উন্নয়নের নির্দেশকের ধারণা (Concept of development indicator)
Indicator" শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে ল্যাটিন শব্দ "indicare' থেকে, যার অর্থ প্রকাশ করা (to disclose), নির্দেশ করা (point out), অথবা সর্বজনীনভাবে পরিচিত করানে (make publicity known)-কে বোঝায়। উন্নয়নের নির্দেশকগুলির প্রত্যেকটিই ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য বহন করে থাকে। সাধারণত উন্নয়নের এই নির্ধারকগুলি হঠাৎ করেই অনুমান করা হয়নি। বিভিন্ন আর্থসামাজিক এবং পরিবেশগত প্রেক্ষাপটে প্রথমে নির্ধারকগুলিকে প্রাপ্ত তথ্যের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করা হয়, পরে সেগুলিকে যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করে কয়েকটি তাৎপর্যভিত্তিক নির্ধারকগুলি স্থির করা হয়। সবশেষে, প্রত্যাশিত সূচকগুলিকে বিভিন্ন সরলতম সিদ্ধান্ত দ্বারা উপস্থাপন করা হয়। এখানে সমগ্র বিষয়টিকে 6.32 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
নির্দেশকসমূহের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Indicators):
উন্নয়নের মানদন্ডের সূচকগুলি সর্বদা একটি প্রবণতাকে চিহ্নিত করে, যার মাধ্যমে যেকোনো কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের মাত্রাগত গতিপ্রকৃতি বিবেচনা মারফত উন্নয়নহার উপলব্ধি করা যায়।
উন্নয়নের প্রতিটি নির্দেশক আর্থসামাজিক, মানবসংক্রান্ত এমনকি পরিবেশগত পরিস্থিতির পরিসংখ্যান বা তথ্যগুলির পরীক্ষা, গবেষণা বা বিশ্লেষণ দ্বারা স্থির করা হয়।
কোনও একটি দেশে উন্নয়নের নির্দেশকগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণগত মানদণ্ড বা সূচকের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন-অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক-GDP, সামাজিক উন্নয়নের সূচক-BI প্রভৃতি।
এ সময় এবং পরিস্থিতির নিরিখে উন্নয়নের নির্দিষ্ট মানদণ্ডগুলি বহুমুখীভাবে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ২ নির্দিষ্ট সূচকের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রবণতা মূল্যায়ন করে, প্রয়োজনে উন্নয়নের কৌশলতত ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
উন্নয়নের নির্দেশকগুলির সার্বিক মূল্যায়ন যেকোনও দেশের অগ্রগতির জন্য একাধিক বিকল্প পথ উন্মুক্ত করে।
উন্নয়নের অর্থনৈতিক নির্দেশকসমূহ (Economic indicators of Development
উন্নয়নের অর্থনৈতিক নির্দেশকটিকে সবচেয়ে সরলতম পরিমাপযোগ্য বিষয়রূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। এই ধরনের। নির্দেশকগুলিতে পরিসংখ্যাভিত্তিক নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে বিবেচনা করে সহজেই বলা যেতে পারে একটি দেশ আর্থিক দিক থেকে ঠিক কতটা উদ্ভত হয়েছে। এপ্রসঙ্গে Hagen (1967). Furtado (1974) Smith, Ricardo (19/8 Preston (1996), Bustelo (1999), Rist (2001), Veiga (2005) প্রমুখ বিশেষজ্ঞ এমনকি সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রসংঘের তরফে উন্নয়নের যে সমস্ত পরিপূরক অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
মোট অভ্যন্তরীণ বা দেশজ উৎপাদন (Gross Domestic Product-GDP): একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনও একটি দেশের সীমানার মধ্যে উৎপাদিত সমস্ত প্রকার বস্তুগত পণ্য ও পরিসেবার সমষ্টিগত আর্থিক বাজার মূল্যকে মোট অভ্যন্তরীণ (দেশজ) উৎপাদন বা GDP বলা হয়। এ প্রসঙ্গে David Begg বলেছেন- "Gross Domestic Product (GDP) measures the output produced by factors of production located in the domestic economy regardless of who owns these factors."
এটি মূলত দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক স্কোরবোর্ড হিসাবে কাজ করে থাকে। 1937 খ্রিস্টাব্দে 'National Bureau of Economic Research" প্রতিষ্ঠানের অন্যতম অর্থনীতিবিদ Simon Kuznets মার্কিন কংগ্রেসের কাছে GDP-এর ধারণাটিকে একটি প্রতিবেদন আকারে প্রথম উপস্থাপন করেছিলেন।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(1) সাধারণত GDP বার্ষিক ভিত্তিতে গণনা করা হলেও, প্রয়োজনে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতেও গণনা করা হয় (যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে)।
(i) GDP-কে একটি দেশের অর্থনীতির আকার এবং বৃদ্ধির হার অনুমান করতে ব্যবহৃত হয়।
(iii) প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিংবা আন্তর্জাতিক মুদ্রা (ডলার)-র প্রত্যাশিত পরিমাণের ভিত্তিতে GDP-র সমষ্টিগত ফল নির্ধারিত হয়।
(iv) একটি দেশের GDP গণনার ক্ষেত্রে সমস্ত ব্যক্তিগত এবং সরকারি খরচ, বিনিয়োগ, বেসরকারি উদ্ভাবনা, পরিশোধিত নির্মাণ ব্যয়গুলিকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
সাধারণত একটি দেশের GDP তৈরিতে উৎপাদিত মূল্যের সাথে রপ্তানি মূল্য যোগ করা হয় এবং আমদানি মূল্য বিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ- মূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা GDP (বাজার মূল্যে স্থল জাতীয় উৎপাদন বিদেশ থেকে অর্জিত নীট আয়)
স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা GDP খরচ বিনিয়োগ সরকারি ব্যয় নীট রপ্তানি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে GDP সূচক নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে গণনা করা হয়ে থাকে-
GDP=C+G+I+N
[এখানে, C = খরচ (Cost), G = সরকারি ব্যয় (Government spending); 1 = বিনিয়োগ (Invest) এবং N. = নীট রপ্তানি (Net export)]
GDP-তে অন্তর্ভুক্ত অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রকৃতি, দেশীয় ভোক্তা, উদ্বৃত্ত, ঘাটতি এমনকি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিশান্ত সংক্রান্ত একাধিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে একটি দেশের অর্থনৈতিক সমাকে বিচার করা কাম কতকগুলি রূপ পরিলক্ষিত হয়, যেগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পৃথক পৃথক দিক ম অবস্থাকে করা যায়।
করে থাকে, যেমন- Nominal GDP: এটি মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়।Nomi মুতাকাতি নির্ধারণ ছাড়াও অর্থনৈতিক সামঞ্জস্য বা প্রশার মাপার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়।
• Raul Grapla এটি দেশের জনসংখ্যার জনপ্রতি সো-র একটি পরিমাণ। বার আরা জনপ্রতি আলে পরিমাণ, গড় উৎপাদনশীলতা বা গড় জীবনযাত্রার মানকে সহজেই অনুমান করা যায়।। (Gross National Product-GNP): মিষ্টি কোটি কোটি আর্থিক সাহা দেশে এরা দেশের বাইরে কর্মরত সমস্ত নাগরিক যে পরিমাণ চুড়ান্ত পণ্য এবং পরিসেবার সৃষ্টি করে, তার সমন্টিলার দেশে এলোকে সবুল (GNI) জাতীয় উৎপাদন বলা হয়। তাছাড়া, অর্থনীতির এই GNP নির্বারকটি অভ্যন্তরীণ স বিসেলে অবসিত একটি দেশের ব্যবসার দ্বারা উৎপন্ন আউটপুটকেও পরিমাপ করে থাকে। এটি আসলে কোনও দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের এমন একটি সুবিধাজনক সূচক, যা সাধারণত ব্যক্তিগত খরচের সমষ্টিগত ফল, বাক্তিগত গার্হস্থ্য বিনিয়োগ, সরকারি ব্যায়, নীট রপ্তানি এবং বিদেশী বিনিয়োগ থেকে বাসিন্দাদের দ্বারা অর্জিত যেকোনো আয় নিয়ে গণনা করা হয়। 1991 খ্রিস্টাব্দ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র GNP-র জন্য GDP-কে তার অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রধান পরিমাপ হিসাবে প্রতিস্থাপিত করেছিল।
