আঞ্চলিক উন্নয়নের তাত্ত্বিক ধারণা এবং মডেল সমূহ
চক্রাকার ও ক্লথবৌমিক কার্যকারণ তত্ত্ব(Circular and cumulative causation Theory):
উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সমৃন্দ এবং প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলির পৃথক পৃথক দৃষ্টিভলি গলিলি হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখো গেছে, বুপদি অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলিতে পুঁজিবাদকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে, থাকা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলি প্রায়শই উপেক্ষিত থেকেছে। এর ফলে, সংশ্লিন্ট উৎপাদনশীল কাঠামোয় ক্রম অর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও অনুন্নয়নের বিষয়গুলিই বারবার অভ্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বস্তুত, পিছিয়ে এক উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রথাগত দুর্বলতাগুলিকে কাটিয়ে তুলে, তাদেরকে আত্মনির্ভরতার সংস্কা এগিয়ে দেয়ার একট সুচিন্তিত এবং ইতিবাচক ভাবাদর্শ হল উন্নয়নের চক্রাকার ও ক্রমবর্ধমান কার্যকরেণ (Circular and Cumulation Causation) তত্ত্ব।
সাধারন ,এই দৃষ্টিভঙ্গিকে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক তত্ত্বও বলা যায়, যেটি নিম্নস্তরের প্রায় সব ধরনের অমিটির আরামোর সামগ্রিক উতয়ানের প্রেক্ষাপটকে স্বতাপূর্ণ এবং ক্রোম যৌগিকভাবে পরিবেশন করে। এই তথ্যের মূল বিষয়বস্তু হলো- এল-একটি প্রতিষ্ঠান বা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটলে তার পুণ্য বা দুষ্ট বৃত্তে স্বকীয়ভাবেই অপর একটি প্রতিষ্ঠান বা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় ক্রমপুঞ্জিত পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে উন্নত দেশগুলি যেভাবে মূলধন, শ্রম এবং উদ্ভাবনার ক্রমচক্রীয় প্রভাবে নিজেদের ক্রমশ সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলি পর্যাপ্ত সম্পদ, পরিকাঠামো, মূলধন এবং বিনিয়োগের অভাবে তাদের উন্নয়নকে একটি ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে স্তিমিত করে রখে। সেই কারণে, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া সমস্ত দেশগুলি যাতে এদের যাবতীয় আর্থসামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে একটি বৈষমাহীন সমৃন্ধশালী অবস্থায় পৌঁছাতে পারে, সেবিষয়ে মুচন্তিত মতামত প্রদান করে চক্রাকার ক্রমযৌগিক তত্ত্ব।
Encyclopedia.com-এ বলা হয়েছে-ক্রমবর্ধমান প্রকার কার্যকারণ বলতে একটি স্বয়ং-শক্তিবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কোনও আর্থ-সামাজিক প্রণালীর অভিমুখ একই দিকে পরিচালিত করে, তার প্রারম্ভিক অবস্থাকে আরও সূরে নিয়ে গিয়ে এমন একটি কল্যাণকামী ও দুষ্ট বৃত্তে উপনীত করে, যাতে (কিছু মনুষের বা কার্যাবলীর) সুবিধা এবং অসুবিধা (অন্যদের) ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। "Cumulative causation refers to a self-reinforcing process during wich an impulse to a system triggers further changes in the same direction as the original impulse, thus taking the system further away from its initial position in virtuous or vicious circles of change that may result in a continuing increase in advantages (to some people or activities) and disadvantages (to others)).
এই তত্ত্বে বলা হয়, অর্থনৈতিক কোনও ঘটনা যদি একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট ধরে কাঠামোগতভাবে পরিচালিত হয়, সেটির পুনরাবৃত্তি বরাবর ঘটতে থাকবে। তা ছাড়া, চক্রাকার এই ধরনের অর্থনৈতিক ঘটনাক্রম কার্যক্ষেত্রে উন্নত দেশের সাপেক্ষে কল্যাণকামী চক্র (Virtuous circle) ও উন্নয়নশীল দেশের সাপেক্ষে দুষ্টচক্র (Vicious circle)-তে উপনীত হয়।
প্রসঙ্গত, চক্রাকারে ক্রমপুঞ্জিত এবং কার্যকারণের তত্ত্বটিকে অধ্যাপক মিরডাল সর্বপ্রথম বিকশিত করলেও, তত্ত্বটির প্রাক্-চিন্তাধারায় বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ Allyn Young (1876-1929 ft), Adam Smith (1723-1790) Alfred Marshall (1842-1924) প্রমুখর ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না।
■ মিরডালের তত্ত্ব (Myrdal's Theory):
চক্রাকার ও ক্রমযৌগিক কার্যকারণ তত্ত্বটিকে আঞ্চলিক উন্নয়নের অভিমুখ ও মাত্রা বিশ্লেষণে প্রয়োগে যিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তিনি হলেন সুইডেনের বিখ্যাত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ভাল গুনার মিরডাল Karl Gunner Myrdal, 1898-1987 খ্রিঃ)। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, পিছিয়ে পড়া দেশগুলির সাধারণ সমাজব্যবস্থায় এমন কোনও স্ব-স্থিতিশীল বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নেই যার দ্বারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলি আর্থসামাজিক ভারসাম্যের দিকে উপনীত হবে। এই সমস্ত দেশের অনগ্রসর এবং বৈষম্যে জর্জরিত মানুষের জীবনধারাকে অগ্রাধিকার দিয়েই মিরডাল উন্নয়নের সার্বিক অভিব্যক্তিকে পুনশোর প্রসঙ্গো যথার্থ নির্দেশিকার মাধ্যামে তাঁর এই তত্ত্বটি উপস্থাপন করেছিলেন। মূলত মিরডাল ছিলেন কল্যাণকামী রাষ্ট্রচিন্তার একজন অন্যতম প্রতিত্ব, যিনি তাঁর জীবনদর্শনে অর্থনৈতিক চিন্তার পাশাপাশি সামাজিক গণতান্ত্রিক আদর্শকে বিশেষভাবে মান্যতা দিয়েছিলেন।
প্রাক চিন্তাধারা (Pre-Thinking):
তত্ত্বটি গঠনের ক্ষেত্রে মিরডাল যেসমস্ত পূর্বধারণাগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন, সেগুলি হল-
অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত দেশগুলির তুলনায়, উন্নয়নশীল দেশগুলির পিছিয়ে থাকা।
মুনাফা লাভের দিক থেকেও উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশের পশ্চাদগামিতা।
উৎপাদনমূলক ক্ষেত্রে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের দৃষ্টিভঙ্গিগত স্পষ্ট তারতম্য।
অঞ্চল বিশেষে গতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামোয় থাকা উপাদানগুলির মধ্যে যথার্থ মিথস্ক্রিয়ার অভাব।
সমৃদ্ধ কোনও অঞ্চলের দিকে প্রধান আর্থিক সংস্থাগুলির ক্রমশ ঝুঁকে পড়া।
ও অর্থনৈতিক পরিসরে ধনীদের আরও সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠা, এবং গরিবদের আরও পশ্চাদগামী হয়ে থাকার প্রবণতা, প্রভৃতি।
পটভূমি (Background):
বিগত শতকের তিরিশের দশকে অধ্যাপক গুনার মিরডাল প্রচলিত গ্রুপদী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে, বিশুদ্ধ উন্নয়ন তত্ত্বের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন সংক্রান্ত চক্রাকার এবং ক্রমবর্ধমান তত্ত্বের প্রাথমিক ভিত প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আমেরিক যুক্তরাষ্ট্রের পটভূমিতে। বিশেষত, সেখানকার আর্থসামাজিক অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা কুল্লাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণ বা দ্বিচারিতা, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি, গণহত্যা প্রভৃতির কারণ সম্পর্কে মিরডাল 1944 খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত তাঁর An American Dilemma: The Negro Problem and Modern Democracy' নামক গ্রন্থের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছিলেন। তৎকালীন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের যারা তুলো উৎপাদনের ওপর সম্প্রদায়ভিত্তিক বিধিনিষেধ আরোপ এবং ন্যূনতম মজুরি নীতির যথেষ্ট হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। এরপরে, 1947-1957 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশনের কার্যনির্বাহী সম্পাদক পদে থাকাকালীন মিরডাল বিখ্যাত সুইডিশ অর্থনীতিবিদ জোহান গুস্তাফ নট উইকসেল (Johan Gustaf Knut Wicksell)-এর প্রান্তিক উৎপাদন তত্ত্ব এবং নিকোলাস কালডোর (Nicholas Kaldor)-এর বহির্মুখী বিনিয়োগের ধারণা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ওই সময়কালে মিরডাল বুঝেছিলেন অর্থনৈতিক বিকাশের ধারাকে পুনর্গঠিত করতে অনুন্নত দেশগুলিতে উন্নত দেশগুলির আর্থসামাজিক প্রভাব অত্যন্ত ক্ষীণ। এর ফলে, ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলির উন্নয়ন কার্য কখনোই সমান তালে চলে না। ঠিক সেই কারণে, মিরডালের দৃষ্টি তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলির দিকে ক্রমশ আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এইভাবে বিষম উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে মিরডাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর চক্রাকার এবং ক্রমবর্ধমান কার্যকারণ তত্ত্বটিকে বিকশিত করে।
তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা (Establishment of the Theory):
অর্থনীতিবিদ গুনার মিরজাল প্রদত্ত চক্রাকার এবং ক্রমবর্ধমান তত্ত্ব (Circular and Cumulative Theory-1956 খ্রিঃ)-টিকে আসলে তাঁরই লিখিত বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের সমন্বয়ী নির্যাস বলা চলে। বিশেষ করে, অনগ্রসর ও স্বল্পোন্নত এশিয়ার অর্থনীতি অনুসন্ধান প্রসঙ্গে রচিত 'Asian drama: An inquary into the poverty of Nations (1956 খ্রিস্টাব্দ)", উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার অন্তদৃষ্টি প্রসঙ্গে রচিত "Econom theory and underdevelopment region (1957 খ্রিস্টাব্দে)" এবং "Economics of the underdevelopel countries (1965 খ্রিস্টাব্দ)" প্রভৃতি গ্রন্থগুলিতে মিরডাল উন্নয়ন এবং অনুন্নয়নের প্রসঙ্গটিকে চূড়ান্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
মূল বক্তব্য (Main Approaches):
অধ্যাপক মিরডাল মনে করতেন, উন্নয়নের আঞ্চলিক বৈধনা মানেই প্রচলিত অর্থনীতি এবং বাজার ব্যবস্থার একটি অনিবার্য প্রতিকূল পরিণতি। আসলে, মুক্ত অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যই হল পূর্ণ বিকশিত অঞ্চলের দিকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার অভিমুখগুলির প্রসারিত হওয়া। এর ফলে, উন্নয়নের সমস্ত ক্ষেত্রগুলিও একপেশে এবং কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়। অর্থনীতির এই ধরনের কাঠামোর বিরোধিতা করেই মিরডাল তাঁর তত্ত্বে আঞ্চলিক অসামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের কয়েকটি প্রাসঙ্গিক দিক তুলে ধরেছেন।
মিরডালের যুক্তিসমূহ (Myrdal's Arguments) :
মিবাঙাল বলেছেন, সমৃদ্ধশালী দেশগুলির উন্নয়নের ক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠিই হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এটি উন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে একটি বিস্তর ফারাক গড়ে দেয়। বিশেষ করে, এই ধরনের বৈষম্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশটি ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাঁর মতে- "Economic development results ma circular causation process leading to rapid development of developed countries while the weaker countries tend to remain behind the poor.
