welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল (Macro Planning Region)

বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল (Macro Planning Region)


সাধারণত কেন্দ্রিভূত পরিকল্পনায় দুই বা ততোধিক মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চলের উন্নয়ন তথা স্থায়ী সমস্যা সমাধানের। লক্ষ্যে সমন্বয়ীভাবে কোনো বৃহৎ পরিসরে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তাকেই বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল বলা হয়।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 1952 খ্রিস্টাব্দে পারস্পরিক পরামর্শ, সহযোগিতার উন্নয়নমূলক প্রেক্ষাপটে ভারতের বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলগুলি রূপায়ণের স্বার্থে "National Development Council" বা জাতীয় উন্নয়ন পরিষদ স্থাপন করা হয়েছিল। একসময় ভারতের প্রাদেশিক অঞ্চল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত রূপায়ণের (পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চল এবং 'জোনাল কাউন্সিল'-এর মাধ্যমে। যাবতীয় কর্মভার ন্যস্ত ছিল "Planning Commission"-এর হাতে। বর্তমানে "NIII Ayog" দেশে অঞ্চল সংক্রান্ত যাবতীয় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

 উদ্দেশ্য (Purpose):

জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্তরকে সঠিকভাবে অনুধাবন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপন।

পরিকল্পনাকে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে আর্থসামাজিক সমন্বয় তথা সুসম্পর্ক স্থাপন।

 জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিতকরণ।

সমগ্র দেশকে সমৃদ্ধির স্তরে উত্তরণ প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

অঞ্চলটি পরিকল্পনার অন্যান্য স্তরক্রমের তুলনায় অত্যন্ত বৃহদাকার হয়ে থাকে।

 আঞ্চলিক পরিকল্পনার একেবারে শেষ পর্যায়ে এই ধরনের অঞ্চলকে সীমায়িত করা হয়।

 বৃহৎ পরিসরের কারণে এই অঞ্চলগুলি সর্বাধিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ।

 আয়তনগত দিক থেকে এই ধরনের অঞ্চলগুলির কোনও সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি না-থাকলেও, বিভিন্ন রাজ্য বা প্রাদেশিক এলাকাগুলি এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

একাধিক কর্মকাণ্ডের নিরিখে বৃহৎ অঞ্চলগুলি অত্যন্ত সমস্যাবহুল হয়ে থাকে।

দৃষ্টান্ত। ভারতের মধ্য গঙ্গা সমভূমি, উত্তর-পশ্চিম ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারত হল কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল। 

 মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চল (Meso Planning Region)

সাধারণত অনেকগুলি ক্ষুদ্র অথচ সমষ্টিগত অঞ্চলের উন্নয়ন বা সমস্যা সমাধানের প্রেক্ষাপটে সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সমধর্মী এবং মধ্যম আয়তনের প্রাদেশিক ক্ষেত্রগুলিকে মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চল বলা হয়।

উদ্দেশ্য (Purpose):

• দেশের আন্তঃআঞ্চলিক স্তরে পারস্পরিক নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন।

• রাজ্য বা প্রাদেশিক স্তরে বৈষম্যের অবসান।

• আঞ্চলিক স্তরে সম্পদের সুষ্ঠু এবং সময়োপযোগী বণ্টন প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

 এটি একটি প্রায় সমজাতীয় প্রাকৃতিক, অ-প্রাকৃতিক বা প্রশাসনিক অঞ্চল।

অঞ্চলগুলিতে বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনায় একটি নিবিড় যোগসূত্র পরিলক্ষিত হয়।

 একাধিক আঞ্চলিক উন্নয়ন মেরু এখানে গড়ে ওঠে।

 অনেকগুলি ক্ষুদ্র অঞ্চলের সমষ্টিগত প্রভাবে এই অঞ্চলগুলিতে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলেও পরিকল্পিতভাবে সেগুলিকে সহজেই নিরসন করা যায়।

দৃষ্টান্ত: ভারতের দামোদর নদী উপত্যকা পরিকল্পনা অঞ্চলটি মধ্যবর্তী পরিকল্পনা অঞ্চলের অন্তর্গত।

ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল (Micro Planning Region)

সাধারণত ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনার সর্বনিম্ন প্রশাসনিক কাঠামোয় এক বা একাধিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে স্থানীয় জনকল্যাণমূলক এবং স্থানীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার উপলক্ষ্যে গড়ে তোলা স্বল্প পরিসর বিশিষ্ট একক ক্ষেত্রগুলিকে ক্ষুদ্র পরিকল্পিত অঞ্চল বলে।

