ভারতের আহ্ লিক বৈষম্যের সাম্প্রতিক অব্যথা (The current situation of regional desparities in India)
বিগত দু'দশকে আমরা যদি ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের বিভিন্ন পরিসংখ্যানগুলির দিকে তাকাই, বুঝতে পারব এখানকার বৈষম্য সাম্প্রতিককালে অতি দ্রুত এবং বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 2017 খ্রিস্টাব্দে ক্রেডিট সুইস সংস্কার প্রকাশিত 'Global Wealth Report'-এ দাবি করা হয়েছে, ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী পরিবারটিকে প্রথম খানে রেখে যদি অন্য পরিবারগুলিকে তাদের প্রাপ্ত সম্পদের ক্রমানুসারে সাজানো হয়, সেখানে দেখা যাবে, 2002- 2012 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের প্রথম । শতাংশ পরিবারের মধ্যে প্রাপ্ত মোট সম্পদের পরিমাণ 15.7 শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে 25.7 শতাংশ, এবং বাকি 50 শতাংশ পরিবারের মধ্যে প্রাপ্ত সম্পদ প্রায় ৪.1 শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র 4.2 শতাংশ। 2018-2019 খ্রিস্টাব্দে সম্পদ বণ্টনে ভারতের বৈষম্যের চেহারা আরও ভয়াবহ হয়েছে। OXFAM -এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে ধনী 1 শতাংশ পরিবারের কুক্ষিগত সম্পদ দেশের মোট সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকেরও কিছু বেশি। ভারতীয় বিলিয়নেয়ারের মোট সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে 140-এ দাঁড়িয়েছে এবং তাদের সম্মিলিত সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে $596 বিলিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরে বিশ্বের প্রভাবশালী একাধিক বিলিয়নিয়ার রয়েছে আমাদের এই ভারতে। তা সত্ত্বেও এদেশে স্বল্প আয় বিশিষ্ট প্রায় 75%-এরও বেশি মানুষের দৈনিক আয় মাত্র 2 মার্কিন ডলারের চেয়েও কম। ভারতীয়দের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রামাঞ্চলে শুধুমাত্র কৃষিকাজ থেকেই জীবিকানির্বাহ করে। অন্যদিকে, জিডিপির একটা বড়ো অংশ হিসেবে নগর ও মহানগরগুলির দুই-তৃতীয়াংশের গঠনে ব্যয় হয়ে যায়। সেই কারণে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের The Goldman Sachs Group এর একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী এক দশকের মধ্যে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারতকে প্রায় 1.7 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে।
NSO, MOSPI- প্রদত্ত সমীক্ষা অনুসারে (2020-21 খ্রিস্টাব্দে), ভারতের অর্থনীতি Covid-19 সংকটের সময় স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রতিকূল ফলাফলের কারণে সবচেয়ে বড়ো বার্ষিক সংকোচনের (7.3%) অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তবুও, কোভিড-19-এর কারণে ভারতে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় 75 মিলিয়ন, যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের নিরিখে প্রায় 60% রূপে গণ্য করা হয়। বিখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি (ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি গ্রন্থের লেখক) এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ভারতের আঞ্চলিক স্তরে এখনকার অর্থনৈতিক বৈষম্য বিগত 96 বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।