এ প্রসঙ্গে মিরডাল যেসমস্ত যুক্তিগুলিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, সেগুলি হল-
(i) প্রাক্-শিল্পায়নের পর্যায়ে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত রাস্ট্রেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সেভাবে না ঘটায়, আঞ্চলিক বৈষম্যের মাত্রাও তখন যথেষ্ট কম দেখা যেত। কিন্তু, রাষ্ট্রগুলি যখন তাদের প্রাপ্ত সম্পদ, নিত্যনতুন উদ্ভাবন কৌশল, উন্নত প্রযুক্তি, যথাযথ মূলধন বিনিয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় তৎপরতার সুবাদে নিজেদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে শুরু করে, সেখানে উন্নয়নের এমন একটি 'বীজকেন্দ্র' প্রতিষ্ঠিত হয়, যার দ্বারা সংশ্লিস্ট রাষ্ট্রগুলি ক্রমেই স্বাবলম্বী অর্থনীতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে।
বৈষম্যের স্তর (Level of inequality):
গুনার মিরডাল তাঁর তত্ত্বে মূলত দুই ধরনের বৈষম্যের বিষয় উল্লেখ করেছেন, যথা-
আন্তর্জাতিক স্তরে বৈষম্য (Inequality in International level):
মিরডালের মতে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটে সম্পদের উৎপাদন, ব্যবহার তথা প্রয়োগকৌশলের মধ্য দিয়ে। প্রথমদিকে, উন্নয়ন ক্ষেত্ররূপে মূলত প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ কোনো কাঁচামালের জোগান অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কাঠামোয় একটি চাহিদা অঞ্চল (Demand region) আত্মপ্রকাশ করে। এই ধরনের চাহিদা অঞ্চল পক্ষান্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে শ্রম, পুঁজি, উন্নত পরিকাঠামো, নতুন নতুন শিল্পকেন্দ্র সহ অন্যান্য একাধিক বিকাশমুখী প্রবাহ সম্প্রসারিত হয়।
আবার, যে সমস্ত অঞ্চল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিকল্প প্রাকৃতিক বা মানবীয় সম্পদের প্রবাহ অন্য কোনো সমৃৎ চাহিদা অঞ্চলের দিকে স্থানান্তরিত হয়, সেগুলি ক্রমেই জোগান অঞ্চল Sepple region)-এ উপনীত হয়। সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতিতে, বিকাশের যাবতীয় উপাদানগুলি ধীরে ধীরে জোগান sen (Supply region) থেকে চাহিদা অঞ্চল (Demand region)-এর দিকে সরে আসায়, বিকাশের সার্বিক এপ্রগতি প্রায় স্তিমিত হয়ে যায়। এইভাবে, উন্নয়নের কেন্দ্রীয়্যল (চাহিদা অঞ্চল)-এর প্রেমা যথেষ্ট প্রকট হয়ে ওঠে। সাথে জোগান অঞ্চলগুলির কষ্ট LIK, জাপান প্রভৃতি) এবং উন্নয়নশীল দেশ (যেমন-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভাতি)-গুলির মধ্যে স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হয়।
মাধ্যলিক স্তরে বৈষম্য (Inequality in regional level):
মিরডালের মতে, কোনও একটি দেশের আঞ্চলিক সমৃদ্ধি নির্ভর করে সেখানকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের স্তর ও সেবা বন্টনের প্রকৃত ভারসাম্যের ওপর। কিন্তু, বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের প্রথাগত অর্থনীতিতে উৎপাদনের হর ক্ষেত্রটি সর্বদা বিশেষ কোনও কাঁচামালের প্রাপ্তস্থল অথবা বাণিজ্যিকভাবে সুবিধাজনক কোনও একটি বিশেষ পারসেনাস্থলে কেন্দ্রীভূত। তাই, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অঞ্চলগুলি থেকে এম. মূলধন এবং সাংগঠনিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলি ক্রমশ অপর কোনো কেন্দ্রীভূত সমৃদ্ধ অঞ্চলের দিকে সরে আসে।
এর ফলে, সংশ্লিষ্ট দেশের আঞ্চলিক স্তরগুলিতেও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টি আরও প্রকট হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মিরডালের অভিমত অনুসারে কোনও একটি দেশকে তার আঞ্চলিক বৈষম্যের মোট তিনটি জর অতিক্রম করতে হয়, এগুলি হল-
(a) প্রাক-শিল্পায়নের পর্যায় (Pre-industrial stage): যেহেতু প্রাক-শিল্পায়ন স্তরে স্থানীয় সম্পদের ওপর ওরি করে অর্থনীতির ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাই এটিকে স্বপ্ন বৈষম্যের স্তর বলা যায়।
(b) শিল্পায়ন-পরবর্তী পর্যায় (The next stage of industrialization): এই স্তরে অর্থনীতি কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ায়, রুমযৌগিক কার্য-কারণ প্রতিক্রিয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্য সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়।
(c) সমৃদ্ধির পর্যায় (The stage of prosperity): অর্থনৈতিক প্রসার ঘটার কারণে সমৃদ্ধিপূর্ণ এই স্তরে অবশ্য আঞ্চলিক বৈষম্য অনেকটাই হ্রাস পায়।
• দৃষ্টান্ত (Example): দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য অত্যন্ত স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
•তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া (Theoritical repercussion):
অর্থনীতিতে উন্নয়নের মেরুকরণ এবং বৈষম্যের বিষয়টিকে মিরডাল তাঁর তত্ত্বে দুটি উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়ার মহুমে তুলে ধরেছেন। যেমন-