বিশেষত্ব (Speciality): •
(i) GNP-তে কোনও একটি দেশের উৎপাদন ভিত্তিক পণ্য ও পরিসেবাগত চূড়ান্ত আউটপুটকে বিবেচনা করা হয়।
(ii ) জনগোষ্ঠীর সার্বিক কল্যাণ তথা জীবনযাত্রার মান এবং আয় পরিমাপ করতে স্কুল জাতীয় উৎপন্নের (GNP) ধারণাটিকে ব্যবহার করা যায়।
(iii) দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি স্কুল জাতীয় উৎপাদন আরা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।
মার্কিন কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে যে পরিমাণ পণ্য ও পরিসেবার উৎপাদন করে থাকে, তা মার্কিন বাসিন্দাদের জন্য মুনাফা অর্জনের পরোক্ষ একটি পথ করে দেয়। কারণ, মার্কিন কর্পোরেশনগুলির দ্বার অর্জিত আয় তাদের অভ্যন্তরীণ অর্জিত আয়ের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
স্কুল বা মোট জাতীয় উৎপাদন মূলত দুইভাবে গণনা করা হয়ে থাকে, একটি বাজারের দামে এবং অপরটি হল উপাদান আয় অথবা ব্যয়ের মাধ্যমে। বাজার দামের হিসাব থেকে বলা যায়, কোনও দেশে নির্দিষ্ট একটি সময়ে সমষ্টিগত উৎপাদনকে বাজার-দাম দিয়ে গুণ করলে স্কুল জাতীয় উৎপাদন পাওয়া যায়। আবার, বাজার দামে মূল জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ কর বাদ দিলেও পাওয়া যায় উপাদান ব্যয়ভিত্তিক স্কুল জাতীয় উৎপাদন।
GDP-এর মতোই GNP গণনা করে মোট উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রত্যাশিত ফলাফল ইঙ্গিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, GDP এবং GNP-র মধ্যে পার্থক্য যত বেশি হবে, ততই দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, উৎপাদন বা আর্থিক ক্রিয়াকলাপে আরও বেশি পরিমাণ মানুষের নিযুক্তির বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে থাকে। তাছাড়া, এদের পার্থক্য কোনো একটি দেশে যত বেশি হবে, সেখানে আয় এবং বিনিয়োগমূলক কার্যকলাপের মাত্রা তত বেশি থাকবে।
বিষয়টিকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে হলে নিম্নলিখিত সূচকের সাহায্য নেওয়া হয়। যেমন-
GNPC+1+G+X+Z
এখানে, C= ভোগ (Consumption), I= বিনিয়োগ (Investment), G= সরকার (Government), X = নেট রপ্তানি এবং Z বিদেশী বিনিয়োগ থেকে দেশীয় বাসিন্দাদের দ্বারা অর্জিত নীট আয়। অন্যভাবে বলা যায়-
GNPGDP+FI
এখানে GIF সম্বল আভ্যন্তরীণ উৎপাদন, FI বিদেশ থেকে অর্জিত মোট দেশীয় আয়।
রমজাত উল্লেখ্য, GNP নির্ধারণে দেশের মধ্যে কোনও বিদেশী সংস্থা বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় UNI-এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, কিন্তু বিদেশে বা দেশের বাইরে সংশ্লিন্ট দেশের মালিকানায় পরিচালিত উৎপাদনের আর GNP-র অন্তর্ভুক্তি হবে।
•জাতীয় (Net National Product): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি দেশের নাগরিকদের হায়, বিদেশী এবং অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত সমস্ত পন্য এবং পরিসেবাগুলির আর্থিক(NT) services Gross National Product নীট জাতীয় উৎপাদন of NNP এই একটি duced during any groen period of (NP) is the total output aurotry NNP এমনই একটি মানদণ্ড, যা একটি নির্দিষ্ট বছবে দেশের প্রকৃর্ত আলিক বৃদ্ধি নির্ধারণের সুবৃর্তপূর্ণ মেট্রিকরূপে বিবেচিত হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একটি দেশের GNP এবং NNP-এর মধ্যে সম্পর্ক তার মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) এবং এর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (NDP)-এর মধ্যে সম্পর্কের অনুরূপ।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) ন্যূনতম উৎপাদন মান অব্যাহত রাখতে একটি জাতির বার্ষিক সাফল্যের হার অনুধাবনের উপায় হিসাবে NNP নির্ধারণ করা হয়।
(ii ) একটি দেশের অর্থনীতিতে GNP-র সাথে NNP বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়
(iii) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও দেশ কতটা সম্পদের ব্যবহার করতে সক্ষম হল তা পরিমাপ করে নীট জাতীয় উৎপাদন।
(iv) এটিকে সাধারণত বিভিন্ন দেশীয় মুদ্রায় প্রকাশ করা হয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডলার (USD), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)-এর সদস্য-দেশগুলিতে ইউরো (EURO)-তে প্রভৃতি।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method): সাধারণত কোনও একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়কার স্কুল জাতীয় উৎপাদন থেকে ক্ষয়ক্ষতি বা বিভিন্ন অবচয় বাদ দিলে নাঁট জাতীয় উৎপাদন পাওয়া যায়। তাই এর সূচক নির্ধারণের সূত্রটি হল-
NNPGNP-D
এখানে GNP = স্কুল জাতীয় উৎপাদন, D= অবচয় (Depreciation)]
[ যখন একটি দেশের নেট জাতীয় উৎপাদন (NNP) হ্রাস পায়, তখন সেখানকার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে মন্দা-প্রবণ বলে গণ্য করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশের শিল্পগুলি ক্রমশ অন্যত্র চলে যায়। সেই কারণে, নীট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, ব্যবসাগুলিকে আরও বেশি লাভজনক গড়ে তুলতে, বিক্রয়ের পথ সম্প্রসারিত করা হয়। এরফলে শিল্প বা ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হয়। কুজনেটস, মায়ার, বলডুইন প্রমুখ অর্থনীতিবিদ নীট জাতীয় উৎপাদন (NNP) বৃদ্ধিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মানব উন্নয়নের অন্যতম একটি সূচক হিসাবে মেনে নিয়েছেন।
তবে, কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নীট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি মানেই কিন্তু সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটা নয়। এ প্রসঙ্গ্যে তাঁদের কয়েকটি যুক্তি হল যদি দেশের আয় বণ্টন বৈষম্যমূলক ও অস্থায়ী হয়, কিংবা দেশের পরিসেবা বা পরিকাঠামোয় বা জাতীয় সম্পদ সৃষ্টিতে এটি সঠিকভাবে যদি ব্যবহৃত না হয়, তাহলে NNP কখনোই দেশের উন্নয়নের নির্ধারক হতে পারে না।
• মাথাপিছু আয় (Per Capita Income): একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের বা দেশের জনপ্রতি বা ব্যক্তিগত আয়ের পরিমাণ বোঝাতেই সাধারণত মাথাপিছু আয় নির্ধারকটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। Byrns & Stone-এর মতে- "Per Capita Income is a crude measure of economic wellbeing computed by dividing National Income by the population."