• উদ্দেশ্য (Purpose):

• স্থানীয় স্তরের যাবতীয় আর্থসামাজিক বৈষম্য নিরসন।

• স্থানীয় পরিকাঠামোর বিকাশ।

• স্থানীয় সম্প্রদায়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি।

• দারিদ্রতা, নিরক্ষরতা, সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে জনসাধারণের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতকরণ প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল হল সেই এলাকা, যা প্রশাসনের নিম্নস্তরে প্রণয়ন বা কার্যকর করা হয়।

 এটি পরিকল্পনা অঞ্চলের সর্বনিম্ন অনুক্রমিক একক ক্ষেত্র।

 এখানে অন্ততপক্ষে একটি উন্নয়নের মেরু (Growth centre) লক্ষ্য করা যায়।

 ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলগুলি অতি সহজেই শনাক্তকরণযোগ্য।

 স্থান ও সময়ভেদে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলগুলিতে বৈচিত্র্যের মাত্রাগত প্রবণতা যথেষ্ট কম।

 অনেকসময় ক্ষুদ্র অঞ্চলগুলিতে মৌলিকভাবে কিছু স্বতন্ত্র বা পৃথক এলাকা থাকতে পারে (যেমন-খনিজ নিষ্কাশনের এলাকা, সেচ প্রকল্পের এলাকা প্রভৃতি)

• দৃষ্টান্ত: বহুস্তরীয় পরিকল্পনায় ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলগুলিকে আবার তিনটি অনুক্রমিক উপস্তর রূপে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে, যেমন- (১) গ্রাম স্তর (Village level) (ii) ব্লক স্তর (Block level) এবং (iii) জেলা স্তর (District level)।

পরিশেষে বলা যায়, অঞ্চলের বহুবিধ শ্রেণিবিভাগ থাকলেও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অঞ্চল হল এমন একটি সমন্বয়ী ক্ষেত্র, যেখানে বাহ্যিক এবং ক্রিয়ামূলক সমস্ত ধরনের উপাদানগুলির জটিল মিথস্ক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। সেই কারণে, এককভাবে অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ যথেষ্ট অসম্পূর্ণ ধারণা তৈরি করে, যেগুলির সাহায্যে অঞ্চল উপস্থাপনার পদ্ধতিগুলি আরও দূরহ হয়ে যায়। কাজেই, অঞ্চলকে বুঝতে হলে প্রথমেই তার সমন্বয়ী কাঠামো বা পরিসর সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। পরের পাতার ধারণাচিত্রে অঞ্চল নির্ধারণ ও অনুধাবনের বিভিন্ন উপাদানগত একটি সমন্বয়ী কাঠামো উপস্থাপন করা হল।

প্রাকৃতিক অঞ্চল (Natural Region):

বৈচিত্র্যপূর্ণ পৃথিবীর বেশ কিছু সহজাত উপাদান যেমন- ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, জীবজন্তু প্রভৃতিকে ভিত্তি করে যে সমস্ত ভৌগোলিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে, সেটিকেই প্রাকৃতিক অঞ্চল বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক A.J Herbertson তাঁর "A major natural region: an essay in Systematic Geography"-তে বলেছেন, "প্রাকৃতিক অঞ্চল হল পৃথিবীপৃষ্ঠের একটি এলাকা যা অবশ্যই সমজাতীয় অবস্থার মধ্যে থেকে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে যার অন্তর্গত জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ এবং সাধারণ জীবগোষ্ঠীর প্রকৃতিও একরকম। (Natural region is an area of earth's surface which is essentially homogeneous with respect to the conditions that affect human life within each region climate, vegetation and general mode of Trving are similar)

বিশেষত্ব (particularity): 

(i) প্রাকৃতিক অঞ্চল মাত্রই বৃহদাকার এবং সমধর্মী প্রকৃতির হয়ে থাকে।

(ii) প্রাকৃতিক অঞ্চল মধ্যস্য উপাদানগুলির পরিবর্তন অত্যন্ত ধীরগতিতে ঘটে।

(iii) প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলি যেমন কোনও একক রাজনৈতিক পরিসীমার অন্তর্ভুক্ত নয়, একইভাবে এদেরকে সঠিকভাবে সীমায়িত করাও প্রায় অসম্ভব।

(iv) কোনো একটি প্রাকৃতিক অঞ্চলের মধ্যে একাধিক দেশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যেমন-মৌসুমী জলবায়ু অধ্যুষিত প্রাকৃতিক অঞ্চলটি ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

