বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাপ(Measurement of Humidity)
আবহাওয়ার উপাদান হিসেবে কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে সব সময়ই থাকে। সম্মান ও কালভেদে এর পরিমাণ গরিবর্তিত হয়। বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অধিক, কিন্তু শীতকালে এর পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার, একই হয়ে অঞ্চলভেদে জলীয় বাষ্পের তারতম্য লক্ষ করা যায়। যেমন- দিঘার উপকূলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অধিক, কিন্তু ইকুড়া ও পুরুলিয়ায় জলীয় বাষ্প থাকে খুবই কম। একটি নির্দিষ্ট আয়তন বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিই আর্দ্রতার পরিমাণ নির্দেশ করে। যে যন্ত্রের মাধ্যমে বায়ুতে উপস্থিত আর্দ্রতার পরিমাণ পরিমাপ করা হয় তাকে হাইগ্রোমিটার বলে। হাইগ্রোমিটার দু-ধরনের হয়-1. শুদ্ধ ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটার (Dry & Wet Bulb Thermometer) বা মেসজ মাইগ্রোমিটার (Mason's Hygrometer) এবং 2. স্বয়ংক্রিয় হাইগ্রোমিটার (Auto-Hygrometer)।
শুদ্ধ ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটার বা হাইগ্রোমিটার (Dry and wet bulb thermometer or Mason's Hygrometer):
* আর্দ্র ও শুদ্ধকুণ্ড থার্মোমিটারের বিবরণ: একটি ফ্রেমের মধ্যে পাশাপাশি দুটি থার্মোমিটার রাখা থাকে। একটি অর্ধবৃত্ত এবং অন্যটি শুষ্ককুণ্ড। চিত্রে ডানদিকের থার্মোমিটারের কুণ্ডটি এক খণ্ড মসলিন কাপড়ের এক প্রান্ত দিয়ে ঢাকা থাকে এবং অপর প্রান্তটি নিচে রাখা একটি ছোটো পাত্রের জলে ভেজানো থাকে। মসলিন কাপড় বেয়ে জল কণ্ডটিে সব সময় আর্দ্র রাখে। তাই থার্মোমিটারের কুণ্ডটি আকৃিপ্ত ও এই থার্মোমিটারটিকে আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটার বলে। বাঁদিকের থার্মোমিটারের কণ্ডটি সব সময় শুকনো থাকে বলে একে শুষ্ককুণ্ড ও এই থার্মোমিটারটিকে শুদ্ধকৃন্দ্র থার্মোমিটার বলে। এই শঙ্ককৃপ্ত থার্মোমিটারের সাহায্যে বাতাসের উদ্বুতার পরিমাপ করা হয়। শুষকুণ্ড ও আর্দ্রকণ্ড থার্মোমিটারের বাম ও ডান উভয় দিকে ফারেনহাইট ও সেলসিয়ান স্কেল আঁকা থাকে যাতে প্রয়োজনমতো ফারেনহাইট বা সেলসিয়াস অথবা উভয় স্কেলেই পাত্র গ্রহণ করা যায়।
বাষ্পীভবন বায়ুমণ্ডলের যে-কোনো উন্নতায় সংঘটিত হতে পারে। তবে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বাষ্পীভবনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অধিক হলে বাষ্পীভবনের হার হয় মৃদু, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকলে বাষ্পীভবনের হার হয় দ্রুত এবং দ্রুত হারে আর্দ্রকুণ্ড শীতল হলে দুই থার্মেমিটারের উন্নতার পার্থক্য অধিক হয়। ফলে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণও হয় নগণ্য। উন্নতার পার্থক্য ও বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। উন্নতার পার্থক্য বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে এবং পার্থক্য কমলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে।
শুদ্ধ ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটারের পাঠ গ্রহন এবং আর্দ্রতা নির্ণয় (Reading on Dry & Wet bulb thermometer and determining humidity):
• আর্দ্রকুণ্ডের অবনমন পদ্ধতি (Measure using depression of Wet bulb): শুষ্ককুণ্ড থার্মোমিটার ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটারের উয়তার পার্থক্যকে আর্দ্রকুন্ডের অবনমন বলে। প্রথমে বায়ুর উয়তা বা শুষ্ককুণ্ড থার্মোমিটারের পাঠ নেওয়া হয় (ধরা যাক, বায়ুর উন্নতা হল 35° সেঃ)। এরপর আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটারের পাঠ নেওয়া হয় (ধরা যাক তাপমাত্রা হল 30° সেঃ)। এই দুই থার্মোমিটারের পাঠের পার্থক্য (35°-30° সেঃ-5° সেঃ) হল আর্দ্রকুণ্ডের অবনমন। এই অবনমন-এর সাহায্যে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়।