welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পরিকল্পনা ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা(Planning and Regional Planning)

পরিকল্পনা ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা(Planning and Regional Planning)


পরিকল্পনার ধারণা (Concept of Planning):

• সাদারণ অর্থে পরিকল্পনা (Planning in gen- eral sense): সাধারণ অর্থে পরিকল্পনা হল কোনও সমস্যা ও সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন কার্যক্রমগুলিকে উন্মুক্তভাবে বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে সেগুলির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটানো। সেইকারণে, পরিকল্পনা উন্নয়নের হাতিয়ার স্বরূপ রাষ্ট্রীয় তথা আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিমূলক সমস্ত কর্মকাণ্ডকে সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন করার একটি কার্যকরী নকশা।

• বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ অনুসারে পরিকল্পনার সং (Definition of planning according to expert perspective): বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্যে পরিকল্পনার ধারণাটিকে ব্যাপক এবং সার্থকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এখানে পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হল।

1935 খ্রিস্টাব্দে John Glasson বলেছেন- Planning include a sequence action winch are designed to solve problems in the future." অর্থাৎ, পরিকল্পনা হল এমন কতকগুলি কার্যক্রমের পরম্পরা যেটি ভবিষ্যতের সমস্যার সমাধানের উদ্ভাবন করা হয়েছে। 

1965 খ্রিস্টাব্দে Friedman এবং Alonso তাঁদের লেখা 'Regional Planning and Development' গ্রন্থের 64 পৃষ্ঠাতে (MIT থেকে প্রকাশিত) উল্লেখ করেছেন- "Planning is primarily a way of thinking about social and economic problems, planning is oriented predominatly toward the futue, is deeply concerned with the relation of goals to collective decisions and strives for comprehensiveness in policy and program. Whenever these modes of thought are applied, there is a presumption Bat planning is being dome."

অর্থাৎ, পরিকল্পনা মূলত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার একটি উপায়, পরিকল্পনা প্রধানত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কোনও বৃহত্তর সমষ্টিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার গভীর চিন্তাভিত্তিক নীতি বা কর্মসূচিকে অবগত করে। যখনই এই চিন্তাধারাগুলির প্রয়োগ ঘটে, সেখানে মনে করা হয় পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

1968 খ্রিস্টাব্দে Branch এবং Robinson বলেছেন, পরিকল্পনা হল 'a deliberate, organized and coutimious process of identifying different elements and a organism, determining their present state and internation।

পরিকল্পনার সমন্বয়ী সংজ্ঞা (Cohesive definition of Planning): পরিকল্পনা হল সাংগঠনিক ব প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গৃহীত যুক্তিগ্রাহ্য, বিধিসম্মত এবং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন একটি গতিশীল কৌশলগত কার্যকরী প্রক্রিয়া, যা ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়।

পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Planning):

পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

• উদ্দেশ্য অর্জন (Achieve purpose): পরিকল্পনা হল যে-কোন উন্নয়ন অভিমুখী উপলক্ষ্যের একটি প্রাথমিক কার্যকরী পদক্ষেপ। কারণ, সংগঠিতভাবে একক বা বহুমুখী আঞ্চলিক উদ্দেশ্যসাধনকে উপেক্ষা করে পরিকল্পনার কথা কখনো ভাবায় যায় না। 

সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision making): পরিকল্পনার বিষয়টি সর্বদা কোনও একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে জড়িত থাকে। এখানে, যাবতীয় সিদ্ধান্তগুলিকে কোনও সরকারী বা বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় নির্ধারিত হয়।

• সার্বজনীনতা (Universality): যে-কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগের বিষয়টি আঞ্চলিক তথা জাতীয় স্তরের নিরিখে যথেষ্ট বিস্তৃত এবং সার্বজনীন প্রকৃতির হয়ে থাকে।

• ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া (Future process): যেকোনো সমস্যা-সম্ভাবনামূলক বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতকে উপলক্ষ্য করেই যাবতীয় পরিকল্পনাকে বিধিবদ্ধ করা হয়। এই দিক থেকে, পরিকল্পনা হল ভবিষ্যৎ-এর লক্ষ্যপূরণের একটি ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া।

ধারাবাহিকতা (Continuity): পরিকল্পনামূলক ব্যবস্থাপনাটি যাতে তার নির্দিষ্ট কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে কখনোই বিচ্যুত না-হয়, সেই কারণে এর সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিকে ক্রমাগত মূল্যায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। তাই সমস্ত পরিকল্পনাই যথেষ্ট ধারাবাহিক প্রকৃতির।

• নির্দেশনা (Instructions): কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ বা নির্দেশনার কাজে বিভিন্ন রাষ্ট্র-স্বীকৃত পরিকল্পনা কমিশন বা বিশেষজ্ঞ কমিটি, অথবা বিশেষজ্ঞদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এই কারণে Koontz এবং Dounel বলেছেন- Plamang is an hitellectual

• সর্বোত্তম বিকল্প (The best option): পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য উপলব্ধ সব ধরনের বিকল্পগুলিকে সামনে রেখেই সর্বোত্তম পরিকল্পনা কৌশলটিকে নির্বাচন করা হয়ে থাকে।

• নির্ধারিত সময় (Schedule time): পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। তাই বেশির ভাগ পরিকল্পনাগুলি স্বল্প বা দীর্ঘকালীন নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে ধার্য করা হয়।

• আন্তানির্ভরশীলতা (Interdependency): পরিকল্পনা একটি আস্তানির্ভরশীল প্রক্রিয়া, যেখানে সমস্ত ধরনের কৌশলগত নীতি, কর্মসূচি এবং পদ্ধতিগত বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাগুলি একে অপরের সহযোগী, আন্তঃনির্ভরশীল ও সমন্বয়মূলক হয়ে থাকে।

• পরিবর্তনশীলতা (Flexibility) অনেকসময় উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গঙ্গতি রেখে পরিকল্পনায় একাধিক পরিবর্তন ঘটানো হয়। এই ধরনের নমনীয় নীতি সমগ্র পরিকল্পনাটিকে আরো উৎকৃষ্ট করে তোলে।

 পরিকল্পনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যসমূহ (Aim or Objective of the Planning):

পৃথিবীতে মানুষের দ্বারা নির্ধারিত এবং পরিচালিত প্রতিটি বিধিসম্মত কাজেরই নির্দিষ্ট কতকগুলি লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। এখানে, পরিকল্পনার লক্ষ্য আসলে ভবিষ্যতের কোনো কাঙ্ক্ষিত ফল বা প্রান্তিক উন্নয়নকেই ইঙ্গিত করে। এ প্রসঙ্গে, W. H. Newman মন্তব্য করেছেন Plan expressed as a result to be achieve may be called goals, অর্থাৎ, অর্জনযোগ্য ফলাফলের বর্ণনাই হল লক্ষ্য। প্রধানত যে সমস্ত লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা করা হয়, সেগুলি হল-

অর্জন competancy): পূর্বনির্ধারিত বিভিন্ন সময়োপ- যোগী, কার্যকরী এবং বহুমুখী উন্নয়নমূলক সক্ষমতাকে বাস্তবে রূপ দিতেই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে পরিকল্পনামূলক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা হয়।

ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রণয়ন (Formulating future programme): প্রতিটি রাষ্ট্র ভবিষ্যতে প্রগতির ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রাখতে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা বা পরিকল্পিত নকশার উদ্ভাবন করে থাকে। ঠিক সেই কারণেই, বিখ্যাত পরিকল্পনাবিদ L. A. Allen বলেছেন- Plan is the trap to capture the future অর্থাৎ, পরিকল্পনা হল ভবিষ্যৎকে ধরার একটি ফাঁদ।

