জলবায়ু সংক্রান্ত তালিকা (Climatic Chart)
কোনো অঞ্চলের দৈনন্দিন আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান সংক্রান্ত তথ্যসমূহ সুনির্দিষ্ট সময়কাল ধরে (এক মাস অথবা এক এর) সংগ্রহ করে তালিকা প্রস্তুত করে যে লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় যার X অক্ষে সময় এবং Y অক্ষে নির্দিস্ট ভেল অনুযায়ী আবহাওয়ার উপাদানগুলির পরিমাণ বসানো থাকে যাকে Climatic Chart বলে। এটি ভিন্ন একক সমন্বিত একটি বহরেখাচিত্র (polygraph having different units) Climatic Chart-এ আবহাওয়ার উপাদান, যথা- উন্নতা, টিপাত, বায়ুর চাপ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ইত্যাদি সংক্রান্ত দৈনন্দিন, মাসিক অথবা বার্ষিক তথ্য উপস্থাপনা করা হয়। তবে Climatic chart-এ এই চারটি উপাদানই থাকবে এমন কোনো যৌক্তিকতা নেই। আবহাওয়ার বৈশিষ্টা উপস্থাপনে যেকোনো উপাদানের দৈনন্দিন তথ্যই এখানে স্থান পাবে। তবে উক্ত চারটি উপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ এগুলি কোনো এলাকার প্রাগ্রাওয়াগত বৈশিষ্ট। তুলে ধরার প্রাথমিক উপাদান। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে আবহাওয়ার দৈনন্দিন উপাদান সংক্রান্ত তথ্য দ্বারা গঠিত chart-কে climatic chart না বলে weather chart বলাই শ্রেয়।
উদ্দেশ্য (Objective):
Climatic Chart থেকে আমরা যে বিষয়গুলি জানতে পারি তা অনুধাবন করলেই এর উদ্দেশ্য জানা যায়। Climatic Chat-এর উদ্দেশ্যগুলি হল-
1. আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহ ও সচিত্র উপস্থাপন করা সম্ভব।
2. সংগৃহীত তথ্যগুলির মাধ্যমে আবহাওয়ার উপাদানগুলির তুলনামূলক আলোচনা ও একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার করা যায়।
3. উপাদানগুলির সংগৃহীত তথ্য ব্যাখ্যা করে আবহাওয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ করা সম্ভব হয়।
4. উপাদানগুলির বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যার মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যায়।
■ অঙ্কন পদ্ধতি:
1. একটি ছককাগজে (graph paper) অনুভূমিক সরলরেখা অঙ্কন করে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর প্রাপ্ত রাশিতথ্য অনুযায়ী মাসের দিবসগুলিকে অথবা মাসের নামগুলিকে পরপর বসানো হয়।
2. উল্লম্ব অক্ষে স্কেল অনুযায়ী প্রথমে প্রতিটি দিবসের অথবা মাসের বৃষ্টিপাতের পরিমাণের সাপেক্ষে স্তম্ভ (bar) অঙ্কন করা হয়।
3. এর পর ওই একই অক্ষে স্কেল অনুযায়ী প্রতিটি দিবসের অথবা মাসের উন্নতার মান বিন্দু আকারে বসিয়ে তা বক্ররেখা দ্বারা যুক্ত করে তাপমাত্রার সরলরেখাচিত্র (simple graph) তৈরি করা হয়।
4. উদ্বুতার মতো একই পদ্ধতিতে বায়ুর চাপ প্রতিটি দিবসের অথবা মাসের সাপেক্ষে বসিয়ে বায়ুর চাপের সরলরেখা চিত্র অঙ্কন করা হয়।
5. সবশেষে একই পদ্ধতিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান বসিয়ে আর্দ্রতারও একটি সরলরেখাচিত্র অঙ্কন করা হয়।
তবে ১ অক্ষে এই চারটি উপাদান একসঙ্গে একটি পরিসরে কিংবা আলাদা আলাদা করে বসানো যেতে পারে।
ক্রাইমোগ্রাফ (Climograph):
অনুভূমিক ও উল্লম্ব অক্ষে উপস্থাপিত দ্বিচলক রাশি (bivariates)-এর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অঙ্কিত 12 টি প্রচুর দ্বারা আবন্ধ লেখচিত্রই হল ক্লাইমোগ্রাফ। এই লেখচিত্রের অনুভূমিক অক্ষে আপেক্ষিক আর্দ্রতা (relative humidity) * উল্লম্ব অক্ষে আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্রা (Wet bulb temperature) উপস্থাপন করা হয়।
