welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ফ্রেইডম্যানের কেন্দ্র পরিধিচথল মডেল(Friedmann's Core-periphery model):

ফ্রেইডম্যানের কেন্দ্র পরিধিচথল মডেল(Friedmann's Core-periphery model):


প্রাক্ শিল্পায়িত সমাজ থেকে আধুনিক নগরায়িত কাঠামোয় স্থানিক বৈষম্যের পথ কীভাবে পরস্পর সহযোগী সম্পর্কের ভিত্তিতে আঞ্চলিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটায়, সেটিকে সরল, সুসংহত এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বের আকারে উপস্থাপন করেছেন বিখ্যাত আমেরিকান পরিকল্পনাবিদ জন ফ্রেইডম্যান (John Friedmann)

1966 খ্রিস্টাব্দে Regional Development Policy A case stulty of Venezuela নামক একটি গ্রন্থে ফ্রেইডম্যান এই তত্ত্বটিকে দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার উন্নত অভ্যন্তরীণ এবং উপকূলবর্তী পশ্চাদপদ অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন।

মৌলিক ধারণা (Fundamental idea):

ফ্রেইডম্যানের মতে, আঞ্চলিক পরিসরে সংলগ্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানব-

সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেক দেশকেই অত্যন্ত সমৃদশালীভাবে গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে, কিছু কিছু দ্রব্য এবং অর্থনৈতিক কাঠামোয় মূলধন বিনিময়ের নিরস্তর কার্যকর প্রবাহের মধ্য দিয়ে উন্নত কেন্দ্রীয়স্থল এবং সাহাগ উপক্ষেত্রীয় অঞ্চলগুলি ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়নের পথে ক্রমশ এগিয়ে যায়। বিশেষ করে, একটি দেশে এই ধরনের উন্নয়নের সোপান গড়ে তুলতে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রিকরণ, নগরায়ণ, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সংক্রান্ত বিষয়গুলির প্রভাব অত্যন্ত অনিবার্য।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্র এবং পরিধিস্থল বিষয়ক উন্নয়নমুখী সম্পর্কটি সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ-যে-কোনও অর্থনেতিক স্কেলেই সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য। সেই কারণেই ফ্রেইডম্যান বলেছেন-ড়

World continent, Nation and City-the centre-periphery hypothesis appears on all the relevant scales of explanation, simultaneously as cause and effect of economic transformation."

 অনুমান (Assumption):

তত্ত্বটিকে উপস্থাপনের জন্য ফ্রেইডম্যান প্রথমেই বেশ কয়েকটি অনুমানকে সামনে রেখেছেন। এগুলি হল-

(i) আঞ্চলিক পরিসরের প্রাথমিকভাবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির প্রাধান্য থাকবে।

(ii) এখানে উন্নয়নের মূল তথা প্রারম্ভিক কেন্দ্রস্থলটি নগরায়িত বা শিল্পায়িত কাঠামোয় গড়ে উঠবে।

(iii) সমগ্র অঞ্চলটির অর্থনৈতিক কাঠামোয় পরিচালনা (Driving) এবং পরিচালিত (Driven) শস্তি রূপে চাহিদা এবং জোগানের প্রাধান্য থাকবে।

(iv) এক্ষেত্রে আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটাতে পরিধিস্থ অঞ্চলগুলির শ্রমিক, প্রাথমিক সম্পদ (কাঁচামাল) উন্নত কেন্দ্রস্থলগুলির দিকে এবং কেন্দ্রস্থলের উৎপাদিত দ্রব্য তথা মূলধন পরিধিস্থ অঞ্চলের অভিমুখী নিরন্তর প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।

এইভাবে কেন্দ্র এবং পরিধি অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃ-উন্নয়ন সম্পর্ক (Inter developmental relationship) আরো মজবুত হবে।

আঞ্চলিক কাঠামো (Regional Structure):

ফ্রেইডম্যান তাঁর কেন্দ্রস্থল-পরিধি মডেলের তাত্ত্বিক কাঠামোয় মোট চারটি অঞ্চলকে প্রাধান্য দিয়েছেন, এগুলি হল-

1. কেন্দ্রীয় অঞ্চল (Core Region)