জীবনদায়ার সার্বিক সমৃদ্ধি (Overall prosperity of life): রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিলতা হ্রাস করে সার্বিকভাবে জনজীবনের মানোন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যেই যাবতীয় পরিকল্পনাগুলিকে গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে, নতুন উদ্ভাবনা বা পরিকাঠামো সৃষ্টি, নাগরিক পরিসেবা বৃদ্ধি, বিভিন্ন কর্মকান্ডে জনগণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতকরণ, সমষ্টিগত বিকাশ সহ একাধিক জনহিতকর কাজকর্মগুলিকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় এনে খুব সহজেই ব্যস্তি ও গোষ্ঠী কেন্দ্রিক জীবনধারাকে সমৃদ্ধির অভিমুখী করে তোলা হয়।

• অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ (Economic expansion):কোনও একটি দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার যৌথ সমন্বয় ঘটিয়ে সংগঠিত অর্থনৈতিক কাঠামোর সম্প্রসারণ কদরতে উপযুক্ত পরিকল্পনার সাহায্য নেওয়া হয়। বিংশ শতকের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সময় জুড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গৃহীত পরিকল্পনাগুলির মূল উদ্দেশ্যই ছিল অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ।

 পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্যসমূহ

সম্পদের সুষম বণ্টন সুনিশ্চিতকরণ (Ensuring equitable distribution of resources): কোনও একটি দেশ তাদের প্রাপ্ত সম্পদের নিরিখে কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ অথবা একটি দেশের প্রাপ্ত সম্পদের সমবন্টন তথা সুষ্ঠু ব্যবহার সমাজের সমস্ত স্তরে কতটা সুনিশ্চিত, তা অনুধাবন করার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনার সাহায্য নিয়ে থাকে। আসলে, সুষ্ঠুভাবে সম্পদ সরবরাহ পরোক্ষভাবে যেমন সম্পদের অপচয় রোধ করে, একইভাবে চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য গড়ে তোলে। ভারতের পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনকে তাই অন্যতম উপলক্ষ্য হিসেবে ধার্য করা হয়েছিল।

• আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ (Elimination of regional disparities): আঞ্চলিক উন্নয়নের সমস্ত দিক থেকে সমৃদ্ধশালী অবস্থায় রয়েছে এমন কোনও দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যথেষ্ট দুষ্কর। কারণ, প্রায় সমস্ত দেশের সামাজিক তথা অর্থনৈতিক পরিসরে গ্রাম-শহর, উন্নত-অনুন্নত, কর্মহীন-কর্মে নিযুক্ত, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যথেষ্ট স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই, পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হল এই ধরনের আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো।

• নগরোয়য়ন (Urban development): আধুনিক সভ্যতায় নগরগুলিকে যেহেতু উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্রে উপনীত, তাই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে নগরোন্নয়নকেই পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য বিবেচনা করা হয়।

• বিকল্প কর্মকাণ্ড নির্ধারণ (Determining alternative activities): উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডকে বিকল্পরূপে বেছে নেওয়া হয়, সেগুলিকে যথাযথ পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যেও অনেকসময় নানা ধরনের পরিকল্পনার স্তর (Strategic Planning, Developmental Planning, Multilevel Planning প্রভৃতি) গৃহীত হয়।

• সহযোগিতা ও সমন্বয় (Collaboration and coordination): আঞ্চলিক পরিসরে বিভিন্ন ব্যক্তি তথা গোষ্ঠীভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা তথা পারস্পরিক বৈরীতামূলক সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

 পরিকল্পনার পটভূমি (Background of Planning):

পৃথিবীতে পরিকল্পনামূলক পদক্ষেপের একটি দীর্ঘ পটভূমি লক্ষ্য করা যায়। ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় পুঁজিবাদকে অবলম্বন করে ইউরোপের যে কয়েকটি দেশে প্রথম পরিকল্পনার সূত্রপাত ঘটেছিল, তার মধ্যে সাবেকি রাশিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম। মূলত রুশ বিপ্লবের পরবর্তী পর্যায়ে ভেঙ্গেপড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে উন্নয়নের সমূহ প্রচেষ্টা সংশ্লিষ্ট দেশগুলির বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে কিছুটা অস্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল। তৎকালীন অধিকাংশ পরিকল্পনার মুখ্য বিষয় ছিল স্থানীয় কিছু সমস্যা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং তার নিরসনের জন্য উপযুক্ত কর্ম পন্থা অবলম্বন করা। 

