welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য (Difference between economic growth and economic development)

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য (Difference between economic growth and economic development)


সামাজিক উন্নয়ন (Social development):

ধারণা (Concept): সমাজবদ্ধ মানুষের সার্বিক সমৃদ্ধি এবং সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস হল সামাজিক উন্নয়ন। বস্তুত, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কল্যাণকে পূর্ণ সম্ভাবনার স্তরে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পিত প্রচেষ্টাকেই সামাজিক উন্নয়ন বলা হয়।

জেমস মিজলের মতে, "উন্নয়ন ধারার গতিশীলতায় সামগ্রিকভাবে জনগণের জীবনমানের শ্রীবৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক পরিবর্তনসাধনের প্রক্রিয়াই হল সামাজিক উন্নয়ন।"

অন্যদিকে, বিখ্যাত সমাজবিদ রবার্ট এল বার্ক বলেছেন-আর্থ-সামাজিক পরিসরে প্রতিটি মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রচলিত কর্মসূচি, সুযোগ বা সেবামূলক প্রক্রিয়াই হল সামাজিক উন্নয়ন। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দারিদ্র বিমোচন, নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, নাগরিক বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে, সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিকে 6.24 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

উদ্দেশ্য (Purpose): সামাজিক উন্নয়নের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল-

(a) সামাজিক সমস্যা ও দারিদ্র দূরীকরণের বিভিন্ন কর্মপন্থা নির্দেশনা।

(b) সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন।

(c) সর্বস্তরের মানুষের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান।

(d) জনগণের মধ্যে সম্পদ ও পরিসেবার সুষম বণ্টনের নীতি বজায় রাখা।

(e) সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক প্রশস্তকরণ।

(f) নাগরিকের সামগ্রিক ও সর্বোত্তম কল্যাণমূলক ব্যবস্থার যাবতীয় কর্মপন্থা নিশ্চিত করা।

(g) সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মারফত অবহেলিত মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।

(h) সামাজিক সম্পদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেগুলির সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(i) সামাজিক উন্নয়নের সূত্রপাত ঘটে বিভিন্ন সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

(ii) সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন কৌশলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণের উন্নতি ও পরিমার্জনের বিষয়গুলি শির কর হয়।

(iii) সামাজিক উন্নয়ন সারাজীবন ধরেই বিভিন্ন প্রথা বা আচার-অনুষ্ঠানকে সাথে নিয়ে বাস্তবায়িত হয়।

(iv) এখানে প্রতিটি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বা অংশগ্রহণের সুযোগ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যা

(v) কোনো একটি দেশে সার্বজনীন সমৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেই সামাজিক উন্নয়ন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

(vi) সামাজিক উন্নয়নের সঠিক পন্থা বা নীতিগুলি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও বিশেষ অবদান রাখে।

অন্তর্ভুক্ত বিষয় (Topics included): সামাজিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল-

(1) সহযোগিতা, (ii) সহনশীলতা, (iii) সহানুভূতি, (iv) প্রতিযোগিতা, (v) সমষ্টিগত অংশগ্রহণ, (vi) সামাজির গ্রহণযোগ্যতা, (vii) সামাজিক জীবনকুশলতা প্রভৃতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বিবেচনায় সামাজিক উন্নয়নের যে তিনটি মুখ্য উপাদান প্রাধান্য পেয়েছে, সেগুলি হল-(১) দারিদ্র্য বিমোচন, (b) সুযোগ ও সম্পদের ন্যায্য বণ্টন এবং (c) গণ অংশগ্রহণ।

সামাজিক উন্নয়নের উপায় (Ways of social development): বিশেষজ্ঞরা সামাজিক উন্নয়নের উপা রূপে যে সমস্ত কর্মপন্থাকে অনিবার্য মনে করেন, সেগুলি হল-

নির্দিস্ট কমিটি গঠন (Formation of specific committee): সামাজিক উন্নয়নের অধিকাংশ কর্মপখ্যাই নির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে স্থির করা হয়। এক্ষেত্রে, গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি কার্যকর কমিটি গঠন করে সামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলিকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে প্রথমে খতিয়ে দেখা হয় এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাকে কার্যকরী করে তুলতে সংশ্লিষ্ট কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সমন্বয়ী মতামতগুলিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রয়োজন চিকিৎ 2

যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Logical decision making):

সামাজিক প্রয়োজনে কোনও একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনগণের আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক যৌক্তিক সিদ্ধান্তগুলিকে বিধিবন্ধ কাঠামোয় বিবেচনা করা হয়।

সঠিক নেতৃত্ব প্রদান (Provide proper leadership):

সমাজে বসবাসরত প্রতিটি মানুষ যাতে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় উপযুক্ত নেতৃত্ব প্রদানকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়।

মর্যাদাগত স্বীকৃতি (Dignified recognition): কোনো একটি দেশে জাতিগত উৎকর্ষতা এবং কর্মকেন্দ্রিক পেশাদারিত্বকে উৎসাহিত করতে মানুষের অর্জিত এবং গুণগত মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া হল সামাজিক উন্নয়নের আরো একটি বিশেষ কর্মপন্থা।

মৌলিক চাহিদার জোগান (Supply of basic needs): প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকাকে সুনিশ্চিত আাত মৌলিক চাহিদান (Provide, বস্ত্র, বাসস্থান) গুলির উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা মানষের বেঁচে থাকাকে সুনিশ্চিত নিরাপত্তা প্রদান (Provide security): সামাজিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ এবং শিন বিবিশেষ আধার। ও গুজম মানুষদের নিরাপত্তার বিষয়গুলিকে চূড়ান্তভাবে স্বীকৃতি য়েনে নারী-পু

সাংস্কৃতিক পদক্ষেপ (Cultural Steps): সুস্থ এবং সচেতনতামূলক পরিবেশ গড়তে সর্বজনীন শিক্ষা, মুচশীলতা, সহনশীলতা এবং সংস্কৃতি সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমাজ উন্নয়নকামী পদক্ষেপরূপে বিবেচিত হয়। • গুরুত্ব (Importance): সামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