2. ক্রমোন্নত পরিবর্তনসূচক অঞ্চল (Upward Transition Region),

3. সম্পদ সীমান্ত অঞ্চল (Resource Frontier Region),

4. নিম্নাভিমুখী পরিবর্তনশীল অঞ্চল (Downward Transition Region)

কেন্দ্রীয় অঞ্চল (Core Region): ফ্রেইডম্যানের মতে, অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত কোনও একটি অঞ্চলের উৎপাদনশীল এবং মূলধনসমৃদ্ধ ক্ষেত্রটি হল কেন্দ্রীয় অঞ্চল। প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলটি উন্নত প্রযুক্তি, উদ্ভাবনা, অধিক মজুরি, উচ্চ নগরায়িত সমাজ এবং বিভিন্ন পরিসেবা দ্বারা সবসময় গতিশীল অবস্থায় থাকে। তা ছাড়া, এখানকার শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য পরিসেবামূলক দিকগুলি যথেষ্ট উন্নত প্রকৃতির হয়।

যেমন-সমস্ত ধরনের মেট্রোপলিটন অঞ্চল বা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অঞ্চল (Central Business District) -গুলি এর মধ্যে পড়ে। ফ্রেইডম্যান অবশ্য তাঁর তত্ত্বে কেন্দ্রীয় অঞ্চলরূপে ব্রাজিলের সাওপাওলো শহরটির কথা উল্লেখ করেছিলেন।

জামারত পরিবর্তনশীল অঙুল (Upward Transitional Region): কেন্দ্রীয় নগরায়িত অর্থনৈতিক পরিসরকে ঘিরে গড়ে ওঠা, প্রায় সমৃদ্ধ ক্ষেত্রটি ক্রমোন্নত পরিবর্তনশীল অঞ্চল নামে পরিচিত। গতিশীল এই অঞ্চলটিতে কেন্দ্রীয় অর্থনীতির ঊর্ধ্বগামী প্রভাব অতিমাত্রায় বজায় বকে বলে, এখানে সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি একটি মাইড এবং সুসংহত উৎপাদন কাঠামো প্রবৃদ্ধিকে ছোটো ছোটো অসংখ্য কেন্দ্রে ছড়িয়ে দেয়। শ্রমিক তথ্য জনগোষ্ঠীর নিয়মিত এবং যায়ী পরিব্রাজনের প্রভাব সর্বাধিক থাকায়, অর্থনৈতিক অজনপ্রদানে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তা ছাড়া, এই এলাকার সামগ্রিক বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পার্শ্বসিং ছোটো ছোটে অঞ্চলগুলিতেও বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে।

সম্পদ সীমান্ত অঞ্চল (Resource Frontier Region):

কেন্দ্রীয় এবং উপনগরীয় অঞ্চলের ধারাবাহিক বিকাশের হাত ধরে গড়ে ওঠা নবগঠিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগী ক্ষেত্র হল সম্পদ সীমান্ত অঞ্চল। এই অঞ্চলটি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করলেও, কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং নতুন নতুন সম্পদ অন্বেষণ বা সম্পদ সরবরাহকারী ক্ষেত্ররূপে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

• যেমন-কোনও পরিকল্পিত আন্তঃ-শহর বা আধাপৌর এলাকাগুলি এর মধ্যে পড়ে। বর্তমানে, খনিজ সম্পদের সম্ভাবনাময় একটি প্রাপ্তিস্থলকে বিবেচনা করে আর্কটিক অঞ্চলগুলিকেও গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সীমান্ত অঞ্চলের তকমা দেওয়া হয়েছে।

নিম্নাভিমুখী পরিবর্তনশীল অন্যল (Downward Transitional Region): সাধারণত নিম্নাভিমুখী পরিবর্তনশীল অঞ্চলগুলি বলতে একেবারে প্রান্তিক কৃষি বা খনিজসমু্য কোনও গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলিকেই বোঝায়। আসলে, এই অঞ্চলটি হল প্রাচীন অর্থনীতির একটি অন্যতম ধারক ও বাহক। আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল এই অঞ্চলটি প্রায় অনুন্নত হলেও, এখানকার উৎপাদিত দ্রবা, প্রাপ্ত কাঁচামাল এবং শ্রমকে ব্যবহার করেই কেন্দ্রীয় এবং তার আশেপাশের অন্যান্য অঞ্চলগুলি উৎপাদনশীল হয়ে ওঠে।