অধিকাংশ ভৌগোলিক মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, পরিসেবার ঘাটতি, জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারজনিত কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা (Economic depression)-র কারণে সেই সময়কার পরিকল্পনার বিভিন্ন কৌশল এবং প্রয়োগ পদ্ধতি কিছু বাধার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এই সময়কালে, শুধু সাবেকি রাশিয়া বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ব্রিটেন, জার্মানি সহ বেশকিছু অর্থনৈতিক শক্তিধর রাষ্ট্রতে জনহিতকর স্থানিক পরিকল্পনাগুলি ক্রমেই সামরিক পরিকল্পনায় প্রতিস্থাপিত হয়। অবশ্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বিতীয় বিশ্বযুশোকর পৃথিবীতে গৃহীত একাধিক পরিকল্পনা পুনরায় অর্থনৈতিক দুর্দশা নিরসন এবং সামাজিক কল্যাণকর বিভিন্ন ক্ষেত্রের দিকে নতুনভাবে মোড় নেয়। তৎকালীন সময়ে, জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠন, শিল্প এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন তথা বিভিন্ন সংস্কারমূলক ধারাবাহিক প্রথাকে অব্যাহত রাখতে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ ছিল একমাত্র হাতিয়ার।

পঞ্চাশের দশক থেকে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে পরিকল্পনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম দায়বদ্ধতা রূপে গণ্য করা হয়। এই সময়কালে 'Growth Centre and Growth Management'-এর ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের একাধিক দেশ তাদের আধুনিক পরিকল্পনা গুলিকে কার্যকর করে তোলে। বিশেষ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র চীন জার্মান ভারত সহ একাধিক দেশগুলিকে শহর এবং বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্রিক পরিসরে অঞ্চলিক পরিকল্পনা দৃষ্টিভঙ্গিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয় ওঠে। পরবর্তীকালে অবশ্যই পরিকল্পনা অধিকাংশ ও দৃষ্টিভঙ্গি এর ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এর নিয়ন্ত্রণ অধি বিভিন্ন জন নিরাপত্তার মূলক ভাবধারা গড়ে ওঠে, যার মাধ্যমে নগর পরিকাঠামো সৃষ্টি কার্যক্রম গুলি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত হয়। 

পরিকল্পনার বিভিন্ন ক্ষেত্র (Different Areas of Planning):

বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে আজ পর্যন্ত অধিকাংশ দেশ পরিকল্পনা প্রয়োগের জন্য যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে পাখির চোখ ভেবে নেয়, সেগুলি হল-

* রাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন বহুমুখী জনহিতকর কাজকর্ম (যেমন- গণবণ্টন ব্যবস্থা, আর্থিক সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য পরিসেবার সম্প্রসারণ প্রভৃতি)।

* ভূমির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার ও ভূমি সংস্কার (যেমন-পতিত জমি পুনরুদ্ধার, ভূমির মূল্যমান নির্ধারণ, ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, ভূমি কর প্রথা প্রচলন প্রভৃতি)।

* অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ (যেমন- জাতীয় সড়ক সংযোগ ব্যবস্থাপনা, ব্যাবসাবাণিজ্য পরিকল্পনা প্রভৃতি)।

* পরিসেবা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ (যেমন জাতীয় সড়ক সংযোগ ব্যবস্থাপনা, ব্যাবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রভৃতি)। 

নগরোন্নয়ন (যেমন-নগরের আধুনিকীকরণ, উন্নত নগরকাঠামো সৃষ্টি, নাগরিক পরিসেবার সম্প্রসারণ, বহুমাত্রিক ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থাপনার বাস্তবায়ন, পুনর্নগরায়ণ [Reurbanisation] প্রভৃতি)।