(v) সামগ্রিক ভাবে প্রাকৃতিক অঞ্চলগুলির মধ্যে এক বা একাধিক উপ-অঞ্চলের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। প্রদত্ত মানচিত্র বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হল

বিশ্ব বসতি অঞ্চল (Global Inhabited Region):

মানুষের বাসভূমির অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতীক হল বিশ্ব বসতি অঞ্চল। পৃথিবীতে মোট সাতটি স্বীকৃত মহাদেশ থাকলেও, এগুলির মধ্যে দুর্গম অ্যান্টার্কটিকা ভূখণ্ডটি জনবসতিহীন হওয়ার কারণে সেটি প্রথাগত আঞ্চলিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত নয়। The United States Department of Homeland Security (USDHS) সমগ্র বিশ্বকে মোট আটটি স্বতন্ত্র বসতি অঞ্চলে বিভন্ত করেছে। এই ধরনের বসতি অঞ্চলগুলি (১৪) জাতিসংঘ (UN) দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে। সাধারণত সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলটি জাতীয় প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রপট বিবেচনার জন্য একটি সহায়ক তথা ব্যবহারিক কাঠামো প্রদান করে থাকে।

বিশ্বের আটটি উল্লেখযোগ্য বসতি অঞ্চল হল (i) আফ্রিকা, (ii) এশিয়া, (iii) ইউরোপ, (iv) ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, (v) উত্তর আমেরিকা, (vi) দক্ষিণ আমেরিকা, (vii) মধ্য আমেরিকা এবং (viii) ওশেনিয়া।

জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চল (Population Resource Region):

বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে তাদের সম্পদের পর্যাপ্ততা বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জনসংখ্যার বণ্টনগত মাত্রা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কার্যকর পরিবেশ-পরিস্থিতির সাপেক্ষে আঞ্চলিকীকরণের প্রচেষ্টায় এক একটি পৃথক বা স্বতন্ত্র জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চল পাওয়া যায়। কাজেই মানুষ, সম্পদ ও প্রযুক্তির আন্তঃসংযোগে যে সমস্ত অঞ্চল গড়ে ওঠে, সেটিই জনসংখ্যা সম্পাদ অঞ্চল নামে পরিচিত।

• বিশেষত্ব (Particularity): (1) পৃথিবীতে দীর্ঘ কালপরম্পরায় মানুষের আবির্ভাব, সভ্যতার উৎকর্ষতা এবং নিত্যনতুন সম্পদ উদ্‌ঘাটনের মধ্য দিয়ে এই ধরনের অঞ্চলগুলি স্বীকৃতি পায়। আর্থসামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই ধরনের অঞ্চলগুলি একে অপরের চেয়ে আলাদা।

সাধারণত জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চলগুলিতে থাকা প্রতিটি দেশের সংশ্লিষ্ট অবস্থান একেবারেই আপেক্ষিক এবং পরিবর্তনশীল একটি বিষয়।

• দৃষ্টান্ত (Example): বিখ্যাত আমেরিকান ভূগোলবিদ Edward Augustus Ackermen (1911-1973 খ্রিঃ। জনসংখ্যা, সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত মানদণ্ডের নিরিখে সমগ্র বিশ্বকে মোট পাঁচটি জনসংখ্যা সম্পদ অঞ্চলকে শ্রেণিবন্ধ করেছেন ।

স্বল্প জনসংখ্যা, বিপুল সম্পদ এবং উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রীয় জনসম্পদ অঞ্চল।

উচ্চ জনসংখ্যা, সর্বাধিক সম্পদ এবং উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ইউরোপীয় জনসম্পদ অঞ্চল।

স্বল্প জনসংখ্যা, বিপুল সম্পদ এবং প্রযুক্তির ঘাটতিযুক্ত ব্রাজিলীয় জনসম্পদ অঞ্চল।

উচ্চ জনসংখ্যা, স্বল্প সম্পদ এবং প্রযুক্তির ঘাটতিযুক্ত মিশরীয় জনসম্পদ অঞ্চল, এবং

জনবিরল, বিপুল সম্পদ ও প্রযুক্তির ঘাটতিযুক্ত সুমেরু বা মরু প্রদেশীয় জনসম্পদ অঞ্চল।

অর্থনৈতিক অঞ্চল (Economic Region):

বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেমন-উৎপাদন, বিনিয়োগ, সম্পদ বরাদ্দকরণ, বাণিজ্য, পরিবহণ প্রভৃতির সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মিথস্ক্রিয়া ভিত্তিক যে-সমস্ত অঞ্চল গড়ে তোলা হয়, সেগুলিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল বলা হয়।

