welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে আমুলিক বৈৰম্যের সাময়িক কারণ (Overall Causes of regional disparities in India)

ভারতে আমুলিক বৈৰম্যের সাময়িক কারণ (Overall Causes of regional disparities in India)


ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরিস্থিতি বা প্রেক্ষাপট ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে, সেগুলিরে প্রধান কারণরূপে আলোচনা করা হল- 

ভৌগোলিক কারণ (Geographical reasons): ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টিকে প্রাথমিকভাদে এখন তেভৌগোলিক পরিবেশ-পরিস্থিতির বেশকিছু অনুকুল এবং প্রতিকূল ক্ষেত্র মারা বিবেচনা করা হয়ে সুযোগসুবিধার নিরিখে ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল সর্বদাই যথেষ্ট প্রতিকূলতাপূর্ণ। বিশেষ করে, দেশের দুর্গম পাহাড়ি বা পার্বত্য ভূভাগ, খরস্রোতা নদী ও ঘন অরণ্যে যেনা প্রতিকূল ভূখণ্ডগুলি থেকে সম্পদ সংগ্রহ যেমন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, তেমনই এখানে যে কোনগ ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে প্রশাসনিক ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। ভারতের বিভিন্ন খরাং কন্যা, ভূমিধস, ভূমিকম্পপ্রবণ দুর্যোগ কবলিত এলাকাগুলিতেও এই ধরনের অনুরূপ প্রভাব লক্ষ করা যায়। সেই কারণে, উত্তর-পূর্বের (হিমালয় পার্বত্য ভূমির। হিমাচল প্রদেশ, উত্তর কাশ্মীর উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল প্রদেশ এবং মধ্যভাগের (মালভূমিময়) বিহার, মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চল আর্থসামাজিক এমনকি পরিসেবাগত একাধিক দিক থেকে সর্বদা পিছিয়ে থাকে। মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়া, অস্ত্রপ্রদেশের রায়লসিমা ও তেলেঙ্গানা, উত্তর কর্ণাটক, রাজস্থানের আঞ্চলিক বৈষম্য এবং পশ্চাদগামিতার প্রধান কারণ হল সেখানকার বাৎসরিক কম বৃষ্টিপাত এবং পর্যাপ্ত জলের অভাব।

• ঐতিহাসিক কারণ Historical reasons): ঐতিহাসিকভাবে, ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের সুস্পষ্ট সূচনা ঘটেছিল ব্রিটিশ শাসনকালে। ব্রিটিশরা তাদের যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যকলাপগুলিকে কেন্দ্রীভূত করে রাখতেই সর্বাধিক পছন্দ করত। তৎকালীন ঔপনিবেশিক স্বার্থকে মাথায় রেখে শুধুমাত্র কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজের মতো নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল জুড়েই শিল্পায়ন, নগরায়ণ, পরিকাঠামো এবং ব্যবসায়িক যাবতীয় কার্যক্রমগুলি গড়ে উঠেছিল। এরফলে এই তিনটি অঞ্চল প্রচুর সম্ভাবনার অধিকারী হয়ে উঠলেও, ভারতের বাকি অঞ্চলগুলি দরিদ্র, শোষিত এবং অবহেলিতই রয়ে যায়, যেটি ছিল অর্থনৈতিক "Backwash effect"-এর একটি চরমতম নিদর্শন। তাছাড়া, ব্রিটিশদের অনুসৃত ভূমি রাজস্ব নীতিতে মহাজনদের মতো মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণিকে মাথায় তুলে রাখার প্রচেষ্টা ক্রমেই কৃষকদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। দরিদ্র কৃষকদের ওপর জমিদারী শোষণ, অনৈতিক বা প্রতিকূল রাজস্ব ব্যবস্থা, যথাযথ ভূমি সংস্কারে কৌশলগত ত্রুটি, সঠিক শিল্পনীতির অভাব প্রভৃতি সার্বিকভাবে ভারতের আঞ্চলিক অসন্তোষ বা বৈষমাদে দীর্ঘকাল বজায় রেখেছিল।