 পরিবেশগত সুরক্ষা প্রদান (যেমন দুর্যোগ ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনামূলক পরিকল্পনা, পরিবেশগত বেদন অনুধাবন প্রভৃতি)।

 পরিকল্পনার মুখ্য নিয়ন্ত্রকসমূহ (The Main Regulators of the Planning):

পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যে-সমস্ত বিষয় মুখ্য নিয়ন্ত্রকরূপে কাজ করে থাকে, সেগুলি হল-

• প্রতিশ্রুতি (Vows/Commitment): কল্যাণকামী প্রতিটি রাষ্ট্রে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলিকে সঠিকভাবে

পরিচালনা ও সেগুলির বাস্তবায়ন ঘটাতে বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় পরিকল্পনাকে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য বা অন্যতম ব্রতরূপে গ্রহণ করে থাকে। কারণ, নির্দিষ্ট উপলক্ষ্যকেন্দ্রিক পরিকল্পনা ব্যতিরেকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত ফললাভ করা প্রায় অসম্ভব।

• নীতি (Principle): পরিকল্পনাভিত্তিক যে-কোনও কার্য সম্পাদন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিকে একটি অন্যতম ধার্য নিয়ন্ত্রক বলে মনে করা হয়। সঠিক উদ্দেশ্যপূরণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার সিদ্ধান্তগুলি যাতে সর্বোত্তম হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট নীতিগুলি উপযুক্ত বিবৃতি বা নির্দেশিকার কাজ করে থাকে। তবে, অধিকাংশ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এই ধরনের নীতিগুলি গ্রহণে সর্বদা নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়।

• কৌশল (Policy): সমস্ত ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবে উপযুক্ত রূপ পেয়ে থাকে বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে।

আসলে পরিকল্পনা ঠিক কোন পথে এবং কীভাবে পরিচালিত হবে, তার সঠিক নির্দেশিকাগুলি সুগঠিত কৌশলের মাধ্যমেই স্থির করা হয়। এক্ষেত্রে কোনও একটি অঞ্চলে বিভিন্ন সময়কালে সেখানকার আর্থসামাজিক বা পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়টিকে বিবেচনা করা হয়। যেমন-পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত পরিকল্পনার সঠিক কৌশল নির্ধারণ করতে, অতীতে সেখানেকার ভূমির অবস্থা, ভূমিকে কেন্দ্র করে মানুষের বহুমুখী কার্যাবলি তথা ভূমি ব্যবহার প্রথা, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশগত প্রেক্ষাপটে ভূমিভাগের পরিবর্তনশীলতা সহ একাধিক বিষয়গুলি পরিকল্পনা কৌশল নির্বাচনের অন্যতম নির্দেশ। তাছাড়া পরিকল্পনা কৌশলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত প্রশ্ন ও হয়ে থাকে। পাশের ধারণা চিত্রের মাধ্যমে সেগুলিকে উপস্থাপন করা হলো 

প্রক্রিয়া (Procedure): দৈশিক কাঠামোয় যে নির্দিষ্ট ক্রম প্রণালী অনুসারে বিভিন্ন করা হয়, তাকেই প্রক্রিয়া বলা যায়। এ প্রসঙ্গে Whirich & Koontz বলেছেন- 'প্রক্রিয়া হল এমন একটি পরিকল্পনা যা ভবিষ্যৎ কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি সম্পাদন করে' (Procedures are plans that establish a required method of handling future activities.)1 বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে যথাযথ প্রক্রিয়া কৌশল যে কোনও পরিকল্পনাকেই সুদৃঢ় ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। তবে, কার্যক্ষেত্রে বেশির ভাগ পরিকল্পনায় প্রক্রিয়া উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর অভিমুখী হয়ে থাকে।