• যেমন-সম্পদে পরিপূর্ণ অথচ প্রযুক্তি এবং মূলধনহীন লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল এই প্রকৃতির।

উন্নয়নের আন্তঃসম্পর্কমূলক পর্যায় (The Interrelated Stages of Development):

প্রাথমিক বৈষম্য কাটিয়ে কীভাবে কোনও একটি দেশের কেন্দ্র পরিধিস্থ ক্ষেত্রগুলি ভারসামাযুক্ত অর্থনৈতিক কাঠামোয় পরিণত হয়, সেই বিষয়টিকে বোঝাতে ফ্রেইডম্যান তাঁর মডেলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের কথা তুলে করেছেন। যথা-

1.প্রথম পর্যায় (First Stage):আঞ্চলিক স্তরে প্রাথমিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় গড়ে ওঠা কয়েকটি স্বতন্ত্র এবং আদানপ্রদানহীন মৌলিক চাহিদাভিত্তিক আর্থসামাজিক ক্ষুদ্র পরিমন্ডলটি হল উন্নয়নের প্রথম পর্যায়।।

নামকরণ (Naming): ফ্রেইডম্যান এটিকে প্রাক শিল্পায়ন পর্যায় (Pre-Industrial stage)-ৰূপে উল্লেখ করেছেন।

উদ্ভব (Origin): মূলত কৃমিভিত্তিক অর্থনীতিকে অবলম্বন করে নিরপেক্ষ এবং সাধারণ সত্ত্বা বিশিষ্ট সামাজিক কাঠামোকে ঘিরে এই পর্যায়ের সূত্রপাত ঘটেছে।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(1) প্রথাগত অর্থনীতির এই পরিসরটি স্থানীয়ভাবে সীমাবন্ধ, স্বাধীন অথচ নিরপেক্ষ প্রকৃতির।

(।।) এই পর্যায়ে গড়ে ওঠা প্রতিটি বসতি আঞ্চলিক স্কেল ক্ষুদ্রাকার এবং বিক্ষিপ্তভাবে বিন্যস্ত।

(iii) বিচ্ছিন্নভাবে জনকেন্দ্রীভবনের কারণে এই স্তরে মানুষের কর্মতৎপরতা ও পরিব্রাজনের মাত্রা যথেষ্ট কম।

(IV) কেন্দ্রীভূত, স্বচালিত এবং গতিহীন এই অর্থনীতিতে উৎপাদনের কোনও উদ্‌বৃত্ত থাকে না।

(v) শিল্পের সমাবেশের ঘটনাগুলিকেও এই স্তরে সেভাবে লক্ষ্য করা যায় না।

(vi) বিকাশের দিক থেকে এই পর্যায়টি যথেষ্ট পশ্চাদপদ অবস্থায় থাকে।

2. দ্বিতীয় পর্যায় (Second stage):

নগরায়িত কোনো শিল্পসমৃদ্ধ আঞ্চলিক পরিসরে অর্থনৈতিক মেরুকরণের সূত্রপাতকে ঘিরে যে প্রভাবশালী, চরম এবং প্রায় অস্থিতিশীল পর্যায় গড়ে ওঠে, তাকেই দ্বিতীয় পর্যায় বলা হয়।

নামকরণ (Naming): এই অবস্থাটিকে ফ্রেইডম্যান ক্রান্তিকালীন পর্যায় (Transitional stage)-রূপে আখ্যায়িত করেছেন।

উদ্ভব (Origin): কোনও চিরাচরিত অর্থনৈতিক কাঠামোয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিল্পভিত্তিক উৎপাদনে মনোনিবেশ ঘটানো কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা হয়। আসলে, অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবন এবং মূলধনের অধিক সুগমতার পথে গড়ে ওঠা গতিশীল নগরীয় ক্ষেত্রগুলি এই ধরনের প্রবৃদ্ধি মেরু সৃষ্টির পর্যায়কে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।

