বর্তমানে, উন্নয়নের নিরিখে ভারত বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে উপনীত হয়েছে। ভারতের আঞ্চলিক বচিত্র্যের কয়েকটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এখানে উল্লেখ করা হল।

বহু প্রাচীনকাল থেকে বৈচিত্র্যর বহুত্ববাদী ভাবধারাকে বিভিন্নভাবে লালন করে রাষ্ট্রের একটি মূল শক্তিরূপে ভারত ক্রমশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এরফলে, উন্মুক্ত গতিশীল সমাজ গঠনের মধ্যে দিয়ে উন্নয়নের সুফলগুলিকে দেশের সমস্ত স্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার পথগুলি এখানে যথেষ্ট সম্প্রসারিত হয়েছে।

(ii) আমাদের দেশের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের বিপুল সমারোহ সমগ্র বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ একটি স্থান পেতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কোনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভারতের ইতিহ্যবাহী মতামতগুলিকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়।

(iii) রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপট ধরেই ভারত বিশ্বের একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উপনীত হতে পেরেছে।

বর্তমানে, দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের সমস্ত পদক্ষেপগুলিতেই স্থানীয় জনসমর্থন এবং শিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, এমনকি রাজনৈতিক ভাবধারাগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।

iii) আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের প্রাধান্য রয়েছে বলেই এরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বস্তুবিশ্বের দেশগুলির প্রতিটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সহজেই মিশে গিয়ে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

(iv) এদেশে আঞ্চলিক বৈচিত্রা সবচেয়ে বেশি রয়েছে বলেই, সমস্ত ধরনের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা। করে, উন্নয়নের যুগোপযোগী সিন্ধান্তগুলিকে ভারত অতি দ্রুততার সাথে গ্রহণ করতে পারে।

(v) বৈচিত্র্যর বিস্তৃত পরিবেশ আঞ্চলিক চিন্তাধারা, ভাবাবেগ, বিশ্বাস, আস্থা প্রভৃতি মৌলিক সহনশীল বিষয়গুলিকে রাষ্ট্রকাঠামোয় অত্যন্ত নমনীয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত করে, দেশের অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়নের চিন্তাধারাকে যথেষ্ট সম্প্রসারিত করা যায়।

(vii) কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, "বৈচিত্রোর লভ্যাংশ" কে হাতিয়ার করেই 2025 সালের মধ্যে দেশটি জিডিপির 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই দিক থেকে ভারতের বৈচিত্রা হল দেশের উন্নয়ন এবং বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাঁড়ানোর জন্য একটি কৌশলগত মৌলিক সম্পদস্বরূপ।


আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং উন্নয়নের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি(Negative Aspects of Regional Diversity and Development):

আঞ্চলিক বৈচিত্র্যর ক্ষেত্রে আমরা যদি ভারতের আঞ্চলিকতা, ভাষাবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করি, তাহলে বৈচিত্র্যের জন্য খুব সহজাতভাবেই এদেশের আঞ্চলিক উন্নয়নগত ভারসাম্যহীনতা এবং পশ্চাদ্‌্যামিতার বিষয়টিও যথেষ্ট প্রাধান্য পাবে। কারণ-

(i) ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্ম, ভাষা, আচারব্যবহার এবং রীতিনীতির চরম বৈচিত্র্য রয়েছে বলেই, দেশের ইতিবাচক আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে জনগোষ্ঠীর সকলের মধ্যে সর্বদা সম মনোভাব দেখা যায় না। এর ফলে উন্নয়নমূলক যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৃথা সময় নষ্ট হয়ে যায়।

(ii) আঞ্চলিক বৈচিত্রোর সমারোহ কখনো কখনো ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোয় প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে, ফলে দেশের উপেক্ষিত অঞ্চলগুলিতে ন্যায়বিচার এবং অনুগ্রহের আকাঙ্ক্ষায় একাধিক বিচ্ছিন্ন আঞ্চলিকতাবাদী ভাবধারা জন্ম দেয়।

(iii) অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে ইংরেজদের মতো বেশ কিছু ঔপনিবেশিক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্যে কাজে লাগিয়ে যে চরম বৈষম্য গড়ে তুলেছে, তারফলে দেশের ঐক্যবদ্ধতার বিপরীতে কখনো কখনো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

(iv) স্বাধীনতা-পরবর্তীযুগে ভারতের সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা, নগরায়ণ, প্রযুক্তি গ্রহণ যে পরিমাণে বেড়েছে, তার ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ঘিরে দেশের পার্শ্ববর্তী অনগ্রসর অঞ্চলগুলির পারস্পরিক ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছে।

ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যর বিষয়টিকে বর্তমানে অনেকেই সম্পদ হ্রাস, জলবায়ু সংকট, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাগত প্রতিকূলতা, আঞ্চলিক সংঘাত এবং জাতীয় গোষ্ঠীগুলির দ্বন্দ্বের নিরিখে বিচার করে থাকেন। এরফলে, উন্নয়ন প্রসঙ্গো ভারতের আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের বিষয়টি আজ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01