উদাহরণ: পশ্চিম ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্গত।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যকারিতার দিক থেকে এক একটি অতি সক্রিয় অঞ্চল।

 এখানে উৎপাদন, বণ্টন এবং ভোগের সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।

বেশির ভাগ অর্থনৈতিক অঞ্চল মাঝারি আয়তনের হয়ে থাকে।

• মানদণ্ড (Criteria): অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণের মানদণ্ডগুলি হল শিল্পঘনত্ব, শ্রমিকসংখ্যা, বিনিয়োগমূলা, কর মজুরি, উৎপাদনের পরিমাণ, বাণিজ্য ও পরিবহণ প্রভৃতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিতে উৎপাদনমুখী উপাদানগুলি কীভাবে পরস্পর আন্তঃসম্পর্কযুক্ত, সেটিকে। ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

• শ্রেণিবিভাগ (Classification): অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন-

(a) কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক অঞ্চল (Centralized economic region): এই ধরনের অঞ্চলগুলি কোনও একটি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রাধীন শিল্প অথবা কৃষিক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়। যেমন- চীন, কিউব, ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক অঞ্চল।

(b)অতি উন্নত অর্থনৈতিক কল (Highly developed economic region): যে সমস্ত এলাকাগুলি অর্থ বিনিয়োগ, উৎপাদন, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন দিক থেকেই সবার শীর্ষে রয়েছে সেগুলিকে অতি উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চল বলা হয়। যেমন-উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এই অঞ্চল লক্ষ্য করা যায়।

(c) প্রায় উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চল (Almost developed economic region): বিশ্বের যে-সমস্ত অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ উন্নত না-হলেও, উন্নতির একটি বিশেষ পরিবৃত্তিকাল (Transitional stage)-এ রয়েছে, তাদেরকে প্রায় উন্নত অর্থনৈতিক অঞ্চল বলা হয়। যেমন-আর্জেন্টিনা, ইতালি, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশ এই পর্যায়ের।

(d) বিকাশশীল অর্থনৈতিক (Developing Economicregion): বিশ্বের যে সকল অঞ্চলে স্বল্প বিনিয়োগ, নিম্ন মাথাপিছু আয় এবং অনুন্নত পরিকাঠামো লক্ষ্য করা যায় তাদেরকে বিকাশশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে। যেমন- আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্রপীড়িত অধিকাংশ দেশ এই পর্যায়ে রয়েছে।

A প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল B. 

বাহ্যিক অর্থনৈতিক অঞ্চল।অর্থনৈতিক অঞ্চলের। সংরোগ, কাঠামা সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ তথা উৎপাদনশীল বহুমুখী ক্রিয়াকলাপের ওপর ভিত্তি করে যে সমস্ত অর্থনৈতিক।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics): টেলর (Taylor, 1950 খ্রিঃ) এবং ব্রুয়েবার (Kroeber, 1948 খ্রিঃ) বলেছেন,এই সকল অঞ্চলগুলি মানুষের বেশকিছু অর্জিত আচরণ (Acquired Behaviour)-এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

প্রতিটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলে ঐতিহ্যগত দিক থেকে সমমনোভাবসম্পন্ন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আন্তঃসংযোগ পরিলক্ষিত হয়।

সাংস্কৃতিক অঞ্চলগুলি ধারাবাহিকভাবে গতিশীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।

 পৃথিবীতে এই ধরনের অঞ্চলগুলির বিস্তৃতি যথেষ্ট বেশি হয়।

• নির্ধারণ (Determination): সাংস্কৃতিক অঞ্চল নির্ধারণের উল্লেখযোগ্য মানদণ্ডগুলি হল ভাষা, ধর্ম, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, বিশ্বাস, প্রযুক্তি ও জীবনযাপন প্রণালী প্রভৃতি।

• শ্রেণিবিভাগ (Classification): সাংস্কৃতিক অঞ্চলগুলিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

 বাহ্যিক সাংস্কৃতিক অঞ্চল (Formal cultural region): এটি নির্দিষ্ট একটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক পরিসরে বহুমুখী সংস্কৃতির ভাবধারাকে বহন করে।

ক্রিয়ামূলক সাংস্কৃতিক অঞ্চল (Functional cultural region): এটি এমন একটি নির্দিষ্ট উৎকর্ষতামূলক পরিমণ্ডল যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ভাবধারার জনগোষ্ঠী বিভিন্ন রাজনৈতিক বা আর্থসামাজিক আদানপ্রদানমূলক কার্যাবলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।