• বিধি (Rule): পরিকল্পনার উপযুক্ত কৌশলগুলিকে প্রয়োগ করা, অথবা কার্যক্ষেত্রে পরিকল্পনাটি রূপায়িত করতে কী করা উচিত বা কোনগুলি অনুচিত, তার নির্দিষ্ট নিয়মগুলিই হল পরিকল্পনার বিধি। এ প্রসঙ্গে Matrol & Martin বলেছেন- Rule is a statement that spells out a specification to be taken or not taken in particular situation, পরিকল্পনায় গৃহীত বিধিগুলি সেই কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উন্নয়নমূলক প্রতিটি কার্যকরী কৌশলকে সর্বদা একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় বেঁধে রাখে।

• প্রকল্প (Project): পরিকল্পনা কাঠামোয় প্রকল্প হল এমন একটি কর্মপন্থামূলক প্রতিনকশার কার্যসূচি যা নির্দিষ্ট কোনও লক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে। যেমন-কোনও একটি নদীবাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে একটি নির্দিষ্ট ব্লু-প্রিন্টকে ব্যবহার করা হয়। এখানে, সংশ্লিষ্ট কর্মধারার ব্লু-প্রিন্টটি গৃহীত প্রকল্পের অংশীভূত। বর্তমানে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনও স্মার্ট প্রকল্প রূপায়ণে যে সমস্ত শর্ত আরোপ করা হয়, সেগুলি হল-

সুনির্দিষ্ট (Specific),

• পরিমাপযোগ্য (Measurable),

• সময়াবদ্ধতা (time-bounding) প্রভৃতি।

• প্রাসঙ্গিক (Relevant),

▶ অর্জনযোগ্য (Acheivable),

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পরিকল্পনার প্রকৃতি এবং অভিমুখ অনুযায়ী পৃথক পৃথক প্রকল্প নির্মাণ করা হয়ে থাকে। তবে, অনেক সময় বেশ কিছু ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য অদ্বিতীয় প্রকল্প পরিবর্তন কখনও নতুন পরিকল্পনা অন্যতম প্রয়োগমূলক পথনির্দেশিকা বিবেচিত হয়। এখানে প্রকল্প একটি ধারণা ভিত্তিক মডেল নির্মলিখিত চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো। 

পরিকল্পনার শ্রেণিবিভাগ (Classification of Planning):

পরিকল্পনার প্রকৃতি, বিধি, বৈশিষ্ট্য এবং উদ্দেশ্য সহ একাধিক নির্ধারকের ভিত্তিতে এর বেশ কয়েকটি রূপ বা শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। এগুলি হল-

পরিকল্পনা ক্ষেত্র অনুসারে (According to the planning field)

ক্ষেত্র অনুসারে পরিকল্পনা চার ভাগে বিভক্ত, যেমন-

• স্থানিক পরিকল্পনা (Spatial planning): পরিকল্পনার যাবতীয় কার্যক্রম যখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও একটি অঞ্চলের ক্ষুদ্র প্রশাসনিক এলাকাগুলিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত অথবা বাস্তবায়িত হয়, তাকেই স্থানিক পরিকল্পনা বলা হয়। সাধারণত এই ধরনের পরিকল্পনামূলক কার্যক্রমে স্থানীয় ভূমি ব্যবহার, এলাকাভিত্তিক সামাজিক বা অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন, স্থানীয় স্থানীয় পরিবেশগত সমস্যাবলীর (বিভিন্ন দূষণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ) মোকাবিলার প্রতিটি লি ক্ষেত্রকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

যেমন-শহুরে পুনর্নবীকরণ প্রকল্প, সম্প্রদায়গত পরিকল্পনা, নিষ্কাশন সমস্যা মোকাবিলা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলি এই প্রকৃতির।

শহরাঞ্চলে ভারসাম্যযুক্ত নিকাশী ব্যবস্থাপনা

• আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Regional planning): যখন কোনও একটি অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে অথবা অঞ্চলটির সার্বিক বিকাশ তথা উন্নয়নকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে আঞ্চলিক পরিকল্পনা বলা হয়।

