welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগের প্রয়োজনীয়তা (Need for Classification of Region)

অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগের প্রয়োজনীয়তা (Need for Classification of Region)


ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে অঞ্চল শ্রেণিবিভাগের বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন-

• তথ্য সংগ্রহকরণ (Information collection): পার্থিব কোনও স্থান সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহের জন্য অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ করা বাঞ্ছনীয়। যেমন-জলবায়ু বা ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের শ্রেণিবিভাজন এদের প্রকৃতি সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারণ ছাড়া কখনোই যুক্তিসঙ্গত হয় না।

• নামকরণ (Naming): আঞ্চলিক শ্রেণিবিভাজনের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা হল নামকরণ। আসলে সঠিক নামকরণ ছাড়া কোনও অঞ্চলই প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রশাসনিক দিক থেকে সেভাবে গুরুত্ব বা স্বীকৃতি পায় না।

• আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Regional planning): কোনও একটি অঞ্চলকে বিধিসম্মতভাবে পরিকল্পনার আওতায় আনতে হলে, তার যথাযথ শ্রেণিবিভাগ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, সমস্ত ধরনের পরিকল্পনা একটি দেশের শ্রেণিবদ্ধ আঞ্চলিক ক্রমাঙ্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। আবার সঠিক পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই আঞ্চলিক উন্নয়ন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Region):

আঞ্চলিক ভূবিজ্ঞানের সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল একটি কাজ হল অঞ্চলের শ্রেণিবিন্যাস। কারণ, প্রাকৃতিক, আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলেরই নির্দিষ্ট কিছু স্বাতন্ত্রতা থাকে। এরমধ্যে, কয়েকটি অঞ্চলকে সমগোত্রীয়ভাবে উপস্থাপন করা গেলেও বাস্তবে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি অঞ্চল হয় সংশ্লিষ্ট শ্রেণিকাঠামোর বাইরে রয়ে গেছে, নয়তো-বা কিছু বৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল একই গোত্রীয় হয়েও একাধিক শ্রেণিকাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে Heartshrone-এর প্রণিধানযোগ্য বিশেষ উক্তিটি হল-"there may be as many regions as there are geographers" (অর্থাৎ পৃথিবীতে ভৌগোলিক যতজন, অঞ্চলও ততগুলি হতে পারে)। এখানে বিভিন্ন ভৌগোলিকের বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অঞ্চলের সামগ্রিক বিভাজনটিকে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হল।

উৎপত্তি অনুসারে অঞ্চল (Region according to origin):

উৎপত্তি অনুসারে ভৌগোলিক অঞ্চলগুলি প্রধানত তিন প্রকার, যথা-

1. প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট অঞ্চল (Naturally created region): পৃথিবীতে যে-সমস্ত অঞ্চল প্রকৃতির স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় গড়ে উঠেছে, তাকেই প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট অঞ্চল বা স্বাভাবিক অঞ্চল (Natural region) বলা হয়।

যেমন-ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে পৃথিবীতে গড়ে ওঠা সমস্ত অংশগুলি (পার্বত্য অঞ্চল, মালভূমি অঞ্চল, সমভূ মি অঞ্চল প্রভৃতি) প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 1922 খ্রিস্টাব্দে এল, ডাডলে স্টাম্প (L. Dudley Stamp) ভারতকে ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে 3-টি প্রধান এবং 22-টি অপ্রধান অঞ্চলে বিভক্ত করেছিলেন।

2. মনুষ্যসৃষ্ট অঞ্চল (Man-made region): যে সমস্ত অঞ্চল মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠে, তাকেই মনুষ্যসৃষ্ট অঞ্চল বলা হয়। যেমন-কৃষি অঞ্চল, রাজনৈতিক অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল প্রভৃতি।