(i) ব্যক্তি-স্বাধীনতার বিকাশ (Development of individual freedom): সামাজিক উন্নয়নের পথ ঘরেই ব্যক্তি-স্বাধীনতার সার্বিক বিকাশ ঘটে থাকে, যা পরোক্ষভাবে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশাকেও প্রভাবিত করে।

(ii) প্রয়োজনভিত্তিক উন্নতি (Need-based improvement): সামাজিক উন্নয়ন কোনও একটি দেশের নাগরিক জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলির সংস্থান ঘটিয়ে সার্বজনীন উন্নতির পথকে প্রশস্ত করে তোলে।

(iii) সুস্থ চিন্তাধারা (Healthy thinking): সমাজ উন্নয়নের প্রভাবে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেরগুলিতে জনসাধারণের উদ্যোগ, সক্ষমতা এবং অভিব্যক্তির সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায়, সুস্থ চিন্তাধারার একটি সুসংহত পরিবেশ গড়ে ওঠে।

(iv) পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি (Improving Relationships): সামাজিক উন্নয়নের পথ ধরেই বিভিন্ন বাক্তি এবং গোষ্ঠীগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের মেলবন্ধন অটুট থাকে।

(v) নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি (Creation of moral values): সামাজিক উন্নয়ন জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন ভালো-মন্দের বিচারবোধকে উৎসাহিত করে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়

(vi) বৈষম্যের অবসান (Ending Inequality): রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নের যাবতীয় কার্যক্রমগুলি যত বেশী রক্তবায়িত হবে, ততই সামাজিক জীবনকুশলতার মধ্য দিয়ে মানুষের আর্থিক, মর্যাদাগত বিষমতার দ্রুত অবসান ঘটে।

স্থিতিশীল উন্নয়ন (Sustainable development):

এগত শতকের 70-লতা (এমকে উন্নয়নের প্রচলিত দর্শনে প্রতিস্থাপিত পরিবেশকেন্দ্রিক মূল বাবাটি এসেছে প্রায়োগ্যতা বা সহকর্তা (sustainability)-র মধ্য দিয়ে। সাধারণত স্পিতিবান অরিক মূল ধারাটি এসেছে প্রাণা হিসাবে অভিহিত করা যেতে পারে যা সমস্ত প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতার সাথে কখনোই আপোশ না করে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত সংযোগসূত্র গড়ে পূরণের

 ধারণা (Concept): পরিবেশকে বাঁচিয়ে সম্পদের সুষম বন্টনকেন্দ্রিক উন্নয়নের একটি আধুনিক কৌশল হল প্ররিশীল দৃষিভলিন। বিংশ শতকের আশির দশকে বুজল্যান্ড কমিশন এপ্রসঙ্গো প্রথম বলেছিল-ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একষ চাহিদা মেটানোর ক্ষমতাকে বজায় রেখে, বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোই হল টেকসই বা শিতিশীল উন্নয়ন প্রবতীকালে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

Sustainable" শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল টিকে থাকার সক্ষমতা বা সামর্থ্য বজায় রাখা। আলোচ্য স্থিতিশীল e (sustainable development) শব্দটিকে প্রথম ব্যবহার করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। অনেকে মনে করেন, "The Limits to Growth (1972 খ্রিঃ)' নামক ধারণার মধ্যে দিয়ে মিডোস এবং ঠায় তিন সহকর্মী স্থিতিশীল উন্নয়ন শব্দটির সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে এই শব্দটির প্রকৃত উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন "International Institute for Environment and Development"-এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতী এডা বেলফোর (Eva Balfour)। তা সত্ত্বেও, একটি বিষয়ে কিন্তু সকলেই প্রায় একমত, 1987 খ্রিস্টাব্দে বুন্ডল্যান্ড কমিশনের "Our common future" নামক প্রতিবেদনে এই শব্দটিকে সাসম্মতভাবে প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন নরওয়ের বিশেষজ্ঞ গ্রো হারলেম।

উদ্দেশ্য (Purpose): যে কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অধিকাংশ শে স্থিতিশীল উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল-

(i) ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পার্থিব সম্পদের ভান্ডারকে দীর্ঘমেয়াদীভাবে সুরক্ষিত রাখা।

(ii) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণ করা।

(iii) বিশ্বের দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

(iv) সুষম উন্নয়নের স্বার্থে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় করা 

(v)জলবায়ুগত অভিঘাতগুলিকে প্রশমন করা।

(vi) সুস্থ, সচেতন এবং দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা।

(vii) উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি ঘটানো প্রভৃতি।

 বৈশিষ্ট (Characteristics)

(i) স্থিতিশীল উন্নয়ন হল প্রার্থীব সম্পদ এবং পরিবেশের সুবিবেচনা ওষুধ দিবস্থায়ী সমৃদ্ধির জন্য গৃহীত একটি একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থা।

(ii) ধারাবাহিক এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত, সর্বাঙ্গীণ এবং অতি কৌশলী প্রকৃতির।

(iii) এখানে পদ্ভিন্নয়নে পরিবেশীয় পরিসীমার বহনক্ষমতার ভারসাম্য অনুযায়ী মানব উন্নয়নের পথ প্রদর্শিত হয়।

 অন্তর্ভুক্ত বিষয় (Topics included): স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রধান কৌশলগত নীতিগুলি হল-

(a) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নতুন সম্পদের উদ্‌ঘাটন এবং প্রচলিত সম্পদের পুনর্ব্যবহার করা।

(b) পরিবেশ, প্রকৃতি এবং মানব উন্নয়নের স্থিতিশীল পথ অক্ষুন্ন রাখা।

(c)সামাজিক ন্যায় এবং শান্তির বাতাবরণ প্রতিষ্ঠা করা

(d) মানুষের গুণগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মাথাপিছু আয়ের উচ্চক্রম বজায় রাখা।

(e) স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র এবং তৎসংলগ্ন জীববৈচিত্র্যকে সার্বিকভাবে সংরক্ষণ করা।

