welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আঞ্চলিক উন্নয়নের নিরিখে রস্টোর তত্ত্বের গুরুত্ব (Importance of Rastow theory in terms of regional development)

আঞ্চলিক উন্নয়নের নিরিখে রস্টোর তত্ত্বের গুরুত্ব (Importance of Rastow theory in terms of regional development)


একটি দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি তথা আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে রস্টো প্রবর্তিত স্তর তত্ত্বের গুরুত্ব নেহাত কম নয়। যেমন-


(i) রস্টোর উন্নয়নের স্তর তত্ত্বে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনৈতিক বিভিন্ন ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটের যুক্তিসঙ্গাত সংমিশ্রণ ঘটেছে। এর ফলে, উন্নয়নের কাঠামোয় থাকা প্রতিটি উপাদানগুলিকে পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা আরও সহজ হয়েছে।


(ii) রস্টো প্রবর্তিত স্তর মডেলকে অনুসরণ করেই উন্নয়নশীল দেশগুলি যে-কোনও পরিস্থিতিতে বিকাশের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে পারে।


(iii) রস্টো উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে যে স্তরগুলির কথা উল্লেখ করেছেন তা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করে।


(iv) রস্টো প্রবর্তিত তত্ত্ব মানুষের আচরণকে সীমাবদ্ধ রাখার পরিবর্তে গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিকল্প পথ নির্বাচন করে দেয়। যার ফলে, এই তত্ত্বের নির্দেশিত পথগুলি উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিটি দেশকেই সার্বিকভাবে এগিয়ে রাখে।


ভারতীয় প্রেক্ষাপটে রস্টোর মডেল (Rostow's Model in Indian context):


রস্টো উপস্থাপিত স্তর মডেলের সাপেক্ষে ভারতের উন্নয়নের প্রসঙ্গটি সমসময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ভারতের সার্বিক তথা আঞ্চলিক বিকাশের ক্ষেত্রটিকে যদি আমরা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি, দেখব এদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সমাজব্যবস্থা থেকে সাম্প্রতিক কালের অগ্রগতির প্রেক্ষাপটটি রস্টো প্রবর্তিত উন্নয়ন তত্ত্বের সাথে প্রায় অনেকটাই মিলে যায়। আমরা আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই বিষয়টিকে আমরা আরও একটু স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করব। 


প্রথমত, অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় অর্থনীতি ছিল জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক চরিত্রের। বিশেষ করে, খ্রিস্টীয় পরশ শতাব্দীতে বহিরামুতে অথরের প্রারপ্রবেশের কারণে এখানকার কৃষিভিত্তিক সমাজ যথেষ্য সময় ওঠে। প্রাক-উপনিবেশিক যুদ্ধে কথতি ব্রিটিশ শাসনকালের পূর্বে শ্রেণিবিভত্ব সমাজ, সাবেকি কৃষিনি সমন্ধ হয়ে ভূমোদনশীলতা, সম্পত্তির অধিকারভিত্তিক মর্যাদা প্রভৃতি সমগ্র দেশকে স্বনির প্রথাগত কাঠামোয় আটকে রাখে। জাগে, এই সময় আর্থ-সামাজিক দিক থেকে ভারতে কোনও ধরনের প্রগতিশীল পরিবর্তনই ঠামোয় আটকে


দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সমাজের গর্ভেই ছিল রস্টোর উদ্ভাবিত উন্নয়নের পূর্বশর্ত পালনের প্রচ্ছন্ন আবহ। বিশেষ করে, ইসলামি আমলে ভারতের সনাতন প্রথাগত সমাজে কিছুটা গতি এসেছিল এবসাবাণিজ্যের হাত ধরে। ষোড়শ শতক থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ভরতে উৎপাদিত চাল, হলুদ, আদা, লঙ্কা প্রভৃতি উপকরণ চিন, মালদ্বীপ, পারস্য উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হত। এইভাবে, কৃষিভিত্তিক কাঁচামালের উৎপাদন ও রপ্তানিভিত্তিক পরিবর্তিত আর্থিক কাঠামোর মধ্যেই উন্নয়নের প্রাক্সবস্থার সূচনা শুরু ঘটেছিল। তবে এখানে অর্থনৈতিক উন্নতির বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই সময় শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত স্থবিরতার জন্য ভারত প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতার একটি সীমিত পর্যায়েই থেকে যায়।