যেমন-কোনও একটি রাজ্যের অন্তর্গত শিল্পাঞ্চলের পরিকল্পনা।

• জাতীয় পরিকল্পনা (National planning): যে সমস্ত পরিকল্পনার সঙ্গে কোনও একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সামগ্রিক তথা কোনো না কোনো স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, তাকে জাতীয় পরিকল্পনা বলা হয়। এই ধরনের পরিকল্পনাগুলি একটি দেশের প্রধান প্রতিনিধিকারী সরকার এবং অন্যান্য রাজ্যগুলির যৌথ সিদ্ধান্তের ওপর গৃহীত হয়।

যেমন-ভারতের গঙ্গা অ্যাকশান প্ল্যান।

• আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা (International planning): যে উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা রূপায়ণের সঙ্গে একাধিক দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।, তাকে অন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বলা হয়। 

যেমন-বিশ্বের বাণিজ্য সংস্থা পৃথিবীর গৃহীত কখনো অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা। 

রাষ্ট্রের প্রকৃতি অনুসারে (According to the nature of the state)


• উন্নত দেশের পরিকল্পনা (Planning of the developed country): আর্থ-সামাজিক দিক থেকে

এগিয়ে থাকা উন্নত দেশগুলি নিজস্ব সহায়ক সম্পদ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, বিপুল অর্থ সহকারে সামগ্রিক কল্যাণমূলক লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। এই সমস্ত দেশের পরিকল্পনাগুলি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে অতি দ্রুত রূপায়িত হয়।

যেমন-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জাপান, জার্মানি প্রভৃতি দেশের পরিকল্পনা।

• উন্নয়নশীল দেশের পরিকল্পনা (Planning of the developing country): আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্বল্প মূলধন, স্থানীয় প্রযুক্তি এবং ধারাবাহিক পদ্ধতিতে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এই সমস্ত দেশে পরিকল্পনার সুফল ভোগ করতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।

যেমন-ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশের পরিকল্পনা।

 আদর্শ পরিকল্পনা (Ideal/Normative Planning):

উন্নয়নমুখী কোনও অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে যে সমস্ত পরিকল্পনা সুচিন্তিতভাবে বেশ কতকগুলি বিধিসম্মত কাঠামোয় নির্দিষ্ট নীতি মেনে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করা হয় তাকেই আদর্শ পরিকল্পনা বলা হয়।

• বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(1) আদর্শ পরিকল্পনা সর্বদা এক বা একাধিক উদ্দেশ্যকেন্দ্রিক।

(ii) সমগ্র এই পরিকল্পনাটি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ কমিটির সহায়তা নেওয়া হয়।

(iii) আদর্শ পরিকল্পনা যথেষ্ট নিয়মানুগ ও নির্দিষ্ট সময়সাপেক্ষ।

এখানে পরিকল্পনা কাঠামোর প্রতিটি পর্যায়ের মধ্যে একটি গভীর যোগসূত্র বজায় থাকে।

(v) আদর্শ পরিকল্পনায় উন্নয়নকেন্দ্রিক সমন্বয়ী ভাবনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়।

আদর্শ পরিকল্পনার নীতি (Principle of Ideal Planning):

আদর্শ পরিকল্পনায় বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি হল-

- আদর্শ পরিকল্পনাগুলি সর্বদা বেশ কিছু স্পষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত হবে। এই কারণে Koontz এবং O' Donnel আদর্শ পরিকল্পনাকে "Looking Glass-এর সাথে তুলনা করেছেন।

• বাস্তবমুখীতা (Realistic): কোনও ভ্রান্ত অনুমানের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনাটি যাতে গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য আদর্শ পরিকল্পনা বাস্তবমুখী হয়ে থাকে।

• সহজ বোধ্যতা (Easy to understand): আদর্শ পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পরিকল্পনা রূপায়ণকারীদের কাছে এটি যথেষ্ট সহজ-সরল বা বোধগম্য হওয়া একান্ত জরুরী।