• সম্প্রসারণ বর্তনী (Spread circuit): কোনও একটি সমৃদ্ধ দেশের জাতীয় অর্থনীতির যাবতীয় সুফলগুলি যখন রুমযৌগিকভাবে চারপাশের অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার সার্বিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করে তোলে, হকেই সম্প্রসারণ বা বিস্তার বর্তনী বলা হয়। সাধারণত, উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনীতি বিকাশের প্রথমাবস্থায় সম্প্রসারণের হার যথেষ্ট বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। মিরডাল অবশ্য, এধরনের সম্প্রসারণ বর্তনীর প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে উন্নত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিসরে লাগামহীন পুপুঁজিবিনিয়োগ এবং উৎপাদনের উদ্বৃত্ত বৃদ্ধিকেই বিশেষভাবে নারী করেছেন, যা পরোক্ষভাবে pull effect-রূপে কাজ করে।
• বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
( 1) একটি দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবাদে চাহিদা অঞ্চলে প্রাপ্ত সম্পদলগুলি ক্রমেই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার সাথে সাথেই সম্প্রসারণ বর্তনী শুরু হয়ে যায়।
(2) এই অবস্থাটি হল কোনও একটি আত্মনির্ভরশীল দেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতি গঠনের স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ কেন্দ্রবিহিমুখী প্রতিক্রিয্যায় এখানে বিকাশের প্রতিটি উপাদানই উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল (Growth point) ক্রমশ প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলির দিকে ছড়িয়ে পড়ায়, এই অবস্থাকে চুঁইয়ে পড়া প্রভাব (Trickle downeffect)-এর সাথে তুলনা করা হয়। • প্রভাব (Effect): প্রভাবগত দিক থেকে অর্থনীতির সম্প্রাসারণ বর্তনীটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, কারণ-
(i) এই অবস্থা অধিকাংশ দেশে শিল্প সম্প্রসারণ, উদ্বৃত্ত মূলধন সৃষ্টি এবং নয়া বাণিজ্যিক নীতি আরা সানীয় বাজারগুলিকে ভীষণ উৎসাহিত করে।
(ii) উন্নত সুযোগ-সুবিধাগুলিকে ভিত্তি করে দেশের সামগি এক অর্থনৈতিক শক্তি আগের চেয়ে যথেষ্ট সুগঠিত হয়।
(iii) নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ ও শ্রমের বিশেষীকরণে এখানে উৎপাদনের (মূলত কয়লা ও লৌহ আকরিক নির্ভর শিল্পে) পরিমাণ আশানুরূপ বৃদ্ধি পায়।
(iv) শ্রমিক এবং উন্নত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের ফলে মোট উৎপাদনের খরচও এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট কমে যায়।
(v) মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের মাথাপিছু আয় ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ক্রম চক্রাকার পদ্ধতিতে আরও মজবুত হয়ে ওঠে।
তা ছাড়া, সম্প্রসারণ পরিস্থিতিতে একটি দেশ তার যাবতীয় দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন করে এবং উন্নয়নের সার্বিক প্রভাবগুলিকে কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে প্রান্তীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে সমৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত স্তরে উপনীত হয়। সেই কারণে, এই পর্যায়টিকে ছড়িয়ে পড়ার পদ্ধতি বা Spill over mechanism নামেও পরিচিত।
পশ্চাৎ-অভিগমন বর্তনী (Backwash circuit):
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ঠিক যে পর্যায়ে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের নেতিবাচক প্রভাব বিকাশের সামগ্রিক ক্ষেত্রটিকে ব্যাহত বা সংকুচিত করে, তখন থেকেই পশ্চাৎ অভিগমন বর্তনী গঠিত হয়। মিরডাল অবশ্য পশ্চাৎ-অভিগমন প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশের পশ্চাদ্গমনের বিষয়টিকে রূপক অর্থে বোঝাতে গিয়ে সেটিকে তটভূমি এলাকার ঢেউয়ের সাথে তুলনা করেছেন। বিশেষ করে, যখন একটি ঢেউ প্রথম উপকুলে ভেঙে যায়, তখন সামুদ্রিক জলরাশি তটভূমির চারদিকে সম্প্রসারণ প্রভাবের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে।
বৈশিষ্টা (Characteristics):
পশ্চাৎ-অভিগমন প্রক্রিয়ায় কোনও একটি উন্নত বা কেন্দ্রীয় স্থানের ওপর ভিত্তি কর পশ্যাৎ অভিগমন বর্তনীতে সর্বাধিক প্রধান্য পায়।
উন্নয়ন ক্ষেত্রটি এখানে (কেলারমুখী অর্থিক শাস্তির প্রধান নিয়ন্ত্রক হওয়ায়, প্রান্তিক অনুদিরামারিক দুর্বলতা স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ পায়।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা হল এই পর্যায়ের একটি অনিবার্য পরিণতি।
মির ডাল তাঁর তত্ত্বে পশ্চাৎ-অভিগমন প্রতিক্রিয়াটিকে Push factor' রূপে উপস্থাপন করেছেন, যেখানে কোনও গুনাগর অঞ্চল তার যাবতীয় অর্থনৈতিক উপাদানগুলিকে সমৃদ্ধশালী অপর কোনও অঞ্চকেরেছেন, যেখানে কোনও এহনের পরিস্থিতি আবার কয়েকটি আনুষঙ্গিক ঘটনার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত। স্কলের দিকে সেক।