তৃতীয়ত, রস্টোর তাত্ত্বে যে উড্ডয়ন পর্বের কথা বলা হয়েছে, তা ভারতের নিরিখে দুটি পর্যায়ে পরিচালিত হয়েছে। যেমন-ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের প্রচলিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় প্রযুক্তি, মূলধন এবং পরিকাঠামোর নিরিখে ভাবসাবাণিজ্য যথেষ্ট গতিশীল হয়ে পড়ে। যদিও কোম্পানির শাসনকালে ভারতীয় অর্থনীতির প্রকৃত বিকাশ নিয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সময়কালেই ব্যাঙ্ক, বিমা, অফিস, এজেন্সি, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুবাদে ভারতীয় অর্থনীতির চেহারা প্রায় অনেকটাই বদলে যায়। এরপর, আমরা যদি স্বাধীনোত্তর ভারতের দিকে তাকাই, সেখানে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে সর্বাধিক বিনিয়োগ এবং শিল্প ক্ষেত্রগুলির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সুবাদে দেশের আর্থসামাজিক কাঠামো একলাফে যথেষ্ট উন্নয়নমুখী হয়ে ওঠে। এই ধারণা থেকে একটা কথা খুবই পরিষ্কার, বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকেই ভারতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ক্ষেত্রটি রস্টো বর্ণিত উড্ডয়নের স্তরকে স্পর্শ করে ফেলেছিল।


চতুর্থত, বিংশ শতাব্দীর শেষ দুই দশকে ভারতের রাজনীতি, সমাজনীতি, শিল্প-পরিকাঠামো, গণ পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে যে ধরনের সমৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছিল, সেই অবস্থাটিকে রস্টো বর্ণিত উন্নয়ন মডেলের চতুর্থ স্তরের সাথে অবশ্যই বিবেচনাযোগ্য। বিশেষ করে, নব্বইয়ের দশকে প্রযুক্তি এবং গবেষণা ক্ষেত্রে সাফল্যজনক অংশগ্রহণ এবং আর্থিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন, ভারতকে যথাসম্ভব সমৃদ্ধির স্তরে পৌঁছে দেয়।


পরমত, রস্টোর উন্নয়ন মডেলের সর্বশেষে যে উচ্চ গণভোগের স্তরের কথা বলা হয়েছে, তার সাথে অবশ্য বর্তমান ভারতের আর্থসামাজিক কাঠামো খুব একটা মেলে না। কারণ, স্বাধীনতালাভের পর থেকে ভারত লৌহ-ইস্পাত শিল্প, বস্ত্রশিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ক্রমশ উন্নতির শিখরে পৌঁছলেও, এখানকার জনগোষ্ঠীর একটা বড়ো অংশ এখনো দরিদ্রসীমার নীচে অবস্থান করছে। এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর একদিকে যেমন কোনও সামাজিক নিরাপত্তা নেই, অন্যদিকে প্রথাগত সমাজের মতোই তারা 'দিন আনে দিন খায়' প্রকৃতির জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। সুতরাং, সবদিক বিচার করলে, রস্টো প্রবর্তিত উচ্চগণভোগের পঞ্চম স্তরটিতে উপনীত হওয়া ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এখনো একটি দিবাস্বপ্নমাত্র।


 


মূল্যায়ন (Evalution) :


