অভিকর্ষীয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি (Gravitational Analysis method)
নিউটনের অভিকর্ষীয় সূত্রের ন্যায় ক্রিয়ামূলক অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণের এই পদ্ধতিটি কোনও একটি সম্মানিক পরিসরে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বিশেষ কার্যকরী কেন্দ্র মধ্যেকার পারস্পরিক তাত্ত্বিক আকর্ষণের পরিমাণকে সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। সামাজিক পদার্থবিদ্যা (Social Physics)-কে সামনে রেখে এই তত্ত্বটি উদ্বাবনায় যাঁদের অবদান সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন অধ্যাপক ডাব্লু জে. রিলি (W) Rilly), জিফ (Zipf), স্টিওয়ার্ট (Stiwart) প্রমুখ।
এখানে, আদর্শ সরল ভরকেন্দ্রিক স্থিতিমানকে সামনে রেখে দুটি কেন্দ্রের মধ্যেকার পারস্পরিক আকর্ষণের মাত্রা নির্ধারিত হয়, যা তাদের সংশ্লিষ্ট ভরের সঙ্গে সমানুপাতিক এবং এদের দূরত্বের সাথে প্রত্যানুপাতিক। এখানে ভর (Mans) বলতে যেমন কোনও একটি কার্যকরী অঞ্চলের জনসংখ্যা, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যাবলি, উপার্জন বা বিনিয়োগ সহ একাধিক স্থিতিমানকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে, তেমনই দূরত্ব (Distance) বলতে সড়ক, রেলপথ অথবা ব্যয় সাপেক্ষ যে-কোনও দূরত্বই বিবেচিত হয়। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিমাপকের ভিত্তিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের প্রচ্ছন্ন প্রবাহের মাত্রাগত পরিমাণ নির্ণয় করা হয়, এবং তার ভিত্তিতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমপ্রচ্ছন্ন রেখাকে মানচিত্রের আকারে উপস্থাপন করা হয়। তবে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই অভিকর্ষীয় বিশ্লেষণের স্থিতি মা কক্ষ হিসেবে সময় time এবং মূল্য price প্রকৃতি দাঁড়াও নির্ধারণ করা যায়।
দুটি স্থান a এবং ৮-এর অন্তর্বর্তী ব্যবধানে অভিকর্ষ প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য গাণিতিক সূচকটি হবে.
এখানে এ এবং ৮ হল দুটি পৃথক ক্রিয়াশীল বা উৎপাদন কেন্দ্র, Ma এবং Mb হল সংশ্লিষ্ট স্থান দুটির নির্দিষ্ট। ভরকেন্দ্র, dab হল সংশ্লিষ্ট অঞ্চল দুটির অন্তবর্তী দূরত্ব, ৮ হল নির্ধারিত ধ্রুবক, Gab হল সংশ্লিষ্ট দুটি কেন্দ্রের মধ্যে কার্যকরি অভিকর্ষজ আকর্ষণ বল। পরবর্তীকালে এবং ৮-কে নির্দিস্ট স্থিতিমাপক ধরে উল্লিখিত সূত্রটিতে কিছুটা আবার পরিমার্জন করা হয়। অবশ্য, নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতির সাপেক্ষে a = b = 1.45 ^ 2 2 হলে তবেই সূত্রটি কার্যকর হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রটি হল-
Gab-k MaxMb dab
ত্রুটি (Error): সামগ্রিকভাবে অভিকর্ষ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে ক্রিয়ামূলক অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি ত্রুটি দেখা দিতে পারে। যেমন-
(i) অভিকর্ষ পদ্ধতিতে কোনও একটি শহর বা অঞ্চলকে সঠিকভাবে না জেনেই অনেক ক্ষেত্রে তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটানো হয়। ফলে, ক্ষেত্রবিশেষে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণে একাধিক ত্রুটি থেকে যায়। বিশেষ করে, কোনও নতুন বাজার এলাকাকে ভিত্তি করে জনসংখ্যার কেন্দ্রীভবন, অথবা প্রধান শহরাঞ্চলটির বাইরে কোনও নতুন বাজার এলাকার সৃষ্টি সংক্রান্ত ধারণাগুলিকে প্রায়শই অভিকর্ষ নীতিতে উপেক্ষা করা হয়।
(ii) কোনও একটি ক্রিয়ামূলক অঞ্চলের পরিসরে অন্যান্য ছোটো ছোটো গতিশীল তথা নতুন নতুন অর্থনৈতিক কেন্দ্রের বিকাশ ঘটলে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে সেগুলির আঞ্চলিকীকরণের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার উদ্রেক ঘটায়।
(iii) ক্রিয়ামূলক আঞ্চলিক পরিসরের প্রত্যেকটিরই নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্রতা থাকে। যেমন, এদের মধ্যে কোনোটি অধিক উন্নত, কোনোটি উন্নতশীল অথবা কোনোটি আবার উন্নয়নের নিরিখে যথেষ্ট পশ্চাদপদ। ফলে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে সমমাত্রার উপাদানগুলির কেন্দ্রীভবন বা সম্প্রসারণ কখনোই দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই, এই ধরনের অনঞ্চলকে একযোগে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে সীমায়িত করা হলে সীমানা সংক্রান্ত ত্রুটি থেকেইযায়।