(১) পুঁজি স্মানান্তর (Movement of capital): একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় সাল এবং অনগ্রসর প্রান্তবর্তী গুদলগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের সুত্রপাত ঘটে পুঁজি স্যানান্তরের মধ্য দিয়ে। কারণ, পরিকাঠামোর আক্রান্তদে প্রাক্তক অঞ্চলগুলি সর্বদা পিছিয়ে থাকায়, তাক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের সিংহভাগই সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে চলে আসে। দৃষ্টান্ত *সয়খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য, উন্নয়নশীল লেগুলির দরিদ্র মানুষের সঞ্চিত পুঁজির একটা বড়ো আশ (সেখানকার ব্যাঙ্কের মাধ্যমে) নীদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি করে (চিত্র-9.11a)
(2) পরিসেবা এবং পরিকাঠামো (Services and Infrastructure): উন্নয়নের কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলিতে পরিসেবা এবং পরিকাঠামোগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট বেশি থাকায়, সেখানকার বাণিজ্যভিত্তিক বাজার অর্থনীতি আরো মজবুত কাঠামোবিশিষ্ট হয়। কেন্দ্রীয় অঞ্চলের এই ধরনের সমৃদ্ধ অবস্থা প্রান্তীয় অঞ্চলের সাথে সর্বদা একটি *স্পষ্ট বৈষম্যযুক্ত বাতাবরন গড়ে তোলে (চিত্র-9.11)।
• প্রভাব (Effect): পশ্চাৎ অভিগমন অর্থনীতিতে শুধুমাত্র সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চল বাদে বাকি সমস্ত প্রান্তীয় অঞ্চলগুলি উৎপাদনশীলতা বা অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার নিরিখে বিভিন্নভাবে পিছিয়ে থাকে। বিশেষ করে-
(1) উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা ক্রমশ হ্রাস পায়।
পরিকাঠামো এবং শিল্প প্রসারের অভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।
(iii) মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মান উভয়ই নিম্নগামী হয়ে পড়ে।
(iv) উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাগুলি বারে বারে ব্যাহত হওয়ায়, অনুন্নয়নের ঘেরাটোপে প্রান্তীয় অঞ্চলগুলি ধীরে ধীরে আবন্ধ হয়ে যায়।
প্রসঙ্গাত উল্লেখ্য, 1973 খ্রিস্টাব্দে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে অধ্যাপক Thomas Vietorisz এবং Bennet Harrison মন্তব্য করেন, পশ্চাৎ-অভিগামী অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় উৎপাদনশীল বাজার, প্রযুক্তিগত স্তর, শ্রম বা মজুরীর ওপর একাধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
অন্যদিকে, 1973 খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক Gary Gaile প্রান্তিক এলাকায় শহুরে পরিকাঠামো বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রতিকূল অবস্থাকেও পশ্চাৎ-অভিগামী বর্তনীর অনিবার্য পরিণতি রূপে দেখিয়েছেন।
মিরডালের তত্ত্বের সমালোচনা (Criticisin):
মিরডাল প্রদত্ত তত্ত্বের সমালোচনায় অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের একাধিক অভিমত প্রকাশ করেছেন, যেমন-
(i) মিরডাল তাঁর তত্ত্বে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে শ্রম, মূলধন, বাণিজ্য সহ একাধিক বিষয়গুলিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরলেও, পরিবেশগত কোনও প্রভাবকেই তিনি কিন্তু অর্থনীতির নির্ণায়করূপে মানতে চাননি।
(ii) উন্নত দেশগুলির প্রসঙ্গক্রমে মিরডাল ধারাবাহিক সম্প্রসারণ প্রতিক্রিয়ায় যে সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি পৃথিবীর সমস্ত উন্নত দেশের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে, পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্প্রতিক বিভাজনের দৃষ্টান্ত প্রসঙ্গে মিরডালের এই ধারণাকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দেয়।
(ⅲ) মিরডাল বর্ণিত পশ্চাৎ-অপসারণ প্রতিক্রিয়ার নীতিটি উপনিবেশিক কাঠামোভিত্তিক অর্থনীতিতে তৎকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, উদীয়মান বর্তমান অর্থনীতিতে ভারত, বাংলাদেশ, চিন প্রভৃতি দেশের ক্ষেত্রে সেটি কিন্তু সমভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
(iv) চাহিদা এবং সরবরাহ সংক্রান্ত প্রেক্ষাপটে মিরডাল যে সাধারণীকরণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন, সেটিকেও পৃথিবীর সমস্ত দেশে প্রয়োগ করা যায় না। যদি তাই হত, তাহলে অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি চিরকালই উন্নতির অন্তরালেই থেকে যেত।
(v) শ্রমিকের মজুরিগত তারতম্যের নিরিখে মিরডাল পরিব্রাজন এবং এর মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টির যে কথা উল্লেখ করেছেন, সেই ধারণাটিকে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, শ্রমিকের মজুরিগত তারতম্য শ্রমের দক্ষতা বৃদ্ধির নিরিখে সর্বদাই যথেস্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ঠিক সেই কারণে, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের চাহিদা এবং মজুরি উভয়ই যথেষ্ট বেশি হয়ে থাকে।