(f) বিশ্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করা।

(g) স্থিতিশীল উন্নয়নে সকল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতকরণ প্রভৃতি।

পরিমাপ (Measurement): স্থিতিশীল উন্নয়ন পরিমাপের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেওয় হয়, সেগুলি নিম্নরূপ-

 সম্পদের স্থিতিস্থাপকতা, শক্তির ব্যবহারিক দক্ষতা, সংস্কৃতির মাত্রা, জীববৈচিত্র্যের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত স্তর, মানববিকাশের অবস্থা, সাংস্কৃতিক অভিযোজনের মাত্রা প্রভৃতি।

উন্নয়নের উপায় (Ways of Sustainable Development): উন্নয়নের স্থিতিশীলয় অর্জনে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলির মধ্যে কয়েকটি অন্যতম হল-

উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ নীতিতে পরিবর্তন (Changes in internal development policy) স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বের একাধিক দেশ তাদের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন কৌশলী নীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে। যেমন, উন্নয়নকে নির্দিষ্ট সময় সারণিতে উপস্থাপন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উন্নয়নের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিধিগুলিকে অনুসরণ, পরিকল্পনাভিত্তিক নতুন নিয়মের উত্থান, ক্রমবর্ধমান আন্তঃনির্ভরতা, পরিবেশগত সীমাবদ্ধতা সঠিকভাবে নিরূপণ প্রভৃতি। বর্তমানে, বেশকিছু উন্নয়নশীল দেশ, স্থিতিশীল উন্নয়নমূলক বিষয়গুলিতে আরও ভালো ফলাফল পেতে অন্য কোনও উন্নত দেশের স্থিতিশীল নীতিগুলিকেও সম্ভাব্য অনুকরণযোগ্য পথা রূপে মেনে নিয়েছে।

সামাজিক পরিসেবাগুলির সম্প্রসারণ (Expansion of social services): স্থিতিশীল উন্নয়নকে অনিবার্য করে তুলতে মানুষের জন্য নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্য সহায়তা, সামাজিক বীমা এবং শ্রম বাজার কর্মসূচি, দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ, বৃদ্ধ বয়সে পেনশন, উপযুক্ত মজুরি, ভর্তুকি, বেকারত্ব বীমা, প্রতিবন্ধী পেনশন ইত্যাদির মতো বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সুস্থতার প্রচার (Promoting wellness): স্থিতিশীল উন্নয়ন সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায়। তাই, এখানে মাতৃ ও শিশু সুস্থতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবেশগত সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নির্ধারণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য রক্ষা, অকালমৃত্যুর ঝুঁকি প্রতিরোধ এবং নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন নিরাপদ ও কার্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্যাকসিন বা ঔষধ প্রদানের মতো বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুস্থতার প্রচার করা হয়.

মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা (Management of quality education)সর্বস্তরে পরিবেশের জন মনুষের সচেতনায়াকা ভিড়ানো সম্ভব হবে, ততই স্থিতিশীল উন্নয়ন ভবিষ্যতের পথে আরো দ্রুত কার্যকারী হয়ে ওঠে। সেই লক্ষ্যকে ভিত্তি করে এখানে সর্বজনীন শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেন নারীর শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবেশ শিক্ষা সম্প্রসার প্রকৃতি

  বিশৃদ্ধ জল ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা(Parr and sewerage system) পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে এতাকে নিশ্চিত করতে স্থিতিশীল উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ ঘুণমানসম্পন্ন স্বচ্ছ জল সরবরাহ এরা জনস্বাস্থ্য বিধি বজায় রাখতে পয়ঃপ্রণালীর আধুনিকীকরণে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

উদ্যামনী ক্ষমতার বিকাশ (Development of innovation capabilities)এবং উদ্ভাবনা-এগুলি হল উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বাহ্যিক রূপ। সেই কারণে, শিল্পায়নভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে চালিত করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং তার মধ্যমে দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস ঘটাতে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী কর্মপ্রচেষ্টাগুলিকে স্থিতিশীল উন্নয়নে স্বাগত জানানো হয়েছে।

সাশ্রয়ী মূল্যের এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবহার: যে কোনও দেশে উন্নয়নের স্থায়ী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তাই, এখানে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ভূতাপশক্তি, জলবিদ্যুৎ, তরল এবং কঠিন জৈব জ্বালানি কিংবা বায়োগ্যাস-এর মতো বিভিন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য সাশ্রয়ী এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি সংস্থানগুলিতে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ সর্বাধিক দৃষ্টি নিবন্ধ করে থাকে।

স্থিতিশীল উন্নয়নের সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপসমূহ (Recent Perspectives on Sustainable Development and Important Steps):

টেকসই উন্নয়নে এজেন্ডা 2030 হিসাবে জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ উন্নয়ন লক্ষ্য Sustainable Development Goals-2015 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারিতে কার্যকর হয়েছে, যেটি "মানুষ, গ্রহ এবং উন্নতির জন্য একটি পরিকল্পনা (A plan for people, planets and development)" নামে পরিচিত। এই লক্ষ্যকে কার্যকরী করে তুলতে যে কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলি হল-

(i) মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি (Arthropocentric approach) স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে এখানে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, সকল প্রকার অবাঞ্ছিত আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সমস্ত মানুষের মর্যাদা ও সমতা রক্ষা করাই হবে প্রতিটি দেশের প্রধান কর্তব্য।

(ii) গ্রহকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি (Planetary approach)-এখানে বলা হয়েছে, পৃথিবী নামক গ্রহটিকে সমস্ত ধরনের অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সম্পদের টেকসই ব্যবহার, টেকসই উৎপাদন এবং সঠিকভাবে পরিচালনা কত্র সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমনের বিষয়ে বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

(iii) সমন্দির দষ্টিয়লি (Prosperity approach) সমস্ত মানুষ যাতে সমৃদ্ধ বা পরিপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যাতে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলি গ্রহণে আমরা সকলেই বন্ধপরিকর

(iv) শান্তিরক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি (Peace keeping approach) স্থিতিশীল উন্নয়নকে অনিবার্য করে তুলতে ভয় ও সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজ গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। কারণ, শান্তি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন কখনোই সফল হতে পারে না।

