welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ওজোন হ্রাসের প্রভাব (Effects of Ozone Depletion)


ওজোন স্তরটি সমস্ত জীবমণ্ডলকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তাই ওজোন স্তরকে 'প্রাকৃতিক সৌর পর্দা' বলে অভিহিত করা হয়। কোনো কারণে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে গেলে কিংবা ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হলে অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমন্ডলের স্তর ভেদ করে সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছাবে। এর প্রভাবে সমগ্র জীবমণ্ডলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

1. জলবায়ুর ওপর প্রভাব (Effects on Climate):

(ক) বিশ্ব উন্নায়ন: স্ট্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তর ধ্বংস হলে অতিবেগুনি রশ্মি (UVB) সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। এর ফলে পৃথিবীর নিম্নবায়ুমণ্ডলীয় স্তরটির (ট্রপোস্ফিয়ার) গড় উয়তা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্ব উন্নায়ন(Global Warming) ঘটে। এর প্রভাবে-

(i) আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন- উন্নতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন হয়।

(ii) মেরু অঞ্চল এবং উচ্চপার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে এবং তার ফলে সমুদ্রতীরবর্তী নিম্নভূমিগুলি জলপ্লাবিত হয়ে পড়বে।

(iii) বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অভাবে খরার প্রাদুর্ভাব ঘটবে।

(iv) বায়ুমণ্ডলের উন্নতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অধিক পরিমাণে সৌররশ্মি ভুপৃষ্ঠে আসায় পৃথিবীর উত্তাপের সমতা বিঘ্নিত হবে।

(খ) অ্যাসিড বৃষ্টি: অতিবেগুনি রশ্মির অবাধ অনুপ্রবেশের কারণে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের (H_{2}*O_{2}) পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H_{2}*O_{2}) ট্রপোস্ফিয়ারে অবস্থিত সালফার ডাইঅক্সাইডের (S*O_{2}) সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফার ট্রাইঅক্সাইড (S*O_{3}) জল উৎপাদন করে। এই সালফার ট্রাইঅক্সাইড পুনরায় জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা বৃষ্টির ফোঁটার (rain drop) সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে।

S*O_{2} + H_{2}*O_{2} = S*O_{3} + H_{2}*O

S*O_{3} + H_{2}*O = H_{2}*S*O_{4}

(গ) ধোঁয়াশা সৃষ্টি: নিম্ন ট্রপোস্ফিয়ারে অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতি অধিক হলে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা (smog) সৃষ্টির প্রবণতা বাড়ে।

2. মানুষের ওপর প্রভাব (Effects on Human being):

মানুষের ওপর UV-B রশ্মির বিনাশমূলক ক্রিয়ার মূল কারণ DNA দ্বারা UV-B রশ্মির শোষণ এবং এর ফলে DNA-এর অস্বাভাবিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্তি। এর প্রভাবে মানুষের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

(i) মানুষের ত্বক UV-B যুক্ত সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে এলে তা UV-B-এর প্রভাবে পুড়ে যায় এবং ত্বক তামাটে বর্ণ ধারণ করে। একে সৌরদগ্ধ (Sun burn) বলে।

(ii) অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) প্রভাবে ত্বকে কর্কট রোগের (Skin Cancer) সৃষ্টি হয়। ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী কর্কট রোগ দুই ধরনের হতে পারে। যথা-চরম ক্ষতিকারক বা ম্যালিগনেন্ট (Malignant) এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকারক ও নিরাময়যোগ্য বা নন-ম্যালিগনেন্ট (Non-malignant)। শ্বেতাঙ্গদের ত্বকের মেলানিন প্রস্তুত করার ক্ষমতা খুবই কম থাকায় UV-B রশ্মির প্রভাবে ত্বক খুব সহজেই পুড়ে যায়। এর ফলে DNA ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে ম্যালিগনেন্ট ত্বক ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, 1979 থেকে 1991 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় 20 দশক ধরে উত্তর আমেরিকা ও কানাডায় স্টস্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর 6.6% হ্রাস পাওয়ার জন্য ওই অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষের 11 শতাংশ বেসাল কোশ কারসিনোমা জাতীয় নন-ম্যালিগনেন্ট ক্যানসার এবং 22 শতাংশ স্কোয়ামাস কোশ কারসিনোমা ও মেলানোমা জাতীয় ম্যালিগনেন্ট ক্যানসার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই রোগে 7000 জন লোকের মৃত্যু ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ওজোন ক্ষতের কারণে এই মৃত্যুর হার 10 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

(iii) চোখের লেন্স ও কর্নিয়া দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) শোষণের ফলে অল্পবয়স্ক মানুষের চোখে ছানি। পড়ার ঘটনা বাড়ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, LIV-B রশ্মির তীব্রতা যদি 10 শতাংশ বাড়ে, তাহলে 50 বছর বা তার কাছাকাছি বয়স্ক মানুষের চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনা অতিরিক্ত 6 শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

(iv) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ (immunity) ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সহজে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়.

কল অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্তন ক্যানসার ও লিউকোমিয়া আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ছে।

DVD UV-B

এর প্রভাবে প্রজনন ক্ষমতা হাস এবং বন্ধ্যাত্ব বন্ধি পাচ্ছে।

3. প্রাণীদের ওপর প্রভাব (Effects on Animals):

(i) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে উভচর, সরীসৃপ ও অন্যান্য প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। একটি সমীক্ষায় বন্যপ্রাণী গবেষকরা লক্ষ করেন অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ব্যাঙের মতো উভচর প্রাণীর ডিম বাচ্চা হওয়ার পূর্বেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

(ii) UV-B-এর প্রভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তি-উদ্ভিদ প্লাঙ্কটনের পরিমাণ কমে আসছে। ফলে প্রাণী প্লাঙ্কটন ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

(iii) প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে।

4. উদ্ভিদের ওপর প্রভাব (Effects on Plants):

(i) LIV-B-এর প্রভাবে 20 থেকে 50 শতাংশ গাছের পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা ক্রমশ কমে আসছে।

(ii) বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম ব্যাহত হয়ে বংশবৃদ্ধির হার হ্রাস পাচ্ছে।

(iii) UV-B-এর প্রভাবে উদ্ভিদের পাতা, ফল এবং বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

(iv) অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে পত্ররন্ধ্র দ্বারা মৃত্তিকারপ্তের জল দ্রুতহারে বাষ্পীভবন হওয়ায় উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

(v) জলজ বাস্তুতন্ত্রে UV-B রশ্মির প্রভাবে ফাইটো প্লাঙ্কটনের বিনাশ ঘটায় খাদ্যশৃঙ্খল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

5. বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব (Effects on Ecosystem):

(i) ওজোন স্তরের বিনাশের ফলে অতিবেগুনি রশ্মির অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটে। এর প্রভাবে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে।

(ii) ওজোন স্তরের বিনাশের ফলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা, স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01