welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (Mediterranean Climate)

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু (Mediterranean Climate)


পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে উয় নাতিশীতোয় মণ্ডলের অন্তর্গত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে একপ্রকার উয় শুদ্ধ গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীত সম্পন্ন জলবায়ু লক্ষ করা যায়। এটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু হিসেবে বিশেষ পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু লক্ষ করা গেলেও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলিতে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রভাব সর্বাধিক বলেই একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। এই অঞ্চলে মৃদু গ্রীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল এবং প্রায় সারাবছর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করে বলে একে Resort Climate of the World বা পৃথিবীর বিনোদন জলবায়ু বলা হয়।

• ভৌগোলিক অবস্থান (Geographical Location)

• অক্ষাংশগত অবস্থান ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু উপক্রান্তীয় মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে 30° থেকে 40° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে লক্ষ করা যায়।

• দেশীয় অবস্থান এই জলবায়ু পৃথিবীতে পাঁচটি প্রধান অঞ্চলে লক্ষ করা যায়। যথা-

(i) ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় এই জলবায়ুর প্রাধান্য বেশি। ইউরোপের অন্তর্গত পোর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্লোভানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হার্জিগোভিনিয়া, যুগোস্লাভিয়া, আলবানিয়া, গ্রিস প্রভৃতি দেশে, এশিয়ার তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইজরায়েল, সাইপ্রাস এবং আফ্রিকার মিশর, লিবিয়া, টিউনিসিয়া, আলজিরিয়া ও মরক্কো প্রভৃতি দেশের উপকূল বরাবর এই জলবায়ু লক্ষ করা যায়।

(ii) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য ও দক্ষিণ অংশে।

(iii) দক্ষিণ আমেরিকার চিলির মধ্যাংশে।

(iv) দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন অন্যলে এবং

(v) অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে এই জলবায়ু লক্ষ করা যায়।

জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of the Climate)

ঋতুকালীন আবহাওয়ার বৈচিত্রা:

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ ৭শীতকাল আর্দ্র। উত্তর গোলার্ধে শীতকালে বায়ুর চাপবলয় ও বায়ুবলয় কয়েক ডিগ্রি দক্ষিণ দিকে সরে যায়। ফলে, ভূমধ্যসাগর ও তার উপকূলবর্তী অঞ্চ পশ্চিমা বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। ওই অঞ্চলে ওই সমা মেরুপ্রদেশ থেকে শীতল বায়ুপুঞ্জের আগমনে মের বাতাগ্র (Polar front) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের জন্ম দেয়। ওই ঘূর্ণবাত থেকে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মকালে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় উত্তর দিয়ে সরে যায় এবং তখন নিম্নগামী বাতাস উয় হয়ে ওঠায় বৃষ্টিপাত ঘটে না। অনুরূপ অবস্থা দক্ষিণ গোলাগে গ্রীষ্মকালেও লক্ষ করা যায়।

2.ঋতুকালীন উন্নতার বৈচিত্রা

এই অঞ্চলে শীতলতম মাসের উন্নতা থাকে 4°-10 সো। উন্নতম মাসের গড় উয়তা থাকে 21°-27 সেঃ। বার্ষিক গড় উদ্ভুতার প্রসর 11°-17° (স উপকূল থেকে মহাদেশের অভ্যন্তরভাগের দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গেঙ্গ সঙ্গে উদ্ভতার প্রসর বেশি হয়। দক্ষিন গোলার্ধে গ্রীষ্মকালীন উন্নতা উত্তর গোলার্ধের তুলনায় কিছুটা কম।

গ্রীষ্মকালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় দিনের বেল তাপমাত্রা 32 deg থেকে সেঃ পর্যন্ত ওঠে। 35 deg ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে দিনের সর্বোচ্চ উন্নতা 45 * 5 deg সেঃ রেকর্ড করা হয়েছে। রাতে তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। গ্রীষ্মকালে দিনরাতের উয়তার পার্থক্য হয় 20 deg থেকে 28 deg সেঃ।

1.গ্রীষ্মকালীন উন্নতা বৃদ্ধি স্বল্প আপক্ষিক আর্দ্রতা প্রায় উল্লম্ব সূর্যরশ্মির ভূপৃষ্ঠে পতন, শুষ্ক বায়ুপুঞ্জের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে অধোগমন প্রস্তুতি কারণে গ্রীষ্মকালীন উদ্বুতা বেড়ে যায়। দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকে 32 deg থেকে 35 deg সেঃ। আকাশ মেঘমুত্ব থাকায় পার্থিব বিকিরণ বাধাপ্রাপ্ত হয় না এবং সেই সঙ্গো বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় উয়তা অত্যন্ত কমে যায়। ফলে দিনরাতের তাপমাত্রার প্রসর সবচেয়ে বেশি ঘটে।