পুরুত্ব (Importance): স্থিতিশীল উন্নয়নের বাস্তবায়নগত ক্ষেত্রটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

(i) উপলব্ধ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার (Proper use of available resources): স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমে সম্পাদক অপচয়হীন, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারকে সর্বোত্তম করে তোলা যায় বলে দেশের প্রাপ্ত সম্পদগুলির উপর চাপ অনেকাংশে হ্রাস পায়।

(ii) উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যপূরণ (Meeting long term development goals): স্থিতিশীল উন্নয়নে মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সচেতনতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিগুলির সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে, যার দ্বারা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তানের পছন্দের উপকরণগুলিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহারের সর্বাধিক সুযোগ পায়। এইভাবে, উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষাগুলির দ্রুত পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে।

(iii) বাস্তুতন্ত্রের কাঠামোগত স্থিতিশীলতা (Structural stability of ecosystems): স্থিতিশীল উন্নয়ন নীতি পৃথিবীতে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের নিরিখে উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের সার্বিক সুরক্ষাকে আরো সুনিশ্চিত করে।

(iv) পরিবেশ রক্ষায় সাফল্য (Success in protecting the environment): স্থিতিশীল উন্নয়নের কর্মপন্থাগুলি পরিবেশকে রক্ষা এবং পরিবেশের স্থায়িত্ব বর্ধনে ভীষণভাবে অবদান রাখে। বিশেষ করে, প্রকৃতিতে বর্জ্য এবং দূষণজনিত প্রভাব হ্রাসকরণ, কম কার্বন উল্টীরণ, জলবায়ুগত সহনশীলতায় দক্ষতা অর্জন প্রভৃতি কয়েকটি পদক্ষেপ তারই উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন।

(v) উন্নত আর্থসামাজিক পরিকাঠামো (Improved socio-economic infrastructure): বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিটি মানুষের সময়োপযোগী চাহিদা মেটাতে আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মদক্ষতা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সহনশীলতা, সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মপন্থাগুলি স্থিতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমেই সচল থাকে।

(vi) ইতিবাচক মনোভাবের বিকাশ (Develop a positive attitude): স্থিতিশীল উন্নয়ন জনগণ, সম্পদ, পরিবেশীয় সমস্ত পরিস্থিতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের পথ সুগম করায়, মানব সমৃদ্ধির ইতিবাচক মনোভাবের সহায়তামূলক শান্তিপূর্ণ পথে উন্নয়নকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে।


 প্রথাগত উন্নয়ন এবং জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন

(Traditional development and People-centred development):

বিখ্যাত আমেরিকান অধ্যাপক ডেভিড কর্টেন (David Korten) বিশ্বের বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশ এবং সেখানকার দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে উন্নয়নের আরও দুটি দিক তুলে ধরেছেন, যথা-বিকাশমুখী প্রথাগত উন্নয়ন এবং জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি। কর্টেনের মতে, "সাম্প্রতিক কালের বিকাশমুখী উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ বিশ্বসমাজের বিশাল অংশে কেবলমাত্র ব্যর্থই হয়েছে তাই নয়, এটি মানবসমাজের দুর্দশাকেও ক্রমাগত বাড়িয়ে উন্নয়নকারী ব্যবস্থাগুলিতে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। অপরদিকে, জন-কেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ নাগরিক সংগঠনগুলির দ্বারা সমর্থিত হয়েছে যারা অর্থনৈতিক ন্যায়, পরিবেশ সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি বিকল্প বিশ্বসমাজ গড়তে চায়।"

উন্নয়নের প্রথাগত ধারণাটির উৎস খুঁজে পাওয়া যায় নয়া উদারবাদী অর্থনীতি (New liberization economy) এর মতাদর্শে, যেটিকে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (WTO) দ্বারা বিশেষ মান্যতা দেওয়া হয়েছিল। বিকাশমুখী উন্নয়নে যে বিষয়গুলি সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল-সমাজভিত্তিক অংশ- গ্রহণ, মুক্ত-বাজার, নয়া-উদারবাদ ও নয়া দক্ষিণপন্থার আদর্শবাদী ভাবধারা প্রভৃতি।

বিংশ শতকের সত্তরের দশকে ব্যক্তি কল্যাণে উন্নয়নমূলক কয়েকটি বিকল্প তত্ত্ব বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের যথেষ্ট উল্বশ করেছিল। তৎকালীন, অ-পশ্চিমী বিকল্প উন্নয়ন-এর সামঞ্জস্যপূর্ণ ধারণায় মূলত, দরিদ্র তথা অবহেলিত মানুষকে আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে দিতে রাষ্ট্র তথা সরকার কর্তৃক যৌথ দায়িত্ব পালনের কথাই বলা হয়েছে।

1992 খ্রিস্টাব্দে "South Asian Commission on Poverty Alleviation" তাদের একটি প্রতিবেদনে রাষ্ট্র নির্দেশিত প্রথাগত পন্থাগুলি থেকে স্থানীয় সম্প্রদায়-ভিত্তিক উন্নয়নের পথে সরে এসে পরিবর্তিত একাধিক উন্নয়ন নীতি চিত্র কি করেছিল এভাবে যৌন কেন্দ্রীয় উন্নয়নে আদর্শ নীতি গুলি ইতিবাচকভাবে সামাজিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা রক্ষার গণতান্তিকে আরো প্রশস্ত করে ।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রাকাতিক সম্পদ, কষি এবং শিল্পের ভমিকা (The role of natural Resouron, Agriculture and Industry in the Development process):

আমরা আগেই জেনেছি উন্নয়ন হল মনুষ্যকেন্দ্রিক পরিসরে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবশী। বহুমুখী ইতিবাচক প্রক্রিয়া। সাধারণত, বিশ্বের প্রচলিত আর্থ-সামাজিক পরিমণ্ডলে মানুষকে উন্নয়নকারীরূপে বিকেন করা হলেও, জীবন ও জীবিকার সার্বিক সমৃদ্দিতে একটি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি এবং শিল্পের বহুমুখী প্রভাবগুলি যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো। যেমন-

উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদের ভূমিকা (The role of Natural resources in the development process)

যে কোনও দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড়ো একটি দিক হল সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের অনুকূল উপসিও বা যে কোনর। সশের হল প্রকৃতির এমন এক আশীর্বাদ, যা সরাসরি দেশে অতিমী দেশাতালের পুজি গঠনের রাস্তণকারি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যায়। বেশিরভাগ পশ্চিমী দেশ, তাদের উপলক্ষ্য প্রাকৃতির প্রশারের সর্বোত্তম ব্যবহার ঘটিয়েই উন্নয়নের শীর্ষে উপনীত হয়েছে। আবার, সাদের সময়ও ব্যবহারগত নির সম্পদের সর্বোওড়া প্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ উন্নয়নের নিরিখে সেরকম কোনও অবদান রাখতে পারেনি। এখান থেকে পিছিয়ে পড়তায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের অবদান সংক্রান্ত বিষয়টিকে দৃষ্টান্ত সহকারে আলোচনা করা হল।

ভূমি সম্পদ (Land resources): প্রাচীনকাল থেকেই নবীকরণযোগ্য ভূমিসম্পদকে প্রাথমিক উৎপাদন এবং বিভিন্ন মানবীয় কার্যাবলীর একমাত্র অবলম্বন মানা হয়ে থাকে। সেই কারণে, ভূমি সম্পদ হল প্রতিটি দেশের উন্নয়নের প্রাথমিক ধারক ও বাহক। ভূমিভাগকে সাধারণত কৃষি, খনিজ উত্তোলন, শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্য, পরিবহন সহ একাধিক কাজে ব্যবহার করে প্রায় সমস্ত দেশ নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটায়। বর্তমানে, আঞ্চলির পরিকল্পনার যেকোনও ক্ষেত্রে ভূমিজ সম্পদের তালিকা প্রস্তুতিকরণ, সেগুলির জোগান বা মান নির্ধারণ, মানচিত্রায়ন এমনকি ভূমিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক বা অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এপ্রসঙ্গে, অধ্যাপক স্যালটার বলেছেন-কোনও অঞ্চলের অধিবাসীরা স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে ভূমি ব্যবহারের কৌশলগত পরিবর্তনশীলতায় সঙ্গতিবিধান করেই উন্নয়নমূলক প্রায় সমস্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে থাকে।

জলসম্পদ (Water resources): জল মানুষের বেঁচে থাকার যেমন একমাত্র অবলম্বন, একইভাবে ঐজলের সাথে উন্নয়নেরও সম্পর্ক অত্যন্ত সুগভীর। সাধারণত, কৃষি, শিল্প, বিদ্যুৎ, পরিবহণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পূর্ণমাত্রায় জলের সুনিশ্চিত ব্যবহার প্রতিটি দেশের উন্নয়নকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। পৃথিবীতে মোট জলের মাত্র 0.3 শতাংশ সহজলভ্য মিষ্টি জল রয়েছে যা চাষ এবং অন্যান্য উৎপাদনমুখী কাজের পক্ষে অত্যন্ত উপযুক্ত। সেই কারণে, বর্তমানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ দ্বারাও কৃষি, পানীয় এবং পশুপালনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, ভারতের কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দপ্তর, নদী উন্নয়ন এবং গঙ্গা পুনরুজ্জীবন মন্ত্রকের যৌথ অংশীদারী নীতিতে এখানকার জলসম্পদকে ঘিরে প্রযুক্তিগত পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণ, কর্মশিবির, জল সংরক্ষণ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক আলোচনাচক্র, এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতাদর্শের ভিত্তিতে জলসম্পদভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রয়াস দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে। এই ধরনের পরিকল্পনাগুলির সার্থক রূপায়ণের মাধ্যমে আগামী দিনে ভারতে জলসম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও জলের দক্ষ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে আরও সুনিশ্চিত করে তুলবে।

বনজ ও মৎস্য সম্পদ (Forest and Fisheries Resources): জৈব সম্পদরূপে অরণ্য এবং মৎস্য একটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। পৃথিবীর সমস্ত ভূমিভাগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জৈব অরণ্য সম্পদের ভান্ডারগুলি এমনভাবে সমৃদ্ধ, যাকে কেন্দ্র করে প্রায় 2 বিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভর করছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঠ, জ্বালানী সামগ্রি, পশুখাদ্য সরবরাহ, ঔষধ, প্রসাধনী উৎপাদন প্রভৃতির মাধ্যমে অরণ্য সম্পদ কোনও একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপযোগিতা বৃদ্ধি ঘটায়।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কৃষিকাজের ভূমিকা (The role of agricultural work in the development process)

অতি প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির অন্যতম চালিকাশন্তি হল কৃষি বাজ আদিম সংগ্রহভিত্তিক জীবনধারা পরিত্যাগ করে একটি সদ্য খাদ্য উৎপাদনের স্তরে উপনীত হওয়ার পদক্ষেপটির মানবসভ্যতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আশীর্বাদরূপে গণ্য করা হয়। বস্তুত, মানুষের জীবনজীবিকার সাথে ওতপ্রোতভারে জড়িয়ে থাকা কৃষিকাজ থেকেই মানুষ তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মৌলিক উপকরণগুলিকে সংগ্রহ করে এাসন্ত বলেই অনেকে কৃষির উন্নয়নকেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গো Kuznets, Rostow উল্লেখ করেছেন-কৃষির উন্নয়ন ব্যাতিরেকে কোনও একটি দেশের অর্থনৈতিক বা সামগ্রিক উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়। ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক ইতিহাস থেকে এটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সেখানে শিল্পবিপ্লবের আগে প্রথম কৃষিবিপ্লব ঘটেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের শিল্প ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সেখানকার কৃষি প্রক্রিয়া বৃহত্তর প্রভাব ফেলেছে। উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তরূপে কৃষিকাজ যেসমস্ত ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলিকে কয়েকী বক্তব্যের মাধ্যমে এখানে উপস্থাপন করা হল