• উদ্ভব: বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে 1910 সালে জে. বল (J. Ball) কায়রো সাইন্টিফিক জার্নাল-এ 'Climatological Dagram' শীর্ষক প্রবন্ধে সর্বপ্রথম ক্লাইমোগ্রাফ-এর ধারণা দেন। এরপর পৃথিবীর জলবায়ু সংক্রান্ত শ্রেণিবিভাজন করার সময় জলবায়ুর বিভিন্ন অবস্থা তুলে ধরতে 1918 সালে কোপেন ক্লাইমোগ্রাফের ব্যবহার করেন। এর পর লেইলি (Leighly) ও রবর্তীকালে ই. এফ, ফস্টার (E. F. Foster) ক্লাইমোগ্রাফ ধারণাটির অগ্রগতি ঘটান।
• গ্রিফিথ টেলর প্রবর্তিত ক্লাইমোগ্রাফ: 1941 সালে Climate and Man গ্রন্থে Grifith Taylor মানুষের ক্রিয়াকলাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব তুলে ধরতে সম্পূর্ণ আধুনিকরূপে যুক্তিসহকারে ক্লাইমোগ্রাফের উপস্থাপনা করেন। তিনি এই ক্লাইমোগ্রাফের অনুভূমিক অক্ষে অর্থাৎ X অক্ষে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উল্লম্ব অক্ষে অর্থাৎ ১ অক্ষে আর্দ্রকুন্ড তাপমাত্রা উপস্থাপন করে প্রতিটি মাসের এই দুটি চলকের তথ্য এঁকে এই লেখচিত্রটি উপস্থাপন করেন এবং লেখচিত্রে উপস্থিত প্রতিটি মাসের এই স্থানাঙ্কগুলিকে মাসের ক্রমানুযায়ী যোগ করে এইরূপ লেখচিত্র উপস্থাপন করেন।
টেলর শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যতার ভিত্তিতে উদ্বুতার এক শ্রেণিকরণ করেন যেখানে 40 deg (4 deg) ) থেকে 45 deg (7-2 সেঃ) পর্যন্ত ঈষৎ অস্বস্তিকর, 45 deg ফাঃ (7-2 সেঃ) থেকে 55 deg ফাঃ (128 deg) সেঃ) পর্যন্ত তাপমাত্রা আদর্শ, 55° ফাঃ (12 * 8 deg) সেঃ) থেকে 60 deg ফাঃ ( 15 - 6 deg সেঃ) পর্যন্ত কদাচিৎ অস্বস্তিকর, 60 deg ফাঃ ( 15.6 ^ prime prime সেঃ) থেকে 65 deg ফাঃ ( 18 deg সেঃ) পর্যন্ত কখনো-কখনো অস্বস্তিকর, 65 deg (18 deg) ) থেকে 70° ফাঃ 21 deg সেঃ) পর্যন্ত প্রায় আরামদায়ক এবং 70 deg ফাঃ (21 deg) ) থেকে ফা ( 24 deg সেঃ) পর্যন্ত অস্বস্তিকর বলে অভিহিত করেন। উক্ত তাপমাত্রায় বিভাজিত শ্রেণি ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার 75 deg পরিমাণের সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে লেখচিত্রের চারটি দিকে চারটি চরম জলবায়ুগত অবস্থার সীমানা নির্ধারণ করেন। এটি হল-
1. স্যাঁৎসেঁতে ঠান্ডা (Raw): এই অংশটি লেখচিত্রের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করে। কোনো মাসের আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্রা 40° ফাঃ (4° সেঃ) অপেক্ষা কম এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা 70%-এর বেশি হলে ওই মার্সটি এই শ্রেণির অন্তর্ভন্ত হয়। প্রী আর্দ্র-শীতল অবস্থার পরিচায়ক।
2. ভ্যাপসা গরম (Muggy): এই অংশটি লেখচিত্রের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থান করে। কোনো মাসের আর্ডকৃ তাপমাতা 60° ফাঃ (15° সেঃ) অপেক্ষা বেশি এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা 70% -এর বেশি হলে সেই মাসটি এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি ভ্যাপসা গরম পরিবেশকে উপস্থাপন করে।