 2.শীতকালীন আবহাওয়া শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু মৃদুভাবাপন্ন হয়। এই সময় মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ বেশি থাকে

3. রাত্রিকালীন তাপমাত্রা বিশেষ হ্রাস পায় না। এই অঞ্চলের অভ্যন্তরভাগে বা নিম্নভূমিতে কখনো কখনো তুহিন জমে। তুহিন জমলে শস্যের প্রভূত ক্ষতি হয়। শীতল মেরু বায়ুপুঞ্জের অনুপ্রবেশে তুহিন জমতে শুরু করে।

4. ঋতুর স্বায়িত্ব ও দেখা আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতুর স্থায়িত্ব এই জলবায়ু অঞ্চলের অক্ষ্যংশগত অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলের মেবুমুখী সীমানায় আর্দ্র ঋতুর দৈর্ঘা বেশি।

5.বায়ুপ্রবাহ ও আবহাওয়ার বৈচিত্রা ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের আর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট। হল অসংখ্য ভিন্নধর্মী স্থানীয় বায়ুর আবির্ভাব। গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু আফ্রিকার উত্তর উপকূল অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে। টিউনিসিয়া ও আলজেরিয়া উপকূলে এই ধরনের আবহাওয়া একটানা অনেক দিন চলে। গ্রীষ্মকালে আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চলটি (ITCZ) দুর্বল হয়ে পড়ে ও দক্ষিণ দিকে সরে যায়। এই সময় সাহারা মরুভূমি থেকে উয় ও শুদ্ধ বায় ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে আফ্রিকার উত্তর উপকূল শুদ্ধ ও উয় হয়ে ওঠে

6. মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর গোলাধে সাধারণত ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই অঞ্চলে নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতের আগমনে অধিকাংশ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর গতিপথে উচ্চভূমির অবস্থান থাকলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। এই সকল স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 125 সেমির বেশি। এই অঞ্চলে মহাদেশগুলির পশ্চিম প্রান্তে গড়ে বছরে 35 থেকে এ। (সমি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। অ্যাড্রিয়াটিক উপসাগরের পূর্বদিকে ডালমেসিয়া উচ্চভূমিতে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 450 সেমি। এই স্থানটি ইউরোপের আর্দ্রতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে উচ্চভূমি বা পর্বতের অবস্থান থাকলে পশ্চিমা বায়ু বাধা পেয়ে ওপরে উঠে যায় এবং বজ্র-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে, উপকূলবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়। কখনো কখনো কর্দম প্রবাহও লক্ষ করা যায়।

7.ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের সর্বত্র তুষারপাত হয় না। এই জলবায়ু অঞ্চলের মেরুমুখী প্রান্তভাগে কখনো কখনো অতি সামান্য তুষারপাত হয়। এই অঞ্চলের উচ্চভূমিতে তুষারপাতের পরিমাণ অনেক বেশি।

৪. দর্ণবাত এই অঞ্চলে ঘূর্ণবাত নিয়মিত আবির্ভূত হয় বলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন ও প্রকৃতি ঘূর্ণবাতের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ (Natural Vegetation)

তীর গ্রীষ্মকালীন শুষ্কতার কারণে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে অধিকাংশ উদ্ভিদ খরা প্রতিরোধকারী শম্ভু পত্রবিশিষ্ট হয়। এই অঞ্চলের বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে গভীর বনভূমি গড়ে উঠেছে। এই বনভূমির বৃক্ষগুলি হল-পাইন, ওক, সিডার, ম্যাডরোন, ওয়ালনাট ও চেস্টনাট ইত্যাদি। যেখানে খরা তেমন তীব্র নয় সেখানে পর্ণমোচী এবং ওক বৃক্ষের অরণ্য গড়ে উঠতে দেখা যায়। কর্ক, ওক এই জলবায়ু অন্যলের একটি প্রধান সম্পদ। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অনুরূপ পরিবেশে ইউক্যালিপটাস বৃক্ষের বনভূমি গড়ে উঠেছে।

এই জলবায়ু অঞ্চলে স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যে কাঁটাজাতীয় ঝোপঝাড়কে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মাকুইস (maquis) বা মাকিয়া (macchia), ক্যালিফোর্নিয়ায় চ্যাপারাল (chaparral) এবং অস্ট্রেলিয়াতে বলে মলী (mallee)

প্রাণীগোষ্ঠী (Animals) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান প্রধান প্রাণী সন্ধম্প্রদায় হল-খরগোস, শিয়াল, বনবিড়াল (lynx) ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01