3. উপলদ্দিমূলক অঞ্চল (Perceptual region): যে সমস্ত অঞ্চল মানুষ তার অনুভূতির মাধ্যমে প্রকাশ ও উদ্ভাবন করে, তাকেই উপলব্দিমূলক অঞ্চল বলা হয়। সাধারণত এই অঞ্চলগুলিকে মানুষ তাদের প্রচলিত বিভিন্ন লোকগাথা, সাংস্কৃতিক চর্চা, স্থানিক মানদণ্ড প্রভৃতির মাধ্যমে উল্লেখ করে থাকে। যেমন- "Heart of Asia" বলতে আমরা সকলেই এশিয়ার মধ্যভাগের পামির গ্রন্থি অঞ্চলকে বুঝে থাকি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পৃথিবীতে কালিক বিবর্তনের ধারায় গড়ে ওঠা সহজাত প্রতিটি অঞ্চলই প্রাকৃতিক। কিন্তু ক্রিয়ামূলক বা ব্যাবহারিক দিক থেকে আমরা যে সমস্ত অঞ্চলগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, তার সবকটিই হল ভৌগোলিক অঞ্চল (Geographical region)

ভৌগোলিক বিন্যাস অনুযায়ী অঞ্চল (Region according to geographical format):

ভৌগোলিক বিন্যাস অনুযায়ী সমস্ত প্রকার অঞ্চল মূলত তিন প্রকার, যথা-

1. বাহ্যিক অঞ্চল (Formal region),

2. ক্রিয়ামূলক অঞ্চল (Functional region) এবং

3. বিশেষ অঞ্চল (Ad Hoc region)

ভৌগোলিক দিক থেকে এক বা একাধিক সমধর্মী গুণ সম্পন্ন বিস্তৃত দৈশিক পরিসরকে বাহ্যিক বা রীতিসিদ্ধ অঞ্চল বলা হয়। এ প্রসঙ্গে Daniel Nelson বলেছেন- A formal region is, in the geographical sense, a geographical area that has been definest by officially recognized beinderies," বাহ্যিক অঞ্চলগুলি আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এগুলি হল-

(a) সমসত্ত্ব অঞ্চল (Homogeneous region): অধিকাংশ ভৌগোলিক বাহ্যিক অঞ্চলটিকেই প্রধানত সমসত্ত্ব অঞ্চল রূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, সমস্ত বাহ্যিক পরিসর বিশিষ্ট একক স্থানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের কাঠামোগত সমতা বা সাদৃশ্যতার মধ্য দিয়েই সমসত্ত্ব অঞ্চলরূপে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে, বর্তমানে বাহ্যিক অঞ্চলগুলিতে মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়ামূলক মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব বৃদ্ধির কারণে, সমসত্ত্বতার বিষয়টি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সেই কারণে সমসত্ত্ব অঞ্চল শব্দটির ব্যবহারও যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে।

প্রসঙ্গঙ্গত উল্লেখ্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমসত্ত্ব অঞ্চলের ধারণাটি অনেকটাই ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণবাদ (Geographical determinism) তথা পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণবাদ (Environmental determinism) ধারণার ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত।

• গঠন (Structure): বাহ্যিক অঞ্চলগুলি বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক অথবা জলবায়ুকেন্দ্রিক উপাদানগুলির কাঠামোয় গড়ে ওঠে। অবশ্য, বাহ্যিক অঞ্চলের কাঠামোয় প্রথমদিকে প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও, পরবর্তীকালে বাহ্যিক অঞ্চল নির্ধারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলিও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। কারণ, বৃহত্তর দিক থেকে পার্থিব অধিকাংশ পরিসরগুলিতে মানুষের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ এতটাই বেড়ে গিয়েছে, যাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না। তাই বাহ্যিক অঞ্চলের ধারণায় বর্তমানে জনঘনত্ব, মাথাপিছু আয়, বেকারত্বের হার, অর্থনৈতিক বিকাশের হার প্রভৃতি মানবীয় দিকগুলির অনিবার্যভাবেই অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(i) বাহ্যিক অঞ্চল একটি নির্দিষ্ট আয়তন বিশিষ্ট বিধিসম্মত প্রাকৃতিক একক।

