অলিভারকৃত পৃথিবীর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ (Climatic classification by John. E. Oliver)
পৃথিবীর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন সংক্রান্ত Genetic approach-গুলির মধ্যে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন, ই. অলিভার (John. E. Oliver)-কৃত বায়ুপুঞ্জ পরিসংখ্যান মডেলটি (Airmass Frequency Model) উনবিংশ শতাব্দীর 70-এর দশকে সকলের নজর কাড়ে। অলিভারকৃত এই মডেলটি 1970 খ্রিস্টাব্দে 'Annals of the Association of American Geographers' পত্রিকায় A Genetic Approach to Climatic Classification শীর্ষকে প্রকাশিত হয়। এই মডেলটিতে অলিভার পৃথিবীর মানচিত্রে জলবায়ু অঞ্চলের কোনো শ্রেণিবিভাজন করে দেখাননি, বরং তিনি দেখাতে চেয়েছেন বায়ুপুঞ্জ কীভাবে কোনো অঞ্চলের জলবায়ুগত পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে এবং ঋতুভেদে বায়ুপুঞ্জের স্থান পরিবর্তন, একাধিক বায়ুপুঞ্জের সম্মিলন ইত্যাদির ভিত্তিতে কীভাবে কোনো অঞ্চলের জলবায়ু নির্ধারণ করে পৃথিবীর জলবায়ুর বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা যায় এবং শ্রেণিবিভাজন করা যায়। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ক্লাইমোগ্রাফের মাধ্যমে আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট। পর্যবেক্ষণ করে Venn diagram-এর মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্য অঞ্চল এবং একাধিক বায়ুপুঞ্জের সম্মিলন অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণিবিভাজন করার প্রচেষ্টা করেন।
জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তি (Basis of Climatic classification):
অলিভার পৃথিবীর জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তি হিসেবে বায়ুপুঞ্জের প্রাধানা ও ঋতুভিত্তিক স্থান পরিবর্তনকে। অধিক গুরুত্ব দেন। কারণ বায়ুপুঞ্জের প্রকৃতি কোনো স্থানের আবহাওয়া ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। বায়ুপুঞ্জ উয় প্রকৃতির হলে প্রভাবিত অঞ্চলটির উন্নতাও বেশি হয়। আবার শীতল ও শুষ্ক হলে শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। আর্দ্র হলে অঞ্চলটিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। তাই মেরু অঞ্চলের স্থলভাগের ওপর দিয়ে মহাদেশীয় মেরু (cl') বায়ুপুঞ্জ অবস্থান করায় ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বদাই হিমাঙ্কের নিচে থাকে এবং কোনো ঋতুবৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। আবার, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঋতুভেদে মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় (mT) এবং মহাদেশীয় ক্রান্তীয় (CT) বায়ুপুঞ্জের প্রভাবে ঋতুবৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।
তত্ত্বের ব্যাখ্যা (Explanation of the model):
অলিভার বায়ুপুঞ্জের স্থায়িত্বের ভিত্তিতে চারধরনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। যথা-
1. প্রথমে অলিভার বিভিন্ন বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্য বিস্তারকারী অঞ্চলকে (Dominant region) শনাক্ত করেন।সারাবছর ধরে কোনো নির্দিষ্ট বায়ুপুঞ্জ যে স্থান জুড়ে অবস্থান করে অলিভার তাকেই বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্য বিস্তারকারী অঞ্চল বলে চিহ্নিত করেছেন। প্রাধান্য বিস্তারকারী অঞ্চলকে একটি বৃক্তরূপে কল্পনা করে অলিভার পাঁচটি প্রধান বায়ুপুঞ্জের অবস্থান একটি চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। এগুলি হল-মহাসাগরীয় মেরুবায়ুপুঞ্জ (m), মহাদেশীয় মেরুবায়ুপুঞ্জ (cP), মহাসাগরীয় ক্রান্তীয় বায়ুপুপ্ত (ml), মহাদেশীয় ক্লান্তীয় বায়ুপুঞ্জ (CT) এবং মহাসাগরীয় নিরক্ষীয় বায়ুপুঞ্জ (mE)। (চিত্র: 21.11)
2. দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি বায়ুপুঞ্জের ঋতুভিত্তিক স্থানান্তরের ফলে দুটি সন্নিহিত বায়ুপুঞ্জের সম্মিলন অঞ্চলকে চিহ্নিত করেন। এর জন্য তিনি প্রাধান্য অঞ্চলের সীমানা থেকে ঋতুভেদে বায়ুপুঞ্জের স্থিতিকাল অনুযায়ী সমান সময়ের ব্যবধানে সমদূরত্বে কয়েকটি সমকেন্দ্রিক বৃত্ত অঙ্কন করেন। চিত্র 21.12 অনুযায়ী A এবং E স্থান দুটি যথাক্রমে CT এবং mE বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্য বিস্তারকারী অঞ্চল (Dominant Regime) কেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় প্রাধান্যের হার অত কমতে থাকে। ধরা যাক, কেন্দ্র থেকে দূরত্ব বৃদ্ধিতে প্রতিটি শ্রেণিতে 20% করে বায়ুপুঞ্জের প্রভাব কমে। তাহলে B নামক স্থানে CT বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্যের হার 60% থেকে ৪০% এবং mT বায়ুপুঞ্জের হার 20% থেকে 40%। আবার, D নামক স্থানে T-এর প্রাধান্য 20% থেকে 40% এবং ml-এর প্রাধান্য 60% থেকে ৪০%। এই অঞ্চলগুলিকে অলিভার উপপ্রধান অঞ্চল (Sub domi-nant Regimes) বলে অভিহিত করেছেন। উপপ্রধান অঞ্চল বলতে অলিভার সেইসকল অঞ্চলগুলিকে বুঝিয়েছেন যেখানে কোনো একটি নির্দিষ্ট বায়ুপুঞ্জ বছরের অধিকাংশ সময় ধরে অবস্থান করে। সুতরাং স্থানটি CT বায়ুপুঞ্জের এবং স্থানটি mT বায়ুপুঞ্জের উপপ্রধান অঞ্চল।
3. তৃতীয় পর্যায়ে অলিভার সেই সমস্ত অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করেন যেখানে কোনো নির্দিষ্ট একটি বায়ুপুঞ্জ বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে। একে তিনি ঋতুভিত্তিক অঞ্চল (Seasonal regimes) হিসেবে অভিহিত করেন। চিত্র 21.12 অনুযায়ী নামক স্থানে উক্ত দুটি বায়ুপুঞ্জের প্রাধান্য সমান। অর্থাৎ, বছরের অর্ধেক সময় ধরে অবস্থান করে।