অষ্টাদশ শতকে গ্রেট ব্রিটেন এই স্তরে উপনীত হয়ে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে তাদের ঔপনিবেশিক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(1) এই পর্যায়ে শক্তিশালী একটি নগরকেন্দ্রের আবির্ভাবের ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের স্থবির অর্থনীতি হঠাৎ করেই অত্যন্ত গতিশীল হয়ে পড়ে।

(ii) এখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে মূল নগরী এবং বৃহৎ শিল্পকেন্দ্রগুলির মধ্যে আন্তঃসংযোগ ঘনত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

(iii) কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে ইউনিট প্রতি মজুরি দ্রুত বাড়তে থাকায়, সেখানকার বাণিজ্যিক শক্তি হঠাৎ করেই অত্যন্ত সচল হয়ে ওঠে।

(iv) উৎপাদনশীল কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যাবতীয় সম্পদের চাহিদা বাড়তে থাকায়, প্রান্তিক অঞ্চলগুলি একটি উল্লেখযোগ্য জোগান ক্ষেত্রে পরিণত হয়।

(৩) ক্রমবর্ধমান উদ্‌বৃত্ত কেন্দ্রীয় নগরাঞ্চলটিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং নেতৃত্বস্থানীয় করে তোলে।

(vi) অবশ্য, এই পর্যায়ে প্রান্তিক অঞ্চলগুলি থেকে ব্যাপক শ্রমিক পরিব্রাজন এবং সম্পদ সরবরাহের কারণে আঞ্চলিক বৈষম্য মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পর্যায়ে শিল্পসমৃদ্ধ অধিক শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রটি হল কেন্দ্র বা core' এবং পারিপার্শ্বিক অবিকশিত এলাকাগুলি হল পরিধিস্থল বা 'Periphery"। যেমন-অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশকে উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশকে উন্নয়নের পরিধিস্থলরূপে চিহ্নিত করা যায়।

3. তৃতীয় পর্যায় (Third stage):

এটি এমন একটি পর্যায় যেখানে শিল্পায়নের পথ অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় নগর কাঠামোর সার্বিক উন্নয়নের ভিত যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

4.চতুর্থ পর্যায় (Forth stage):

ফ্রেইডম্যানের মতে, আঞ্চলিক উন্নয়নের গতিশীল কাঠামোর সম্পৃক্ত এবং চরম অবস্থায় যখন নগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি একটি আন্তঃনির্ভরশীল উন্নত বৃহৎ ক্ষেত্র গড়ে তোলে, সেটিই হল চতুর্থ পর্যায়।

নামকরণ (Naming): এই অবস্থাকে ফ্রেইজম্যান শিল্প-পরবর্তী পর্যায় (Post-Industrial stage)- রূপে উল্লেখ করেছেন।

উদ্ভব (Origin): আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে গড়ে ওঠা একাধিক নগরায়িত কেন্দ্রগুলি বিকাশের সর্বোত্তম পর্যায়ে উপনীত হলে, সেখান থেকে পশ্চাদগামী প্রভাব (Backwash effect) এবং চুইয়ে পড়া প্রভাব Tricke down effect) পরস্পর সম্মিলিতভাবে অর্থাৎ কার্যকরী হয়ে প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র, অর্থনৈতিক উপকেন্দ্র এবং ক্ষুদ্র তথা স্থানীয় কেন্দ্রগুলির জটিল আন্তঃসম্পর্কের মাধ্যমে চতুর্থ পর্যায়ের সৃষ্টি করে।

এই পর্যায়টি সম্পর্কে ফ্রেইডম্যান বলেছেন- the allocation of economical activities should attais Optimum balম্পর্কে (ফইডম্যান বলো does not mean that trade and the mobility of the poplaution muld decrease Quare the contraryl As far as diferent areas specialise in certain functiones, there holl be decrease. the contrary! As fit. An integrated model foresees a esetle in br Her population chaved mostly tre age the youth study in big cities, families settle in suburbs, derly people to for cheap and peacehed rural environment.

