welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আধুনিকতার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট (The International Context of Regionalism)

আধুনিকতার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট (The International Context of Regionalism)


বিশ্বের বিভিন্ন দৈশিক পরিমণ্ডল অনুযায়ী আঞ্চলিকতার এক একটি পৃথক পটভূমি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমী বিশ্বের একাধিক দেশে সুসংগতভাবে আঞ্চলিকতা ভাবধারাগুলি উনবিংশ শতকের বহুকাল আগেই প্রসার লাভ করেছিল। 1999 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত 'The American Historical Review' নামক প্রতিবেদনে Bringing Regionalism Back to History" নামক শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলত ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশগুলির থেকেই আঞ্চলিকতার প্রথম উত্থান ঘটে। প্রাথমিকভাবে, ইউরোপে আঞ্চলিকতা বিকাশের ক্ষেত্রে সেখানকার রাজনৈতিক তথা সাংস্কৃতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। 1759 থেকে 1860 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, রাশিয়ান আঞ্চলিকতার মূল ভিতটি সম্পূর্ণভাবেই ছিল সাংস্কৃতিক ভাবধারা সংক্রান্ত। 1861 খ্রিস্টাব্দের পর, রাশিয়ার আঞ্চলিকতায় সেখানকার রাজনৈতিক চাহিদার সাথে সাংস্কৃতিক চাহিদাগুলি পুরোপুরি মিশে যায়। সোভিয়েতদের অধীনে, আঞ্চলিকতা তৎকালীন সাংস্কৃতিক দিক থেকে কিছুটা পিছু হটলেও, পরবর্তীকালে সেটিই আবার প্রধান একটি রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। আধুনিক ইউরোপের দেশগুলিতে অর্থনৈতিক একত্রীকরণ এবং বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা, গোষ্ঠী সুরক্ষার বিষয়গুলি ধীরে ধীরে আর্থসামাজিক এবং জাতীয় স্বার্থের সাথে মিশে গিয়ে নতুন এক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বিশেষ করে, বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশ, শক্তিশালী জাতীয়তাবোধ, ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির প্রতি চরম অনাস্থা, বিশ্বায়নের চরম প্রভাব শুধু পশ্চিমী আধুনিক রাষ্ট্রগুলিতেই নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলিকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে, আঞ্চলিকতা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক চালিকাশক্তির প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, পৃথিবীর বেশিরভাগ অঞ্চলই তাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক অধিকারগুলিকে খর্ব করতে সেখানকার নিরাপত্তা এবং জাতীয় সিদ্ধান্তের উপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই সময়, দ্বিমেরু বিভাজন নীতির ফলে আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বিশ্বের বেশ কিছু আঞ্চলিক শক্তি তাদের নিজস্ব ভৌগোলিক এলাকায় আধিপত্য বিস্তার বজায় রাখে। এই ধরনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক কাঠামোর পরিবর্তন এবং নতুনভাবে নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আঞ্চলিকতার ভীতকে অনিবার্যভাবেই আরও প্রগাঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে।


অবশ্য, বিগত শতকের পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকের মধ্যে আঞ্চলিকতা ভাবধারাগুলি কিছুটা পরিমার্জিত হয়েছে। এই সময়কালে "পুরাতন আঞ্চলিকতা"র জ্বলে বেশ কিছু আদর্শবাদী ভাবধারা সংযুক্ত হয়ে যায়। 1980-এর দশকের শেষের দিকে, আঞ্চলিক একত্রীকরণের একটি নতুন লড়াই শুরু হয়, যা নৈতিক দিক থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্যোগগুলিকে স্বাগত জানিয়ে স্বতন্ত্র কয়েকটি "সংস্কৃতি ক্ষেত্র” প্রতিষ্ঠা করে, যেগুলিকে "নতুন আঞ্চলিকতা"-রূপেও আখ্যায়িত করা হয়।


বর্তমানে, একবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার একটি প্যারত্বপূর্ণ উপাদান মেশ মাঞ্জলিক উন্নয়ন ও সহযোগিতা। তাই এগুলিকেও প্রায়শই আঞ্চলিকতারই অন্যতম ফসল রূপে সর্বাধিক বিবেচিত হয়ে থাকে।


প্রসলত উল্লেখ্য, নতুন আঞ্চলিকতা বর্তমানে ক্রমশ বিশ্ব মনস্তাত্ত্বিকতার চেহারা নিচ্ছে। তাছাড়া, এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অও প্রসনার ভায় সমস্ত ধরনের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলিকে মোকাবিলা করতে রাষ্ট্রগুলিকে যথেষ্ঠ উদবুদ্ধ করে থাকে। এইভাবে নতুন আঞ্চলিকতায় মানুষ ভাবাদর্শের একাধিক রূপান্তরের সাথে সামিল হয়ে বহুমেরুত্বের নীতিগুলিকে যদেখ প্রশস্ত করেছে। সেই কারণে, নতুন আঞ্চলিকতা এবং বহু-মেরুত্ব আসলে একই মুদ্রার দুটি ভিন্ন দিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01