• কৃষি এবং শিল্পভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রভেদ (Distinction of Agriculture and Industry Based Sony): ভারতের বিভিয়া রা জেলার অর্থনীতির ধরনগুলি চিরকালই ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। উত্তর ও মy Based চকোল বাজ্য যেমন কৃষিনির্ভর, অন্যদিকে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ রাজ্য ছিল শিল্পনির্ভর। ফলে আমরাতো নিয়োগের নিরিখে এই দুই বিষম অর্থনীতির রাজ্যগুলির মধ্যে বৈষম্যের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে করে। আয়করে প্রথম যেমন পশ্চিম পরি েভারতের শিল্পভিত্তিক রাজ্য (যেমন-পুষ্পয়াড, মধ্যরাতে এক্ষেত্রে করিভিত্তিক অন্যান্য রাজ্য (যেমন- পশ্চিমবঙ্গ পাঞ্চাব, উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি)-গুলির তুলনায় যথেষ্ট এরিয়ে বাড়তি।

• বিশেষ সুযোগসুবিধা (special facilities): ভারতে এমন কিছু অঞ্চল বা রাজ্য রয়েছে যেখানকার নিজস্ব ভৌগোলিক অবস্থানগত বিন্যাস, স্থানীয় সহায়ক সম্পদের জোগান, শিল্প অথবা পরিকাঠামোগত সম্ভাবনার সুযোগ যথেষ্ট বেশি মাত্রায় থাকার কারণে, সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় বিশেষ কিছু সুযোগসুবিধার অধিকার প্রভার করে। এর ফলে স্থানটি ক্রমেই যখন উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হয়, তখন তার আশেপাশেরার অধিকার অর্জন এবং সম্পদের প্রবাহ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এইভাবে, কোনো একসময় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটির সাথে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জন্মদের বৈষম্যের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যেমন- ভারতের লোহা ও ইস্পাতের মতো ভারী শিল্পের সমাবেশ বা নতুন তৈল (শষনাগার স্থাপনযোগ্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলি (যেমন- গুজরাট) প্রায়শই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে সর্বাধিক পরিমাণে আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। অনুরূপভাবে মুম্বাই, কান্ডালা, বিশাপত্তনমের মতো ভারতের একাধিক উপকূলীয় শহর শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণে সেখানকার আশেপাশের শহরগুলি থেকে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে অন্যান্য অঞ্চলের সাথে আর্থসামাজিক প্রৈথমাকে অনিবার্য করে তুলেছে।

• উন্নত কৌশল আয়ত্তকরণ (To master advanced techniques): ভারতের যে সমস্ত রাজ্য উন্নয়নের অধুনিক কৃৎকৌশলগুলিকে যত বেশি আয়ত্ত করেছে, ততই তারা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উন্নয়নের নীর্ষে উপনীত হতে পেরেছে। এর ফলে, দেশের আঞ্চলিক বৈষম্যও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা রাজ্য দুটিতে সবুজ বিপ্লব নতুন কৃষিকৌশল গ্রহণের প্রবণতাকে যেভাবে উৎসাহিত করেছিল, ভারতের অন্যান্য কৃষিভিত্তিক রাজ্য যেমন বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা প্রভৃতি সেই তুলনায় যথেন্ট পিছিয়েই ছিল। এরফলে, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন এবং আয়ের নিরিখে উত্তর- পশ্চিম ভারতের উন্নত কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির সাথে পারিপার্শ্বিক রাজ্যের আঞ্চলিক বৈষম্য দীর্ঘকাল ধরে বজায় রয়েছে।