(vi) পৃথিবীতে এমন কিছু দেশ রয়েছে, যাদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, উন্নয়নের বাধারূপে পশ্চাৎ-অপসারণ প্রভাবকে কৌশলীভাবে কাটিয়ে উঠে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদেরকে যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অবশ্য, এক্ষেত্রে যে দেশ দুটির নাম প্রথমেই উঠে আসে তা হল ভারত এবং বাংলাদেশ।
vii) বর্তমানে বিশ্বব্যাঙ্ক অথবা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির ( বৈষম্য দূর করতে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত খাতে বিপুল পরিমাণে অর্থব্যয় করে থাকে। এর ফলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নে অনিবার্যভাবেই প্রভূত জোয়ার আসে। মিরডাল কিন্তু তাঁর তত্ত্বে এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে কোনও ধারণাই প্রদান করেননি।
প্রান্তলিক উন্নয়নের নিরিখে মিরডালের তত্ত্বের গুরুত্ব (Importance of Myrdal's theory towards regional development):
নিরডালের তত্ত্বটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হলেও, আঞ্চলিক উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক দিক থেকে সেটি কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ-
(।) মিরডালের তত্ত্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক আন্তঃসম্পর্কতায় একটি দেশের উন্নয়নের সার্বিক ভবিষ্যৎ ঠিক কোন পথে এগোবে, সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
(ii ) উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থসামাজিক দুর্বল প্রেক্ষাপট এবং আধুনিক কৃৎকৌশলের অভাবের কারণে তারা চিরকাল কীভাবে উন্নত দেশগুলির তুলনায় বঞ্চিত থেকে যায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে মিরডালের তত্ত্বে।
(iii) নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতির পশ্চিমি এবং একপেশে উন্নয়ন তত্ত্বের দুর্বলতাগুলিকে নিরডাল নতুন আঙ্গিকে তাঁর তত্ত্বে উপস্থাপন করে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
(iv) মিরডাল দারিদ্র দূরীকরণের উদ্দেশ্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ভূমিসংস্কার নীতিকে মেনে নিয়েছিলেন, যা আন্ন্যলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক
(v) মিরডালের তত্ত্বটিতে শিল্পোন্নয়নকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিকাশের সার্বিক চিন্তাধারা বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের পটভূমিকায় ছিল একটি জোরালো ধাক্কাস্বরূপ।
(vi) অর্থনীতিবিদ Rosenstein-Rodan-এর মতে, যদি অর্থনীতির সমস্ত ক্ষেত্রগুলি উন্নয়নের নিরিখে একযোগে প্রত্যাশিতভাবে বিকশিত হয়, তাহলে প্রতিটি রাষ্ট্রই আঞ্চলিক স্তরের বিভিন্ন খাতে তাদের পণ্যের চাহিদা তৈরি করে আধুনিক শিল্প-বাণিজ্যভিত্তিক স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। কাজেই, আঞ্চলিক স্তরে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশের অর্থনীতিকে সুগঠিত করার দিক থেকে মিরডালের তত্ত্বটি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
(vii) অনেকে মনে করেন, অ্যাডাম স্মিথের অর্থনৈতিক তত্ত্বটি যেমন ছিল ইংল্যান্ডের দুশো বছরের অর্থনৈতিক সমস্যার একটি উল্লেখযোগ্য পটভূমি, তেমনই মিরডালের তত্ত্বটিকেও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা উন্মোচনের একটি অন্যতম আকর। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান কার্যকারণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে কীভাবে একটি উন্নয়নশীল তথা অনগ্রসর অঞ্চল স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ভারসাম্যে উপনীত হবে, তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এই তত্ত্বটিতে বহুমাত্রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
(vii) Amitava Dutt (1989), William Darity এবং Lewis Davis (2005) প্রমুখ গবেষকের মতে, মিরডালের তত্ত্বটি 1970-1980-এর দশকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে 'উত্তর-দক্ষিণ' গঠনবাদী মডেলের মধ্যে একটি স্পষ্ট সীমারেখা টেনে দেয়। বস্তুত, মিরডালের তত্ত্বে একটা দিক খুবই উল্লেখযোগ্য, তা হল-আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পরিসরে যতই অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকুক না কেন, আদর্শগত দিক থেকে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পিত নীতির বাস্তবায়ন ঘটানো যায়, তাহলে পশ্চাৎ প্রভাবকে কাটিয়ে উঠেও যে-কোনও দেশ সমৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উপনীত হতে পারে। সেজন্য, উন্নয়নের আঙ্গিকে পূর্ণাঙ্গ এবং সময়োপযোগী সমস্যা সমাধানের যাবতীয় পথের সন্ধান এই তত্ত্বে রয়েছে। তা ছাড়া, সমগ্র পৃথিবীব্যাপী একটি ভারসাম্যযুক্ত অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে মিরডালের তত্ত্বটি একটি বিশেষ প্রেরণাস্বরূপ।
