welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ওজোন স্তর সংরক্ষণ (Conservation of Ozone Layer)

ওজোন স্তর সংরক্ষণ (Conservation of Ozone Layer)


স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন স্তরের ক্রমাগত ধ্বংসের কারণে মানবজাতিসহ সমগ্র জীবমণ্ডলের ওপর যে কুপ্রভাব পড়বে, সেই বিষয়টি উপলব্ধি করে বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এর ফলে ওজোন স্তর। সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া স্থায়ীভাবেও ওজোন স্তর সংরক্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

(ক) আন্তর্জাতিক স্তরে গৃহীত পদক্ষেপ: ওজোন স্তর সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

(i) ভিয়েনা কনভেনশন (1985): অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রফলের চেয়েও বড়ো ওজোন গহ্বর আবিষ্কার হওয়ার ফলশ্রুতি হিসেবে, ওজোন ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার উদ্দেশে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে 1985 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে প্রথম ওজোন সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ 197টি দেশ অংশগ্রহণ করে এবং ওজোন স্তর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তবে এই চুপ্তিতে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের (CFC) ব্যবহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কথাই বলা হয়।

(ii) মন্ট্রিল চুক্তি 1987 খ্রিস্টাব্দের 16 সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে পৃথিবীর 11টি উন্নত দেশের প্রতিনিধিরা একত্রে ওজোন স্তর সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি মন্ট্রিল চুক্তি বা মন্টুল প্রোটোকল নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি হল-

(a) 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উন্নতদেশগুলিকে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের-11, 12, 113, 114 ও 115-錢物 যৌগের উৎপাদন ও বায়ুমণ্ডলে নির্গত করা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

(b) 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে হ্যালোন-1211, 1301 ও 2402-এই যৌগের উৎপাদন ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে।

(c) কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCI) এবং ট্রাইকুরো ইথেন (CH,CCL)-এর উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।

(d) ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের পরিবর্ত হিসেবে হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFC) এবং হাইড্রেড্ররোকার্বন (HFC) যৌগের ব্যবহারও 2040 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে।

(e) ওজোন স্তরকে ক্ষতি করে না এমন বিকল্প রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

মন্ট্রিল চুক্তি কার্যকর হলে 2075 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমন্ডলে ক্লোরিন গ্যাসের ঘনত্ব 2ppb-তে নেমে আসবে। এতে ওজোন স্তরের বিনাশ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মন্ট্রিল চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর সমগ্র বিশ্বে CFC ও হ্যালোন গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।

(iii) লন্ডন সম্মেলন। মন্ট্রিল চুক্তিতে যে সকল ক্ষতিকারক গ্যাসগুলির উৎপাদনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, 1989 খ্রিস্টাব্দে লন্ডন শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সেগুলির আংশিক সংশোধন করা হয়েছে ও কিছু গ্যাসের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সম্মেলনে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয় সেগুলি হল-

(a) 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উন্নত দেশগুলি এবং 2010-এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলি ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হ্যালোন গ্যাস এবং কার্বন টেট্রাক্লোরাইডের উৎপাদন বন্ধ করে দেবে।

(b) এই সম্মেলনে মিথেল ক্লোরোফর্মকে ওজোন ধ্বংসকারী গ্যাসগুলির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্থির হয়, উন্নত দেশগুলি 2005 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি 2015 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে-এর উৎপাদন বন্ধ করে দেবে

(iv) কোপেনহেগেন সম্মেলন 1992 সালে কোপেনহেগেন সম্মেলনে ওজোন স্তর সংরক্ষণে ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি বন্ধ করার জন্য আরও একধাপ কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি হল-

(i) হাইড্রোক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFC)-এর ব্যবহার উন্নত দেশগুলি 2004-এর মধ্যে বন্ধ করে দেবে।

(ii) 1996 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে CFC, হ্যালোন যৌগ, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড এবং মিথাইল ক্লোরোফর্মের উৎপাদন উন্নত দেশগুলিকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে।

(iii) এ ছাড়া মিথাইল ব্রোমাইটের ব্যবহারও ধীরে ধীরে কমাতে হবে।

(iv) মন্ট্রিল সংশোধন: 1997 খ্রিস্টাব্দে মন্ট্রিলে পুনরায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় যে উন্নত দেশগুলি 2005-এর মধ্যে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলি 2015-এর মধ্যে HCFCs এবং মিথাইল ব্রোমাইটের উৎপাদন বন্ধ করে দেবে .

(v) বেজিং চুক্তি 1999 খ্রিস্টাব্দে চিনের বেজিং শহরে বেজিং চুক্তির মাধ্যমে HCFCs-এর উৎপাদন এবং ব্যাবসাকে আরও কঠিনতর করা হয়। 2004-এর মধ্যে রোমোক্লোরোমিথেনের উৎপাদন ও ব্যবহার সবদেশকেই বন্ধ করে দিতে হবে।

(vi) বসুন্ধরা সম্মেলন 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরো শহরে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা সম্মেলনে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের ব্যবহার যথাসম্ভব কমানোর কথা বলা হয়। এই সম্মেলনে ওজোন ক্ষয় রোধসহ পরিবেশ ও স্থিতিশীল উন্নয়নের (sustainable develop-ment) জন্য 21 দফা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01