welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ (Causes of change of climate)

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ (Causes of change of climate)


দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক কারণসমূহ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি স্বল্পমেয়াদি জলবায়ুর পরিবর্তনেও মানুষের ভূমিকা কম নয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণ।

A. প্রাকৃতিক কারণ (Natural Causes):

প্রাকৃতিক কারণসমূহকে আবার তাদের উৎস অনুযায়ী দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা (1) মহাজাগতিক কারণ ও (2) পার্থিব কারণ।

1. মহাজাগতিক কারণসমূহ (Cosmic causes):

(i) পৃথিবীর অক্ষের কৌণিক মানের পরিবর্তন (Angular change of the axis of earth): পৃথিবীর অক্ষটি একটি উল্লম্ব কাল্পনিক রেখার সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট কোণে হেলে অবস্থান করে। বর্তমানে পৃথিবীর অক্ষটি 23°26′54.9" কোণে হেলে অবস্থান করছে। তবে এই অক্ষটি সর্বকালে একই কৌণিক মানে হেলে থাকে না। এই অক্ষটি সুদীর্ঘ 41,000 বছরের ব্যবধানে 22° থেকে 25° পর্যন্ত কৌণিক মানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পৃথিবীর অক্ষটির কৌণিক মান যখন 22°-এ পৌঁছায় তখন পৃথিবীর শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা কম হয়। অপরদিকে, অক্ষটির কৌণিক মান সর্বাধিক হলে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা বাড়ে যা জলবায়ু পরিবর্তনের সহায়ক হয়।


(ii)পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন (Variation of Earth's orbit): বর্তমানে পৃথিবীর কঞ্চপদটি উপবৃত্তাকার হলেও এর আকৃতি পরিবর্তনশীল। এই কক্ষপথটি 1, 10,000 বছর ব্যবধানে বৃত্তাকার অবসস্থান থেকে বৃত্তাকার অতি-উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিবর্তির হয়। পৃথিবীর কক্ষপথ বৃত্তাকার হলে এর সৌরশক্তি গ্রহণের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় প্রায় 0.014 শতাংশ বেড়ে যায়। আবার, এর কক্ষপথটি অতি-উপবৃত্তাকার হলে পৃথিবীর সৌরশক্তি গ্রহণের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় প্রায় 0.17 শতাংশ কমে যায়। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে।

(iii) সূর্যের অবস্থানের পরিবর্তন বা অনুসুর অবস্থানের অয়ন চলন (Precession of Perihelion):সূর্যের আপাত অবস্থান পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ডানদিকের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে (focal point) অবস্থান করছে। এই কারণেই সূর্যকে(প্রায় 152 মিলিয়ন কিমি) হয়। এ যথাক্রমে গ্রীষ্ম ও শীত ঋতু বিরাজ প্রদক্ষিণকালে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্ব কখনোই এক থাকে না। 4 জুলাই অপসূর অবস্থানে এই দুই জ্যোতিষ্কের মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে বেশি সময় উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে করে। আবার, 3 জানুয়ারি অনুসূর অবস্থানে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে কম (প্রায় 147 মিলিয়ন কিমি) হয়। এ সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হয়। অনুসূর অবস্থানে অর্থাৎ সূর্য থেকে সর্বাধিক নিকটবর্তী অবস্থানে দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হওয়ায় উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্ম অপেক্ষা দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্ম প্রায় 4° সেঃ বেশি উয়। আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি সূত্র অনুসারে পৃথিবীর কক্ষপথের একটু একটু করে স্থান পরিবর্তন ঘটে। এই কারণে সূর্য 10,000 বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় অন্য একটি কেন্দ্রবিন্দুতে অর্থাৎ বাঁদিকের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে। সূর্যের এই আপাত সরণকে অয়ন চলন বলে। সেই সময় অপসুর ও অনুসুর অবস্থানে উত্তর গোলার্ধে যথাক্রমে হবে শীতকাল (এখন হয় গ্রীষ্মকাল) ও গ্রীষ্মকাল (এখন হয় শীতকাল)। দক্ষিণ গোলার্ধেও একইভাবে ঋতু বৈপরীত্য দেখা যাবে। এই ঋতু বৈপরীত্যের ফলে তখন উন্নতার তারতম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। সুতরাং, সূর্যের অয়ন চলনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে শীত ও গ্রীষ্মের মধ্যে উন্নতার চরম বিচ্যুতি বা পার্থক্য জলবায়ু পরিবর্তনের এক অন্যতম কারণ।

(iv) সৌরশক্তির হ্রাসবৃদ্ধি (Variation of 'The Solar energy): সূর্যের অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল ও কম উয় স্থানগুলিকে সৌর কলঙ্ক বলে। এক-একটি সৌর কলঙ্ক 1600 কিমি বা তার বেশি ব্যাস বিশিষ্ট হয়। সৌরশক্তির মাত্রা এই সৌর কলঙ্কের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল। ৪০ বছর ও 11 বছর ব্যবধানে দুটি ভিন্ন সৌর কলঙ্ক চক্র সম্পন্ন হয়। সৌর কলঙ্কের উপস্থিতির কারণে সৌর ধ্রুবকের (Solar constant) পরিবর্তন.
হয়। ফলে পৃথিবীর জলবায়ুরও পরিবর্তন সূচিত হয়। 1645 খ্রিস্টাব্দ থেকে 173) খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সৌর কলঙ্কের মাত্রা কম থাকায় ওই সময় খুদে হিমযুগের সূচনা হয়। 30 লক্ষ বছর পূর্বে সৌরশক্তির পরিমাণ কমে যাওয়ায় পৃথিবীতে আগত সৌরশক্তির তাপীয় ফলের (Insolation) পরিমাণ বর্তমানে আগত সৌরশক্তির তাপীয় ফলের পরিমাণ অপেক্ষা প্রায় 40 শতাংশ কম ছিল। এই ঘটনা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