জাতীয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি (Increase in National and per capita income): বর্তমান বেশিরভাগ, উন্নয়নশীল দেশে কৃষি উৎপাদনশীলতাভিত্তিক (বিভিন্ন ফসল, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদগুলি) কর্মকাণ্ডগুজি জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে, একটি দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধিকে যদি পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে কৃষিভিত্তিক জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় উভয়ই যথেষ্ট বৃদ্ধি ঘটে। যেমন-ভারতে জাতীয় আয়ের প্রায় 28% আসে কৃষিখাত থেকে।

চাহিদা পুরণ (Meet the demand): কৃষিকাজ কোনও একটি দেশের জনগণের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা যেমন অব্যাহত রাখে, তেমনই স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পৌষ্টিক উপাদান সরবরাহ করে মানুষকে পুষ্টির দিক থেকেও সার্বিক নিশ্চয়তা দেয়।

কর্মসংস্থান (Employment): সমস্ত দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়নের একটি প্রধান নির্দেশক হল কর্মসংস্থান। সাধারণত, পৃথিবীর মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক কর্মসংস্থান জোগানে কৃষিক্ষেত্রের অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষত, যে সমস্ত দেশ শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটাতে পারেনি অথচ সেখানে কৃষি উপযোগী জমির পরিমাণ অফুরন্ত রয়েছে, তাদের সমৃদ্ধির পুরোটাই কৃষির ওপর নির্ভর করে। ভারতের প্রায় 65% মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গেঙ্গ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকে কর্মসংস্থানের একাধিক সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকে।

বাজার সৃষ্টি (Market Creation): ভোক্তা অথবা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যকে সরাসরি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে বণ্টন ব্যবস্থাকে সহজেই ঢেলে সাজানো যায়। এর ফলে, সম্প্রসারিত কৃষিবাজারগুলি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছে যায়।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শিল্পের ভূমিকা (The role of Industry in the development process):

মানুষের উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মকান্ডে শিল্প সম্প্রসারণের ধারা বা কৌশলগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে থাকে। শিল্প হল আধুনিক সভ্যতার এমন একটি অঙ্গ যা আমাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রাপ্তি ও কর্মসংস্থানে বহুমুখী সুযোগ করে দেয়। এ প্রসঙ্গে, Karl Marx-এর অভিমতকে গুরুত্ব দিয়ে Hirschman এবং Singer বলেছেন একটি দেশের উন্নয়ন ঘটাতে কৃষির চেয়ে শিল্প অধিক গ্রহণযোগ্য। এর কারণ হিসেবে অবশ্য তিনি বেশ কয়েকটি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হল-

জাতীয় আয় বৃদ্ধি (Increase in national income): শিল্পায়ন সমস্ত দেশগুলিকেই তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের সর্বোত্তম সুযোগ করে দেয়। এর ফলে, উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করে মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধির পথকে সহজেই ধরে রাখা সম্ভব হয়। বর্তমানে, ভারতের মোট জাতীয় আয়ের প্রায় 25.92% আসে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্র থেকে।

কর্মসংস্থান (Employments) শিল্পায়ন কোনও একটি অঞ্চলে শ্রমের বিশেষীকরণ প্রথাটিকেও যথেষ্ট উৎসাহিত করে। শিল্পখাতে শ্রমের এই বিভাজন ধারা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন-2019 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ভারতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় 42.6% ঘটেছিল।

নগরায়িত সভ্যতার বিকাশ (Development of urbanized civilization): শিল্পায়ন একটি অঞ্চলে উন্নত যোগাযোগ এবং পরিবহণ ব্যবস্থাকে অনুপ্রাণিত করে, যা আরও বেশি পরিমাণ লোককে দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলি থেকে টেনে তুলে এনে আধুনিক নগরায়িত জনপদ গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। এই ধরনের শিল্পোন্নত শহর বা নগরগুলিতে কর্মশক্তির বিকাশের পাশাপাশি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কিং, স্বাস্থ্য পরিসেবা, রেস্তোরাঁ ও বিনোদন কমপ্লেক্স সহ একাধিক পরিসেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, যেগুলি অনিবার্যভাবেই উন্নয়নে গতি এনে দেয়।

জীবনযাত্রার উচ্চতর মান বৃদ্ধি (Increased quality of life): শিল্পায়নের প্রসারে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের পরিমাণগত হার যথেষ্ট কমে যায়। শিল্পকেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলে বৃহৎ এবং ছোটো আকারের ববসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে আরও বেশি করে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। এটি শহরতলির এবং তার উপকণ্ঠের মতো অঞ্চলগুলির কাছাকাছি বসবাসকারী লোকেদের একাধিক বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। বস্তুত, শিল্পকে ধিরে দক্ষ কর্মশক্তির কাঠামো, বর্ধিত আয়যুক্ত শ্রমিক এবং প্রতিটি পরিবারের জন্য বিভিন্ন জনমুখী পরিসেবা একটি অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ জীবনযাত্রার দিকে নিয়ে যায়।

উন্নয়নে কৃষি এবং শিল্পের পরিপূরকতা (Complementation of Agriculture and Industry in Development):

বর্তমানে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৃষি বা শিল্প-এদের কোনও একটিকে পৃথকভাবে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিশেষ করে, Nurkse, Lewis, Scitovsky প্রমুখ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতায় এবা উভয়ই একে অপরের পরিপূরক বা সহযোগী। কারণ, শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই প্রাথমিক অর্থনীতির কৃষিক্ষেত্রগুলি থেকে আসে। তাছাড়া, বিশ্বের অধিকাংশ অনুন্নত দেশগুলিতে শিল্প প্রসারের ক্ষেত্রে যে প্রাথমিক পুঁজি সরবরাহ হয়ে থাকে তার বেশীরভাগটাই কৃষিক্ষেত্রজাত। এমনকি, কৃষিজাত পণ্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করার সুবাদে একাধিক দেশেই নতুন নতুন শিল্প সমাগমের পথ প্রশস্ত হয়।