মৈশিলিক অর্থনীতির সুসংহত কাঠামোয় উৎপাদনময়ী প্রতিটি ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে বিশেষীকরণ (specialization) থাকায় বৃহৎ স্কেলে এই পর্যায়ে সর্বোচ্চ উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়।

(ii) এখানে বৈষম্যের চরম অবস্থা কমে গিয়ে কেন্দ্র এবং পরিধিসং প্রতিটি অঞ্চল সার্বিকভাবে ভারসাম্যে উপনীত

(iii) আঞ্চলিক অর্থনীতির এই স্তরে উৎপাদনের উদ্‌বৃত্তগুলি ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অভিমুখে সঞ্চালিত হয়। ফলে, হয়। উন্নয়নের গতি এখানে সবসময় সচল থাকে।

(iv) এই পর্যায়ে, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রকৌশলী নীতিতে পরিধিস্থ অঞ্চলগুলি আরো বৃত সম্প্রসারণ ঘটে। বিশেষ করে, নতুন নতুন শিল্পে বিনিয়োগ, শ্রমবিভাজন, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পরিবহন করিডোর স্থাপন এবং নতুন ও পুরাতন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় প্রথার সম্পর্কে উন্নয়নের ধারা সমগ্র অঞ্চলকেই প্লাবিত করে।

(v) ক্রমান্বয়ী উন্নয়ন (Sequental development)-এর পথ অনুসরণ করে কোনও একটি অঞ্চল 'Well developed urban hierarchey'-র কাঠামোয় সঠিক ভারসাম্যে উপনীত হয়। এইভাবে, অন্তিম পর্যায়টি একটি বিশ্ব নগর (Global city) ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করে।

প্রয়োগমূলক ক্ষেত্র (Application Field):

ফ্রেইডম্যান কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বটির প্রয়োগমূলক ক্ষেত্ররূপে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূলীয় 'সোনালি ত্রিভূজ (Golden Triangle)' নামক কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কথা তুলে ধরেছেন। একসময় এই অঞ্চলটি লাতিন আমেরিকার সম্পদবহুল অথচ পশ্চাদপদ পরিধিস্থ অর্থনীতির অন্তর্ভুত্ব ছিল। কিন্তু, নতুন করে উপনিবেশ গড়ার সাথে সাথে এখানকার অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে। প্রথম দিকে, 1549 খ্রিস্টাব্দে আখের উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজোর ওপর ভিত্তি করে উপকুলীয় সালভাদোর ডি বাহিয়া ব্রাজিলের রাজধানীরূপে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু, পরবর্তীকালে স্থানীয় এবং নবনির্মিত বন্দর এলাকায় বাণিজ্যিক পুঞ্জীভবনের সুবিধা অঞ্চলটি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আশেপাশে অবাধ সম্পদের ভান্ডার রূপী আমাজন অববাহিকা (পরিধিস্থ অঞ্চলরূপে) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 

উনিশ শতকের সত্তরের দশকে লাতিন আমেরিকায় প্রায় 1লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় শহরের অস্তিত্ব ছিল মাত্র এটি। পরবর্তী একশো বছরে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 240টিতে পৌঁছায়। তবে, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে, সমগ্র লাতিন আমেরিকার আর্থসামাজিক বৈপরীতে ভরপুর এলাকাগুলি একটি বিশাল পরিধিস্থ অঞ্চলরূপে এখনveloped North) এবং অনুন্নত দক্ষিণ (The Lindeveloped South)-এর রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে যে ধারণাটি প্রচলিত হয়ে আসছে, সেখানেও লের পরিধিদলের অর্থনীতি অতি সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। বর্তমানে, উন্নত শিল্পবাজারমুখী বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রকে উজান কেন্দ্রাবল এবং আমদানিনির্ভর রাষ্ট্রগুলিকে পরিধিস্থলরূপে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

•  ফ্রেইডম্যানের তত্ত্বের সমালোচনা (Criticism of Theory of Friedmann): Fristmann তাঁর Core-periphery মডেলে যে ধরনের বিকাশের কথা বলেছেন, তা বিশ্বের সমস্তএশে সমানভাবে প্রয়োগযোগ্য হয় না। কারণ- 