ভারতের মতো একটি মিশ্র অর্থনীতিনির্ভর দেশকে রস্টোর উন্নয়নের স্তর তত্ত্বের সাথে যুগ পরম্পরায় যথার্থভাবে মিলিয়ে দেওয়া দেশ পরিমাপ করনারি নিতেও, ভারতে শিল্পায়ন, পরিকাঠামো, পরিসেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতির বিভিন্ন আরগুলি নিরন্তর বিকশিত হয়ে চলেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকে উত্তরণের পর্ব পৌঁছে যাওয়া ভারতে হয়ে চলো ২০-৩০ বছরের মধ্যেই সর্বোচ্চ গণভোগের স্তরে পৌঁছে মাওয়ার কথা ছিল। তবে সার্বিকভাবে চালাতেতের পরবর্তীতে পরিস্থিতিকে যদি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার বিভিন্ন সূচকের আলিাকে দেখা হয়, তাহলে বলা যায় এই দেশটি এখনো পর্যন্ত সমৃদ্ধির পর্যায়েই (Drive to maturity) থেকে গেছে। অবশ্য, এই একই দৃশ্য আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমারের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়।


প্রকৃত অর্থে আমাদের দেশ স্বাধীন হলেও, উন্নয়নের বৈষম্য এদেশে এখনো স্পষ্টভাবেই বিদ্যমান। বিশেষ করে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত যেন সম্পূর্ণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। যেমন-একটি ভারত মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করে, আরেকটি ভারত অর্থনৈতিক অবহেলায় অন্ধকারেই সর্বদা ডুবে থাকে। একটি ভারতে খাদ্যরূপে চাল বা আটার দরের তুলনায় সস্তার ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক ব্যবহার করে, আরেকটি ভারত সর্বদা উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ, এমনকি বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যের পথ চেয়ে বসে থাকে। বিশেষ করে, রাজ্যভিত্তিক শিক্ষার হার, দৈনিক মাথাপিছু আয়, উন্নয়ন খাতে মোট খরচ, অপুষ্টি, দারিদ্র, শিশুমৃত্যুর হারের প্রসঙ্গটিকে যদি আমরা নথি আকারে সামনে আনি, তা থেকে সহজেই বোঝা যাবে উদীয়মান দেশরূপে ভারতের উন্নয়ন ঠিক কোন পথে পরিচালিত হয়ে চলেছে। উল্লিখিত 9.63 নং ধারণাচিত্রে ভারতের অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত পরিসংখ্যান আকারে তুলে ধরা হল। সত্যিই যদি আমাদের দেশ রস্টো প্রবর্তিত প্রথাগত আর্থসামাজিক স্তর অতিক্রম করে সর্বোচ্চ গণভোগের স্তরে পৌঁছে যেত তাহলে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' কিংবা বিদ্যালয় স্তরে 'মিড ডে মিল' প্রদানের প্রয়োজন দেখা দিত না। ভারতের আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রটিকে যদি পৃথকভাবে রস্টোর মডেলের ভিত্তিতে আমরা বিশ্লেষণ করি, দেশটি তাত্ত্বিকভাবে সমৃদ্ধির দিকে যাত্রা করলেও, আঞ্চলিকভাবে এখনো প্রাক-উন্নয়ন পর্বেই থেকে গেছে।


যদি আঞ্চ সমস আধ্য প্রতিি অঙ্গ সংস্কৃ বেশ অনিন বস্তুত অধ্যায় অসম্প স্পষ্ট উপস উদ্রেন বিষয় সমত বর্তমা করা


তবে, আমাদের দেশে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলির সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পিত নীতিগুলিকে আঞ্চলিক স্তরে যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ ঘটানো যায়, তাহলে পরবর্তীকালে রস্টোজনিত উন্নয়নের সর্বোচ্চ গণভোগের স্তরের সাথে ভারতীয় আর্থসামাজিক পরিসরের সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে, ভারতের কল্যাণমূলক অর্থনীতি, উদারনৈতিক বাণিজ্যিক পরিকল্পনা, ইলেকট্রনিক্স তথা তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বিপুল সমাহার, গ্রিন টেকনোলজি এবং প্রচলিত বাজারে আমাজন বা ফ্লিপকার্টের মতো উচ্চ গণভোগের জন্য যথাযথ পরিসেবা প্রদান রস্টো বর্ণিত পঞ্চম স্তরেরই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতবহন করে থাকে। ঠিক সেই কারণেই, ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের প্রচলিত পর্যায়টিকে রস্টোর উন্নয়নের স্তর তত্ত্বের সাহায্যে যেভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, তা আর কোনও তত্ত্বের সাথে পুরোপুরি মেলে না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01