অন্যদিকে, শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিকাজ সর্বদা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে, কৃষিকাজে ব্যবহৃত জলসেচ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতি বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্রগুলির মাধ্যমেই পেয়ে থাকে। আবার, শিয়ে বিনিয়োগ বাড়লে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, যা কৃষিক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের কর্মে নিযুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে। কাজেই, উন্নয়নের কৌশলগত দিক থেকে কৃষি এবং শিল্প পরস্পর সহযোগী সম্পর্কে চিরকালই আবন্দ। উন্নয়নের আঙ্গিনায় কৃষি এবং শিল্পের এই পরিপূরকতার বিষয়টিকে বিবেচনা করে তাই বলা যায়-"কৃষি আমাদের

ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।

 উন্নয়ন এবং জনাধিক্যতার সম্পর্ক

(The relationship between Development and Over-population):

অতিরিক্ত জনসংখ্যা কোনও একটি দেশের এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে বিদ্যমান মোট জমির পরিমাণ মানুষের প্রকৃত বহনক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়। উন্নত এবং উন্নয়নশীল প্রায় সমস্ত দেশেরই অত্যধিক জনসংখ্যা বর্তমানে সবচেয়ে বড়ো একটি সমস্যা। যেহেতু, উন্নয়নের ক্ষেত্রে জনাধিক্যতার মিশ্র প্রভাব দেখা যায়, নেই কারণে এ নিয়ে রিডির অর্থনীতিবিদ, জনসংখ্যাবিদ এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। এখানে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাপেক্ষে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা জনাধিক্যতার প্রভাবগত সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হল।

জনসংখ্যা বিবর্তন তত্ত্বের বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়নের অভিমুখ (The direction of development at the different stages of the Demographic transition theory:

বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিক পর্যায়গুলির সাথে আঞ্চলিক উন্নয়নের স্তরগুলি অত্যন্ত গভীর সম্পর্কযুক্ত। জনবিবর্তন তত্ত্বের সাপেক্ষে ওয়ারেন থম্পসন (W.S. Thompson-1929),ডাল নোটিসেটিন (F. W. Notestin-1944), সি. পি. ব্ল‍্যাকার (C. P. Blacker-1947) প্রমুখ প্রবর্তিত উন্নয়নের স্তরগুলিকে এখানে উপস্থাপন করা হলো।

উন্নয়নে জনাধিক্যতার প্রতিকূল প্রভাব (Overpopulation lus its adverse effects of the Development):

উনবিংশ শতকের শেষার্ধে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বাস করতেন কোনও একটি দেশের উচ্চ জনসংখ্যা বৃশির হার সমাজ-অর্থনীতি এবং পরিবেশের ওপর কমবেশি সংগী বা অস্থায়ী একাধিক পরিবর্তন এনে উন্নয়নকে প্রভাবিত করে থাকে। এক দশক আগেও, সমগ্র বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রতি বছর 1.24 শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বর্তমান, এটি প্রতি বছর 1.18 শতাংশ হারে আনুমানিক ৪3 মিলিয়ন অতিরিন্তু মানুষ বিশ্বের মোট জনসংখ্যায় যুক্ত হয়ে চলেছে। আগামী 15 বছরের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা এক বিলিয়নেরও বেশি বৃদি পেয়ে, 2030 সালে তা 8.5 বিলিয়নে পৌঁছাবে। পুনরায় সৌ 2050 সালে 9.7 বিলিয়ন এবং 2100 সালের মধ্যে 11.2 বিলিয়নে পৌঁছে যাবে। (Esaunorg, 2015)

বিশেষজ্ঞরা একটি দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে তির্যক দৃষ্টিতে উন্নয়নের ইতিবাচক পথে অন্যতম বাধা হিসেবে বিবেচনা করে জনাধিক্যতার একাধিক প্রতিকূল প্রভাব তুলে ধরেছেন। যেমন-

মূলধন এবং বিনিয়োগ ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা (Adversity in terms of capital and investment)

অধিকাংশ অনুন্নত দেশে জনসংখ্যার কাঠামো অনুযায়ী পুঁজি গঠনসংক্রান্ত বিষয়গুলি নির্ধারিত হয়। যে দেশগুলিতে উচ্চ জন্মহার এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যার প্রায় 40-50% অ-উৎপাদনশীল স্তরে নিযুক্ত রয়েছে, সেখানে শ্রমশক্তির অভাবে খুব স্বাভাবিক কারণেই মাথাপিছু মূলধনের প্রাপ্যতা যথেষ্ট হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ, তাদের নিম্নগামী সামগ্রিক আয় এবং স্বল্প সঞ্চয়প্রবণতার পরিণামস্বরূপ পুঁজি গঠনে বিরূপ প্রভাব ফেলে থাকে। জনাধিক্যতার এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক স্থবিরতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

• মাথাপিছু হ্রাসপ্রাপ্ত আয় (Declining per capita income): জনসংখ্যার বর্ধিত আকার স্বল্প উন্নত দেশগুলিতে আরও কম উৎপাদনশীলতাকে মদত দেয়। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি মানুষের মাথাপিছু আয় অত্যন্ত কমে যায়।

• বেকারত্ব ও দারিদ্র সমস্যার সৃষ্টি (Problems of unemployment and poverty): দেশে অতিরিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে যদি শিল্প-পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব না হয়, তখন বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এই পরিস্থিতিতে অনুন্নত দেশগুলিতে চাকরিপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা এত দ্রুত বেড়ে যায়, তা ক্রমশ সাধারণ বেকারত্ব এবং ছদ্মবেশী বেকারত্বকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

আবার, জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে বেকারত্বে জর্জরিত মানুষকে যখন তাদের আয়ের একটি অংশ পরিবারে এবং সন্তানদের লালন-পালনের জন্য ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়। তখন খুব স্বাভাবিক ভাবে তাদের জীবনী ক্রমশ দারিদ্র্যের দুর্ঘটনা নেমে আসে। 

