welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আঞ্চলিক উন্নয়নের তাত্ত্বিক ধারণা এবং মডেলসমূহ

আঞ্চলিক উন্নয়নের তাত্ত্বিক ধারণা এবং মডেলসমূহ


প্রবৃদ্ধি মের জন্তু (Growth Pole Theory):

প্রাথলিক স্তরে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সামনে রেখে পৃথিবীতে যতগুলি তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে, তার মধ্যে প্রবৃদি মের তত্ত্বটি আজম। মূলত আনলিক অসাম্যের অবতারণায় তত্ত্বটি বিকশিত হলেও, বর্তমানে, তার মধ্যে প্রবেগমূলক প্রচেখ্য উন্নত এবং উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো, সার্বিক উৎপাদনকে ঘিরে মায়ান্তি সংযোগ এবং ভবিষ্যতে সংশ্লিস্ট দেশগুলির সুষম ফিকাশকে বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরতে যথেষ্ট সহায়ক। অত্যন্ত প্রভাবশালী এই তত্ত্বটি সম্পর্কে 1972 খ্রিস্টাব্দে A.R. Kukulins) উল্লেখ করেন-The grourth pole at present performing the three functions of theoritical concerts, planning instromunt hypothesis for historical studies.

তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা (Establishment of the Theory):

প্রকৃখি মেবু তত্ত্বটিকে পশ্চিমি ইউরোপীয় ঘরানার নগরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক চিন্তাধারার অন্যতম ফসল বলা যায়। এই তত্ত্বের প্রাথমিক ভিত গড়ে উঠেছিল Schumpeter-এর ধারণার মাধ্যমে। তিনি মনে করতেন- "velapmentrs as result of disconti qurbs in a fenamic world তাঁর এই ধারণাটিকে অবলম্বন করেই 1955 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের বিদস্য অর্থনীতিবিদ Francois Perraux প্রবৃদ্ধি মেবু তত্ত্বটির কাঠামো গড়ে তোলেন এবং 1966 খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিবিদ Boudeveilli তত্ত্বটিকে ভৌগোলিক দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে অবশ্য Hansen, Hirschman, Darwont, R.C. Chandan, Glassen, Myrdal প্রমুখ সর্বসম্মতভাবে এই তত্ত্বটির সমর্থনে তাঁদের উল্লেখযোগ্য মতামত ব্যক্ত করেন।।

ফরাসি ভাষায় প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্ব (Growth pole theory)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, Perraux যেমন কোনও একটি ভৌগোলিক পরিসরকে ইঙ্গিত করে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটির কর্ণনামূলক (Descriptive) দিক তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে Boudeveilli বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রসঙ্গক্রমে এই তত্ত্বটিকে পরিকল্পনামূলক (Planning oriented) ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তত্ত্বকেন্দ্রিক মূল বিষয় (Theoritical Core Issues):

একটি দেশের শিল্পকাঠামোয় অর্থনৈতিক কেন্দ্রীকরণ এবং বিকেন্দ্রীকরণের সুষ্ঠু সমন্বয়কে প্রাধান্য দিয়েই মূলত কান্দির মেরু তত্ত্বটি উঠে এসেছে। এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, একটি সমৃদ্ধশালী কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে।

John Glasson প্রবৃদ্ধি মেরূতত্ত্বের ব্যাখ্যায় মূলত তিনটি বিষয়কে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছেন, যথা-

(1) প্রধান শিল্প এবং পরিচালনসাধ্য উৎপাদনক্ষেত্র (Leading industry and propulsive firm),

(2) মেরুকরণ প্রভাব এবং অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবন (Polarization effects and agglomeration economies),

(3) সম্প্রসারণ প্রভাব (Spread effects)