B পার্থিব কারণসমূহ (Geogenic Causes):

(i) ভূ-সংক্ষোভজনিত কারণ (Diastrophic reasons):

(ii) পাত সঞ্চলন: ভূ-আন্দোলনের ফলে অভিসারী পাত সীমানায় পলিরাশি সংকুচিত ও উত্থিত হলে উচ্চতার কারণে স্থানটি শীতল হয়ে পড়ে এবং বায়ু চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হিমালয় ও তিব্বত মালভূমির উত্থানের ফলে পশ্চিম চিন ও মধ্য এশিয়ায় মরুভুমি সৃষ্টি হয়েছে। দুটি প্রতিসারী সামুদ্রিক পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রের জল বেশ উন্ন হয়ে পড়ে। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হলে এল-নিনোর মতো ঘটনা জলবায়ুর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(iii) মহীসঞ্চলন: মহাদেশীয় চলনের ফলে জলবায়ুর আঞ্চলিক পরিবর্তন ঘটে। মেরু অঞ্চলের নিরক্ষরেখামুখী চলনের ফলে মেরু সংলগ্ন অঞ্চলের বরফ গলে গেলে হৈমিক জলবায়ুর পরিবর্তে উন্ন জলবায়ুর আবির্ভাব ঘটে। মহাদেশের মেরুমুখী সঞ্চলনের ফলে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। মহাদেশীয় সঞ্চলনের ফলে মহাদেশ ও মহাসাগরের মধ্যে স্থান বিনিময় ঘটে। ফলে বাষ্পীভবনের মাত্রার হেরফের ঘটে যা জলবায়ুর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(iv) আগ্নেয় বিস্ফোরণ: স্থলভাগে আগ্নেয় বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে ধূলিকণা, ধুয়ো, বিভিন্ন গ্যাস নির্গত হয় এবং বাতাসে CO,-এর পরিমাণ ভীষণভাবে বেড়ে গেলে বাতাসের উন্নতা বেড়ে যায়। আবার, ধুলিকণা ও লবণকণা জলাকর্মী কেন্দ্রাণু (hygroscopic nuclei) রূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বাতাসে এদের পরিমাণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে জলীয় বাষ্পেরও পরিমাণ বেড়ে যায়, বাতাস ভারী হয়ে পড়ে। সর্বশেষ পরিণতি হিসেবে প্রচুর বৃষ্টিপাত তথা অধঃক্ষেপণ ঘটে এবং পৃথিবী অধিকমাত্রায় শীতল হয়।

(v) বায়ুমণ্ডলের গঠনের পরিবর্তন (Change in the Composition of atmosphere): পৃথিবীতে উদ্ভিদের আবির্ভাবের পূর্বে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল বহুগুণ বেশি। কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতিতে বাতাসের উন্মুতাও ছিল বেশি। পরবর্তীকালে পৃথিবী উদ্ভিদের আবরণে ঢেকে যাওয়ার ফলে উদ্ভিদ দ্বারা অতিরিন্দ্র কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষিত হওয়ার কারণে পৃথিবীর উদ্ভুতা বহুগুণে হ্রাস পেয়েছে এবং পৃথিবীর জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটেছে।

(vi) মহাসাগরসমূহে সঞ্চিত উত্তাপ (stored heat in oceans) জলবায়ু পরিবর্তনে মহাসাগরসমূহের প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি নানা গবেষণা থেকে জানা গেছে যে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রায় পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলীয় সম্মলনচক্রের পরিবর্তন হয়, যা ধীরে ধীরে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়। জলভাগ ধীরে ধীরে উয় ও শীতল হয়। ফলে বহুদিন ধরে তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। সমুদ্রস্রোত আবার উত্তাপকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবাহিত করে। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
B. মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহ (Anthropo-genic Causes):

(b) বর্তমান আগস্ট মাসে সমুদ্রপৃষ্ঠে সমোয় রেখার কণ্টন দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ুর পরিবর্তনে প্রকৃতি ৪৫ যেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তেমনই স্বল্পমেয়াদি জলবায়ুর পরিবর্তনে মানুষের ভুমিকাও অগ্রগণ্য। মানুষের কার্যকলাপের ফলে উৎপন্ন গ্যাসগুলির মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড অন্যতম। কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রধানত শোষিত হয় উদ্ভিদের দ্বারা। নগরায়ন, শিল্পায়ন, বসতি স্থাপন, কৃষিক্ষেত্রের বিস্তারের জন্য মানুষ নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস প্রচুর পরিমাণে CO, বাতাসে মিশছে। এ ছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড বাতাসে সংযোজিত হচ্ছে। ভূমির ব্যবহার যথাযথ না হওয়ায় মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি তি এনহাউস গ্যাসগুলির বৃদ্ধি বিশ্ব উন্নায়নকে ত্বরান্বিত করেছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা দ্রুত বেড়েই চলেছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানের তুলনায় বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ হলে বায়ুমণ্ডলে গড় তাপমাত্রা বাড়বে প্রায় 3.6° সেঃ। গড় তাপমাত্রা বাড়লে পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ আরও দ্রুত হারে গলবে এবং মেরু প্রদেশের বিস্তীর্ণ তুষারক্ষেত্র গলনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ কয়েক মিটার উত্থিত হবে। তখন পৃথিবীর জলভাগের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এভাবে জলের পরিমাণ বাড়লে বাষ্পীভবনের মাত্রাও বাড়বে এবং সেই সঙ্গে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01