যে-কোনও দেশের অতিরিন্ত জনসংখ্যা সেখানকার উপলব্ধ সাধ্যের উপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে থাকে। এই ক্ষেত্রে, বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী যদি কৃষি উৎপাদন সঠিকভাবে বাড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে কোনও এক সময় তা খাদ্য সঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি করে। সাধারণত যে কোনও দেশে খাদ্যের রাতি, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দুইভাবে প্রভাবিত করতে পরিমিতি তৈরি সাধারণত সরবরাহ জনগণকে অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিয়ে মানবসম্পদকে বিনষ্ট করে তাদের উৎপাদনের ক্ষমতাকে হ্রাস করে। দ্বিতীয়ত, খাদ্যের ঘাটতিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষ অন্যান্য অঞ্চল থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে বাধ্য হয়, যা তাদের অর্জিত মুদ্রা সম্পাদনের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে। 

জনসংখ্যা চরমভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন বর্ধিত জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে নিত্যনতুন উৎপাদন বা পরিসেবা ক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদনে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাও যথেষ্ট কমে যায়। অন্যদিকে, যে সমস্ত জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রগুলিতে অবহেলিত থাকে, তাদের কর্মকেন্দ্রিক দক্ষতাও যথেন্ট হ্রাস পায়।

• স্বনির্ভরতায় প্রতিবন্ধকতা (Obstacles to self-reliance): অনেক সময় অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি আত্মনির্ভরতা অর্জনের পথে একটি বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের আর্থসামাজিক চাহিদা মেটাতে প্রায়শই বৈদেশিক সাহায্যের উপর অধিক নির্ভর করতে হয়। এই পরিস্থিতি দীর্ঘকাল বজায় থাকলে বিশ্বের অধিকাংশ। জনবহুল দেশ তাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে।

• কৃষি উন্নয়নে ব্যাঘাত (Obstacles to agricultural development): স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে অধিকাংশ মানুষ যারা গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন, তাদের প্রধান এবং প্রায় একমাত্র পেশা হল কৃষিকাজ। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়লে ভূমি-মানুষের অনুপাত যথেষ্ট বিঘ্নিত হয়। যেমন, ভারতে চাষাবাদের জন্য মাথাপিছু জমির প্রাপ্যতা 1911 খ্রিস্টাব্দে 1.1 একর থেকে 1971 খ্রিস্টাব্দে 0.6 একরে নেমে আসায়, এখানকার জোতের আকার অনেক ছোটো হয়ে গিয়েছে। ফলে, ছোটো আকারের কৃষি জোতগুলিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, সেচ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্তরায় করে তুলেছে।

• নিম্ন মানের সামাজিক অবকাঠামো (Low quality social infrastructure): একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, সেখানে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মোতাবেক শিক্ষা, আবাসন এবং চিকিৎসা সহায়তার মতো মৌলিক সুবিধা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত মূলধন ব্যয়ের ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। এর ফলে, সেখানকার সামাজিক অবকাঠামোগুলি যথেষ্ট নিম্ন মানের হয়ে পড়ে।

• পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব (Adverse effects on the environment): দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের গুণগত মানের অবনমন বা পরিবেশীয় কাঠামোর পরিবর্তনকে অনিবার্য করে তোলে। বিশেষ করে, বর্ধিত জনসংখ্যা জমির ওপর চাপ বৃদ্ধি করে যিক্তি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এরফলে, ক্রমবর্ধমান দূষণ যন্ত্রণা, বিভিন্ন রোগপ্রকোপজনিত দুর্যোগের ঘনঘটা কোনো একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ক্রমেই একটি উদ্বেগজনক অবস্থার দিকে নিয়ে যায়।

• নিম্নমুখী জীবনযাত্রা (Low-rise lifestyle): প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান তাদের মাথাপিছু আয় যারা নির্ধারিত হয়। অবশ্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়কে প্রভাবিত করার কারণগুলিও জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। অবশ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু কাঁচামাল, দক্ষ শ্রম এবং মূলধন বিনিয়োগের প্রবণতা আশানুরূপ হয় না। এই পরিস্থিতিতে নিম্নমুখী জীবনযাত্রা উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

দেশের সমৃদ্ধিতে জনাধিক্যতার অনুকূল প্রভাব (Overpopulation has a positive effect on the prosperity of the country):

কোনও কোনও বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রতিবন্ধক নয়। এপ্রসঙ্গে, বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, Harvard Initiative for Global Health-এর প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সাথে মাথাপিছু আয়ও দুই-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মানে সলপাই বিশ্বে মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার যথেখ্য কমে গেছে।

মানব সম্পদ বৃদ্ধি(Human resource growth): কোনও কোনও দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা সেখানকার মানবসম্পদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়। এরফলে, সমগ্র উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দক্ষতা এবং গতি সমানভাবে মানের করা যায়। যেমন-চিন তাদের বর্ধিত জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদের প্রধান অবলম্বন বলেই মনে করে।

বিনিয়োগ বৃদ্ধি(Increase investment): দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কোনও একটি সেদ উচ্চ বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করে, যা পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বর্তমানে যথেষ্ট জোর দেওয়া হচ্ছে।

শিল্পে উচ্চ চাহিদা (Higher demand in Industry): উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শিল্পাকেন্দ্রিক বিল্ডিং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে প্রচলিত ভোগবাদী সমাজব্যবস্থায় নতুন করে অন্যান্য শিল্প সমাগমের হয়।

বর্ধিত সামরিক শক্তি (Increased Military might): যে সমস্ত দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি সেখানে সামরিক ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত নিযুক্তি ঘটে থাকে। এর ফলে দেশের সার্বিক নিরাপত্তাও যথেষ্ট বেড়ে যায়।

বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি (Commercial Prosperity): অধিক জনসংখ্যার কিছু দেশ বাণিজ্য কাঠামোর ধৃত সম্প্রসারণ ঘটায়। যেসব দেশে অধিক জনসংখ্যা রয়েছে সেখানে কর্মক্ষেত্রে মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাও যথেষ্ট বেশি হয়









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01