তত্ত্বের প্রথমেই সমগোত্রীয় আঞ্চলিক পরিসরের একটি বিশেষ এলাকায় বিভিন্ন সম্পদের (জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, খনিজ তেল প্রভৃতি) জোগানের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পিত উৎপাদনক্ষেত্র স্থাপনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে, প্রধান শিল্পাঞ্চলটির উদ্ভাবনী কৌশল, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, এবং বিনিয়োগের আকর্ষণে অন্যান্য সহযোগী শিল্পগুলির ক্রমপুঞ্জীভবন (Agglomeration) ঘটিয়ে একটি প্রবৃদ্ধি মেরুসস্থল গড়ে তুলবে। প্রাক-মেরুসস্থল সৃষ্টির পর্যায়ে আঞ্চলিক অসাম্য সর্বাধিক। থাকলেও পরবর্তীকালে মেরুসস্পলটির বিকেন্দ্রীভূর অর্থনৈতিক প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে শিল্পপ্রধান ক্ষেত্রটির সাথে অন্যান্য সহযোদ উৎপাদনাক্ষেত্রগুলির পারস্পরিক পশ্চাৎবর্তী (Backward) এবং অগ্রবর্তী (Forward) সংযোগ যত বাড়বে, ততই উৎপাদন ও পরিসেবার অর্থনৈতিক অভিমুখ ক্রমশ প্রান্তবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার সমৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়ে উঠবে।

উন্নয়নের একটি তাত্ত্বিক কাঠামোরূপে উঠে আসা প্রবৃদ্ধি মেরুর আঞ্চলিক সংযোগ ও সমৃদ্ধির বিষয়টিকে 9.17 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

তত্ত্বের সরলতম দৃষ্টান্ত (The Simpliest Example of the Theory):

প্রবুন্দি মেরু তত্ত্বটির সরলতম ব্যাখ্যায় বিভিন্ন ভৌগোলিক একটি জলপূর্ণ জগ এবং কয়েকটি কাচের গ্লাসতে পাশাপাশি রেখে মডেল আকারে উপস্থাপন করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন, উন্নয়নের প্রাকৃঅবস্থাটি সংশ্লিন্ট গ্লাসের ক্রমান্বয়ে অল্প থেকে পূর্ণমাত্রায় জলপূর্ণ হওয়ার ক্রমিক ঘটনার সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে, উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় স্থানটির ধীরে ধীরে উন্নয়ন ক্ষেত্র- রূপে আত্মপ্রকাশ করার বিষয়টি কয়েকটি গ্লাসে কম থেকে বেশি পরিমাণে জল ঢালা এবং গ্লাসে জলের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির আগের অবস্থার সময়কালের সমতুল্য। একইভাবে, যখন একটি কেন্দ্রীয় অঞ্চল তার উন্নতির চরম পর্যায়ে উপনীত হয় এবং সেখান থেকে উন্নয়নের অভিমুখ ক্রমশ গ্লাস থেকে জলের উপচে পড়ার ঘটনাটির সাথে তুলনীয়। এইভাবে, গ্লাসে চুইয়ে পড়া জলের মতো উন্নয়ন যখন কোনও একটি অঞ্চলের সার্বিক সমৃদ্ধিতে অনুক্রমিকভাবে সামিল হয়, তখনই প্রবৃদ্ধি মেরু (Growth pole) তত্ত্বটি একটি আদর্শ রূপ পায়। বিষয়টিকে পাশের 9.18 নং চিত্রে উপস্থাপন করা

স্থানকেন্দ্রিক মর্যাদাক্রম (Space oriented hierarchy):

আধুনিক বিশেষজ্ঞমহল মনে করেন, প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বে কোনও একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক ক্রম-উন্নতির প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বা প্রবৃদ্ধি মেরুস্থলটিকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও, বাস্তবে প্রবৃদ্ধি বিন্দু থেকে প্রবৃদ্ধি মেরুতে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘকালীন ধারাবাহিক পর্যায়ক্রম সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। বিষয়টি আলোচনার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় মর্যাদার বিভিন্ন স্থানক্রমগুলিকে এখানে একত্রে উপস্থাপন করা হল।

প্রবৃদ্ধি বিন্দু (Growth point): উন্নয়নের প্রাথমিক কর্মকান্ডের সূত্রপাত যে ক্ষুদ্রপরিসর স্থান (Node) কেন্দ্রিক গড়ে ওঠে, তাকেই প্রবৃদ্ধি বিন্দু বলা হয়। সাধারণত বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই, প্রবৃদ্ধি বিন্দুতে একক অর্থনৈতিক আধাবলীর প্রাধান্য থাকে। বিকশিত ও বিকাশশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যার পরিমাণ অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি বিন্দুর আয়তন ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে। যেমন-বিকশিত দেশগুলির বৃহৎ প্রবৃদ্ধি বিন্দু যেখানে মাত্র 1-10,000 জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গড়ে ওঠে, সেখানে বিকাশশীল দেশগুলিতে অতি স্বল্প পরিসর স্থানে মোটামুটি । লক্ষ বা তার বেশি জনগোষ্ঠী নিয়েও গড়ে উঠতে দেখা যায়। এই ধরনের প্রবৃদ্ধি বিন্দু সরাসরি খাদ্য বা অন্য কোনও সম্পদ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্র গুলির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে। 

