আঞ্চলিকীকরণের গুরুত্ব (Importance of Regionalization)
আঞ্চলিকীকরণের ভৌগোলিক প্রচেষ্টা বিভিন্ন কারণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-
• অঞ্চল সুসংহতকরণ (Integrating the region): যে-কোনো অঞ্চলকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে গেলে প্রথমেই তার নির্দিষ্ট পরিসরভিত্তিক স্বতন্ত্র শ্রেণিবিভাগটিকে সর্বতোভাবে বুঝে উঠতে হয়। বিশেষ করে, অনঞ্চলের প্রতিটি উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামোয় উপস্থাপন করার একমাত্র বিধিসম্মত কৌশল হল আনঞ্চলিকীকরণ। এই প্রচেষ্টা অঞ্চল সুসংহতকরণে ভীষণভাবে সহায়তা করে।
• অন্ঞ্চল বিশ্লেষণ (Region analysis): সাধারণভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থানিক পরিসরকে অশ্বলরূপে স্বীকৃতি দিতে হলে তার যথাযথ বিশ্লেষণ অবশ্যই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, আঞ্চলিকীকরণ হল এমন একটি প্রচেষ্টা যা বাস্তব, বিমূর্ত সমস্ত ধরনের দৈশিক একককে নির্দিষ্ট একটি বিন্যাসে সরলীকৃতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। যেমন-কোনও অঞ্চলকে যদি মৃত্তিকার গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন মাটির উৎপাদিকা শক্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
• সমীক্ষা (Survey): বর্তমানে প্রশাসনিক তথা ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অঞ্চল নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমীক্ষার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে। বিশেষ করে, এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্থানিক বর্ণনা (Description), ব্যাখ্যা (Explanation) এবং বিশ্লেষণ (Analysis)-প্রভৃতি বিষয়গুলি আঞ্চলিকীকরণের অন্যতম হাতিয়ার রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
• সমস্যার সমাধান (Problem solving): পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের বৈষম্যকে সামনে রেখে যখন আঞ্চলিকীকরণের প্রচেষ্টা করা হয়, তখন প্রতিটি অঞ্চলের বেশকিছু স্বতন্ত্র সমস্যা পৃথকভাবে উঠে আসে। সাধারণত পরিকল্পনার স্বার্থে, এই ধরনের সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিয়েই আঞ্চলিক উন্নয়নের বিষয়টি আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সেই কারণে অধিকাংশ ভৌগোলিক আম্মলিকীকরণকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তব সমস্যা নিরাময়ের প্রতিকর বলে মনে করে।
গঠনমূলক পদক্ষেপ (Constructive steps): আনালিকীকরণের প্রচেষ্টার সুবাদে বেশকিছু গঠনমূলক পদক্ষেপকেও দ্রুত বাস্তবায়িত করা হয়। যেমন-কৃষিক্ষেত্রে সেচের সুবিধার্থে স্থায়ী জলাধারগুলির পৃথকভাবে শ্রেণিবিভাজন, পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনও নির্দিষ্ট পরিসরে বাঁধ নির্মাণ, কার্যকরী কোনও আর্থসামাজিক কেন্দ্রকে মানচিত্রায়িত করা কিংবা উন্নয়নের স্বার্থে যেকোনো সম্ভাবনামূলক পদক্ষেপ আঞ্চলিকীকরণের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তবের রূপ পায়।
• তথ্যের বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of the fact): আনন্তলিকীকরণের কৌশলগুলির ক্ষেত্রে তথ্যের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে বলে, এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চল সম্পর্কে একটি সরল ও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়।
• আঞ্চলিক ঐক্য প্রদর্শন (Demonstrate regional unity): পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের পারস্পরিক সম্পর্ক (Areal linkage)-এর মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা আঞ্চলিকীকরণের প্রথা পরোক্ষভাবে আঞ্চলিক ঐক্য প্রদর্শনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। কারণ, প্রতিটি কার্যকরী অঞ্চলেরই একটি নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রীয় বিন্দু থাকে, যেগুলিকে সামগ্রিক সমধর্মিতার বিচারে প্রায়শই একত্রিতভাবে দেখা হয়।
• তুলনামূলক আলোচনা (Comparative discussion): আঞ্চলিকীকরণ শুধুমাত্র যে একটি রাষ্ট্রের ঐক্য প্রদর্শন করে ঠিক তা নয়, বরং একাধিক অঞ্চলের মধ্যে থাকা বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদান, সীমানাগত পার্থক্য, গাঠনিক বৈসাদৃশ্যতা প্রভৃতি বিষয়গুলির তুলনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে সেখান থেকে একাধিক তথ্য সরবরাহ করে।
• আঞ্চলিক মডেল নির্মাণ (Regional model construction): আশালিকীকরণের প্রচেস্টায় বিভিন্ন অঞ্চলের বহুমুখী গুণাবলীকে সামনে রেখে যে নির্দিষ্ট দৈশিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়, সেটি Isomorphuc system-এ ভৌগোলিকদের কাছে অঞ্চল উপস্থাপনের একটি মূর্ত প্রতিচ্ছবি বা আঞ্চলিক মডেল আকারে