বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্র (Rainfall Dispersion Diagram)
আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলির মধ্যে বৃষ্টিপাত হল এমন একটি উপাদান যার সময়ান্তরে ধারাবাহিকতার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। এই তারতম্য কোনো অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। তাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ঋতভিত্তিক বা অঞ্চলভেদে প্রগাঢ়তার (intensity) পার্থক্য অথবা ধারাবাহিকতা (Consistency) অধ্যয়ন জলবায়ুবিদার এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্র (Rainfall Dispersion Diagram) হল এমন একটি একমাত্রিক লেখচিত্র যার দ্বারা কোনো অঞ্চলের ঋতুভেদে কিংবা অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতার তারতম্য উপযুক্ত রাশিমাত্রিক বিশ্লেষণ সহকারে লেখচিত্র দ্বারা উপস্থাপন করা যায়।
নীতি (Principle) বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্র অঙ্কনের প্রধান উদ্দেশ্য হল সময়ভেদে বৃষ্টিপাতের পরিমাষের ধারাবাহিকতার তারতম্য নির্ণয় করা। এখন এই তারতম। কোনো অঞ্চলে বিভিন্ন মাসের বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা সংক্রান্ত হতে পারে কিংবা অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা সংক্রান্ত হতে পারে। তবে উভয়ক্ষেত্রেই ধারাবাহিকতা পরিমাপের জন্য অন্তত 30 থেকে 35 বছরের বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত রাশিতথ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। রাশিতথ্যের ধারবাহিকতা বলতে বিভিন্ন চলরাশি (variables) কতটা কেন্দ্রীয় রাশিমানকে (Central value) অনুসরণ করছে তা বোঝায়। অর্থাৎ রাশিতথ্যের বিস্তৃতির পরিমাপ (measures of dispersion)-কে বোঝায়। রাশিতথ্যগুলি কেন্দ্রীয় মান থেকে যত কম বিচ্যুত হবে সেটি তত বেশি ধারাবাহিক হয়। রাশিবিজ্ঞানে রাশিতথ্যের ধারাবাহিকতা পরিমাপের জন্য একাধিক পরিমাপক রয়েছে। এগুলির মধ্যে বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে Co-efficient of quartile deviation- ব্যবহার করা হয়।
বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ মানচিত্রের ক্ষেত্রে Co-efficient of quartile deviation-এর ব্যবহার করার প্রধান কারণ হল এটি এমন একটি বিস্তারের পরিমাপক (measures of dispersion) যেখানে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক হিসাবে মধ্যমা (median)-র ব্যবহার হয় এবং মধ্যমার মান থেকে উভয়দিকে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ রাশিমানের মধ্যে একটি করে মোট দুটি বিভাজন মান (Partition Values) থাকে। মধ্যমা এবং এই দুটি বিভাজন মান মিলে সমস্ত রাশিতথ্যকে সমান পরিসংখ্যাযুক্ত এটি অংশে ভাগ করে দেয়। বিভাজন মান হিসাবে এখানে প্রথম চতুর্থক (1st quartile) এবং তৃতীয় চতুর্থক (3rd quartile)-কে ব্যবহার করা হয়। এই নীতি অনুযায়ী সমগ্র রাশিতথ্যকে সমপরিসংখ্যা বিশিষ্ট চারটি অংশে ভাগ করলে প্রতিটি অংশে রাশিতথ্যের পরিসংখ্যান হবে 25% করে। এই ধরনের বিভাজনের প্রধান সুবিধা হল কোনোরূপ জটিল পরিমাপ ছাড়াই লেখচিত্র (Graph) দ্বারা রাশিতথ্যের যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা করা যায়। উপরন্তু লেখচিত্র দেখেই বণ্টনের প্রকৃতি তথা ধারাবাহিকতা অনুধাবন করা যায়। বণ্টনের প্রকৃতি যদি সুষম হয় তবে সর্বনিম্ন মান থেকে Q. Q, থেকে median, median থেকে Q, এবং Q, থেকে সর্বোচ্চ মানের বিস্তৃতি একই হবে। আবার বণ্টন প্রকৃতি অসম হলে এদের মধ্যে বিস্তৃতি অসম হবে। বিস্তার যত বেশি অসম হবে রাশিতথ্যে ধারাবাকিতা তত কম হবে। অর্থাৎ, এন্টিপাতের ধারাবাহিকতা কমবে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই বৃষ্টিপাতের বণ্টন প্রকৃতি তথা ধারাবাহিকতা চাক্ষুষ অনুধাবন করা যায়।