■ মন্তব্য (Remarks): আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে মিরডাল "Doing everything, everywhere" নামক দৃষ্টিভঙ্গিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি, সর্বদা বিকাশের ভারসাম্য নীতির ওপর বিশ্বাসী ছিলেন। বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে তুলতে "Integrated development plan" বাস্তব রূপায়ণের কথা মিরডাল উল্লেখ করেছিলেন। তিনি স্পষ্টতই বুঝেছিলেন, স্থান ও কালের ধারাবাহিক পরিসরে রাষ্ট্রভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়নের বৈষম্য কখনোই কাম্য নয়। তাই বলেছিলেন-"Economically, as well as socially, the Welfare State [is] a conspicuous success."।
মেহের তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশে দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের সুস্পষ্ট প্রতিফলন মিরডালের ক্রমবর্ধমান ও চক্রাকার তাড় পরিলক্ষিত হয়, তাই উন্নয়নের নিরিখে ভারতীয় অর্থনীতির ভালো-মন্দ কিংবা অগ্রগামী পন্যদের তাকান্ত দিকগুলিকেই এই তত্ত্বের মাধ্যমে খুব সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। অবশ্য, ভারতীয় অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে মিরডালের রিয়ারকেন্দ্রিক প্রাসঙ্গিকতার একটি দীর্ঘ পটভূমিও রয়েছে। বিশেষ করে, ইউনেস্কোতে কর্মরত অবস্থায় মিরডাল ভারতের দিল্লিতে প্রায় চার বছর সময় কাটিয়েছিলেন। সেই সময়, ভারতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যে নিরভাল ইরা এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যের বিষয়টিকে খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, চটকে তিনি পরবর্তীকালে "Asian drama'-তে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।
ভারতীয় অর্থনীতির উন্নয়ন সংক্রান্ত পরিসরে মূলত যত ধরনের আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়, সেটি মিরডাল হর্ণিত তত্ত্বের সাথে প্রায় অনেকটাই মিলে যায়। বিষয়টিকে অনুধাবনের জন্য এখানে বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ Case stumly আকারে তুলে ধরা হল। যেমন-
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য:
ভারত যদিও একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদশালী দেশ, কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃতীয় বিশ্বের দেশরূপে পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য পটভূমি এখানে বহুদিন ধরেই রয়ে গেছে। বিশেষ করে, এক্ষেত্রে অস্টাদশ শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শাসিত ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গাটি মিরডাল বর্ণিত 'Backwash effect"-এর সাথে হুবহু মিলে যায়। কারণ, শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে ইংল্যান্ডের উৎপাদন কাঠামো এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে বিপুল জোয়ার এসেছিল, তা রমেই ভারতকে একটি বৃহৎ পুঁজি সংগ্রহের আধারে পরিণত করে। এর ফলে, ইংল্যান্ড কাঁচামালের উৎসাঞ্চল না হয়েও শুধুমাত্র ভারতের সাথে অবৈধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের হাত ধরে একটি বৃহৎ চাহিদা অঞ্চল (Demand region)-এ উপনীত হয়। অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে ভারতে উৎপন্ন কাঁচামালগুলি ক্রমশ ইংল্যান্ডে পরিবাহিত হওয়ায়, ক্রমেই একটি পিছিয়ে গড়া জোগান বা সরবরাহকারী অশ্বল (Supply mgion)-এ পরিণত হয় এবং এদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর মেরুদন্ড ক্রমশ আরো দুর্বল হয়ে পড়ে।
1990-এর দশকে ভারতীয় অর্থনীতির ২০০ উদারীকরণ ঘটা সত্ত্বেও, পরবর্তী সময়গুলিতে এখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আর্থিক লেনদেনের ঘাটতি ছিল যথেষ্ট প্রকট। যেমন, 2017 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে চলতি খাতে যেখানে ঘাটতির পরিমাণ চিল 1384 কোটি মার্কিন ডলার, সেটি 2018 চিস্টাব্দের মে মাসে প্রায় 1462 কোটি টাকায় পৌঁছায়। সম্প্রতি, কোভিড-19 পরিস্থিতিতে এই ঘাটতির সমস্যাটি কিন্তু আরও বেশী ভয়াবহ আকার নিয়েছে। RBI প্রদত্ত ভারতের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজোর 9.15 নং ধারণাচিত্রটিকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে ভারতের ঘাটতির বিষয়টি আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
তা ছাড়া, উৎপাদনশীল অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যের নিরিখেও ভারতের সম্মান ক্রমশ তলানিতে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। এর ফলে, ভারত থেকে অসংখ্য, দক্ষ কর্মী শুধু কিছুটা বাড়তি বেতনের আশায় বছরের বিভিন্ন সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরবে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, 2020 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে আমের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে ভারতের সথান ছিল 72:-তম। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র কর্মসূত্রে বিদেশে পাড়ি দেশের মানুষের সংখ্যা দেখেই উপলব্ধি করা যায়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল দেশরূপে ভারতবর্ষ এখনো কতটা পিছিয়ে রয়েছে।
