welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারণা(Concept of Growth and Development)

প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারণা(Concept of Growth and Development)

প্রবৃদ্ধি (Growth)

ধারনা (Concept):

অধিকাংশ মানুষের কাছেই উন্নয়ন (Development) এবং প্রবৃদ্ধি (Growth) শব্দ দুটি প্রায় একই অর্থ বহন করে। আসলে, কোনও একটি দেশের ধারাবাহিক সমৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত যেকোনো পরিবর্তন প্রসঙ্গেই এই দুটি শব্দাকে পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়। তবে, প্রবৃদ্ধিকে প্রাতিষ্ঠানিক বা উৎপাদনক্ষেত্রের বর্ধনশীল প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ পর্যায়রূপে গণ্য করা হলেও, শাস্ত্র অনুযায়ী কিন্তু প্রবৃদ্ধির ধারণাটিকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-

• Merriam Webster অভিধানে প্রবৃদ্ধিকে stage in the process of growing" ৰূপে আখ্যায়িত। • সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে প্রবৃদ্ধিকে আকার, সংখ্যা, মান বা শক্তি, বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ (An increase, as in size, number, value or strength; extension।

• অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবৃদ্ধি হল-প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত বিনিয়োগমূলক যে কোনো ক্ষেত্র থেকে আয় এবং গড়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ রিটার্নের প্রাপ্যতা।

আরও সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনও একটি দেশের মোট উৎপাদন হারের বৃদ্ধির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। তবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সামগ্রিকভাবে প্রান্তিক কাঁচামাল সংস্থান, মূলধন, প্রযুক্তির মাত্রা, সঞ্চয় এবং শ্রমশক্তির বর্ধিত পরিমাণ বিচারেও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে, প্রবৃদ্ধি মূলত অর্থনীতির ইনপুট এবং আউটপুট-এর মাত্রা নির্ধারণে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচিত হয়। যেমন-কোনও একটি দেশের শিল্পখাতে একটি নির্দিষ্ট বছরে বিনিয়োগকৃত মোট মূলধন এবং পরবর্তী বছরের বিনিয়োগকৃত মূলধনের মধ্যে তারতম্য অথবা, উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী থেকে প্রাপ্ত আয়ের মোট পার্থক্য থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘটনাটিকে সহজেই অনুমান করা।

অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানের অধিকাংশ শাস্ত্রেই প্রবৃদ্ধিকে সমন্বয়ী দৃষ্টিকোণ থেকেই সাকিল বাবহার করা হয়ে থাকে। এখানে প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গো বলা হয়, এটি হল এমন একটি মূর্ত বা বিমূর্ত উপাদানের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রক্রিয়ার একমুখী প্রভাব, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরিসরে কোনও ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক উপাদানের মাত্রার রূপ প্রদর্শন করে। যেমন-কোনও একটি দেশের অন্তর্গত জনসংখ্যার ধনাত্মক বা ঋণাত্মক বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।

 প্রবৃদ্ধির বৈশিষ্টা (Characteristics of Growth):

প্রবৃদ্ধির সাধারণ বৈশিস্টাগুলি হল নিম্নরূপ-

(i) প্রবৃদ্ধি একটি পরিবর্তনমূলক অথচ নিরন্তর ক্রমপ্রসারিত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া।

(ii) প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রটি সর্বদা উৎপাদন, বিনিয়োগ, ভোগ, পরিসেবাভিত্তিক হয়ে থাকে।

(iii) প্রবৃদ্ধিকে GDP, GNP, NNP প্রভৃতির মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়।

(iv) এটি ক্ষণস্থায়ী বা স্বল্পমেয়াদী অথবা দীর্ঘমেয়াদি কোনও উৎপাদন ও বিনিয়োগের মাত্রা প্রদর্শনের ইঙ্গিতবাই একটি পদ্ধতি।

(v) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনও একটি দেশের উন্নয়ন পরিসরে গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় পরিবর্তন নিয়ে আসে।

(vi) কোনও একটি দেশে প্রবৃদ্ধির অভিমুখ তথা গতিপ্রকৃতি সবসময় সমান অথবা একই দিকে থাকে না।

(vii) একমুখী প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়াতে ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক উভয় ফলাফলই লক্ষ্য করা যায়।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবৃদ্ধির অন্তর্ভুক্তিকরণ(Inclusion of growth from an economic point of view):

সাধারণত কোনও একটি দেশের অর্থনীতির সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত পণ্য এবং পরিসেবাকেন্দ্রিক বিভিন্ন বণ্টনগত সূচকের একমুখী (স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি) পরিবর্তন প্রবণতাকেই প্রবৃদ্ধিরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই প্রবৃদ্ধিকে ভৌত পুঁজি, মানব পুঁজি, শ্রম, উৎপাদন, আয়, ব্যয়, বাণিজ্য প্রভৃতি যে কোনো উৎপাদনমুখী বিষয়গুলির দ্বারাই প্রকাশ করা সম্ভব।

"INTELLIGENT ECONOMIST ওয়েবসাইটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নিম্নোক্ত চারটি বিশেষ রূপে প্রকাশ করা হয়েছে।

Boom and Bust Business Cycle: কোনোপ্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বৃহত্তর মন্দার (Great Recession পরিস্থিতির সাপেক্ষে সাধারণত এই ধারণাটি উঠে আসে। এখানে বল হয়, যে অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উচ্চগতি হলে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি যে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে সেটিও হল Boom and bust Business cycle । যেমন ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বে অর্থনীতিতে এই অবস্থা দেখা গিয়েছিল।

Export-led Growth : যে সমস্ত দেশ আমদানীর তুলনায় অধিক রপ্তানীভিত্তিক অর্থনীতিতে বিশ্বাসী তারাই একমাত্র প্রবৃদ্ধির এই পর্যায়ে রয়েছে। যেমন-চীন, জাপান প্রভৃতি দেশ তাদের বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত ও প্রযুক্তিগতি অভিজ্ঞতার সুবাদে দীর্ঘকাল ধরে প্রকৃতিপূর্ণ অবস্থান করেছে। 

Consumer-led Growth: পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যারা নিজেদের অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার লক্ষ্যে ভোক্তার (Consumer) ব্যয়ের ওপরেই সর্বাধিক নির্ভরশীল। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে মুদ্রার ঘাটতি এবং প্রবৃদ্ধির ভারসাম্যহীন অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। যেমন-মার্কিন অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এই ধরনের।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রবণতা (Trend to economic growth)

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় তিনটি বিশেষ প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন-

ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি (Positive growth): কোনও একটি দেশের উৎপাদন এবং বিনিয়োগ খাতগুলিতে নির্দিষ্ট সময়ের নিরিখে ইতিবাচক তথা ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনই হল ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধনাত্মক প্রবণতার ফলে একটি দেশে প্রযুক্তি এবং জীবনযাত্রার মানের সার্বিক সমৃদ্ধি ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, 1970-2000 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ধনাত্মক প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি (Negative growth): কোনো একটি দেশের উৎপাদন এবং বিনিয়োগমূলক বিভিন্ন খাতগুলিতে নির্দিষ্ট সময়কালীন আয় সংকোচনগত প্রভাবে ক্রমনিম্ন বা নেতিবাচক পরিবর্তনগুলিকেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি বলা হয়। সাধারণত, উৎপাদন ক্ষেত্রে উপযুক্ত বিনিয়োগের দুর্বলতা, উচ্চহারে মজুরি বৃদ্ধি, পুরোনো প্রযুক্তির ব্যবহার প্রভৃতি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পরিস্থিতি গড়ে তোলে। যেমন-সম্প্রতি 2020 খ্রিস্টাব্দে কোভিড-19 পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে

শূন্য প্রবৃদ্ধি (Zero growth): নির্দিষ্ট সময়কালে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অধীনে GNP (Gross National Product) যখন প্রায় স্থির অবস্থায় থাকে, তাকেই শূন্য প্রবৃদ্ধি বলা হয়। শূন্য প্রবৃদ্ধি কোনও একটি দেশের এমন একটি প্রতিকূল পরিস্থিতি, যেখানে জনগণের উন্নয়নমুখী সমস্ত কার্যকলাপই প্রায় স্তিমিত হয়ে যায়। যেমন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে জাপান শূন্য প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছিল।

প্রবৃদ্ধির পরিমাপ(Measurement of Growth)

নব্য ধ্রুপদী অর্থনীতিতে জাতীয় আয় এবং প্রবৃদ্ধি পরিমাপের ক্ষেত্রে 1956 খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক Solow বেশ কিছু নিয়ামক পন্থাকে কয়েকটি সূত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলেন, যেটি প্রবৃদ্ধির বিশ্লেষণে সোলো তত্ত্ব (Solow Theory) নামেও পরিচিত। 2015 খ্রিস্টাদে "World development indicators-এ Solow-র এই ধারণাকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তত্ত্বট সহজে উপস্থাপনের জন্য এখানে যে তিনটি চালিকা শক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল- (1) মোট পুঁজির পরিমাণ, (ii) কর্মে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা এবং (iii) উৎপাদনপদ্ধতির দক্ষতা। প্রবৃদ্ধির নিরিখে সোলো-কৃত মডেলের সাধারণ সমীকরণগত রূপটি হল-