• বিশেষত্ব (Speciality):
(1) মাথাপিছু আয়ে দেশের প্রতিটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু, এমনকি নবজাতককেও জনসংখ্যা সদস্য হিসাবে গণনা করে।
একটি এলাকার জনসংখ্যার আর্থিক সামর্থ্য মূল্যায়নের একটি কার্যকর একক হল মাথাপিছু আয়।
(iii) সাধারণত প্রতিবছর মাথাপিছু আয়কে দেশীয় মুদ্রার ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method): অন R.ELucas মনে করেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার সমৃদ্ধিকে বুঝতে হলে, সেখানকারREY আয়কে অবশ্যই জানার চেস্টা করা দরকার। বেশিরভাগ উন্নত দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার জনসা সুমির স্থারের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণে সেখানকার জনসাধারণের মাথাপিছু আয়ও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এরদ্বারা সংশ্লিষ্ট দেশে মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়। "সাধারণত, কোনও একটি নির্দিষ্ট বছরে একটি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনগত আয়কে সেখানকার ওই সময়ের জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে, যে ভাগফল পাওয়া যায়, তাকেই মাথাপিছু আয় বলে। সুতরাং-
মাথাপিছু আয় নির্ণয় করা যাবে নিম্নোপ্ত সূত্রের সাহায্যে-
মাথাপিছু আয়ের সূত্র মোট জাতীয় আয় (Gross National Income) মোট জনসংখ্যা (Total Population)
কোনও একটি দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে নতুন কার বিনিয়োগ বা সম্পদের জোগান বেড়ে যায়। ফলে, উৎপাদনের সামগ্রিক উন্নতি ঘটে। তাছাড়া, মাথাপিছু আয়ের আরেকটি সুবিধা হল এটি কোনও এলাকার সম্পদ বা সম্পদের অভাব নির্ণয়েও সাহায্য করে।
অবশ্য, মাথাপিছু আয়ের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হল মুদ্রাস্ফীতি, আর বৈদমা দারিদ্র্য, সম্পদ বা সঞ্চয়ের জন্য অক্ষমতা প্রভৃতি। তাছাড়া, মাথাপিছু আয় যেহেতু একটি গড়ভিত্তিক ধারণা, সেই কারণে জাতীয় আয় বণ্টনের বিষয়টি এখানে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত থাকে।
• জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান (Physical Quality Life Index-PQLI): কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশে বার্ষিক ক্রয়ক্ষমতার সাপেক্ষে সেখানকার জনসাধারণ বা উপভোন্তারা তাদের জীবনযাত্রার জন্য বাজার থেকে সংগৃহীত দ্রব্য বা সেবাসমূহ থেকে যে পরিতৃপ্তি পেয়ে থাকে, তার মাত্রাগত নির্দেশক হল জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) এটি নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক শ্রেণি বা ভৌগোলিক এলাকায় উপলব্ধ সম্পদ, স্বাচ্ছন্দ, বস্তুগত পণ্য এবং পরিসেবাগত প্রয়োজনীয়তার স্তরসংক্রান্ত বিষয়গুলিকে নির্দেশ করে।
(ii) এই ধরনের নির্ধারকের সাহায্যে দুটি দেশের পারস্পরিক জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করা অত্যন্ত সহজ একটি কাজ।
(iii) এখানে জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান সর্বদা মানুষের জীবনধারা এবং তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method): কোনও একটি দেশে মানুষের দ্বারা উপার্জিত আয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ, পণ্য ও পরিসেবার মূল্য, সম্পদের প্রাপ্য মাত্রা এবং দরিদ্রতার মতো বেশ কিছু নির্ধারকের সাহায্যে অতি সহজেই জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান পরিমাপ করা যায়। কখনো কখনো এটি নির্ধারণে আয়ুষ্কাল, মুদ্রাস্ফীতির হারের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। এই নির্ধারক অনুযায়ী, যে সমস্ত দেশের জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান যত বেশি, সেই সমস্ত দেশ উন্নয়নের তত শীর্ষে রয়েছে। যেমন-USA UK, সুইডেন প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জীবনযাত্রার মানের একটি অন্যতম পরিমাপক হল মানব উন্নয়ন সূচক (HDI), যেটিকে 1990 খ্রিস্টাব্দ থেকে জাতিসংঘ দ্বারা স্থির করা হয়েছে। মূলত একটি দেশের উন্নয়নের স্তর পরিমাপ করতে গিয়ে জন্মের সময় আয়ু, প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার এবং মাথাপিছু GDP-এর সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনযাত্রার বাহ্যিক মান রূপে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
• উন্নয়নের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক নির্ধারক (A few more notable economic indicators for development):
(i) নীট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (Net Domestic product): এটি কোনও একটি দেশের নির্দিষ্ট বছরে অভ্যন্তরীণ মোট উৎপাদন এবং সমস্ত ধরনের অবচয়ের পার্থক্যগত আর্থিক সূচককে উপস্থাপন করে থাকে ।
উন্নয়নের সামাজিক নির্ধারকসমূহ (Social indicator of Development) :
সামাজিক কল্যাণের উপর কোনও একটি দেশের উন্নয়নের পূর্ণতা প্রাপ্তি নির্ভর করে। প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত একমাত্রিক প্রচেস্টা কখনোই দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণ করতে পারে না। তাই, দেশের নাগরিকদের কল্যাণের জন্য প্রাপ্য সম্পদের নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি ব্যক্তি, পরিবার, সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভিন্ন সমাজকল্যাণকামী নির্ধারকগুলিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উন্নয়নের সামাজিক নির্ধারকগুলি সাধারণত মানবীয় প্রেক্ষাপটেই সর্বদা বিবেচনাধীন হয়ে থাকে।
সামাজিক উপাদানগুলির সাপেক্ষে উন্নয়নকে শনাক্ত বা পরিসংখ্যানভিত্তিক মূল্যায়ন করতে American Academy of Arts and Sciences"-এর তত্ত্বাবধানে 1960-এর দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে সামাজিক সূচকগুলিকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তৎকালীন, সামাজিক সূচকগুলির উদ্ভবকে পশ্চিমী ঘরানার আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক কল্যাণকামী আন্দোলনের একটি সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। অবশ্য, এর আগে 1930 এবং 1940-এর দশকে আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক William F. Ogburn এবং তার সহযোগীদের সামাজিক পরিবর্তনের তত্ত্ব এবং পরিমাপের কাজটিকে যথেষ্ট সম্প্রসারিত করেছিলেন। পরবর্তীকালে, 1972 খ্রিস্টাব্দে "National Science Foundation-এর সহায়তায় ওয়াশিংটন, ডিসি-তে সামাজিক সূচকগুলির গবেষণাভিত্তিক "Social Science Research Council Center for Coordination of Research on Social Indicators প্রয়োগযোগ্য রূপ পায়।
উন্নয়নের সামাজিক নির্ধারক সম্পর্কে 1988 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ Ferriss উল্লেখ করেছেন
indicators are statistical time series that are used to monitor the social system, helping to Me changes and to guide intervention to alter the course of social change.