ভারতের আগুলিক বৈষম্য।
ভারতের আঞ্চলিক বৈষমার প্রেক্ষাপট অতীত কাল থেকেই বাণিজ্যের বহুমুখী পথ ধরেই সূচনা হয়েছিল। বিশেষ করে, সপ্তদশ শতকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পুঁজিপতিরা (যেমন-ডাচ, ফরাসী, পোর্তুগীজ প্রভৃতি) প্রাথমিকভাবে ভারতের যে সমস্ত স্যানে বাণিজ্যিক খাঁটি গেড়ে বসেছিল, সেই স্থানগুলিই উন্নত অর্থনীতির প্রধান ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীকালে, ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। কারণ, ইংরেজরা তাদের বাণিজ্য এবং শাসন পরিচালনার সুবিধার্থে ভারতের কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই সহ একাধিক নগরাঞ্চলকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ায়, তৎকালীন দেশের অধিকাংশ শিল্প ও পরিকাঠামোগুলি ওই সমস্ত স্থানগুলিতে কেন্দ্রীভূত থেকে যায়। এইভাবে, ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে আঞ্চলিক বৈষম্য যথেষ্ট প্রকট হয়ে ওঠে।
এরপর স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এদেশের আঞ্চলিক বৈষম্যকে কাটিয়ে তোলার একাধিক প্রচেষ্টা শুরু করা হলেও, তা পুরোপুরি সাফল্য পায়নি। অনেকক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ভারতের যে সমস্ত অঞ্চল বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ, একাধিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার সুবাদে সেখানেই সর্বাধিক পরিমান আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। এক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন বন্দর এলাকা, মূল্যবান খনিজ বা শক্তি সম্পদে ভরপুর অঞ্চল অথবা কোনও ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহরাঞ্চল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে প্রাধান্য পেয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের প্রান্তিক অঞ্চলগুলি মূলধন, দক্ষ মানবসম্পদ, এমনকি সঠিক পরিচালনার অভাবে, আর্থিকভাবে সর্বদাই ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। আমরা যদি দেশের কেন্দ্রীয় শহররুপে দিল্লি এবং প্রান্তিক অঞ্চলরূপে তার পার্শ্বস্থ স্থানগুলির কথা বিবেচনা করি, সেখানে এই ধরনের আঞ্চলিক বৈষম্য সহজেই প্রকাশ পাবে। একইভাবে, ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যগুলিকে যদি তাদের আর্থসামাজিক এবং ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ধরে বিবেচনা করা হয়, সেখানেও উন্নয়নের দীর্ঘকালীন বৈষম্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
একাধিক অর্থনীতিবিদ ভারতের আন্তঃরাজাগুলিতে উন্নয়নের বৈষম্য প্রসঙ্গে বর্তমানে রাজনৈতিক বেশকিছু কারণ জুড়ে দিয়েছেন। যেমন, অর্থনীতিবিদ Brack মনে করেন, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে থাকা ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দল বা কোনও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নিজস্ব এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প স্থানীয়করণ ঘটানো আঞ্চলিক বৈষম্যকে যথেষ্ট বাড়িয়ে তুলেছে। ইদানিং, ভারতের আন্তঃরাজ্যগুলিতে মজুরির হারে একটা ব্যাপক তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। সেই কারণেই বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কর্ণটিক সহ একাধিক রাজ্যের মধ্যে নতুন কাজের উদ্দেশ্যে শ্রমজীবিদের একটা বড় অংশের স্থানান্তর ঘটতে দেখা যায়।
বিখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটির একটি গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমান ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য বিগত 96 বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, এখানকার অঞ্চলভিত্তিক ধনী-দরিদ্রদের আয় বণ্টনের বিরাট ফারাক ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পথ যথেষ্ট সম্প্রসারিত করেছে। এইভাবে যদি একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে, তাহলে সেখানে মিরডাল বর্ণিত Backwash effect অনিবার্যভাবেই অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকবে।
তবে, ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈষম্য সত্ত্বেও, এখানে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির নিয়মমাফিক লগ্নিকরণ, শিল্পস্থাপন, কর্মসংস্থান, বাৎসরিক মহার্যভাতা বা উপার্জন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে অনবরত একটি স্থায়ী ভারসাম্য গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছে।