অ্যান্টার্কটিকায় ওজোন ক্ষত সৃষ্টির পদ্ধতি (Process of development of Ozone Hole)
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপর ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমার পিছনে রসায়নবিদরা মনুষ্য কারণে সৃষ্ট ক্লোরিন দূষণ ও ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের অতিব্যবহারকে দায়ী করেছেন। এই সকল ক্লোরিন যৌগগুলি নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে গ্যাসীয় ক্লোরিন নাইট্রেট (CLONO,) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI) রূপে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় উপস্থিত থাকে এবং নিম্নলিখিত পর্যায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ওজোন স্তরকে বিনষ্ট করে-
প্রথম পর্যায়:
শীতকালে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে একটানা রাত্রিকালীন সময় সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে হ্রাস পায় এবং -৪০° সেঃ উন্নতায় নেমে আসে। এই সময়ে মেরুপ্রদেশীয় উচ্চচাপবলয় থেকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরুবায়ু নিম্নচাপ বলয়ে উপস্থিত হয়ে ওপরে উঠতে থাকে এবং ঊর্ধ্বাকাশে এই বায়ু পুনরায় পশ্চিমা বায়ুরূপে মেরুপ্রদেশের দিকে ফিরে যায়। মেরুতে কোরিওলিস বল সর্বাধিক হওয়ায় এই বায়ুর গতিবেগ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে বিক্ষেপণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত পাক খেতে থাকে। ফলে কেন্দ্রে একটি আবর্তের (vortex) সৃষ্টি হয়। এই আবর্তের মধ্যস্থিত বায়ুর গতিবেগ 300 কিমিরও বেশি হয়। ফলে, আবর্ত মধ্যস্থিত বায়ু চারপাশের বায়ু থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় পর্যায়:
মেরু অঞ্চলে ট্রোপোপজ ভুপৃষ্ঠের কাছাকাছি হওয়ায় বায়ুসংবহন প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই জলীয় বাষ্পসহ অ্যারোসল স্টট্র্যাটোস্ফিয়ারে চলে আসে এবং অধিক শীতলতার কারণে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে মেঘের (Polar Stratospheric Cloud-PSC) সৃষ্টি করে। এই মেঘে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে আসা নাইট্রিক অ্যাসিড ঘনীভূত হয়ে নাইট্রিক অ্যাসিডের ট্রাই হাইড্রেট (HNO, 3H₂O) কেলাসরূপে অবস্থান করে। এই সময় ওজোন স্তরে তৈরি হওয়া আর্বতের চারদিকে ক্লোরিন নাইট্রেট (CLONO,) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCI) নিষ্ক্রিয়ভাবে অবস্থান করে।
তৃতীয় পর্যায়:
এই পর্যায়ে স্ট্যাটোস্ফেরিক মেঘের গায়ে (PSC) ক্লোরিন এইট্রেট এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড কেলাসের অংশরূপে ভাবুক্ত হয়। হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সঙ্গে ক্লোরিন নাইট্রেটের সাঘাত ঘটলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আণবিক ক্লোরিন (CL) ব্যাস উৎপন্ন হয়।
CIONO, + HCICL + HNO,
চতুর্থ পর্যায়:
দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তের শুরুতে সূর্যালোকের প্রথম আবির্ভাবে ক্লোরিন অতিবেগুনি রশ্মি দ্বারা বিয়োজিত হয়ে পরমাণবিক ক্লোরিনে (CI) পরিণত হয়। এই ক্লোরিন অণু ওজোন অণুকে (O) ভেঙে অক্সিজেন অণু (O.) এবং ক্লোরিন মনোক্সাইডে পরিণত হয়.
CL, UV-B 2C1 C1+0,0,+CIO
এভাবে ওজোন অণুর বিয়োজনের ফলে ওজোন স্তর ক্রমাগত পাতলা হয়ে ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি করে।
বসন্তের পরবর্তী সময় উন্নতা বৃদ্ধিতে বায়ুর গতি হ্রাস পেলে আবর্ত স্থির হয়ে ওজোন বিয়োজন বন্ধ হয় এবং পুনরায় ওজোন স্তর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। এভাবে ওজোন স্তরের চক্রাকারে ক্ষয় ও সৃষ্টি চলতে থাকে