সূত্র (Formula): বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্র অঙ্কনের জন্য বিচ্ছিন্ন চলরাশির (Discrete Variable) নীতি অনুযায়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চতুর্থক (1st, 2nd and 3rd quartile) নির্ণয় করতে হবে। এছাড়া ধারাবাি উপস্থাপনার জনা Co-efficient of quartile deviation নির্ণয় করতে হবে। মাত্রা সুতরাং চলরাশির মোট পরিসংখ্যা N হলে এদের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় চতুর্থকের সূত্রটি হবে-
1. প্রথম বা নিম্ন চতুর্থক (Lower quartile or Q): (N + 1)/4 তম মান।
১. মধ্যমা অথবা দ্বিতীয় চতুর্থক (Median or Q² ) (2(N + 1))/4 তম মান।
3. তৃতীয় বা উর্ধ্ব চতুর্থক (Upper quartile or Q.) (3(N + 1))/4 তম তম মান।
Co-efficient of quartile deviation (CQ)-এর সূত্রটি mathfrak R [ A - CQ = (Q³ - Q¹)/(Q¹ + Q³)
অঙ্কন পদ্ধতি (Method of Construction):
প্রথম পর্যায়ে একই অনুভূমিক রেখা (X-অক্ষ)-এর ওপর সমান প্রস্থের কতকগুলি সংলগ্ন উল্লম্ব স্তম্ভ আঁকা হয়। সাধারণত বৃষ্টিপাতের মাসিক পরিবর্তনশীলতা দেখাতে বারো মাসের জন্য 12 টি স্তম্ভ আঁকা হয়। প্রতি মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে স্তম্ভের মাঝ বরাবর উল্লম্বভাবে সুনির্দিষ্ট স্কেল অনুযায়ী সমান আকৃতির বিন্দু বা ডট বসাতে হয়। এক-একটি ডট বা বিন্দু এক এক বছরের মাসিক বৃষ্টিপাতকে নির্দেশ করে। যদি 36 বছরের বৃষ্টিপাতের মাসিক বণ্টনের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে প্রতিটি মাসের স্তম্ভে 36 টি করে বিন্দু বা ডট্ থাকবে (যদি বছরের সব মাসেই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে)। অন্যদিকে যদি দেখা যায় যে, কোনো একটি মাসে একাধিক বছরে সমান পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাহলে ওই বছরগুলির জন্য বিন্দুগুলিতে স্তম্ভের মাঝ বরাবর স্থাপিত বিন্দুর ডান ও বাম দিকে অনুভূমিকভাবে বসাতে হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বারো মাসের জন্য পৃথক পৃথকভাবে হিসাবীকৃত Q_{y} Q_{2} বা মধ্যমা ও Q_{j} এর মান দিয়ে স্তম্ভগুলিকে ওপর-নিচে চারভাগে ভাগ করা হয়। ধরা যাক, 36 বছরের মাসিক বৃষ্টিপাতকে বিন্দুর মাধ্যমে উল্লম্ব স্তম্ভে দেখানো হল। এর অর্থাৎ 18-5-তম বিন্দুর মান মধ্যমা বা Q_{2} নির্দেশ করে। এভাবে (N + 1)/4 . (N + 1)/2 -তম এবং (3(N + 1))/4 -তম বিন্দুগুলির মান যথাক্রমে Q_{1} ও Q_{3} নির্দেশ করে। প্রতিমাসের সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন মান Q_{2} ও Q_{3} এর মানের সাহায্যে অনুভূমিক রেখা আঁকলে স্তম্ভগুলি চারভাগে ভাগ হয়ে যায়। স্তম্ভের মধ্যে এই ভাগগুলির মধ্যবর্তী দূরত্বই চতুর্থক অন্তর্বর্তী প্রসার (Interquartile range) নির্দেশ করে। স্তম্ভের এই ভাগগুলিকে পৃথক পৃথক রং বা ছায়াপাতের সাহায্যে দেখানো হয় যা বৃষ্টিপাত প্রক্ষেপ চিত্রকে উপস্থাপন করে।
ব্যবহার (Uses): মধ্যমার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থক মানগুলির প্রসার বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা বা স্থিতিশীলতাকে সূচিত করে। এই পরিবর্তনশীলতার মাত্রা বিশ্লেষণ করে কৃষিবিজ্ঞানীরা খরা, বন্যার হাত থেকে কৃষিক্ষেত্রকে বাঁচানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে জলের সরবরাহ বজায় রাখতেও এই চিত্র সাহায্য করে।