সাধারণত উন্নয়নের সামাজিক সূচক সেগুলিকেই বলা হয়ে থাকে, যেগুলিকে মানবকল্যাণের নিরিখে প্রত্যক্ষরাত এবং বিশ্লেষণ করা যায়।
পরিমাপ এবং কি International Economics Department" উন্নয়নের সামাজিক নির্ধারকগুলির মৃত নির্ধারক বা প্রধান তথ্য সংরক্ষণকারী।
অপারকান্ত উল্লেখ্য, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলির উন্নতির পাশাপাশি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্যের গুণমানগত মাপকাঠীর প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশে কতটা উন্নতি করছে, সেটিকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সামাজিক সূচকগুলি ব্যবহার কর হয়। এখানে উন্নয়নের বেশ কয়েকটি সামাজিক নির্ধারকগুলির সম্যক পরিচয় দেওয়া হল।
• দরিদ্রতার প্রবণতা (The tendency to poverty): অর্থনৈতিক সংকট এমনকি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি বিশেষ দিক হল দারিদ্রের প্রবণতা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতে, "দরিদ্রতা হল মানুষের ন্যূনতম জীবনযাত্রার মানে উন্নীত হওয়ার অক্ষমতা (Poverty means the inability of the people to attain a minimum standard f living)"। কাজেই, দারিদ্রের মধ্যে যে সমস্ত মানুষ বসবাস করে, তাদের বেঁচে থাকার দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদাগুলির সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে না।
আসলে, দরিদ্র শ্রেণিতে থাকার কারণে অর্থ, সম্পদ, শিক্ষা, পুষ্টি, অথবা বহুমাত্রিক সামাজিক পরিসেবাগুলি থেরে বঞ্ছিত মানুষেরা জীবনযাত্রার উন্নতির ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিকূল প্রভাব ফেলে থাকে।
বিশেষত্ব (Speciality): •
(১) দারিদ্র্য প্রবণতাকে দেশের নির্দিষ্ট জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে আপেক্ষিক মান ও পরম মান দ্বারা পরিমাপ কর যায়।
(ii) কোনো একজন ব্যক্তির আয়, ব্যয় বা অর্জিত সম্পদ এই সীমার নিচে নেমে গেলে তিনি দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে বলে মনে করা হয়।
(ii) দারিদ্র্য প্রবণতা বিশ্লেষণ সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথ বদলে দেয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
দারিদ্র পরিমাপক আন্তর্জাতিক মান হল চরম দারিদ্ররেখা, যেটিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে 2011 সালের পণ্য ক্রয়ক্ষমতার সমতা (PPP) ভিত্তিক জন প্রতি দিনে 1.90 ডলার প্রমাণ মুদ্রারূপে স্থিরীকৃত হয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলিতে উচ্চতর মৌলিক চাহিদার খরচ অনুযায়ী 3.20 এবং 5.50 ডলারের ধারণাটিও সমানভাবে স্বীকৃত। অবশ্য আমাদের দেশে গ্রাম এবং শহরাঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষেরা যাঁরা মাথাপিছু যথাক্রমে অন্তত 2,400 ও 2,150 কিলো ক্যালরি খাদ্য সংগ্রহ করতেও অসামর্থ্য তাদেরকে দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংগঠন (The Organisation for Economic Co-operation and Development) বা OECD দারিদ্র পরিমাপের ক্ষেত্রে যে সূচকটি ব্যবহার করেছে, তা হল-
HPI = (P +P+P+P
এখানে, HPI = মানব দারিদ্র্য সূচক (Human Poverty Index),
P₁ = জন্মের সময় থেকে 60 বছর বয়স পর্যন্ত বেঁাঁচে না থাকার সম্ভাবনা (গুণ 100)
P₁ = প্রাপ্তবয়স্কদের কার্যকর সাক্ষরতার অভাব,
৪- কারিজমীমার নীড়ে অথ মানকারী রামগোষ্ঠী (মাঝারি পরিবারের নিষ্পত্তিযোগ্য আয়ের 50%) দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্বের হার (স্থায়ী 12 মাস বা তার বেশ)
• জিঞ্জার দুয়োগ বাড়তি সunities): কোনও একসময় একটি দেশের উন্নয়নের সামাজিক পূর্বশর্ত যা বর্তমানে এই বন্ধমূল ধারণাটি সানার মানুষের উৎপাদনশীল দক্ষতাকেই অর্ধেক্য সুরায়নের সামাজি কাহত। কিন্তু তত বেশি কম তার পারি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। কারণ, এখন, যে দেশে যত বোরেকপূর্ণ বলে মনে উমত। সাধারণত, আন অধিগত করে মানবসম্পদের প্রকৃত বেশি সংখ্যক শিক্ষিতকোনও বিকল্প নেই।
• বিশেষত্ব (Speciality):
দেশের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিসরে মৌলিক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে শিক্ষাই প্রধান গুরু দায়িত্ব পালন করে।
শিক্ষাকেন্দ্রিক জ্ঞান অধিগত করার সুযোগটি শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাক্ষরতার হার এবং কতজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ
শিক্ষা গ্রহণ করছে তার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এখানে মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা খাতে প্রতিটি দেশের সর্বোচ্চ বরাদ্দের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিবেচনার মধ্যে রাখা হয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method): আধুনিক মানব উন্নয়নের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডরূপে শিক্ষা সূচকটিকে (Education Index) মূলত দু'-ভাবে
রূপস্থাপন করা যায়, যথা-
• শিক্ষার মাত্রাগত সূচক = শিক্ষার প্রকৃত মান শিক্ষার সর্বোচ্চ মান EYS MYS + 18 15 শিক্ষার সর্বোচ্চ মান শিক্ষার সর্বনিম্ন মান
[এখানে EI= শিক্ষা সূচক (Education Index)
EYS = স্কুলে পড়ার প্রত্যাশিত বছর (Expected Years of Schooling), অর্থাৎ, একজন শিক্ষার্থী কত বছর স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে (18 বছর পর্যন্ত) তার সময়কাল।
MYS = স্কুলে পড়ার বছর (Mean Years of Schooling) অর্থাৎ 25 বছরের বেশি বয়সের একজন শিক্ষার্থী প্রকৃতপক্ষে কত বছর শিক্ষা পেয়েছে তার সময়কাল।]
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনও একটি দেশের শিক্ষা খাতে মোট জাতীয় আয়ের 6 শতাংশ বা বাজেটের 20 শতাংশ বরাদ্দকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। তবে, মানবসম্পদের নিরিখে বিশ্বের কোনও কোনও দেশ উন্নয়নের বিষয়ে 'শিক্ষা ও প্রযুক্তি' নামক বিশেষ মানদন্ডটিকে ব্যবহার করে। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি হওয়ায় তাদের উন্নয়নের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, প্রতি বছর ফিলিপাইনের প্রায় 15 লাখ প্রবাসী শিক্ষিত মানুষ গড়ে প্রায় 37 বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের দেশের উন্নয়নকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
• কর্মনিশ্চয়তা (Job assurance): যদিও কর্মনিশ্চয়তার বিষয়টি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সাথে সংযুক্ত, কিন্তু তা সত্ত্বেও সামাজিক কল্যাণে কর্মসংস্থান বা বেকারত্বের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কারণ, যে সমস্ত দেশে কর্মসংস্থানের হার অত্যন্ত বেশি, সেখানে খুব স্বাভাবিকভাবেই সুনিশ্চিত কর্মের সুযোগ বেকারত্বের মাত্রা কমিয়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে সহায়ক হয়ে ওঠে।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(1) কর্মনিশ্চয়তা সমাজে মানব মূলধন গঠনের উৎকর্ষতা জোগায়।
কর্মানসিক রোভারে মানুষের আর সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, খাদ্য সংলবান, বিনোদন প্রস্বতিতে সার্বজনীন স্বার্থে অন্তর্ভুক্ত করে। নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method)নির্ধারণ পরিমাপ নিশ্চয়তার বিষয়টিকে উন্নয়নের সাপেক্ষে বিবেচ-- এই দুটি বিষয়কেই তার কর্মপাশা হার জলের একটি বোমা এর বেকারত্বের হার (Unemployment rate)
কর্মসংস্থান হার (Employment rate):
সাধারণত দেশের মোট জনসংখ্যার নিরিখে ইউনিট প্রতি কর্মে নিযুক্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগত মারাকেই কর্মসমোন সাধারণত দেশের মেনির ক্ষেত্রে সর্বসম্মতভাবে 15-59 বছরের বয়াগোষ্ঠীর সারনীয়দের মন্তর্ভুত্ব করা হয়ে থাকে। হার বলা হয়। নেমনা হার সাধারণত একটি দেশের জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। তবে, এক্ষেত্রে কাজের
অবস্থা, উপার্জনের শক্তি বা কাজের সময়কে বিবেচনা করা হয় না।
• কর্ম সংস্থানের হার নির্ণায়ক সূত্রটি হল-
()×100 E
[ এখানে, কর্মসংস্থান হার (employment rate)