(ii) এই ধরনের অঞ্চলের আপেক্ষিক এবং চরম উভয় অবস্থানই লক্ষ্য করা যায়।

(iii) সাধারণত, একটি বাহ্যিক অঞ্চলের সীমানা অপর কোনও বাহ্যিক অঞ্চলকে অধিগ্রহণ করে থাকে না।

(iv) বাহ্যিক অঞ্চলগুলি পরস্পর প্রায় সংযোগবিহীন হয়।

(v) প্রাকৃতিক পরিবেশকেন্দ্রিক প্রতিটি মাত্রাই বাহ্যিক অঞ্চলে সমানভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

( vi) বাহ্যিক অঞ্চলগুলি পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণবাদী (Environmental determinism) চিন্তাধারার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

শ্রেণিবিভাগ (Classification): স্বতন্ত্র কয়েকটি নির্ধারকের ভিত্তিতে বাহ্যিক অঞ্চলগুলির আবার একাধিক

উপাদানের ভিত্তিতে বাহ্যিক অঞ্চল (Formal Region on the basis of components)

পারিপার্শ্বিক সহযোগী উপাদানের প্রভাবক্ষেত্র অনুযায়ী বাহ্যিক অঞ্চলগুলি বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যথা-

(a) প্রাকৃতিক উপাদানের ভিত্তিতে (Based on natural elements)

• ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল (Physiographic region): পৃথিবীতে বিভিন্ন ভূমিরূপগত সংস্থানের ভিত্তিতে এই ধরনের অঞ্চল গড়ে ওঠে। যেমন-ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে সাইবেরীয় সমভূমি, ভারতের কাশ্মীর উপত্যকা অঞ্চল, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

• জলবায়ু অঞ্চল (Climate region): বায়ুমণ্ডলীয় উন্নতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির ভিত্তিতে পৃথিবীর স্থায়ী জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যেমন-নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল, মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল, মরু জলবায়ু অঞ্চল প্রভৃতি।

• মৃত্তিকা অঞ্চল (Soil region): পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ক্রিয়াশীল স্থানীয় জলবায়ু এবং শিলা-খনিজের সাথে অন্যান্য জৈব পদার্থের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় যে সক্রিয় ভূত্বকীয় আধার গড়ে উঠেছে, তাকেই মৃত্তিকা অঞ্চল বলা হয়। যেমন-ক্রান্তীয় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অঞ্চল, নাতিশীতোয় আর্দ্র-পডসল মৃত্তিকা অঞ্চল প্রভৃতি।

• উদ্ভিদাজ্জ্বল (Vegetation region): প্রকৃতির বৈচিত্রত্র্যপূর্ণ মাটি এবং জলবায়ুগত উপাদানকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন উদ্ভিদগোষ্ঠীর ভৌগোলিক পরিসরগুলিও বাহ্যিক অঞ্চলের স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। যেমন-নিরক্ষীয় চিরহরিৎ উদ্ভিদাঞ্চল, সাভানা তৃণভূমি অঞ্চল, প্রাকৃতিক জৈব বাসভূমি রূপে সুন্দরবন অঞ্চল প্রভৃতি। 

আর্থসামাজিক উপাদানের ভিত্তিতে (Based on socio-economic elements):

আর্থসামাজিক উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাহ্যিক অঞ্চল হল-

• কৃষি অঞ্চল (Agricultural region): প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে উৎপাদনশীল কোনো সমন্বয়ী আধারকে অবলম্বন করে যে কৃষি অঞ্চলগুলি গড়ে ওঠে, সেখানেও পার্থিব পরিবেশের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে।তাই সমধর্মী কৃষিক্ষেত্রগুলিও বাহ্যিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন-ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা এবং বিভিন্ন প্রাথমিক অর্থনীতিকে অবলম্বন করে বাংলাদেশে মোট 30-টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়েছে।

