welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অনুন্নয়নের ধারণা(Concept of underdevelopment)

অনুন্নয়নের ধারণা(Concept of underdevelopment)


ধারণা (Concept):

অনুন্নয়নের ধারণাটিকে সাধারণত উন্নয়ন মানের আপেক্ষিক কালবিলম্বতাকে ইঙ্গিত করতেই উপস্থাপন করা হয়ে থাকে (বাস্তবিক অর্থে অনুন্নয়ন হল মানবসমাজের এমনই একটি অবরুদ্ধ চিরাচরিত অবস্থা, যেখানে মানুষ তাদের প্রত্যাশিত সুযোগগুলি থেকে সর্বদা বঞ্চিত হয়ে তুলনামূলক নিম্নমানের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। অনুন্নয়নকে স্পষ্টত বোঝাতে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ নিম্ন মাথাপিছু আয়, ব্যাপক দারিদ্র্য, অপুষ্টি, সাক্ষরতার নিম্ন স্তর, নিম্ন আয়ু এবং সম্পদের স্বল্প ব্যবহার বা অসম বণ্টন প্রভৃতি বিষয়গুলির সাথে তুলনা করে ব্যাখ্যা করে থাকেন, যেমন-

আন্দ্রে গুণ্ডার ফ্রাঙ্ক অনুন্নয়নের পরিস্থিতিকে নিছক একটি অভাব (merely a lack) হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

স্মিথ (2013)-এর মতে, "Underdevelopment refers to a continuing relationship of exploitation where, at any one level in the chain, the full economic surplus is not available for reinvestment." অর্থাৎ অনুন্নয়ন বলতে।অর্থাৎ অনুন্নয়ন বলতে বোঝায় শোষণের একটি অবিরত সম্পর্ক যেখানে শৃঙ্খলের যেকোনো একটি স্তরে, পুনঃবিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত পাওয়া যায় না।

ওয়াল্টার, বুডনি বলেছেন, অনুন্নয়নের ধারণাটি একটি সামাজিক গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত যা পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদী শোষণের একটি পণ্য।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রগুলি সার্বিক কল্যাণ এবং জীবনযাত্রার গ্রহণযোগ্য স্তরে পৌঁছাতে যে কারণে প্রায়শই ব্যর্থ হয়, তার প্রেক্ষাপটই গড়ে ওঠে অনুন্নয়নজনিত বিভিন্ন দুর্দশা এবং কঞ্চনার মাধ্যমে। সেই কারণে, এই সকল দেশগুলিকে উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশরূপেই সর্বাধিক আখ্যায়িত করা হয়।

অনুন্নয়নের প্রকৃতি (The nature of underdevelopment)

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ গুনার মিরডাল স্বল্পোন্নয়নের প্রকৃতিকে বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে-

কাজ এবং জীবনের জন্য অসংখ্য অবস্থিত অবস্থা বিরাজমান।

• আয় এবং জীবনযাত্রাগত স্থার অত্যন্ত নিম্নমানের।

• উৎপাদনের পঞ্চতিগুলি প্রাচীন।

• এই অবস্থায় মানুষের মনোভাব এবং আচরণের ধরনগুলি কোনো না কোনো প্রতিকূল অভাব যারা পরিচালির। বস্তুত মিরভাল অনুন্নয়নতে এমন একটি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি হিসাবে বিবেচনা করেছেন, যে বিষয়টি খাম সামাজিক অস্পষ্টতার দোষে দুষ্ট।

অনুন্নয়নের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of underdevelopment)

যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অনুন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল নিম্নরূপ:

প্রাথমিক কার্যাবলির প্রাধান্য (Priority of primary activities): পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই অনুন্নয়নের কাঠামোগত পরিসরটি কৃষি, খনি নিষ্কাশন, মৎস্য ও বনজ সম্পদ আহরণ প্রভৃতি প্রাথমিক কার্যাবলির উপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে।

আয় ও সম্পদ বণ্টনে ব্যাপক বৈষম্য (Wide disparity in income and wealth distribution): অনুন্নয়নের মিশ্র পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে আয় ও সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য বা অসমতা একটি অনিবার্য ঘটনা।

স্বল্প মাথাপিছু আয় (Low per capita income): অনুন্নয়নের ঘেরাটোপে থাকা প্রায় সমস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলির মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশের তুলনায় যথেষ্ট কম হয়ে থাকে।

সঞ্চয় এবং মূলধন গঠনের নিম্ন হার(Low rates of savings and capital formation): অনুন্নয়ন ক্ষেত্রগুলিতে প্রাথমিক অর্থনীতির নিম্নমুখী আয় এবং স্বল্প সঞ্চয়গত প্রবণতার পরিস্থিতি দেশের মূলধন গঠনের হার বা পুঁজি বিনিয়োগকে যথেষ্ট কমিয়ে দেয়।

দারিদ্র্যের দুষ্ট বৃত্ত (The vicious cirlce of poverty):

স্বল্পোন্নয়নের কবলে পড়ে আয়, পুঁজি গঠন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান প্রভৃতি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায়, প্রভাবিত দেশগুলি সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের দৃষ্টিচক এর মধ্যে আটকে পড়ে।

আঞ্চলিক বৈষম্য (Regional disparity): অনুন্নয়নের পরিবলয়ে জাতীয় আয়ের বন্টন এবং ভোগ সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

• জীবনযাত্রার নিম্ন স্তর (Low standard of living): অনুন্নয়নের ক্ষেত্রে উপনীত হয়ে মানব উন্নয়নের সমস্ত সূচকগুলিই মন্থর হয়ে পড়ায় সেটি মানুষের নিম্ন স্তরের জীবনযাত্রাকে প্রতিফলিত করে।

• নিম্ন মানের প্রযুক্তি (Low quality technology): অনুন্নত অর্থনীতির উৎপাদনগত কৌশল সর্বদ সাবেকি ও তুলনামূলক কম বিশ্বমানের প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটায়।

প্রেক্ষাপট (Background)অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, "উন্নয়ন" এবং "অনুন্নয়ন” ধারণ্য দুটির উৎপত্তিগত প্রেক্ষাপটের সময়কাল প্রায় কাছাকাছি। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলে থাকেন, পশ্চিমী দেশগুলির পুজিবাদী অর্থনীতির মূলপটের কাল প্রায় জাক, অনুরূপভাবে উপনিবেশিক শাসন, শোষণ, এবং বলপূর্বক সম্পদ আহরণের অনিবার্য পরিস্থিতি ছিল অনুন্নয়ন। বস্তুত, উপনিবেশবাদকে কেন্দ্র করে অনুন্নয়নের প্রেক্ষাপটটি আজ থেকে প্রায় 400 বছর পূর্বেও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমিক খুঁজে পাওয়া যায়। 

অন্যদিকে, বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বের উপনিবেশিকশাসিত দেশগুলির সাথে উন্নত আধুনিক এয়েছিল তার মাধ্যমেও অনুন্নয়ন শব্দটি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা পায়। এ প্রসঙ্গে, আজে গদ্ধার ফাঙ্ক "Capitalism and thulerdevelopment in Latin America

evelopment and underdevelopment are both necessary result and contemporary manifestation of Internal contradictions in the world capitalist system,

মেক্সিকোর গুস্তাভো এস্তেভা মনে করেন, 1949 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিস্থিতিতে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান কর্তৃক পরাধীন রাষ্ট্রগুলিকে অর্থসাহায্যের কৌশলটি পক্ষান্তরে অনুন্নয়নের চরস্থাটিকেই সার্বিকভাবে তুলে ধরে। এস্তেভা আরও বলেছিলেন, এই সময়কালে বিশ্বের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি জাতিকে তাদের নিজস্ব অভাবের গণ্ডিতে শ্রেণিবন্ধ করা হয়েছিল। আসলে, ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান ঠিক কোন সময় এবং কীভাবে তৈরি হয়েছিল সে সম্পর্কে প্রচারিত তত্ত্বগুলিতে একাধিক বিতর্ক থাকলেও, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে একটা বিষয়ে আজ সকলেই একমত, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে সম্পদ আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদী শোষণ যে সামাজিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছিল সেখানেই ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার সাক্ষ্য হিসেবে অনুন্নয়নের মূল প্রোথিত হয়েছে।

অনুন্নয়ন উপলব্ধি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি(Underdevelopment perception and international recognition)

আপাতদৃষ্টিতে আমরা যখন কোনও দেশ বা অঞ্চলের প্রতি সঠিকভাবে মনোনিবেশ করি, তা থেকে আমরা খুব সহজেই অনুমান করে নিই দেশটির উন্নয়নের অবস্থা ঠিক কেমন, অথবা এদের মধ্যে কোনটি উন্নত এবং কোনটি অনুন্নত দেশ। সনাতন প্রথায় এই ভাসা ভাসা ধারণাগুলি উন্নয়ন বা অনুন্নয়নকে সম্যক বুঝতে সাহায্য করলেও, এই সমস্ত দেশে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ, পরিসেবার মাত্রা, ভোগের স্তর কীভাবে বন্টিত হচ্ছে তা সঠিকভাবে জানা কখনোই সম্ভব হয়ে ওঠে না।

একসময়, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কোনও একটি দেশের উন্নত এবং অনুন্নত অবস্থা প্রকাশ করার জন্য শুধুমাত্র জনগণের উপার্জনের অংশটিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিত। কিন্তু একথা আজ প্রমাণিত হয়েছে উন্নয়নের আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, শুধুমাত্র উপার্জনের ওপরেই মানুষের দারিদ্র্য বা জীবনযাত্রার মান পুরোপুরি নির্ভর করে না। সেই কারণে, উন্নয়ন এবং অনুন্নয়নের মাত্রা বোঝাতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্রের উৎপাদন কাঠামো, ভোগের পরিমাণ, সম্প্রদায়ভিত্তিক উপার্জনের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের বরাদ্দকরণ ও ব্যবহারের মাত্রাগত পরিমাণ, সামগ্রিক জীবনমান প্রভৃতি বিষয়গুলিকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকেন।

বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশ গঠনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে 1964 খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন (United Nations Conference on Trade and Development)-এর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এখানে উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশের জন্য সমান সুযোগসহ টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিটি সদস্য-দেশ সহমত পোষণ করেছিল। সেই লক্ষ্যে, 1971 খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিকভাবে 25টি দেশকে উন্নয়নশীল দেশরূপে এলডিসি এর তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

অনুন্নয়নের পর্যায় (Under development stage)

A. G. Frank তাঁর "The Development of Underdevelopment গ্রন্থে (ব্রাজিলের প্রেক্ষাপটে) নির্ভরশীল তত্ত্বকে সামনে রেখে অনুন্নয়নের বেশ কয়েকটি পর্যায় উপস্থাপন করেছেন, এগুলি হল-

(i) প্রাথমিক পর্বে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তিক (অনুন্নত) রাষ্ট্রগুলির বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ফলে কেন্দ্রীয় দেশগুলি ক্রমাগত উন্নত হতে থাকলেও, প্রান্তিক দেশগুলির অনুন্নত অবস্থা প্রায় একইভাবে বজায় থাকে।

(ii) এর পরবর্তীকালে, কেন্দ্রীয় দেশগুলির সাথে প্রান্তিক রাষ্ট্রগুলির সম্পর্ক যখন সবচেয়ে দুর্বল হয় এবং তখনই কেন্দ্রীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায়।

(iii) এই অবস্থায় প্রান্তিক রাষ্ট্রগুলি তাদের নিজস্ব উদ্বৃত্তকে ব্যবহার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

(iv) আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থাকার ফলে এক সময়কার প্রাকৃতিক সম্পদ ও মূলধন প্রেরণের গুরুত্বপূর্ণ উৎসস্থলরূপে প্রান্তিক রাষ্ট্রগুলির নির্ভরশীলতা নতুন করে পুনরায় বাড়তে দেখা যায়।

এইভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনীতির গতিময় পরিস্থিতি এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলির পুঁজিবাদী পরিমণ্ডল ক্রমেই অনুন্নয়ন ও দুর্বল রাষ্ট্র গঠনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে।

অনুন্নয়নের কারণ (Causes of underdevelopment)

অনুন্নয়নের প্রেক্ষাপটে যে কারণগুলিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়, সেগুলি হল-

• সম্পদ ব্যবহারে অদক্ষতা (Inefficiency in the use of resources): প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক সমস্ত ধরনের সম্পদ যে কোনও দেশের উন্নয়নের ভিত মজবুত করার ক্ষেত্রে একটি প্রধান অবলয়ন সামে কোনও কোনও দেশে নিজস্ব উৎপাদিকা শক্তিতে নিদিষ্ট মানসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের অক্ষমতা, স উদঘাটন সংক্রান্ত অন্য কোনও এটি বা অদক্ষতা, অথবা স্থানীয় সম্পদের অপর্যাপ্ত ও অসম্পূর্ণ ব্যবহার রুমেষ্ট তাদেরকে অনুন্নয়নের বেড়াজালে আবদ্ধ করে দেয়। 

• মূলধনের ঘাটতি (Capital Deficit): অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মূলধন হল আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আসলে, অনগ্রসর দেশগুলিতে পর্যাপ্ত মূলধনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ফলে, জাতীয় উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে বা স্থানীয় পরিকাঠামোয় খুব বেশি সঞ্চয় করা কখনোই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই পরিস্থিতিতে, পুঁজির অভাব উৎপাদনশীল সমস্ত উদ্যোগকে বাধা দিয়ে অনুন্নয়নকে অনিবার্য করে তোলে।

• ব্যবস্থাপনাগত উদ্যোক্তার অভাব (Lack of managerial enterpreneurs): অনেকসময় কোনও একটি দেশে উদ্যোক্তাদের সঠিক এবং সময়োপযোগী বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত আর্থসামাজিক মোড়কে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দিয়ে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে পারে। কিন্তু, অনুন্নয়নে আবদ্ধ থাকা দেশগুলিতে এই ধরনের ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা এবং উদ্যোক্তাদের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। সেই কারণে এই সমস্ত দেশ উন্নয়নের সুযোগগুলিকে হারিয়ে ফেলে প্রায় সব দিক থেকেই বঞ্চিত রয়ে যায়।

• শিক্ষার অভাব (Lack of education) কোনও একটি দেশে উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রায়শই চৌ ইকুয়ালাইজার হিসেবে পরিগণিত হয়। কারণ, এটি একদিকে যেমন দক্ষতা ও মানবসম্পদকে সমৃদ্ধ করে, অন্যদিকে মানুষকে জীবিকা বা অর্থ উপার্জনে একাধিক সুযোগ গড়ে দেয়। সুতরাং, যে সমস্ত দেশগুলিতে উপযুক্ত সর্বজনীন শিক্ষার যথাযথ অভাব রয়েছে, তা অনুন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

• মানবসম্পদের অভাব (Lack of human resources) অনুন্নয়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হল দক্ষ মানবসম্পদের অভাব। সাধারণত দক্ষ মানবসম্পদের গুণে উৎপাদনক্ষমতা এবং উৎপাদনের উপাদানগুলো পরিপূর্ণতা পায়। এর অন্যথা ঘটলেই দেশের সামগ্রিক উৎপাদন প্রণালীটি ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে, যা পরোক্ষভাবে অনুন্নয়নের পথটিকে আরও প্রশস্ত করে।

• বাজারের সীমিত আকার (Limited market size): যে সমস্ত দেশে বাজারের আকার বা আয়তন সীমিত পরিসরের মধ্যে থাকে, সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। তাছাড়া, এই পরিস্থিতিতে বাজারের সীমাবন্ধতা সেখানকার কোনও একটি নির্দিষ্ট স্থানে যথাসম্ভব বিপুল পণ্যের সমাবেশ ঘটায়। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশের বিনিয়োগ পুঞ্জীভবন পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলিকে যথেষ্ট বঞ্চিত করে রাখে। বাজারকেন্দ্রিক এই ধরনের অসামঞ্জস্য পরিস্থিতি অনুন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

• দূর্বল অবকাঠামো (Weak infrastructure) অনুন্নয়নের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল দুর্বল পরিকাঠামো। সাধারণত, যে দেশগুলিতে শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাঙ্ক, পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাগুলির অভাব রয়েছে, সেখানে কোনওভাবেই সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হয় না।

• ভূষা এবং অপুষ্টি (Hunger and malnutrition): যে সমস্ত দেশের জনগোষ্ঠী দুবেলা দুমুঠো পর্যাপ্ত খাবার পায় না, শারীরিক এবং মানসিক অক্ষমতা, অপুষ্টি অথবা অন্য কোনও রোগজনিত প্রকোণে তারা সর্বদাই যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ধরনের প্রতিকূল অবস্থা দেশের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধিতে চরম বাধাস্বরূপ অনুন্নয়নের দোসর হয়ে দাঁড়ায়।

• রাজনৈতিক অস্থিরতা (Political instability): উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও বড়ো বাধা বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে, যে সমস্ত দেশে অবরোধ, হরতাল এবং সহিংস বা অসহযোগী গণআন্দোলনের পরিবেশ বিদ্যমান, সেখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রায় স্তন্স হয়ে যায়। তাছাড়া, এই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশের বিভিন্ন উৎপাদন খাতগুলিতে দীর্ঘকালীন বিনিয়োগের সমস্ত পথ বা উৎসাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এইভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার বাতাবরণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে অনুন্নয়নের পরিস্থিতি গড়ে তোলে।

• ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা (Growing population) পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রা অত্যন্ত বিস্ফোরক আকার ধারণ করে চলেছে। কোনও একটি দেশে জনসংখ্যা যত বাড়বে, সম্পদের ওপরেও চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তাছাড়া, উৎপাদন এবং বণ্টনের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি, কর্মসংস্থানেও যথেষ্ট ভাঁটা পড়বে, যা সরাসরি দেশের অগণিত মানুষের দারিদ্র্য অবস্থাকে আরও সঙ্গীন করে তুলবে। এই পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অনুন্নয়নে আবন্ধ রাখবে।

• আন্তর্জাতিক ঋণ (Internal debt): যে সমস্ত দেশ নিজেদের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক ঋণে জর্জরিত রয়েছে, সেখানে অনুন্নয়নের মাত্রাও তুলনামূলক অনেক বেশি। বর্তমানে লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ এই পরিস্থিতির শিকার।

• আইনের শাসনের অভাব ও দূর্নীতি (Lack of rule of law and corruption): বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে উপযুক্ত আইনি শাসনের অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান এবং রাষ্ট্রনেতারা একাধিক দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িয়ে পড়লে, সেখানে উন্নয়নের ভিত কখনোই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। এর ফলে উৎপাদন, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ গঠন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, এমনকি আয় বৃদ্ধির সমস্ত পথে বাধারূপে দাঁড়িয়ে অনুন্নয়নকে অনিবার্য করে তোলে।

এছাড়াও, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব, বাণিজ্যিক অসম শর্তাবলী, অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা বিভিন্ন বিপর্যয়ের প্রভাবজনিত উন্নয়ন ব্যবধান (Developmentgap) উপপ্রভিতি কেউ অনুমানের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়ে থাকে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01