 প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র (Growth centre): কোনও একটি অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির ক্ষুদ্র স্থলটি যখন উপযুক্ত পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনা, বিপুল বিনিয়োগ এবং উন্নততর পরিসেবাভিত্তিক কার্যাবলীর দ্বারা সমগ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুখ্য উৎসস্থল হয়ে দাঁড়ায়, তাকেই প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র বলা হয়। প্রবৃদ্ধি বিন্দু থেকে যখন একটি স্থান অর্থনৈতিক কেন্দ্রস্থলে উপনীত হয়, তখন সেখানকার সমৃদ্ধ অর্থনীতি, শিল্পের বিকাশ, উচ্চ মজুরি এবং সার্বিক পরিসেবার জন্য বহু মানুষ গিয়ে ভীড় জমাতে শুরু করে। ফলে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় এলাকার জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লক্ষ বা তারও অধিক হয়ে যায়। পেরক্স তাঁর প্রবৃদ্দি মেরু তত্ত্বে বলেছেন, একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রস্থল এককভাবে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলায়, সেখানকার আঞ্চলিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হয়ে একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি মেরুসস্থলে উপনীত হয়। মেনুক্ষেত্র

বিশেষত্ব (Speciality):

(1) যে কোনও রাষ্ট্রের নিরিখে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র হল শক্তিশালী এবং উন্নয়নমুখী একটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র।

(2) এই ধরনের অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলি মূলত অত্যন্ত গতিশীল প্রকৃতির।

(3) এখানে কাঁচামাল সংগ্রহ, মজুতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পুনর্বণ্টনের সামগ্রিক পরিকাঠামো স্পষ্টতই বিদ্যমান।

* • বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ব্যয় সংকোচনের যাবতীয় সুযোগসুবিধা এবং পরিসেবাগত সুফলগুলি এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।

* প্রবৃদ্ধির অধিকাংশ কেন্দ্রস্থলগুলি সর্বদাই কোনও বৃহৎ শহর বা নগরাঞ্চলের পরিসরে গড়ে ওঠে।

 অনেক সময় কোনও গ্রামীণ সেবাকেন্দ্রস্থলগুলিতে সাফল্য বা সংযোগের মাত্রা বেড়ে গিয়েও সেটি একটি উন্নত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রের উপনীত হতে পারে।

প্রবৃদ্ধি মেরু (Growth pole): পেরশ্নের তত্ত্বটি সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে উন্নয়ন অক্ষের আন্তসংযে প্রবৃদ্ধি মেরু কাঠামোর ওপর। কোনও একটি অঞ্চলে উন্নয়ন কেন্দ্রস্থল তার পার্শ্বস্থ প্রান্তীয় এলাকাটির সাথে ঠিক যতটা বৈষম্য সৃষ্টি করে, প্রবৃন্দ মেরুস্থল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেখানকার উন্নয়ন আশাব্যাঞ্জক একটি অবস্থায় উপনীত হয়। আসলে, প্রবৃদ্ধি মেরু হল নগরায়িত তথা আঞ্চলিক উন্নয়নের কাঠামোয় গড়ে ওঠা এমন একটি আধার, যেখান থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এবং জীবনযাত্রার গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য সমস্ত ধরনের সম্পদ ও পরিষেবা প্রবাহ সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে হয়।

একইভাবে John Speakman এবং Marjo Koivisto তাঁদের World Bank থেকে প্রকাশিত "Growth poles Raising Competetiveness and Depending Regional Integration" নামক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধি মেরুস্থলের যে ধারণাটি দিয়েছেন, তা হল- "Growth poles, as noted earlier, are comprised of multiple simultaneous investments coordinated throughout many sectors with the purpose of supporting self-sustaining industrialization in a country."