• শিল্প অঞ্চল (Industrial region): যদিও শিল্প অঞ্চলগুলিকে ক্রিয়ামূলক অঞ্চলরূপে দেখা হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও শিল্পের ধরন বিবেচনা না করে, শুধুমাত্র একক অর্থনৈতিক উৎপাদনের নিরিখে গড়ে ওঠা কোনো কোনো শিল্পকেন্দ্রিক পরিসরকেও বাহ্যিক অঞ্চলরূপে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল।

• সামাজিক বাহ্যিক অঞ্চল (Social formal region): কোনও শহর বা নগরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ার সন্নিবেশস্থলগুলিকে সামাজিক বাহ্যিক অঞ্চল রূপে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। যেমন-বিশেষ কোনও ধর্ম, ভাষা বা অন্য কোনো সাংস্কৃতিক উপাদানকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠা ক্ষেত্রগুলি এই প্রকৃতির।

• রাজনৈতিক অঞ্চল (Political region): যখন কোনও অঞ্চল রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বা মূল্যবোধের ওপর আঞ্চলিক কাঠামো গড়ে ওঠে, তাকেই বাহ্যিক রাজনৈতিক অঞ্চল বলা হয়।

প্রকৃতি অনুসারে (According to nature)

সমতার মাত্রাগত প্রকৃতি অনুসারে বিশেষজ্ঞরা তিনটি উপ-বাহ্যিক অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল-

(a) একক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অঞ্চল (Single feature region): যে সমস্ত বাহ্যিক অঞ্চলের ক্ষেত্রে একক সমতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, তাকেই একক বৈশিষ্ট্যযুক্ত অঞ্চল বলা হয়। সাধারণত এই ধরনের অঞ্চলগুলি মানচিত্রে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি একক উপাদানকেন্দ্রিক উপস্থাপিত হয়।একক বৈশিষ্ট্যের ওপর গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাহ্যিক অঞ্চল হল-

• প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একক অঞ্চল- শুধু একটিমাত্র প্রাকৃতিক নির্ধারকের সাহায্যে এই ধরনের অঞ্চলকে

ভারতের উত্তর-পশ্চিমের কৃষি অঞ্চলবুপে গম বলয়,ও পশ্চিম ভারতে আমেদাবাদের বস্ত্র শিল্পাঞ্চল,

পশ্চিমবঙ্গোর দুর্গাপুরের লৌহ-ইস্পাত শিল্পাঞ্চল প্রভৃতি।

• সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একক অঞ্চল-এই ধরনের অঞ্চলগুলি ক্ষুদ্র বা বৃহৎ জনগোষ্ঠী দ্বারা অধিকৃত কোনো মৌলিক উৎকর্ষতার যে-কোনও মাধ্যম (যেমন ভাষা, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি)-কেই অবলম্বন করে গড়ে উঠতে পারে। যেমন-

যে রোমান স্প্যানিশ ভাষাগোষ্ঠী অঞ্চল,

ও হিন্দু বা শিখ ধর্মাবলম্বী অঞ্চল প্রভৃতি।

• অন্যান্য উপাদান বিশিষ্ট একক অঞ্চল-এই ধরনের অঞ্চলগুলি কোনো সামাজিক অথবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত হয়ে থাকে। যেমন- 

রাজনৈতিক অঞ্চল (বলকান, পাকিস্তান, প্যালেস্তাইন)

স্বতন্ত্র সামাজিক অঞ্চল (ডাচ বা নিগ্রো অধ্যুষিত অঞ্চল) প্রভৃতি।

বহু বৈশিন্টাযুর অঞ্চল (Multi-feature region): যখন কোনো একটি অঞ্চলকে অনেকগুলি নির্ধারকের একত্রিত প্রভাব ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বহু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অম্মল বলে। এই ধরনের বহু বৈশিষ্ট্যপূর অঞ্চলগুলিতে প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক সমস্ত উপাদানগুলির প্রভাব থাকলেও, সেগুলির মধ্যেও একটি বিশেষ সমাহিত বজায় থাকে। বহু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অঞ্চল মূলত দুই প্রকার, যথা- • সম্পদ পরিকল্পিত অব্দুল (Resources planning region): স্থানীয় স্তরে উপলক্ষ এক বা একাধির প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে যে পরিকল্পিত উন্নয়নমূলক ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়, তাকেই সম্পদ। পরিকল্পিত অঞ্চল বলা হয়। যেমন-ভারতের ছোটোনাগপুর খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল এই প্রকৃতির।