• নমনীয়তা (Flexibility): কোনও আদর্শ পরিকল্পনা প্রয়োগকালে বেশ কিছু সমস্যার সাথে তাল বিভিন্ন পরিবর্তনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। সেই কারণে আদর্শ পরিকল্পনাটি হবে নমনীয় গুণসম্পন্ন।

• নিরবচ্ছিন্নতা (Continuity): আদর্শ পরিকল্পনা মাঝপথে যাতে না থেমে যায়, সেজন্য এখানে বিভিন্ন বিকল্প কর্মপন্থার সংশ্লেষ ঘটানো একান্ত প্রয়োজন।

• তথ্য নির্ভরতা (Dependency on information): যে-কোনও আদর্শ পরিকল্পনায় বিবেচনাধীন প্রাসঙ্গিক সমস্যা বা সম্ভাবনামূলক বিভিন্ন তথ্যগুলিকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

• সমন্বয়সাধন (Coordination): আদর্শ পরিকল্পনায় নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিভাগ ও

উপবিভাগগুলির মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়মূলক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটা একান্ত প্রয়োজন।

• নির্ভুলতা (Accuracy): আদর্শ পরিকল্পনা অবশ্যই বিধিসম্মত এবং ত্রুটিমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।।

• সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার (Proper use of resources): আদর্শ পরিকল্পনা রূপায়ণের সময় প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন সহায়ক সম্পদের যাতে পরিপূর্ণ ব্যবহার হয়, সে বিষয়ে যথেষ্ট নজর রাখা উচিত।

• আধুনিক প্রযুক্তি এবং কৌশলের বাবহার (Use of modern technology and strategy): আদর্শ পরিকল্পনায় যাতে কাঙ্ক্ষিত এবং সর্বোত্তম ফললাভ করা যায়, সেজন্য এখানে আধুনিক প্রযুক্তি এবং কৃৎকৌশলের ব্যাপক প্রয়োগ ঘটানো প্রয়োজন।

[বি.দ্র-সাধারণ পরিকল্পনার নীতিগুলির সঙ্গে আদর্শ পরিকল্পনার নীতির অবশ্য যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

 পরিকল্পনা চক্র (Planning Cycle):

পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ রাষ্ট্র নিজেদের উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত পথ সম্প্রসারিত করতে, পরিকল্পনামূলক প্রতিটি পদক্ষেপকে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত করে থাকে। যখন, পরিকল্পনায় শুরু থেকে সমাপ্তি এবং পুনরায় নতুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড উন্নয়নমূলক একমুখী পথ ধরে গ্রহণ বা কার্যকর করা হয়। 

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

পরিকল্পনা চক্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(1) পরিকল্পনা চক্রের প্রতিটি কার্যক্রম একই ধরনের কার্যকাঠামোয় বিধিবদ্ধ থাকে।

(ii) পরিকল্পনা চক্রের একটি ধাপের সাথে পরবর্তী ধাপের গভীর আন্তঃসম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।

(iii) এক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনার সর্বশেষ পর্যায়টি সম্পন্ন হলে পুনরায়, পূর্বেকার পথ অনুসরণ করেই নতুন একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

(iv) পরিকল্পনা চক্রের কাঠামোটি প্রায়শই দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে।

রূপায়ণের দায়বদ্ধতা কোনও রাষ্ট্র স্বীকৃত প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলির হাতেই থাকে।

গুরুত্ব(Importance):

ও পরিকল্পনা চক্রের মাধ্যমে কোনও একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নমুখী সমস্ত কার্যকৌশলের পরম্পরাগুলি ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকে।

* চক্রাকারে পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কালকে যথেষ্ট কমিয়ে দেয়।

* পরিকল্পনা চক্রের কার্যকরী নীতি ক্ষুদ্র-বৃহৎ যে কোনও এলাকা বা অঞ্চলেই প্রয়োগ ঘটানো হয়।

* এই ধরনের পরিকল্পনা কৌশলে পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার সুস্পষ্ট সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01