3. কনকনে ঠান্ডা (Keen): এই অংশটি লেখচিত্রের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করে। কোনো মাসের আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্র 40° ফাঃ (4° সেঃ) অপেক্ষা কম এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা 40%-এর কম হলে ওই মাসটি keen শ্রেণিভক্ত হয়। এটি কনকনে ঠান্ডা ও শুষ্ক অবস্থাকে সূচিত করে।
4. তাপদ্য (Scorching): এই অংশটি লেখচিত্রের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থান করে। কোনো মাসের আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্র এরা° ফাঃ (15-6° সেঃ) অপেক্ষা বেশি এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা 40%-এর কম হলে ওই মাসটি scorching শ্রেণিতে অন্তর্ভূত্ব হয়। এটি আর্দ্রতাহীন অত্যন্ত উদ্বু ও দন্ধ পরিবেশকে উপস্থাপন করে।
উত্ত চারটি অংশ ছাড়া অন্য যেকোনো অংশে কোনো মাসের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা অবস্থান করলে ওই মাসী আরামদায়ক (comfort) আবহাওয়াকে সূচিত করে
• অঙ্কন পদ্ধতি:
1. একটি ছককাগজে (graph) X ও Y অক্ষ অঙ্কন করে X অক্ষে নির্দিস্ট স্কেল অনুযায়ী আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও অক্ষে আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্রা চিহ্নিত করা হল।
2. এর পর চিত্রের চারদিকে নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী Raw, Muggy, Keen, Scorching-এর আশ চিহ্নিত করে নেওয়া হল।
3. এর পর প্রতি মাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণকে ওই মাসের আর্দ্রকুণ্ড তাপমাত্রার স্থানাঙ্ক নির্ণয় করে বিন্দু-আকারে বসাতে হবে।
4. এর পর প্রত্যেক মাসকে সরলরেখা দ্বারা যোগ করে দিয়ে বন্ধ বহুভুজ (closed polygon) তৈরি করলেই ক্লাইমোগ্রাফ আঁকা শেষ হবে।
তবে মনে রাখতে হবে Taylor প্রদত্ত ক্লাইমোগ্রাফ-এ তাপমাত্রার ক্ষেত্রে ফারেনহাইট স্কেল-এর ব্যবহার করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ক্লাইমোগ্রাফ-এ সেলসিয়াস স্কেল-এরও ব্যবহার শুরু হয়েছে.
হাইদারগ্রাফ (Hythergraph)
ক্লাইমোগ্রাফ-এর মতো হাইদারগ্রাফেও অনুভূমিক ও উল্লম্ব অক্ষে উপস্থাপিত দ্বিচলক (bivariate) রাশির পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অঙ্কিত 12টি বাহু বিশিষ্ট একটি দ্বি-অক্ষ বন্ধরেখা লেখচিত্র অঙ্কন করা হয়। এই লেখচিত্রের অনুভূমিক অক্ষে বৃষ্টিপাত ও উল্লম্ব অক্ষে তাপমাত্রা উপস্থাপন করা হয়।
• উদ্ভব: মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর ওপর জলবায়ুর প্রভাব তুলে ধরতে Grifith Taylor Hythergraph-এর অাবিষ্কার করেন। তিনি X অক্ষে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং উল্লম্ব অক্ষে তাপমাত্রা উপস্থাপন করে প্রতি মাসে এই দুই চলকের তথ্য একে অপরের সাপেক্ষে লেখচিত্রে উপস্থাপন করেন এবং প্রতিটি মাসের স্থানাঙ্কগুলিকে মাসের ক্রমানুযায়ী যুক্ত করে Hythergraph প্রস্তুত করেন।
• অঙ্কন পদ্ধতি:
1. একটি ছককাগজে (graph paper) X ও Y অক্ষ অঙ্কন করে X অক্ষে নির্দিষ্ট স্কেল অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও Y অক্ষে তাপমাত্রা চিহ্নিত করা হল।
2. এরপর প্রতি মাসের বৃষ্টিপাতের সাপেক্ষে ওই মাসের তাপমাত্রাকে লেখচিত্রে বিন্দু-আকারে বসানো হল।
3. এরপর প্রতি মাসের স্থানাঙ্ক বিন্দুগুলিকে ক্রম অনুযায়ী সরলরেখা দ্বারা যোগ করে বন্ধ বহুভুজ (closed polygon) অঙ্কন করলেই Hythergraph অঙ্কন করা শেষ হবে.