E= সক্রিয়ভাবে কর্মে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা,
LFa কর্মে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক 15-59 বছর বয়সী নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা।।
• বেকারত্বের হার (Unemployment rate):
বেকারত্বের হার হল কোনও একটি দেশের জনগোষ্ঠীর সেই অনুপাত, যারা বর্তমানে কোনও ধরনের উৎপাদনমূধী কর্মে নিযুক্ত নয়, অথবা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। যখন একটি দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় থাকে এবং চাকরির অভাব দেখা যায়, তখন বেকারত্বের হার ক্রমশ বেড়ে গিয়ে উন্নয়নে প্রতিকূল প্রভাব সৃষ্টি করে।
উন্নয়নের সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের মতো বেকারত্বেরও একটি সর্বজনীন সূত্র রয়েছে। যেমন-
u (LF100 U
| এখানে, এ বেকারত্বের হার (unemployment rate),
- কর্মহীন মানুষ বা শ্রমিকের সংখ্যা
LF = মোট শ্রমশক্তি।।
• স্বাস্থ্য ও পুষ্টি (Health and Nutrition): স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি-জনসংখ্যার এই উপাদান দুটি একট সমাজের বিকাশ তথা উন্নয়ন অর্জনে অত্যন্ত অপরিহার্য। যদিও সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি ঘটেছে, তবুও যে সমস্ত দেশ এই সুবিধাগুলিতে পিছিয়ে রয়েছে, সেখানকার সাবিক উন্নয়ন যথেষ্ট কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে, তা বলা যায় না। কারণ, এই দুটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা মানেই মানবসম্পদ এবং সক্ষমতার অবনমনের পাশাপাশি নাগরিক জীবনকে বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া, যা উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। তাই স্বাস্থ্য এবং সুষম পুষ্টিকে একটি উন্নত সমাজ গঠনের মূলধন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
• স্বাস্থ্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization)-এর মতে, স্বাস্থ্য হল শুধুমাত্র রোগের অনুপস্থিতি নয় বরং একজন ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত সম্পূর্ণ মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার অবস্থা।
• পুষ্টি: শরীরকে সুস্থ সবল এবং সতেজ রাখতে যে নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন আহারের কথা বলা হয়ে থাকে, তাই হল পুষ্টি। আর, যথার্থ পুষ্টির অভাবকে রোগগ্রস্ততার প্রতীক মানা হয়।
• বিশেষত্ব (Speciality):
একটি দেশে স্বাস্থ্য, ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমন্বয়ী কাঙ্ক্ষিত স্তর সেখানকার উন্নয়নের সাথে গভীর সম্পর্কযুক্ত।
কোনো বান্তির আস্যের অবস্থার একটি ভালো পরিমাপক হল পুষ্টি যা প্রাথমিকভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ভালো পুষ্টির অবস্থা তখনই উপলপি করা যায় যখন পরিবার এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সুস্বাস্থ্য এবং খাদ্য-সুরক্ষা প্রজায় থাকে।
জনসংখ্যার পুষ্টির সুস্থতা একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের কর্মক্ষমতার প্রতিফলন: এবং অনেকাংশে তা জাতীয় সম্পদ বরাদ্দের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
• নির্ধারণ ও পরিমন্ডি কেজি (Determination and measurement method):
মুখস্যে এবং যথার্থ পুষ্টি কোনও একজন ব্যক্তিকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলে কর্মক্ষমতার শ্রীংকি খায়। ফলে, দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা ক্রমশ প্রগতির দিকে দ্রুত এগিয়ে বারে আপাত মীরসারীভাবে দেশের বৃদ্ধি ও বিকাশকে বাধ্যগ্রস্ত করতে পারে। মানব স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সুইটিকে তাই সর্বাত্মকভাবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে 1992 খ্রিস্টাব্দে রোমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্পর্কিত সম্মেলন (ICN) যারা পুষ্টির জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, যেটি ছিল সমাজে ডিমনেকির দায়িন্ত্রন ICN সুপারিশ করেছে যে পুষ্টি সংক্রান্ত নির্ধারক সব দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কৌশলগুলির কেরেলাকাবে।
বর্তমানে, ভারতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নীতি আয়োগ "Health care index'-এর অবতারণা করেছে, যেখানে জামা পরিচর্যা, স্বাস্থ্যসেবায় মানবিক পেশাদারিত্ব, উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম, দক্ষ কর্মী, অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, উন্নত চকিৎসার দ্বারা স্বল্প খরচে আরও মানসম্মত করে তোলার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।
• জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল (Population growth and life expectancy): পৃথিবীতে মানুষের জন্ম এবং বৃদ্ধি-এই দুটি ঘটনাই অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু জনতাত্ত্বিক দিক থেকে এই দুটি বিষয়কেই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অথবা মানব সংক্রান্ত নির্ধারক বলে বিবেচনা করা হয়।
এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিকে জন্মহার এবং প্রত্যাশিত আয়ু সূচকের পরিমাপ দ্বারা উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করা হয়।
• জন্মহার: একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা (প্রতি 1,000 জন প্রজননক্ষম নারী) পিছু জীবিত জন্মের বার্ষিক সংখ্যা হিসাবে গণনা করা হয়।
• প্রত্যাশিত আয়ুসূচক: জন্মের পরবর্তী দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের সাপেক্ষে প্রত্যাশিত আয়ু সূচকটিকে বিবেচনা করা হয়।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) জন্মহার সংখ্যাটি সাধারণত নতুন জন্মের পরবর্তী সময়কালীন একটি সর্বজনীন সামাজিক নিবন্ধন ব্যবস্থা।
(ii) একটি আদমশুমারি থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান দ্বারা জন্মহার এবং প্রত্যাশিত আয়ু সূচককে গণনা করা হয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
একটি দেশের প্রাপ্ত সম্পদের নিরিখে জন্মহার যখন অধিক পরিমাণে বেড়ে যায়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আর্থ-সামাজিক চাপ বাড়িয়ে তুলে, সেখানকার উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে, একটি দেশের প্রত্যাশিত আয়ু সূচক কম হলেও সেখানে পুষ্টি, নিরাপত্তা, বিভিন্ন নাগরিক পরিসেবায় যথেষ্ট অসাম্য ধরা পড়ে, যা পরোক্ষভাবে উন্নয়নকে প্রভাবিত করে থাকে।
জন্মহার এবং প্রত্যাশিত আয়ু সূচককে নিম্নলিখিত দুটি সূত্রে নির্ণয় করা হয়, যেমন-
বিশোরে (প্রতি দিক থেকে হতে পারে, যেমন-পেশাগত লিঙ্গা বৈষম্য, মজুরিগত লিঙ্গ বৈষম্য শিল্প সংক্রান্ত লিঙ্গ বৈষম্য, সক্ষমতাভিত্তিক লিঙ্গ বৈষম্য প্রভৃতি। আট) লিশা বৈষম্য হল প্রতিটি সমাজে বসবাসকারী নারী বা মেয়েদের স্বাধীনতার জন্য একটি নেতিবাচক পরিলছি,
লিঙ্গ বৈষম্য সমাজ, পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
বিশ্য বৈষম্য মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো একটি বাধা। কারণ, আমরা জানি নারীরাই প্রতিটি সমাজের অন্যতম একটি চালিকা শক্তি। কিন্তু, সমাজে মেয়েরা যখন লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয় তখন আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ভাল অন্যগ্রহণ বা প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। নারীদের এই ধরনের কোণঠাসা পরিস্থিতি সার্বিক উন্নয়নের পথে বর সৃষ্টি করে থাকে। বর্তমানে অর্থনীতির উপার্জনগত ক্ষেত্রে এই ধরনের বৈষম্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট। OECD, AAUM এবং US Department of Labour তাদের একাধিক গবেষণায় দেখিয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ পশ্চিমী দেশগুলিতে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা 5-10% অধিক মজুরি পায়। কাজেই, এই ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যভিত্তিক দেশগুলি উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত সীমা এখনও অর্জন করতে পারেনি।
রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়নমূলক কর্মসূচী (UNDP)-র আওতায় প্রতিবছর লিঙ্গ বৈষম্যের সূচক (Gender Inequality Index) প্রকাশ করা হয়। এখানে, প্রথমে পুরুষ-নারী এবং নারী-পুরুষের পৃথক পরিমাত্রা স্থির করা হয়। পরে, মাতৃত্বকালীন মৃত্যু, বয়ঃসন্ধিকালীন জন্মহার, সংসদীয় ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ, তম বাজারে অংশগ্রহণের হার প্রভৃতিকে পর্যায়ক্রমে প্রাধান্য দিয়ে গুণোত্তর গড়, গুণোত্তর মধ্যমা এবং বিবর্ত যৌগিক গড়ের পরিসংখ্যান ব্যবহার করে GII নির্ধারণ করা হয়। যে সমস্ত দেশে GII-এর মূল্য যত বেশি হবে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তত বেশি হবে এবং একইভাবে সেখানে মানব উন্নয়নের সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম থাকবে। | এ বিষয়ে মানব উন্নয়ন অধ্যায়ে আরও বিশদে আলোচনা করা হয়েছে।]
• নির্ভরশীল জনসংখ্যা (Dependent population): সাধারণত একটি দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার সাযে কোনও রূপে জড়িত নয়, এরকম জনসংখ্যা যারা সর্বদা অন্যান্য কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সহায়তায় বেঁচে থাকে তাদেরকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বলা হয়। সাধারণত উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশেই এই ধরনের জনসংখ্যা উন্নয়নের আরেকট গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নির্ধারকরূপে বিবেচিত হয়।
বিশেষত্ব (Speciality): •
(1) কোনো অঞ্চল বা দেশের 0-14 এবং 60 বছরের ঊর্ধ্বে থাকা প্রায় সমস্ত জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল জনসংখ্যার মধ্যে পড়ে।
(2) নির্ভরশীল জনসংখ্যা দেশের উৎপাদন, ব্যয়, বিনিয়োগ, সামাজিক সুস্থতা প্রভৃতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
একটি দেশে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যত বেশি হবে, সেখানকার উন্নয়নের হারও যথেষ্ট মন্থর হবে। কারণ, সাধারণত, অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং অবসরপ্রাপ্তরা কোনোভাবেই সরাসরি উৎপাদনমূলক কাজের সাথে যুক্ত নয়। তাছাড়া, এদের দ্বারা সরকারি কর বাবদ আয় যেমন কম, তেমনই শিশু-বৃদ্ধ সকলের জন্যই বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ এবং বেশি সুবিধা প্রদানের জন্য রাষ্ট্র সর্বদা প্রতিশ্রুতিবন্ধ। এর ফলে, জাতীয় আয়ের একটা বড়ো অংশ এই সমস্ত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা, শিক্ষা বা বিভিন্ন সরকারি ভাতা প্রদানে বিনষ্ট হয়ে গিয়ে দেশের অর্থনীতির উপর চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।
উন্নয়ন বিবেচনায় সামগ্রিক নির্ভরশীলতার সূচক (Total dependency ratio)-টি হল-
সামাজিক সুরক্ষা (Social security): প্রতিনিয়ত মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে মানিয়ে নিতে আর্থসামাজিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে লড়াই করে যেতে হয়। সেই কারণে মারাকে আমি মোনায়িক সুরক্ষার অন্যতম দাবিদার। মোটকথা, সামর্থ্যের বাইরে থাকা অসহায়, অসুস্থ, সেই কারণে মানুষ মাত্রেই সামাজিক করে তুলতে গৃহীত সমস্ত ধরনের রক্ষণশীল ব্যবস্থাই। হল সামাজিক নিরাপত্তা। এ প্রসঙ্গো, উইলিয়াম বিভারিজ উল্লেখ করেছেন, সামাজিক সুরক্ষার মূল কথাই হল "ব্যক্তি যতক্ষণ কর্মক্ষম থাকবে, ততক্ষণ তাকে কাজ দেওয়া এবং যখন সে কাজ করতে পারবে না, তখন তাঁর আয়ের ব্যবস্থা করা।"
শল্পবিপ্লবের পরবর্তী যুগে সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টির উদ্রেক ঘটলেও, বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকের এরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বাধিক স্বীকৃতি পায়।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি হল রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি মানবিক ব্যবস্থাপনা। বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
(ii) সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে আর্থিক-সামাজিক এবং রাজনৈতিক নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
• সাধারণত, যে সমস্ত দেশের সামাজিক নিরাপত্তার পরিসরটি যথেষ্ট সম্প্রসারিত সেখানে সামাজিক সম্পর্ক, মানসিক থিতি, ন্যায়বিচার, সামাজিক সচলতা বৃদ্ধি করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে শামিল হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরাসরি সামাজিক নিরাপত্তার সেরকম কোনও সূচক না থাকলেও, জীবনবীমা, দুর্যোগ বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শিশু কল্যাণ ও নারী কল্যাণমূলক কাজে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপগুলিকে বিবেচনা করে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
■ উন্নয়নের আরও কয়েকটি সামাজিক নির্ধারক
(i) সামাজিক অধিকার ও সামাজিক সাম্যতা (Civil Rights and social equality): এটি নারী এবং পুরুষ নির্বিশেষে, মতামত প্রকাশের বা বাক্ স্বাধীনতার অধিকার, ভোটাধিকার প্রভৃতির স্বীকৃতি দিয়ে সমানাধিকার তথা সমাজে সাম্যের পরিবেশ গড়ে তোলে।
(ii) বাসস্থান (Habitat): এটি সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের চিরন্তন ঐতিহ্যের এক স্থায়ী প্রতীক, যা মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একত্রীভূত করে উন্নয়নের সমষ্টিগত ধারণায় প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
(iii) সাংস্কৃতিক কাঠামো (Social structure): এটি সুস্থ এবং বুচিশীল বা মার্জিত পরিবেশ গড়ে তুলে সামাজিক উন্নয়নে শামিল হয়।
(iv) জীবনের উৎকর্ষতা (The excellence of life): এটি প্রতিটি মানুষকে তাদের প্রাপ্য সমস্ত ধরনের উপকরণ প্রদান করে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছে দেয়।
■ উন্নয়ন প্রসঙ্গে মানব জীবনের উৎকর্ষতার আরও বেশকিছু বিষয়কে নির্ধারকরূপে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।
উন্নয়নের পরিবেশগত নির্দেশক (Environmental Indicator of Development )
করমানে, উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন গাণিতিক পরিসংখ্যান বা হিসেবনিকেশগুলি পরিবেশগত লাভ-ক্ষতির সাথে মিশে একট্রিক হয়ে গেছে। ভিদ্ভিদ ও আমরা কেমal"-রূপী মাটি, জল, বিভিন্ন ধাতব খনিজ সম্পতির সাথে মিশে প্রভাবিক গ্যাস, বায়ু, প্রাণীকুল এসব কিছুকেই যেমন পণ্যভিত্তিক-বাজারের আওতায় আনার বহুল প্রচেষ্টা মরিকভাবে বাস্তবায়ন ঘটেছে, একইভাবে সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলিকে টিকিয়ে রাখার স্থিতিশীল প্রচেস্টার বাতাবরণরূপে সরবেশগত মাপকাঠি নির্ধারণ সমানভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। এরফলে, পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই বর্তমানে পরিবেশ ও উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্ধারক স্থিরীকৃত রোবট প্রসঙ্গাত উল্লেখ্য, 1972 খ্রিস্টাব্দের স্টকহোম সম্মেলন থেকেই উন্নয়ন কেন্দ্রিক একাধিক পরিবেশগত মাপকাঠি নির্বাচন পৃথিবীর উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির একটি দৃঢ় পদক্ষেপ হয়ে ওঠে। 1983 খ্রিস্টাব্দে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কর্তৃক পরিবেশ ও উন্নয়ন কমিশন (Environment and Development Commission) গঠন এবং 1987 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী পরিবেশগত সমস্যা নির্ধারণ বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদনগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে নানাভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তৎকালীন, বিশ্বায়ন উদারনীতির "সস্তা শ্রম এবং বেলাগাম দূষণ” নীতিতে রাশ টেনে উন্নয়নের গতিশীলতা বজায় রাখতে OECD (Organisation for Economic Co-operation and Development) যথেষ্ট রৎপরিকর হয়ে ওঠে।
সাধারণত উন্নয়নের পরিবেশগত পরিসরে যে সকল বিষয়গুলিকে বিবেচনা করা হয়, তার কয়েকটি হল-
• জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা (Dimension of Climate change): পৃথিবীতে জীবাশ্ম জ্বালানীকেন্দ্রিক শিয় অর্থনীতি কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতির মাত্রা বৃদ্ধি ঘটিয়ে বায়ুমণ্ডলে এমন এক পরিবর্তন এনেছে, যার চরম পরিণতিস্বরূপ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু তার স্বাভাবিক মাত্রাকে অতিক্রম করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই অভিঘাত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বিভিন্ন দেশের উন্নয়নকে একটি বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেই কারণে, উন্নয়নের পরিবেশগত প্রধান নির্ধারকটিকে জলবায়ু পরিবর্তন তথা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকেন্দ্রিক বিষয়গুলির দ্বারা বিবেচনা করা হয়।
• বিশেষত্ব (Speciality)
(1) গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনাটি হল মানুষের বিভিন্ন অবিবেচনাপ্রসূত কাজকর্ম বিশেষত, অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহারের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।
(2) জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্ত ঘটনাগুলিই বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কৃত্রিম পরিস্থিতিগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।
(3) জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে উন্নয়নের বেশকিছু অর্থনৈতিক স্তম্ভ (যথা-কৃষি, শিল্প, পর্যটন প্রভৃতি) গড়ে উঠলেও, এরাই আবার জলবায়ু পরিবর্তনের পথকে প্রশস্ত করে তোলে।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method) :
প্রায় সমস্ত পরিবেশবিদ সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলা বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা, মাটির লবণাক্ততার মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগগুলিকে মানুষের উন্নয়নকারী উচ্চাকাঙ্ক্ষার বইঃপ্রকাশরূপে বিবেচনা করে, বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস (GHG) নির্গমনের মাত্রা হ্রাস ঘটাতে একাধিক মত্রাগত বিধিকে মান্যতা দিয়েছেন।
NOAA (National Oceanic and Atmospheric Administration) কোষে GHG নিগমনের তিনটি উৎদগাত কাঠামো চিহ্নিত করেছে, যথাবে (১) প্রধান শিয়কেন্দ্রিক প্রায়াও নিদিন ভেতরে কেন্দ্রগুলি থেকে পরোক্ত নির্গমন এবং (১) অন্যানা পরোক্ত নির্গমন (যেমন-পণ্য বা উপল (১) তাপবিদার সঠিক তথ্য পেতে, গবেষকরা 1750 খ্রিস্টাব্দে নিঝনিয়াচাবে শাননা করেছেনমার পর্যন্ত Annual Greenhouse Gass Index থেকে পাওয়া প্রতিটি মানগুলিকে সর্বাত্মকভাবে গণনা করেছেন।
Greenhouse Go, পরিবেশগত উন্নয়নে GHG নিগমন সংক্রান্ত আরও কয়েকটি নিয়ামাতা পদক্ষেপ হস NIH যারা সিন্বরীকৃত একটি বার্ষিক সাসটেইনেবিলিটি ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান (SII) প্রকাশ, নির্গমিত গ্রিনহাউস গ্যাসের ধনত্ব নির্ধারণে যথাযথ তথ্য ব্যবহার, Global Mean Temperature Index निर्मान, Energy Intensity-g ভারসাম্যে উপস্থাপন, সঠিক উপায়ে Carbon Capture ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।
• বায়ু গুণমান সূচক (Air Quality Index)উন্নয়নের পরিবেশগত নির্দেশকের আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান হল বায়ুর নির্দিষ্ট গুণমান বিবেচনা করা। সাধারণত, বাতাসের গুণমান নির্ভর করে কোনও এলাকার বাতাসের মধে থাকা বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, সূক্ষ্ম বস্তুকণা কিংবা জলীয় কণার স্বাভাবিকত্বের অনুপাতের ওপর। বর্তমানে শিল্পকর্ম, দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্মের প্রভাব, এমনকি মানুষের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন স্বতঃস্ফূর্ত দূষণের পরিস্থিতি বায়ুর গুণমান সূচকটির প্রকাশকে অনিবার্য করে তুলেছে।
• বিশেষত্ব (Speciality):
শিল্প, যানবাহন, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নগরায়ণ প্রভৃতি বায়ুর গুণমানের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
দিনের অথবা বাৎসরিক ঋতুকালীন বিভিন্ন সময় অনুসারে বায়ুর গুণমানের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি অনুসারে (Determination and measurement method)
কোনও একটি স্থানের বাতাস কতটা দুষিত বা কতটা দুষিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তার সঠিক পূর্বাভাস প্রদানের জন্য সরকারি সংস্থাগুলি বিভিন্ন ওয়েবসাইট মারফৎ জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বায়ুর গুণমান সূচক বা AQI (Air Quality Index) প্রকাশ করে থাকে।
EPA নির্দেশিত "Clean Air Act' অনুযায়ী AQI-এর ক্ষেত্রে যে পাঁচটি দূষকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি হল- কার্বন ডাইঅক্সাইড, ওজোন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই AQI-কে 0 থেকে 500 পর্যন্ত মাপকাঠিতে প্রকাশ করা হয়। এই সূচকের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত 50 বা তার নিচের AQI মান বাতাসের সবচেয়ে ভালো গুণমানকে এবং 300-এর বেশি AQI মান সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। এখানে জনস্বাস্থ্যের সাপেক্ষে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত ছয়টি বিশেষ মাত্রা সম্পন্ন AQI উল্লেখ করা হল।
• বিশেষত্ব (Speciality):
।।। বনভূমির পরিমাণ বিবেচনার ক্ষেত্রে একটি অঞ্চলে উদ্ভিদের বণ্টন ও বিস্তৃতিগত মাত্রা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়।
উদ্ভিদ পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা না করে ভূমিভাগকে উদ্ভিদহীন করে তোলার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া হল অরণ্য বিনাশ।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
বস্তুতান্ত্রিক মূল্য নির্ধারণ, বহুপাক্ষিক পরিবেশ নীতি, জলবায়ুগত অভিঘাত, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক আয় বৃদ্ধি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অরণ্য বিনাশের সুনিশ্চিত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, যে সমস্ত দেশে বনজ সম্পদ বিনষ্টেন্টর হায় যত বেশি, সেখানে সার্বিক উন্নয়নের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লক্ষ্যণীয়।
বিখ্যাত ইংরেজ পরিবেশবিদ নর্মান মেয়ারসের মতে, পৃথিবীতে মোট অরণ্য উচ্ছেদ বা বিনাশের 54% "Slash and burn' পদ্ধতিতে বনাঞ্চল কেটে ও পুড়িয়ে চাষের জন্য, 22% তৈলবীজ প্রদানকারী (বিশেষত পাম গাছ) উদ্ভিদের চাষজনিত কারণে, 19% ব্যাপক মাত্রায় ভারী কাঠ কাটার জন্য এবং 5% বিভিন্ন গবাদি পশু লালনপালনের ঢাল বিনষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নয়নের পরিবেশগত মাত্রাটিকে স্থিতিশীল রাখতে একটি দেশে 25-30% গনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বনভূমির বিপুল পরিমাণের ঘাটতির কথা মাথায় রেখেই বর্তমানে নিজ সম্পদ রক্ষার্থে সামাজিক বনসৃজন, কৃষি বনসৃজন, বনমহোৎসব প্রভৃতি পরিকল্পনামূলক কার্যক্রমগুলিতে যথেষ্ট উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, স্যাটেলাইট পরিসেবাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের "Deforestation tate)-কে বিভিন্ন বছরের সাথে তুলনা করে মানচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে জনসচেতনতা বাড়ানো হয়। 2015-2020 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় 10 মিলিয়ন হেক্টর বনভূমির বিনাশ ঘটেছে।
পর্যাপ্ত জল (Adequate water): প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার অন্যতম একটি জীবনদায়ী অবলম্বন হল জল। নিরাপদ জলের পর্যাপ্ত জোগান শুধু মানুষের বেঁচে থাকা বা উন্নয়নের জন্যই নয়, সমগ্র জীবকুল এমনকি পরিবেশগত ক্রিয়াপ্রণালী রক্ষায় অত্যন্ত পরিহার্য একটি উপাদান। সেই কারণে, উন্নয়নের পরিবেশগত নির্ধারক ট্রপে নির্দিষ্ট গুণমানসম্পন্ন পর্যাপ্ত জলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বিশেষত্ব (Speciality):
(i)জলের নিরাপদ গুণমানের ক্ষেত্রে এর বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে তাদের উপবৃদ্ধ মাত্রার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