(1) পশ্চিমি পুজিবাদী রাষ্ট্রগুলি তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তি বজায় রাখতে স্বেচ্ছাকৃতভাবে সর্বদা অধিকতর শ্রম, শক্তি এবং পুডিনির্ভর একচেটিয়া অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে বাণিজ্যিক রামের নীতিতে বিশ্বের পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র এবং পরিধিস্থ হডেলের ধারণা অনুযায়ী উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভারসাম্যযুক্ত উন্নয়নের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যায়। উত্ত পরিস্থিতির সুস্পষ্ট প্রতিফলন উত্তর-পশ্চিম দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র ব্রিটেনের সাথে ঔপনিবেশিক শাষনে জর্জরিত তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক স্বার্থের ক্ষেত্রবিশেষ লক্ষ্য করা গেছে।

(2) অনেকসময়, কিছু পরিধিস্থ অঞ্চল অধিক মুনাফা লাভের স্বার্থে তাদের নিজস্ব সম্পদগুলিকে সমৃদ্ধশালী জেনো কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রগুলিতে সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেদের দরিদ্র অবস্থাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে, এই সকল দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রপটটি কখনোই ফ্রেইডম্যান প্রদর্শিত পথে গড়ে ওঠে না।

(3) ফ্রেইডম্যানের তত্ত্বটি উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে রচিত এলেও, সমগ্র পৃথিবীতে এখনো এমন অসংখ্য দেশ রয়েছে, যাদের জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোটি সম্পূর্ণভাবেই প্রাথমিক অর্থনীতিনির্ভর। এই সমস্ত দেশের ক্ষেত্রে কেনো উন্নত শিল্পাঞ্চলকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরিবর্তিত মজবুত অর্থনীতি সমগ্র দেশটিকে উন্নয়নের ঠিক কোন্ পথে পৌঁছে দেবে, তা কেন্দ্র-পরিধি তত্ত্বের মাধ্যমে সিদ্ধর করা যথেষ্ট দুরুহ একটি ব্যাপার।

(4) কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফ্রেইডম্যানের তত্ত্বে উন্নয়নের যে দুটি প্রারম্ভিক পর্যায়ের কথা উল্লেখ কনা হয়েছে, সেটি একটি সমস্যাবহুল প্রেক্ষাপট। কারণ, প্রান্তিক অঞ্চলগুলি থেকে উন্নত কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে যখন অধিক পরিমাণে শ্রমিক এসে ভিড় করে, তখন ক্রমেই একটি অস্বাস্থ্যকর এবং ঘিঞ্জি বস্তি (Slum) এলাকা গড়ে ওঠে। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় শহরের মজুরি এবং জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী হয়ে যায়। এইভাবে, মূল শহরকে ঘিরে আঞ্চলিক সমৃদ্ধির কাঠামোটি একসময় ভেঙে পড়ে।

(5) পৃথিবীতে যে সমস্ত দেশ ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্গম, এবং যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে, সেটি চিরকালই অতিমাত্রায় নির্ভরশীল থেকে যায়। তা ছাড়া, এই দেশগুলিতে আন্তঃবিভাগীয় এবং আন্তঃআঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিসরে পারস্পরিক যোগসূত্র যথেষ্ট আলগা হয়। তাই, পশ্চাদপদতাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অনিবার্য পরিণতি হয়ে ওঠে। যেমন-দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু দেশ এখনো এই সমস্যায় জর্জরিত।

(6) সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর নিরিখে অধিকাংশ উন্নয়নশীল (যেমন-আফ্রিকা, ওশিয়ানিয়ার অন্তর্গত) দেশের প্রাক্-পুঁজিবাদী উৎপাদন ক্ষেত্র সমৃদ্ধির একটি মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থান করায়, এখানকার মিশ্র অর্থনৈতিক আস্তাসংযোগমূলক সুবিধা খুব একটা দেখা যায় না। ফলে, উৎপাদন, বণ্টন ও পরিসেবাকে ঘিরে এই সমস্ত দেশগুলিতে কেন্দ্র বা পরিবিশ্ব অঞ্চলগুলির সুসংহত সম্পর্কের দিকটি ভীষণভাবে ব্যাহত হয়।

