welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অনুন্নয়নের সাম্প্রতিক অবচনা(Recent state of underdevelopment)

অনুন্নয়নের সাম্প্রতিক অবচনা(Recent state of underdevelopment)


পৃথিবীর একাধিক দেশ বর্তমানে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেলেও, অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশের বেশকিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আজও যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ। বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বের অনগ্রসর দেশগুলি তাদের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন মিশ্র ফলাফলকে সঙ্গে নিয়ে যথাসম্ভব উন্নয়নের দিকে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ভেঙে দিয়ে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করলেও, দুর্ভাগ্যবশত এখনো তারা অনুন্নয়নের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

একবিংশ শতকের প্রারম্ভে গবেষক আঅ্যালেন (2000 খ্রিঃ) একটি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছন, 1995 খ্রিস্টাদে যুদ্ধবিধস্ত এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থির বিশ্বের প্রায় 76টি দেশের মধ্যে 65টি দেশকেই অনুন্নতরূপে চিহ্নিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, জাতিসঙ্ঘ, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং Organization for Economic Co-operation and Development (OECD)-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলির চরম অব্যবস্থা এবং পিছিয়ে পড়ার প্রবণতাগুলিকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপনার প্রচেষ্টা শুরু করে দেয়।

প্রথমদিকে, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশিক শাসনের অপসারণের সঙ্গে সঙ্গো যে নয় জাতীয়তাবাদী ভাবধারার জাগরণ ঘটেছিল, তা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলির স্বার্থকেন্দ্রিক উন্নয়নের সেই ধরনের প্রয়াস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কারণ, বিভিন্ন উপনিবেশিক গোষ্ঠীর দ্বারা দীর্ঘ অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং বিপুল সম্পদ আগ্রাসন নীতির কুপ্রভাবে এই সকল দেশগুলিতে মূলধন, পুঁজি এবং শরিকাঠামোর অভাব ক্রমেই আরও প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে, ব্যাপক দারিদ্রা, জাতীয় আয়ের স্বল্পতা, সঞ্চয়হীনতা, উন্নয়নের জন্য সঠিক নীতির অভাব, ক্রমবর্ধমান জন্মহার, বৈদেশিক বাণিজ্যে নিভিয়ে থাকার মনোভাব এই সমস্ত দেশগুলির আত্মবিশ্বাসকে ক্রমেই স্থবিরতার দিকে ঠেলে দেয়। বর্তমানে, উৎপাদন, পরিকাঠামো এবং পরিসেবার কৃতসংকল্পে এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ 'উন্নয়নশীল' দেশের স্বীকৃতি লাভ করলেও, অর্থনৈতিক ভিতের দুর্বলতার কারণে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলিকে গ্রহণ করতে এখনো যথেষ্ট পিছুপা রয়েছে। তাছাড়া, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ব্রাজিল, চিলির মতো দেশগুলি অনুন্নয়নের চিরাচরিত বেড়াজাল থেকে বেরোনোর জন্য তাদের সমস্ত ব্যর্থতার দায়ভার অতীতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অবশ্য বর্তমানে, এই সকল দেশগুলিতে আর্থসামাজিক সমৃদ্ধির প্রকল্পগুলি পুনর্গঠিত হওয়ায়, এখানকার অনুন্নয়নের চেহারা আগের চেয়ে অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। আজ আমরা বিশ্বের সমগ্র দেশে পুঁজিবাদের নতুন এক পর্যায় দেখতে পাচ্ছি-যার নাম হল নয়া উদারবাদী বিশ্বায়ন।

সামাজিক কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রবাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতি একটি উন্নয়নশীল দেশকে কতটা পরিবর্তিত করতে পারে, তার সুস্পষ্ট নিদর্শন আমাদের খুব কাছের প্রতিবেশী দেশ চিনকে দেখলেই বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দেড়শ বছরের একচ্ছত্র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চিন শেষ পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক তহবিল (International Monetary Fund)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে অর্থনৈতিক শক্তি তথা প্রবৃদ্ধির স্তরে চিন এখন বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। আর সেই কারণেই বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য অধিকাংশ পিছিয়ে পড়া দেশ তাদের সার্বিক সমৃদ্ধি আর উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে চিনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল দেশরূপে গণ্য করে থাকে। সম্প্রতি, ILO, IMF, WTO, বিশ্বব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনের সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে "The World Economic Forum" সর্বজনীন উন্নয়ন সূচক তৈরি করছে। এখানে বিশ্বের মোট 74টি দেশকে স্বল্পোন্নতরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের অনুন্নত বা তথাকথিত ভবিষ্যতের উন্নয়নশীল দেশগুলির কয়টি অর্থ সামাজিক পরিস্থিতির পরিসংখ্যার আকার উপস্থাপন করা হলো। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01