সামাজিক সত্ত্বারূপে অঞ্চল (Region as a Social Entity)
আঞ্চলিক ধারণা সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটে দীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বিবর্তনকে অনুসরণ করেই অঞ্চলের বস্তুগত অভিমুখী ক্রমেই সামাজিক সত্ত্বায় উপনীত হয়েছে। এ প্রসঙ্গো, প্রকৃতিকে যদি পৃথিবীর আদিমতম প্রকাশরূপে ধরা হয়, একইভা। মানবকেন্দ্রীয় অঞ্চলের পরিসরটি নিঃসন্দেহে আধুনিক পৃথিবীরই আরেক বহিঃপ্রকাশ। একসময়, পৃথিবীর যাবর্তী অঞ্চলগুলিকে ভূপ্রকৃতি, নদনদী, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতির নিরিখে বর্ণনা করা হতো। কিন্তু ধারক ও বাহক রূপে আধুনিক সভ্যতায় মানুষের অদম্য শক্তি প্রকৃতির উপাদানগুলিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনছে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, চাহিদা, সম্পদলাভ এবং সমৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ তার নিজস্ব চিন্তাধারায় বিক্রি অঞ্চলগুলিকে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে। এইভাবে অঞ্চলের ব্যাপ্তি ক্রমেই সামাজিক সবুর দ্বারা আলোকিত হয়েছে। এখানে অঞ্চলের সামাজিক সত্ত্বাকে নিম্নলিখিত বেশ কয়েকটি বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।
• মানবীয় ক্ষেত্ররূপে অঞ্চল (Region as the human field): পৃথিবীর প্রায় সমস্ত অঞ্চল জুড়েই মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়। সেই কারণে মানুষকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে অঞ্চলের ধারণা যথেষ্ট অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বর্তমানে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে মানুষকে গুরুত্ব দিয়েই ভূগোলশাস্ত্রের মানবীয় শাখায় 'Humanized space' বা 'Social space'-এর ধারণা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে, এখানে মানুষের খাদ্যাভ্যাস আচার-আচরণ এবং জীবন যাত্রার নানান প্রেক্ষাপটগুলি অঞ্চলের নিরক্ষে অত্যান্ত প্রাণ বন্ধ হয়ে উঠেছে
ভাষাগত ক্ষেত্ররূপে অঞ্চল (Region as the linguistic field): মানব সংস্কৃতির গুরুত্বপূর অভিব্যক্তিস্থল রূপে ভাষা অঞ্চলগুলিকেও চিহ্নিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা একাধিক জনগোষ্ঠী যে-সমস্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ভাষায় কথা বলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এক-একটি স্বা
প্যানিক বিশ্লেষণ (Spatial analysis): এখানে দৈশিক এককের কয়েকটি বিশেষ উপাদানগুলিকে প্রাধান্য দিয়ে অঞ্চল বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন সম্পদের ভিত্তিতে জনসংখ্যা অঞ্চল বিশ্লেষণ।
ভাষাগত পরিবার, এবং সংশ্লিন্ট পরিবারকেন্দ্রিক স্বতন্ত্র কয়েকটি ভাষাভিত্তিক অঞ্চলের বিকাশ ঘটেছে। যেমন- জামান ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চল, রোমান ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চল, বাংলা ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চল, মারাঠি ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চল প্রভৃতি।।।
• ধর্মীয় ক্ষেত্র রূপে অঞ্চল (Region as the religious field): মনোজগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী আরেকটি অবলম্বন হল ধর্ম, যেটি প্রতিটি মানুষের আবেগ, অনুভূতি, বিশ্বাস, ভালোবাসা প্রভৃতির মাধ্যমে পৃথিবীতে এক-একটি ধর্মীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। সাধারণত, এই অঞ্চলগুলিতে সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, বিধি প্রভৃতি কার্যাবলি পরিলক্ষিত হয়।
যেমন-ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিশ্বের প্রধান চারটি অঞ্চল হল-ইসলাম ধর্মাবলম্বী অঞ্চল, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। অঞ্চল, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অঞ্চল এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী অঞ্চল প্রভৃতি।
• অর্থনৈতিক ক্ষেত্র রূপে অঞ্চল (Region as the economical field): মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারা সর্বদাই কোনও না কোনও অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আর, এই সমস্ত অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্যতম ক্ষেত্রস্থল হল অঞ্চল। অতীত থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ যত রকমের অর্থনীতির সাথে যুক্ত থেকেছে, পৃথিবীতে ঠিক ততরকমের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। যেমন-
• প্রাথমিক অর্থনীতি রূপে বিভিন্ন কৃষি অঞ্চল (ধান উৎপাদক অঞ্চল, গম উৎপাদক অঞ্চল),
• গৌণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্ররূপে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল (লৌহ-ইস্পাত, শিল্পাঞ্চল, পেট্রো-রসায়ন শিল্পাঞ্চল) প্রভৃতি।
জায় থাকে বলেই, বেড়াজালে আবদ্ধ। হয়েছে।
• রাজনৈতিক ক্ষেত্ররূপে অন্যল (Region as the political field): মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ছাড়া আরেকটি শক্তিশালী এবং উল্লেখযোগ্য আধার হল রাজনৈতিক পরিসর। বস্তুত, একাধিক রাষ্ট্র তাদের সার্বভৌম তথা গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নির্দিস্ট একটি আঞ্চলিক সীমানায় স্বতন্ত্রভাবে এই ধরনের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছে। মূলত এখানেই রাষ্ট্রনৈতিক প্রশাসনিক কৌশল, পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ, সাংগঠনিক আদর্শবোধ, এমনকি শক্তিপ্রদর্শনের যাবতীয় দিকগুলি যথেষ্ট স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। যেমন- পৃথিবীর প্রায় সমস্ত গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্রগুলির এক-একটি সর্বজনস্বীকৃত রাজনৈতিক পরিসর রয়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাই একথা সহজেই বলা যায়, অঞ্চল এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যাকে কেন্দ্র করে মানবীয় সমস্ত ধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। আবার, মানবীয় বিভিন্ন কার্যাবলির নিরিখে অঞ্চল নিজেও যেন একটি জৈব সত্ত্বায় উপনীত হয়। সেইকারণে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন- 'Region are emerging as a social entities