প্রসঙ্গত, লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ, যেমন হন্ডুরাস, মেক্সিকোতে এই কেন্দ্রস্থল এবং পরিধিসস্থ্য তত্ত্বটির শুরোগ ঘটিয়ে যতিন আমেরিকার মেন্ড শিীলতার বিষয়টিকে আরও স্পষ্টভাবে আলোচনা করেন। তিনি লক্ষ্য করেন পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ ঔপনিবেশিক আধিপত্যকে কাটিয়ে উঠতে সমর্থ্য হলেও, প্রিয় সোভিয়েত তেনে কিন্তু তারা প্রথম বিশ্বের দাশাল কোনো সমৃদ্ধ গাট্ট (যেমন-ব্রিটেন, USA, জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন)-গুলির উপর সর্বাধিক নির্ভরশীল।

 আঞ্চলিক উন্নয়নের নিরিখে ফ্রেইডম্যানের তত্ত্বের গুরুত্ব(Importance of Friedman's theory towards regional development):

একটি অঞ্চলের স্থানিক অর্থনীতি ও সামাজিক আধিপত্যের মধ্য দিয়ে কীভাবে সার্বিক উৎকর্ষতার প্রধান একটি ক্ষেত্রে উপনীত হয়, তার যথার্থতা নিহিত রয়েছে ফ্রেইডম্যানের কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বে। এখানে, অর্থনৈতিক সংহতিকরণে লিপ্ত প্রতিটি স্তরের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা উন্নয়নের যে পরিমন্ডল গড়ে তোলে, সেটি বাকি সমস্ত আধুনিক তত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। বিংশ শতকের বিভিন্ন সময় জুড়ে উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি তাদের ঔপনিবেশিক আধিপত্যকে বিসর্জন দেওয়ায়, তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে নিঃসন্দেহে বলা যায়, সংশ্লিষ্ট উন্নয়নশীল দেশগুলির কেন্দ্র-পরিধিস্থল অঞ্চলগুলির ময়ে পারস্পরিক আদানপ্রদানমূলক সম্পর্কের (Inter- dependant relationship) ভিত আগের তুলনায় যথেষ্ট দৃঢ় বা মজবুত হয়েছে।

 আন্তঃরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র পরিবিদ্ধ অঞ্চলের দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফ্রেইডম্যানের কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করেই আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক কাঠামোর নিরিখে বেশ কয়েকটি অনুক্রমিক রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলি হল-

(1) কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র (Core region): আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি।

(2) আধা-পরিধিস্থ রাষ্ট্র (Semi-periphery region): লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ, সৌদি আরব প্রভৃতি।

(3) পরিধিস্থ রাষ্ট্র (Periphery region): দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশ, আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রভৃতি।

বিংশ শতকের শেষের দিকে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে মূল কেন্দ্রীয় শহরকে ঘিরে উপনগরীয় এলাকার বিস্তার, অথবা পশ্চাদপদ গ্রামীণ এলাকা পরিত্যাগ করে নতুন করে কোনও পরিকল্পিত উন্নত অঞ্চল স্থাপনের প্রচেষ্টাটি সেখানে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তাহাড়া, বর্তমানে জাতীয় পরিকল্পনার বিভিন্ন স্তর বিবেচনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশেই কেন্দ্র-পরিধিস্থ অঞ্চলের আস্তামিথস্ক্রিয়ার বিষষটিকে অনুধাবন করা হয়। ফলে, স্থানিক উৎপাদনমুখী প্রতিটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং উৎসাহ এশি করে আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।

তাই, আর্থসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে বলা যায়, ফ্রেইডম্যানের উন্নয়নমুখী চিন্তাধারা আঞ্চলিক স্তরে উল্লখ এবং অনুভূমিক কাঠামোর প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথেস্ট প্রাসঙ্গিক। উন্নয়নের এই মডেলটিকে যে সমস্ত গবেষক তথা পরিকল্পনাবিদ সার্বিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁরা হলেন- Baldwin, Meier, Wingo, Petlof প্রমুখ।