• অন্যান্য অঞ্চল : বহু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে যে-কোনও শহরাঙ্গ (যেমন-নিউইয়র্ক, দিল্লি, টোকিয়ো প্রভৃতি) অথবা ইউরোপীয় মিশ্র কৃষি অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

সামগ্রিক/সহযোগী  (Total region or compage): আন্ঞ্চলিক দ্বৈতবাদী চিন্তাধারা থেকে যে নতুন আরেকটি অঞ্চলের ধারণা গড়ে উঠেছে, তা হল সামগ্রিক বা সহযোগী অঞ্চল। বিখ্যাত রাজনৈতিক ভূগোলবিদ ডারোয়েন্ট হইটেলসি 1956 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম একটি আঞ্চলিক সমীক্ষায় প্রাকৃতিক, জৈবিক এবং সামাজিক পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে সহযোগী অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন। বস্তুত, হইটেলসি আফ্রিকার দক্ষিণ রোডেশিয়ায় দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে বহুবৈচিত্র্য সম্পন্ন আঞ্চলিক এককের ধারণা প্রসঙ্গে 'Compage' শব্দটির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন।কোনও একটি দেশে এমন কিছু অঞ্চল থাকে, যেগুলি বহুবৈশিস্টন সম্পন্ন হলেও, এখানে প্রাকৃতিক, মানবীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক উপাদানগুলি এমনভাবে মিশে থাকে, যার ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি একটি বিশেষ সহযোগী মাত্রা পায়।

• বৈশিষ্ট্য :

ও সহযোগী অঞ্চলটি এমন একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র যা সম্পূর্ণরূপে বাহ্যিক (Formal) বা প্রিয়ামূলক (Functional) অঞ্চলের কোনওটির মধ্যেই পড়ে না।৭ এই ধরনের অঞ্চল একটি সমন্বয়ী প্রভাবগত ক্ষেত্ররূপে কাজ করে থাকে।

অঞ্চল সংক্রান্ত নিখুঁত ধারণা বা জ্ঞান সহযোগী অঞ্চলের মাধ্যমেই পাওয়া যায়।ও সহযোগী অঞ্চলটিকে একটি সমীক্ষাকেন্দ্রিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্ষেত্র রূপে বিবেচনা করা হয়।

যেমন-ভৌগোলিক দিক থেকে এমন কোনও অঞ্চল, যেটি বিশেষ কয়েকটি কারণে তার চারপাশের অঞ্চলের থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেখানে অঞ্চলের সমন্বয়ী প্রভাবগত ধারণাটি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কৃষি অঞ্চল যদি সহযোগী অঞ্চল রূপে ধরা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু, স্থানীয় ভৌগোলিক পরিবেশ এবং সেখানকার মানবীয় কর্মদক্ষতার সমন্বয় ঘটেছে।

সহযোগী অঞ্চল বিবেচনার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমন্বয়ী নির্দেশক রয়েছে। এগুলি হল-

উচ্চতা এবং ভুমিচালের নিরিখে ভূপ্রকৃতি নির্ধারণ,

ও তাপমাত্রা, অধঃক্ষেপণ, বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহের নিরিখে কোনও জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ,

ও খনিজকণা, জৈবকণার প্রকৃতি অনুযায়ী মৃত্তিকার বলয়ের প্রস্থচ্ছেদ নির্ধারণ,

ভূমিভাগের প্রকৃতি, ভূমিভাগের উপাদান, ভূমিভাগের ব্যবহারের নিরিখে ভূমির উৎপাদনশীলতা



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01