উন্নয়নশীল দেশ (Developing Countries):
অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে অনুন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতায় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের ধারণাটিও সর্বাগ্রে উঠে আসে। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, উন্নয়নশীল দেশ হল কম উন্নত অথচ প্রগতিশীল একটি দেশ। সাধারণত, যে সমস্ত দেশ কোনও এক সময়কার ঔপনিবেশিক শক্তির অধিপত্য কাটিয়ে স্বাধীনতা লাভ করার সুবাদে, বর্তমানে সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি অথবা প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের পথে অত্যন্ত ধীরগতিতে অথচ ধারাবাহিক উন্নয়নের পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকেই উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়।
উন্নয়নশীল দেশের ধারণা প্রসঙ্গে The bank for Canadian entrepreneurs -এর অভিমত হল- "A Arveloping country- also calleil a less developed country or emerging market-has a lower gross domestic product (GDP) tham developed countries, with a less mature and sophisticated economy
অর্থাৎ, একটি উন্নয়নশীল দেশ যাকে স্বল্পোন্নত দেশ বা উদীয়মান বাজারও বলা হয়-যেখানে একটি কম পরিপক্ক এবং পরিশীলিত অর্থনীতি সহ উন্নত দেশগুলির তুলনায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কম রয়েছে।
• অন্তর্ভুক্তি (Inclusion) জাতিসঙ্ঘের প্রচেষ্টায় উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তালিকাবদ্ধ করার প্রথম প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল 1971 খ্রিস্টাব্দে। বস্তুত, ত্রি-বার্ষিক আর্থসামাজিক পরিসংখ্যান মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থাৎ মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কয়েকটি নির্দিষ্ট সূচককে সামনে রেখে বিশ্বের কোনো কোনো দেশ ঠিক কীভাবে উন্নয়নশীল স্তরে উপনীত হবে, সেই বিষয়টিকেও জাতিসংঘ স্পষ্টভাবে স্থির করে দেয়।
নির্ধারক (Indicator)
কোনও স্বল্পোন্নত একটি দেশ তাদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের কাঙ্ক্ষিত মানগুলির দ্বারা উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হবে কিনা সেই বিষয়টিকে অবশ্য স্থির করে থাকে জাতিসংঘ পরিচালিত CPD (Commission on Population and Development) নামক এক বিশেষ সংস্থা। সাধারণত কোনো স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেতে গেলে তাদের মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। তবে,উন্নয়নশীল দেশ নির্ধারিত হয় মূলত তিনটি সূচক অনুযায়ী; যেমন-
দেশের মাথাপিছু আয় 1230 মার্কিন ডলারে উপনীত হওয়া,মানবসম্পদ সূচকে 66 বা এর বেশি পয়েন্ট অর্জন করা, এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচকে 32 পয়েন্ট বা এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়।
■উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Developing countries)
উন্নয়নশীল দেশগুলির বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন-
উন্নয়নের প্রকৃতি (Nature of development): সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকল্পিত উরসে কর্মসূচিগুলি আর্থসামাজিক স্থবিরতার কারণে কিছুটা দেরি করে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
• অর্থনীতির অভিমুখ (Trend of economy): উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর মূল ভিত্তি হল প্রাচীন পর্যায়ের চাষাবাদ বা অন্য কোনো ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক কার্যাবলী।
• নতুন শিল্প গান (Formation of new industries): এই সমস্ত দেশে প্রথমদিকে শিল্পোন্নয়নের বাজ কিছুটা মশ্বরভাবে শুরু হলেও, ক্রমাগত নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের ফলে সেখানকার উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক কাঠামো অত্যন্ত দ্রুতগতি লাভ করে।
• জাতীয় ও মাথাপিছু আয় প্রবণতা (National and per capita income trends): দেশগুলিতে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রের অগ্রগতি প্রায় সমানতালে চলতে থাকার কারণে, জাতীয় আয় ও জনগাষের মাথাপিছু আয় এখানে প্রাপ্যতার নিরিখে যথেষ্ট আশানুরূপ হয়ে থাকে।
• মূলধন গঠন (Capital structure): বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশ মূলধন গঠনের প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ভাবে বজায় রাখে বলে, এখানে সঞ্চয়ের ক্ষমতাও ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী।
• সম্পদের অসম্পূর্ণ ব্যবহার (Incomplete use of resources): উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পর্যাপ্ত মূলম, দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবের কারণে, নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে উৎপাদনক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যবহার করতে সক্ষম হয় না।
• প্রতিকূল বৈদেশিক নীতি (Adverse foreign policy): বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলি রপ্তানির তুলনায় আমদানিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এই ধরনের প্রতিকূল বাণিজ্যের নীতি দেশের উন্নয়নকে অনেকটাই ভারসাম্যহীন করে রাখে।
• জীবনযাত্রার মান (Standard of living): এই সমস্ত উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদির হার এবং কাঙ্ক্ষিত সম্পদের জোগান ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকে না বলে, মানুষের জীবনযাত্রার মান এখানে মধ্যম প্রকৃতির।
• জনসংখ্যার চাপ (Population pressure): সাম্প্রতিককালে বিশ্বের প্রায় সমস্ত উন্নয়নশীল দেশ চিকিৎসা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রকৃত উন্নতি ঘটিয়ে মৃত্যুহারকে অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে। ফলে এখানে জনসংখ্যার চাপ যথেষ্ট বেশি হারে লক্ষ্য করা যায়।
• বেকার সমস্যা (Unemployment problem): শিক্ষা এবং শিল্প পরিকাঠামোর সার্বিক বিকাশে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যথাযথ ভারসাম্য না থাকায়, এখানে বেকার সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করা যায়নি।
• সামাজিক পরিবেশ (Social environment): বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশ সম্পূর্ণরূপেই প্রথাগত বা আদর্শগত বিভিন্ন চিন্তাধারার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে থাকে। তবে, কখনো কখনো এখানকার যৌথ পরিবার প্রথা, পর্দা প্রথা, রক্ষণশীল ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব সার্বিক উন্নয়নকে চিরকালই বিভিন্ন নেতিবাচক গন্ডির মধ্যেই আবন্ধ করে রাখে।
■ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহ (Developing countries of the world):
সম্প্রতি International Monetary Fund সমগ্র বিশ্বের 152টি দেশকে উন্নয়নশীল দেশরূপে চিহ্নিত করলেও জাতিসঙ্গের নির্দিষ্ট মান্যতা সূচক অনুযায়ী সেই সংখ্যা মাত্র 47টি। এখানে বিশ্বের প্রধান প্রধান উন্নয়নশীল দেশের একটি তালিকা উপস্থাপন করা হল।