উপলব্ধিমূলক সাংস্কৃতিক অঞ্চল (Perceptual cultural region): এটি হল জনপ্রিয় লোকসংস্কৃতির একটি প্রধান উৎসস্থল।

• দৃষ্টান্ত (Example): বিশ্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক অঞ্চল হল- পশ্চিম ইউরোপীয় পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক অঞ্চল, ভারতীয় সাংস্কৃতিক অঞ্চল, মধ্য আফ্রিকান সাংস্কৃতিক অঞ্চল প্রভৃতি।

রাজনৈতিক অঞ্চল (Political Region):

কোনও একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশ, জনপদ এমনকি অন্যান্য স্থানীয় এলাকাগুলি যখন প্রশাসনিকভাবে একনায়কতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক বা সার্বভৌম ক্ষমতাযুক্ত, বিচ্ছিন্ন আঞ্চলিক ভাবধারা সম্পন্ন অথবা জাতীয়তাবাদী কোনো ভাবধারাকে সামনে রেখে গড়ে ওঠে, সেগুলিকেই রাজনৈতিক অঞ্চল বলা হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন অঞ্চলগুলিকে "Nations state" রূপেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।।- ভাষা, ধর্ম, খাদ্য, বস্ত্র,

• উদ্ভব (Origin): রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি উদ্ভবের ক্ষেত্রে যে-সমস্ত প্রেক্ষাপট সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তার কয়েকটি হল-পৃথক রাষ্ট্রের (যেমন- পাকিস্তান। দাবি, জাতিগত গৃহযুদ্ধ (যেমন-আর্মেনিয়া।, কৃষি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লব (ইউরোপের বেশ কিছু দেশ) প্রভৃতি।

• প্রকৃতি (Nature):

ভরা যায়, যথা- ভদ্র ভৌগোলিক পরিসরে

রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি সর্বদাই একটি নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান অংশ হিসাবে কাজ করে।

বিশ্বের অধিকাংশ রাজনৈতিক অঞ্চল জাতিভিত্তিক কিছু স্বতন্ত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

এমন একটি নির্দিষ্ট মতিক বা আর্থসামাজিক

এই ধরনের অঞ্চল কিছুটা "Commuter hinderland"-এর ন্যায়।জনপ্রিয় লোকসংস্কৃতির প্রথাগতভাবে বিশ্বের প্রতিটি রাজনৈতিক অঞ্চলেরই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা রয়েছে।

রাজনৈতিক অঞ্চলগুলিতে সাময়িক স্থিতিশীল সাম্য অথবা অস্থিতিশীল সংকটজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

• গঠন (Structure): পরিস্থিতির নিরিখে রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি বিভিন্ন গঠনযুক্ত হয়ে থাকে। 

অখণ্ড (Compact): প্রায় বৃত্তাকার এই অঞ্চলগুলিতে অবস্থিত অধিকাংশ রাজ্যগুলি মূল রাজনৈতিক কেন্দ্র থেকে যেকোনো সীমানা বরাবর প্রায় সমান দূরত্বে অবস্থান করে (উদাহরণ-কেনিয়া)।

 এই ধরনের অঞ্চলগুলি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা আন্তঃসংযোগের একমুখী প্রভাবের দরুন প্রধান শহরগুলিকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দীর্ঘ এবং সঙ্কীর্ণ আকৃতি প্রদান করে (উদাহরণ-ভিয়েতনাম)।

বিঘ্নিত (Prorupted): এটি এমন একটি রাজনৈতিক অঞ্চল যার সীমানার একটি অংশ অন্য কোনও অংশের তুলনায় বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়ার দরুন পৃথক দুটি জাতিকে স্বতন্ত্র করার জন্যে বিশেষ অঞ্চলে উপনীত হয় (উদাহরণ নামিবিয়া)।

ছিদ্রযুক্ত (Perforated): পৃথক একটি রাজনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে যখন পৃথক আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠে, সেটি এই প্রকৃতির। (উদাহরণ-দক্ষিণ আফ্রিকার সার্বভৌম রাষ্ট্র লেসোথো)।

খণ্ডিত (Fragmented): এই ধরনের রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি জলভাগের বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত (উদাহরণ-ইন্দোনেশিয়া)।

 স্বলবেষ্টিত (Landlocked): এই ধরনের রাজনৈতিক অঞ্চলগুলি চারিদিক স্থলবেষ্টিত পরিসরযুক্ত




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01