Y = F(K, L, A)

এখানে,

Y = মোট জাতীয় আয় (gross domestic product)

K = মোট পুঁজির পরিমাণ (Capital)

L = কর্মে নিয়োজিত লোকের সংখ্যা (labour)

A = উৎপাদনপদ্ধতির দক্ষতা (state of technology)

এরূপ আরেকটি সমীকরণকে Cob-Douglas-এর উৎপাদন অপেক্ষক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রবৃদ্ধি অনুধাবনে ব্যবহৃত Cobb-Douglas অপেক্ষক সূত্রটি হল নিম্নরূপ-

log(RGDP)= beta_{z} + beta z log(EMPI.OYHC z )+ beta z log(CAAP z )+e i

এখানে,

RGDP, = প্রকৃত জিডিপি (real gross domestic product)

EMPLOYHC, = কর্মে নিয়োজিত লোকের সংখ্যা (মানবসম্পদ সমন্বয়কৃত) (human capital adjusted number of employed persons )

প্রবৃদ্ধির শ্রেণিবিভাগ (Classification of growth):

কোনও একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উৎপাদনগত বিনিয়োগ অথবা উপলব্ধ সম্পদের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতির ক্ষেত্রগুলিকে বিশ্লেষণে প্রবৃদ্ধির সাধারণত দুটি বিশেষ রূপ পরিলক্ষিত হয়, যথা-

ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি (Balanced growth): সুষম বা ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন হল পরস্পর নির্ভরশীল বিভিন্ন শিল্প বা প্রতিষ্ঠানগুলির বৃহৎ বিনিয়োগকে এমনভাবে ভাগ করে দেওয়া, যার ফলে সংশ্লিষ্ট কোনো দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বা উদ্ভূত আয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে।

সাধারণত, স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে ভারসাম্যের যে নিম্নস্তরীয় ফাঁদগুলি রয়েছে, সেটিকে অতিক্রম করার একটি সংকটময় ন্যূনতম প্রচেষ্টা (Critical minimum effort)হল ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি। উন্নয়নের ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধিকে নার্কস, রজেন্সটাইন প্রমুখ অর্থনীতিবিদ জোরালো ধাক্কা (Big push)-র পরিণতিরূপে অভিহিত করেছেন। এই ধরনের ধাক্কা পরোক্ষভাবে দারিদ্রের দুষ্ট চক্রকে ভেঙে দিয়ে কোনো একটি দেশে ধারাবাহিকভাবে আর্থসামাজিক দৃঢ়তাও বজায় রাখে।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশগুলিতে অনুন্নত অর্থনীতি এবং অঞ্চলকেন্দ্রিক বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা প্রসঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বৃদ্ধির অধীনে উৎপাদনকৌশলের পছন্দের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন অধ্যাপক লুইস (Lewis)

এ প্রসঙ্গে Lewis বলেছেন- Balance growth means that all sectors of economy should grow simultaneously so as to keep a proper balance between industry and agriculture and between production for home consumption and production for export. অর্থাৎ, ভারসাম্য প্রবৃদ্ধির অর্থ হল সমস্ত অর্থনীতির ক্ষেত্রকে একযোগে এমনভাবে বৃদ্ধি করা যাতে শিল্প এবং কৃষির, উৎপাদনের অন্তর্দেশীয় ভোগ এবং উৎপাদনের রপ্তানির মধ্যে একটি সঠিক মাত্রা বজায় রাখা যায়। Lewis আরও বলেছেন, এখানে উৎপাদনশীল ক্ষেত্রগুলিতে যাতে বণ্টনগত কোনো অব্যবস্থা না দেখা দেয়, সেজন্য চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে সবসময় একটি ভারসাম্য নীতি বজায় রাখতে হবে

দুটি উল্লেখযোগ্য দিক (Two notable aspects): ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির আবার দুটি উল্লেখযোগ্য দিক (চাহিদা ও জোগানের নিরিখে) রয়েছে। বিষয়টিকে নিম্নলিখিত ধারণাচিত্রে উপস্থাপন করা হল।

এখানে চাহিদা ও জোগানের অবস্থাগত দুটি ক্ষেত্রেই যাবতীয় উৎপাদন বা বিনিয়োগের নিরিখে ভারসাম্যযুক্ত প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করেছে দেশ গুলিতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃত্তিরপথ উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই দাও যোগানের ভাজ্যতাকে অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। সেইজন্যে প্রয়োজন দ্রুত বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এবং বৃহদায়তন উৎপাদন কাঠামো।

ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধি (Unbalanced growth): ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি মতবাদে যেহেতু উন্নয়নের বাধাগুলি অতিক্রমের কোনও বিশেষ পরামর্শ দেয় না, সেই কারণে উন্নয়নের তাত্ত্বিক আলোচনায় ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধি নামক আরেকটি নতুন চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছে। তত্ত্বটির উদ্ভাবনায় যে সমস্ত অর্থনীতিবিদের ভূমিকা রয়েছে, তাঁদের মযে অন্যতম হলেন Hirschman, Rostow, Fleming, Singer প্রমুখ।

মূল বিষয় (The main thing): ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধির সমর্থকগণ স্বল্পোন্নত দেশগুলির বৃহদায়তন বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পরিপূরক কার্যাবলীর (complementary activities) গুরুত্বকে কখনই অস্বীকার করেন নি। তাঁরা মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলির সবচেয়ে বড়ো সমস্যাটি হল উপকরণের-বিশেষত মূলধনী দ্রব্যের অপ্রাচুর্যতা। এর ফলে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেও এই বাধাকে সবসময় অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। এপ্রসঙ্গে অধ্যাপক সিঙ্গার (H. Singer) বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে "জোর ধাক্কা" দেওয়ার বাস্তবে অনেক অসুবিধাও আছে। তাই, এই দেশগুলির উচিত সেখানকার অর্থনীতির কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে (কৃষি অথবা শিল্প) ইচ্ছাকৃতভাবেও সুপরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ঘটিয়ে উন্নয়নের গতিবেগকে অসম বা ভারসাম্যবিহীন প্রবৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া।

অন্যতম যুক্তি (One of the arguments): এই তত্ত্বের আরেকজন অন্যতম সমর্থক অধ্যাপক হ্রাসমান যুক্তি দেখিয়েছেন, ভারসাম্যহীন প্রবৃদ্ধিতে কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বিনিয়োগ কেন্দ্রীভূত করে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। কারণ, এখানে প্রাথমিক বিনিয়োগের পথ ধরেই নতুন বিনিয়োগের (প্রণোদিতভাবে) উন্নয়লো আরেকটি পথ সৃষ্টি হয়। এই ধরনের প্রণোদিত বিনিয়োগ একটি দেশের বিভিন্ন শিল্প ও উৎপাদনক্ষেত্রের মধ্যে প্রগার যোগসূত্র তৈরি করে প্রবৃদ্ধির দীর্ঘকালীন ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

ভারসাম্যহীনতার উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র (Significant areas of Unbalance): যে সমস্ত পরিস্যা ভারসাম্যহীনতাকেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়, সেগুলি হল- (i) সামাজিক মূলধন (Social capital) খানে যেমন-রাস্তাঘাট প্রস্তুত, সেতু নির্মাণে (ii) প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদনশীল কার্যকলাপে (directly productive activities), যেমন-শ্রমনিবেশ, পুঁজিগঠন, প্রভৃতি।

প্রবৃদ্ধির তাৎপর্য (Significance of growth):

কোনো একটি দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান এমনকি উন্নয়নের বেশকিছু বিষয়ের উপর প্রবৃদ্ধি তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে থাকে। তবে, প্রবৃদ্ধির অধিকাংশ প্রভাবগুলিই অর্থনীতিকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে, মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রটি উৎপাদনমূলক অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকার জন বেশকিছু সুবিধাও পাওয়া যায়। যেমন-

(1) অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির প্রবণতা বজায় থাকলে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক এবং পরিসেবামূলক উন্নয়নের পথ যথেষ্ট প্রশস্ত হয়।

(ii) যে কোনও দেশের বা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনমুখী সমস্ত কার্যকলাপের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে প্রবৃদ্ধিকে পরিমাপক- রূপে বিবেচনা করা হয়। এর দ্বারা, উৎপাদনের লাভ-লোকসানের ধারণাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

(iii) অনেক সময় প্রবৃদ্ধি অনুধাবন করে চাহিদা, জোগান এবং বণ্টনের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়।

(iv) প্রবৃদ্ধির স্থিতিশীল কাঠামো বজায় থাকলে পুঁজি বা মূলধন গঠনের দীর্ঘমেয়াদী ধারা অব্যাহত থাকে।

(v) প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা দেশে বিভিন্ন পরিসেবাগুলির সম্প্রসারণগত পথ সুনিশ্চিত করে।

(vi) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য আউটপুটগুলি দেশের উন্নয়ন কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদী এবং পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।

এছাড়াও, প্রবৃদ্ধির আরও বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেগুলিকে 6.9 নং ধারণাচিত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01