মন্তব্য (Remarks): পরিশেষে বলা যায়, কোনও একটি অঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিসরে কেন্দ্র-পরিধিস্থলের ধারণাটি কোনও অর্জিত কাঠামো নয়। কারণ, একটি দেশে যদি দীর্ঘকাল যাবৎ অর্থনৈতিক অধোগামিতা অব্যাহত থাকে, তাহলে সেখানকার কেন্দ্রীয় তথা নগরায়িত শিল্পাঞ্চল যেমন শ্রীবৃদ্ধি হারিয়ে অনুন্নত পরিধিস্থ অঞ্চলে উপনীত হতে পারে, একইভাবে, অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় থাকলে কোনও পরিধিস্থ অনুন্নত অঞ্চলও কেন্দ্রীয় সমৃদ্ধ ক্ষেত্রের তকমা পেতে পারে। একসময়ের পরিধিস্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিন সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রে উত্তরিত হয়েছে। তাছাড়া, পরিকল্পিত অর্থনীতি, সঠিক বিনিয়োগ, বিপুল উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহ আগামী দিনে বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে ওই একই পর্যায়ে পৌঁছে দেবে, তা নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায়।

ভারতীয় প্রেক্ষাপটে ফ্রেইডম্যানের তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা(The Relevance of the Freidman's theory in the Indian Contex)

ভারতের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটটি ফ্রেইডম্যান প্রবর্তিত কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বের সাথে যথেস্ট সঙ্গতিপূর্ণ। স্বাধীনতার পূর্বে আমাদের দেশে যেভাবে নগরায়ণ ঘটেছিল, তাতে শিল্পকেন্দ্রিক অর্থনীতিই সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে, ঔপনিবেশিক শাসনকালে এদেশে যে কয়েকটি নগর (যেমন-কোলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই প্রভৃতি) কাঠামো গড়ে উঠেছিল তার প্রত্যেকটিই ছিল এক-একটি কেন্দ্রীয় (Core) শিল্পভিত্তিক অঞ্চল। পরবর্তীকালে দেখা যায়, এই সকল কেন্দ্রীয় নগরগুলি ছাড়াও দেশীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরে উদ বাণিজ্যিক লেনদেন নীতি, পরিকাঠামোয় ব্যাপক বিনিয়োগ প্রথা, বিভিন্ন সহায়ক শিল্প স্থাপনের কৌশল এবং উৎপাদন ও পরিকাঠামোকে ঘিরে আন্তঃঅর্থনৈতিক সংযোগকে অবলম্বন করে। দেশের পরিধিসদ্ধ এলাকাগুলিও সমৃদ্ধ ক্ষেত্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। অবশ্য স্বাধীনতার কয়েক দশক পেরিয়েও ভারত এখনো ফ্রেইডম্যান নির্দেশিত শিল্প-পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। এক্ষেত্রে দেশের সুবিশাল আয়তন, ভূ-প্রাকৃতিক তথা জলবায়ুগত দুর্গমিতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং প্রতিনিয়ত জনবসতির ঘনত্ব বৃদ্ধি ভারতকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তা ছাড়া, আমাদের দেশে উন্নয়নের বাজেটবরাদ্দের দিক থেকেও যথেষ্ট দুর্বলতা দেখা যায়। এর ফলে সংশ্লিন্ট অঞ্চলগুলি সম্পদশালী হয়েও দুর্বল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উপনীত করেছে। যেমন-মহারাষ্ট্রের কৃয়া মুক্তিকা বলয়, ছোটোনাগপুরের খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চল বা ওডিশার রৌরকেল্লার খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলের বেশকিছু এলাকা এই প্রকৃতির। তাবে, এই সকল এলাকাকে ঘিরে বর্তমানে যে সমস্ত পরিকল্পিত উৎপাদনক্ষেত্র নতুন করে গড়ে উঠছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এখানকার আন্দালিক বৈষম্য দূরীভূত হয়ে উন্নয়নের কেন্দ্রীভূত প্রেক্ষাপটকে আরো সম্প্রসারিত করে তুলবে।

ভারতের মতো কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশে প্রযুক্তিগত কৌশলগুলির যৌথ সমন্বয় ঘটাতে না পারলে এখানকার সার্বিক উন্নয়ন কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। সেজন্য, একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের প্রচেষ্টায় বর্তমানে ভারতের অসংখ্য গ্রাম ধীরে ধীরে স্বনির্ভরশীল হয়ে উঠছে। সেইসাথে পৌরায়নের মাত্রাও ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তাই, সমস্ত দিক বিচার করে বলা যায়, বর্তমানে ভারত ফ্রেইডম্যান প্রবর্তিত কেন্দ্র-পরিধিস্থল তত্ত্বের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01