• পরিসেবাগত অনগ্ররতা (Infrastructural backwardness) ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে পরিসেবাগত অনগ্রসরতা দীর্ঘকাল যাবৎ আঞ্চলিক বৈষম্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছে। বিশেষকরে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিবহণ, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি, ব্যাংকিং এবং বীমা সংক্রান্ত পরিসেবার প্রাপ্যতা বা বন্টন উন্নয়নের নিরিখে পর্যাপ্ত বা সুষম নয়। তাছাড়া, বেশ কিছু অনগ্রসর রাজ্যে পরিসেবাকেন্দ্রিক মূলধন গঠন বা বিনিয়োগের মাত্রাও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল। সেই কারণে শুধুমাত্র পরিসেবামূলক সুযোগসুবিধাগুলি পায়নি বলেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে বৈষম্য এখনও যথেষ্ট পরিমাণে রয়ে গিয়েছে।

• পরিকল্পনা ব্যবস্থার ব্যর্থতা (Failure to plan): ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনায় যদিও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রাক্ পরিকল্পনার বেশ কিছু কাঠামোগত বৃটি আঞ্চলিক বৈষম্যকে অনিবার্য করে তুলেছে। বিশেষ করে, ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পর থেকেই সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে সমস্ত লক্ষ্য গৃহীত হয়েছিল, সেটি দক্ষতার সাথে পরিচালনার অব্যবস্থা বা তহবিল হস্তান্তরের ব্যর্থতার কারণে শুরুতেই দেশের সমষ্টিগত উন্নয়ন প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। তাছাড়া, প্রথম পরিকল্পনা থেকে সপ্তম পরিকল্পনা পর্যন্ত পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দ্বাদশ পরিকল্পনা পর্যন্ত গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য তাদের আঞ্চলিক উন্নয়ন ও পরিকাঠামো পরিবর্ধনের জন্য একাধিকবার বেশ বড়ো রকমের আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে। অন্যদিকে, বিহার, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো পশ্চাদপদ রাজ্যগুলি মাথাপিছু পরিকল্পনা ব্যয়ের যৎসামান্য আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে। দেশের সমষ্টিগত আঞ্চলিক পরিকল্পনায় এই ধরনের একমুখী নীতিতে উন্নত এবং স্বল্পোন্নত রাজ্যগুলির পারস্পরিক বৈষম্যকে ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে।

• অনুপ্রেরণার অভাব (Failure plan): ভারতে ক্রমবর্ধমান, আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা বা বৈষম্যের উরো সবিত হওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত অনুপ্রেরণারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিশেষ করে, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পুজঙ্গী সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদির মতো উন্নত রাজ্যগুলি শিল্প বিকাশের প্রচেষ্টা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তাতে সেবনরম তামিলনাড় ইরত সরকারের অনুপ্রেরণা এবং জনগণের ইতিবাচক সমর্থক ভীরভাবে লাজ করা গিয়েছিল। সেই সুলিনীয়, পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলিতে শিল্প বিকাশের পরিবর্তে রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং কারসাজির প্রতি সর্বাধিক আরে সেখানকার বৈষম্যকে আরও চরম করে তুলেছে।

• রাজনৈতিক অস্থিরতা (Political instability): ভারতের আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতার আরেকটি গুরুত্বপূর কারওরা প্রধানকার প্রাদেশিক স্তরগুলিতে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রায়শই দেখা যায়, দেশের একধিক অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারী উন্নয়নমূলক নীতির বিপরীতে একাধিক প্রতিবাদী আন্দোলনে সেখানকার জনগণ সামিল হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চরমপন্থী, সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক বিনিয়োগের সমস্ত প্রবাহকে বাধা দিয়ে আঞ্চলিক বৈষম্যের মাত্রাকে অনিবার্য করে তুলেছে।

• অন্যান্য (Others): ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে, এখানকার বেশ কিছু রাজ্যে অত্যধিক জনসংখ্যা আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে একাধিক প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে। এগুলি হল-উচ্চ শিশুমৃত্যুহার, উচ্চ নির্ভরতার অনুপাত, উচ্চ বেকারত্ব, নেতিবাচক লিঙ্গা অনুগাং কম মজুরি হার, নিম্নমুখী জীবনযাত্রা, দুর্বল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কাঠামো, ধর্মীয় বিদ্বেষ, মানবসম্পদের অভাব প্রভৃতি। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই আঞ্চলিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে কোনও না কোনও ভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01