(ii) সস্থান, কাল ও আধার ভিত্তিক জলের গুণমান পরিবর্তিত হতে দেখা যায়।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের EPA (Environmental Protection Agency) প্রদত্ত তথ্যানুসারে জলে প্রায় 90 টিরও বেশি দূষকের (E.coli, Salmonella, Cryptosporidium, সীসার মতো ধাতু এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভৃতি) উপস্থিতি, অতিরিক্ত লবণতা, অতিরিক্ত উন্নতা, অক্সিজেনের স্বল্পতা, দুর্গন্ধ বা জলের অস্বচ্ছতা প্রকৃতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জলের গুণমানকে নষ্ট করে দেয়। সরাসরি ব্যবহৃত এই ধরনের গুণমানহীন জল, কিংবা জরে রোগ-জীবাণু সংক্রান্ত বিভিন্ন কুপ্রভাব প্রায়শই মানুষের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। সেইজন্য, জলের গুণমান নির্ধারণ পৃথিবীর সমস্ত দেশের অত্যন্ত বিধিসম্মত একটি পরিবেশ সুরক্ষাগত পদক্ষেপরূপে বিবেচিত হয়।
প্রাকৃতিক সম্পদ অভীক্ষা (Natural Resources Probation):
যেহেতু মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রধান কেন্দ্রে রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ, সেই কারণে উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হল প্রাকৃতিক সম্পদগুলির যথাযথ সংরক্ষণ এবং বিজ্ঞানসম্মত অভীক্ষা।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) এখানে কোনও একটি দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম অবলম্বনরূপে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে সচেতনভাবে বিবেচনা করা হয়
(ii) প্রাকৃতিক সম্পদ অভীক্ষায় জৈব (মাটি, অরণ্য, জীবজন্তু প্রভৃতি) এবং অজৈব (খনিজ সম্পদ) উভয় প্রকৃতির সম্পদকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(iii) আজকের দিনে 'উন্নয়ন'-কেন্দ্রিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে প্রাকৃতিক সম্পদ অভীক্ষার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।
• নির্ধারণ ও পরিমাপ পদ্ধতি (Determination and measurement method):
যে সমস্ত দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে যত পরিপূর্ণ, সেই সব দেশগুলিই চিরকাল উন্নয়নকে ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে সক্ষম হয়। তাই, পরিবেশীয় কাঠামোয় প্রাকৃতিক সম্পদের অস্তিত্ব নির্ধারণে একাধিক বিষয় গুরুত্ব পায়। যেমন-দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণ, সম্পদের অবক্ষয়ের হার নিরূপণ, সম্পদকেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা বিবেকনা, প্রাকৃতিক সম্পদের বণ্টনগত মাত্রা প্রদর্শন, সম্পদের ভারসাম্যহীনতা নির্ধারণ প্রভৃতি।
• জীববৈচিত্র্য মূল্যায়ন (Biodiversity Assessments): যদিও জীব বৈচিত্র্যের ধারণাটিকে প্রাকৃতিক সম্পদের আনুষঙ্গিক একটি বিষয়রূপে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু উন্নয়নের পরিবেশগত নির্ধারক হিসেবে জীববৈচিত্রোর মূল্যায়নগত পরিসরে বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। সাধারণত, যেকোনো পরিবেশীয় কাঠামোয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ মানেই জীব প্রজাতির বাসস্থান, জেনেটিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য, সম্পদ খাদ্য, জ্বালানি এবং পরিসেবাগুলিকে অটুট রাখা। এই দিক থেকে উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে জীববৈচিত্রা মূল্যায়ন যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
• বিশেষত্ব (Speciality):
(i) জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীতে সমস্ত ধরনের জীধনের সম্মিলিত একটি বৃহৎ উৎপাদনশীল অংশ, যেটিকে মোট প্রজাতির সংখ্যা বলে মনে করা হয়।
জীববৈচিত্র্য মানুষের জীবন, জীবিকা, উৎপাদনশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত দিকগুলিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(ii) জীববৈচিত্র্য আঞ্চলিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো'-রূপে গণ্য করা হয়।
নিবের লাভ ও অতির সাথে Determination and measurement Mthod)- পরিবেশগত লাভ ও ক্ষতির সাথে জীববৈচিত্র্য (জিনগত বৈচিত্র্য, প্রজাতিগত বৈচিত্রা ও বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য)-এরও প্রপ্রোতভাবে জড়িয়ে। সেই কারণে মনে করা হয়, কোনও একটি দেশে জীববৈচিত্র্যের অবনমন ঘটলে বিধমবার আর্থসামাজিক যাবতীয় সমৃদ্ধি অনিবার্যভাবেই ব্যাহত হবে। যদিও জীববৈচিত্র্যের আর্থিক মূল্য গণনা করা প্রখো কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ, কিন্তু তা সত্ত্বেও, WWF তাদের "Living র আর্থিক মূল্য গণনা করা ররিকা এবং সুস্থ্যতার জন্য বাস্তুতন্ত্রের জীববৈচিত্র্যের মূল্য প্রতি বছর 125 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার শির করেছো পৃথিবীতে উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতিগুলিকে "Biodivesrity Impact Matrix" অনুযায়ী প্রতি বলার কিরে করেছে। করা হয়। তাছাড়া, জীববৈচিত্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকের সর্বাধিক ব্যবহার রয়েছের হিসেবে প্রকাশ (i
Simpson index: এই সূচকটিতে প্রজাতির প্রাচুর্যতা ও সমতা দুটোকেই বিবেচনা করে।
Shannon index: একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রজাতির বৈচিত্র্যকে চিহ্নিত করতে Shannon diversity inbox ব্যবহৃত হয়। উন্নয়নের আধুনিকতম নির্দেশকসমূহ (The latest indicators of development):
•বিশ্ব সুধী সূচক: সম্প্রতি উন্নয়নকে শুধুমাত্র মানুষের আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত মাপকাঠিতেই বিবেচনা আর হয় না। বিশেষ করে মানুষ তার নিজস্ব ব্যক্তিগত পরিসরে কতটা ভালো বা সুখে রয়েছে, দেশভিত্তিক সেটির গড় মূল্যায়ন বা পরিমাপকে এখন উন্নয়নের একটি আধুনিকতম নির্দেশকরূপে গণ্য করা হয়। এই নির্ধারকটি "World Happiness Index" বা বিশ্ব সুখী সূচক নামে পরিচিত।
জাতিসংঘের "Sustainable Development Solution Network" এই সূচক তালিকাটিকে 2012 খ্রিস্টাব্দ থেকে তৈরি করে আসছে। এটি নির্মাণে বেশ কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনা করা হয়, যেমন-মানুষের মাথাপিছু আয়, বুঝভাবে বেঁচে থাকার প্রত্যাশিত আয়ু, মানবিকতা, সামাজিক সহায়তা, উদারতা এবং দুর্নীতি প্রভৃতি। অবশ্য বর্তমানে এর সঙ্গে আরও একটি নির্দেশক যোগ হয়েছে তা হল বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি। এবারের প্রতিবেদনটি তৈরিতে দূতরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্যালপ এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনের লয়েডস হয়।
সাম্প্রতিক অবস্থা: সম্প্রতি প্রকাশিত (2021খ্রিঃ) বিশ্ব ক্ষুধার্ত সূচকের তালিকায় থাকা 116টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হল সোমালিয়ার। অন্যদিকে, বেলারুশের স্থান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এই অালিকায় ভারতকে 100-তম স্থানে রাখা হয়েছে। তবে, এই সূচকে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির অবস্থা কিছুটা হলেও আশাব্যঞ্জক। এই তালিকায় নেপাল এবং বাংলাদেশের স্থান প্রায় পাশাপাশিই রয়েছে (76তম স্থান)।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী 811 মিলিয়ন মানুষ এখনো ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে রয়েছে। ক্ষুদ্র কৃষক, পশুপালক এবং জেলেরা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের প্রায় 70 শতাংশ উৎপাদন করেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার জন্য ক্ষুধার নিরিখে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। 2020 খ্রিস্টাব্দে, 23টি দেশে 99.1 মিলিয়ন মানুষের ক্ষুধার প্রধান কারণ ছিল সংঘাত। বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী আনুমানিক 14 মিলিয়নেরও বেশী শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে, এদের মধ্যে প্রায় 25 শতাংশ শিশুর জীবন চিকিৎসাধীন রয়েছে। সম্প্রতি, বিশ্বব্যাঙ্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমগ্র বিশ্বের 47 টি দেশ আগামী 2030 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ক্ষুধা নিরাময় করতে যথেষ্ট ব্যর্থ হবে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ প্রধান দেশগুলিকে নিম্নলিখিত সারণি অনুযায়ী উপস্থাপন করা।