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যখন একটি স্থানে শিল্পগুচ্ছ (Industrial complex) সমন্বিত প্রধান মেরুস্থলটি পরিসরগত দিক থেকে আয়তনে বর্ধিত্ব হয়, তখন পশ্চাৎপদ সংযোগ (Backward linkage) এবং সম্মুখপদ সংযোগ (Forward linkage) মারফত প্রান্তিক অঞ্চলগুলির প্রতিটি শিল্প ইউনিটগুলিকে ক্রমশ একটি স্থিতিশীল ভারসাম্যের হয়।

এই পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ এবং পরিসেবার গতিশীল সুযোগ-সুবিধাগুলি সামগ্রিকভাবে প্রান্তিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামোটিকে আরো শক্তিশালী ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। এইভাবে, উত্তরনের অক্ষরূপে প্রবৃদ্ধি মেরুর বিকাশ আঞ্চলিক উন্নয়নে অতি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠো।

নামকরণ নিয়ে বিতর্ক (Controversy Over Naming): প্রবৃদ্ধি মের তত্ত্বে দিভির অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে একাধিক ধারণা থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এই তত্ত্বের উদ্ভাবকগণ এককভাবে মেরুকরণের আক্ষরিক নামকরণ নিয়ে কোনও সর্বসম্মত সিখান্তে উপনীত হতে পারেননি। যার ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রবুন্দি মেবু ক্ষেত্রটিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যেমন-Growth centres, Growth foct, Growth poles, Development poles, Growth zones, Growth ateas. Development ases প্রভৃতি। প্রবৃদ্ধি মের ভত্ত্বের নামকরণ এই ধরনের অসংগতিকে সামনে রেখে Darwent যথার্থই বলেছেন- illas Better anciated with an enormous variety of mdistinct an ill-defined concepts and notione তা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের আঞ্চলিক বিকাশের স্তর বা পর্যায় বিশ্লেষণের একটি অতি জনপ্রিয় মতবাদ। John Glasson তাই বলেছেন- 'Many of the criticiem levelled at central place theory as a model regional spatial structure can be answered by the theory of growth poles.

আঞ্চলিক পরিকল্পনার সাথে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বের সম্পর্ক(The Relationship of Growth Pole Theory with Regional Planning)

অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় পৃথিবীর একাধিক দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কাঠামোয় নৈতিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটিকে ব্যবহার করে আসছে। মূলত, আঞ্চলিক অসাম্যের অবতারণায় তত্ত্বটি বিকশিত হলেও, বর্তমানে এই তত্ত্বটি উন্নত ও উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশের উৎপাদন তথা পরিকাঠামোকে ঘিরে আন্তঃশিল্প সংযোগ ভবিষ্যতে সুষম অর্থনীতির বিকাশকে বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরে। এখানে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার সাথে প্রবৃদ্ধি মেবুতত্ত্বের সম্পর্কটিকে বেশ কয়েকটি বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

পৃথিবীর এর প্রশ্নশি মেবুক্ষেত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। বিশেষ করে, যে পূর্ব শর্তগুলি প্রবৃদ্ধি মের গঠনে অনির পূর্ববর্তী সামান্যোলকে নির্দিষ্ট মডেলে রেখেই পরিকল্পনার যাবতীয় কার্যক্রমকে একটি সিস্টেম আকারে সেখানে প্রদর্শিত হয়। অনেকসময়, এই ধরনের আঞ্চলিক পরিকল্পনামূলক সিস্টেমে বেশ কতকগুলি কার্যকরী আন্তঃসংযোনীর বিষয়ের কথা বলা হয়, যেগুলি মেকুতত্ত্বের প্রয়োগমূলক বাতাবরদের আঙ্গিনায় যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। যেমন-

(i)বর্তমানে, পরিমার্জিতভাবে কোনও পরিকল্পনা রূপায়ণে প্রথমেই একটি সমস্যাবহুল স্থানকে চিহ্নিত করে, সেখানে পৃথকভাবে উন্নয়ন, পরিকাঠামো, অনুদান কিংবা এদের সমন্বয় নীতিগুলিকেই বিবেচনার জন্য সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই ধরনের পরিকল্পনা মানুষের বৃত্তিগত ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করে একটি দেশের অর্থনীতিকে প্রাথমিক স্তর থেকে প্রগৌণ স্তরে পরিচালিত করে।

(ii) বিংশ শতাব্দীতে অধিকাংশ দেশই প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বের Top to bottom approach' অর্থাৎ মেরু থেকে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত উন্নয়ন এর ধারাকে অধিক শক্তিশালী করেছিল, যা পরবর্তীকালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অধিকাংশ শহর এবং শিল্পাঞ্চল বিকাশের অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। এরমধ্যে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযেগ বৃহদায়তন প্রবৃদ্ধি মেরু ক্ষেত্র হল টোকিয়ো, বেজিং, নিউইয়র্ক প্রভৃতি।

(iii) একটি দেশের আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে প্রবৃদ্ধি মেরুতত্ত্বের চুঁইয়ে পড়া উন্নয়ন প্রবাহের ভূমিকাটিও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পশ্চিমি বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ব্রিটেনেই আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে প্রবৃষি মেরুতত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো হয়েছিল (Hali, 1992 খ্রিঃ)। বিশেষ করে, শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে গৃহীত কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক মেরুকরণের চ্যালেঞ্জ তৎকালীন ব্রিটেনে দারিদ্রের সমস্যা, স্বাস্থ্য সমস্যা, আবাসন সমস্যা প্রভৃতির সমাধান ঘটিয়ে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করে।

(iv) প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বানুযায়ী কোনও একটি বিশেষ উন্নয়নকেন্দ্রে বিভিন্ন সহায়ক শিল্প এবং বিনিয়োগের পুঞ্জীভূত প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে অক্ষুন্ন থাকায়, সেখানকার উৎপাদনের খরচ আশানুরূপভাবে কমে যায়। ফলে আঞ্চলিক অর্থনীতির সুফলগুলি খুব সহজেই সর্বস্তরে ছড়িয়ে যায়, যা পরবর্তীকালে অন্য কোনও একটি উৎপাদন কাঠামোয় নতুন করে বিনিয়োগের প্রেরণা বৃদ্ধি করে আঞ্চলিক উন্নয়নকে কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছে দেয়।

(v) কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারত, বাংলাদেশ, চিন, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে উন্নয়ন সংরোধ বিভিন্ন পরিকল্পনা (কেন্দ্রীয় স্তর থেকে রাজ্য বা প্রাদেশিক অঞ্চলগুলিতে। বাস্তবায়িত-করার মূল আদর্শপক্ষায়ুন প্রবৃদ্ধি মেরুতত্ত্বের মধ্যেই নিহিত।

(vi) সম্মানিক মেরুকরণ প্রথা অনেকক্ষেত্রেই কোনও একটি রাষ্ট্র পরিচালনার কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অনুপ্রেরণাস্বরূপ। ভারতে প্রবৃদ্ধি মেরুস্থল গঠনের কাঠামোর কালিয়াত অর্থনৈতিক দুত্তীয় গৰুবার্ষিকী পরিকল্পনায় 'Nehru-Mahalonobis' মডেলে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, ছত্তিশগড়ে ভিলাই এবং ওডিশায় রৌরকেরা লৌহইস্পাত শিল্পকেন্দ্রগুলি অত্যন্ত সমৃশশালী অর্থনৈতিক ক্ষেত্ররূপে আত্মপ্রকাশ ঘটে, যাকে অবলম্বন করে তাদের পার্শ্বাস্য এলাকাগুলি যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

(vii) প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বে দুটি পর্যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল প্রবৃদ্ধি মেরুর জন্ম পর্যায় (Birth stage) এবং অপরটি হল উন্নয়ন পর্যায় (Development stage)। কোনও একটি দেশের আঞ্চলিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নে প্রথমেই এই দুটি বিষয়কে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়। বস্তুত, এই দুটি ক্ষেত্রের আন্তঃসংযোগ যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে হায়, তাহলে অঞ্চলের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রটিও পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়বে।

(viii) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, নাইজেরিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশে স্থানীয় প্রশাসনিক এবং পরিকল্পিত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটির সর্বাত্মক ব্যবহার প্রসঙ্গে যেসমস্ত বিশেষজ্ঞ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যস্ত করেছেন, তাঁরা হলেন-John B. l'arr (1973 খ্রিঃ), Morgan D. Thomas (1975 fitt), John B. Parr (1999 খ্রিঃ) প্রমুখ। 

আঞ্চলিক উন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় দেবুতত্ত্বের সার্বিক ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে এঁদের অনেকেই যে সর্বসম্মত অভিমত পোষণ করে থাকেন, তা হল-'a practical outcome of determination is the initiation of regionalization processes and appearing of regional conomic centers core, semi-periphery and periphery that subsequently become not only a heart of local development, but also a channel of involvement in the globalization processes

 পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলের স্থানিক পরিসর সংকীর্ণ, এমনকি সেখানকার সম্পদের ঘাটতি যথেঘন্ট লক্ষণীয়, সেই সকল অঞ্চলগুলিতে উন্নয়নের প্রসঙ্গ উপস্থাপনে অনেকেই অবশ্য Growth pole' শব্দটির পরিবর্তে Growth point' শব্দটির প্রয়োগকেই অধিক যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন।

পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্ব (The Growth Pole Theory by Perraux)

যে-কোনও দেশের আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং ক্রমিক অর্থনীতির বিকাশ সংক্রান্ত গতিশীল ধারণাটি সর্বাধিক আলোচ্য একটি বিষয়। আসলে, কোনও শিল্প বা নগরের ক্রমিক বৃদ্ধি যখন তার চারপাশের অঞ্চলগুলির সাথে গভীর আন্তঃসংযোগ তৈরি করে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সম্প্রিন্ট স্থানটির কেন্দ্রীয়তার বিষয়টি আঞ্চলিক পরিকল্পনার কাঠামোয় বিশেষভাবে। প্রাধান্য পায়। এখানে প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রক্রিয়াটি পেরক্স বর্ণিত প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটির সাপেক্ষে উপস্থাপন করা হল।

 তত্ত্বের ভিত্তি (The Basis of the Theory):

বিখ্যাত ফরাসি আঞ্চলিক অর্থনীতিবিদ ফ্রাঙ্কোইস পেরক্স বর্ণিত প্রবৃদ্ধি মেরু হস্তুটি মূলত দুটি ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত, যথা-

Joseph Schumpeter-এর গতিশীল অর্থনৈতিক চিন্তাধারা, এবং

পরিচালনসাধ্য উৎপাদনক্ষম আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ।

1942 খ্রিস্টাভে Schumpeler তাঁর "The Process of Creative Destruction" প্রশ্নে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ও দিতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে ভারসাম্যযুক্ত বাণিজ্যিক চক্রের কথা বলেছিলেন, সেটিই প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উতয়নে যথেষ্ট প্রেরণা জোগায় সারিশের করে, পরিকল্পিত আঞ্চলিক উন্নয়নের পটভূমিকায় Schumpeter-Economic Development occurs as a result of discontinuous sports in a dynamic world. বক্তব্যটি পেরক্সকে যথেস্ট উদ্বুদ্ধ করেছিল। Schumpeter তাঁর উন্নয়নের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে গতিশীল পরিচালনসাধ্য (Dynamic propulsive firm) এবং অগ্রগামী পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয় (Leading propulsive)

 প্রথম ক্ষেত্রটিকে শেরশ্ন কেন্দ্রীয় উন্মাদনাবান ও firm) নামক দেশটির অর্থনৈতিক সফল, এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিকে উচ্চ আন্তইলিয়ান সাংলোয় মেলা স্পিতিবার মুতাকর্মী ভেহোল চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়াও, ফ্রান্সের অর্থনৈতিক বিকাশ কাঠামোয় দ্বিতীয় বিশ্বযুশোত্তর মাধার পরিকল্পনার প্রবৃদ্ধি মের তত্বের একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। কারণ তৎকালীন ফ্রান্সের প্রযুক্তিগর প্রতিবার মিতাদিকুন উদ্ভাবনার মধ্য দিয়ে নগরগুলি ক্রমশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্ররূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে শ্রান্তিক অঞ্চলগুলি থেকে প্রাথমিক সম্পদরূপে আকরিক লোহা, কৃষিজ পণ্যসামগ্রী ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় নগরাঞ্চল অভিমুরী হয়ে পড়ে। এইভাবে, ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিকাশের সাথে সাথে প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলিও ক্রমশ অর্থনৈতিক হতে পড়ে। অত্যন্ত সমৃশশালী হয়ে ওঠে। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতিতে ফ্রান্সীয় চিরাচরিত কাঠামোয় বিভিত বিরকেন্দ্রগুলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা (Industrial interdependency) বা আন্তঃ-শিল্পা সংযোগ (Inter- Industry linkage) সেখানকার অর্থনীতিকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, মূলত সেটিকে অনুসরণ করেই গেরস্থ তাঁর প্রবৃদ্ধি তত্ত্বের আলোচ্য বিষয়গুলিকে কৌশলীভাবে উপস্থাপন করেছেন।

তত্ত্বের উদ্ভব (The origin of the theory):

পেরও আধুনিক নগরকেন্দ্রিক পরিকাঠামোর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণগত অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির ক্রমবন্ধনের নীতিতে যথেষ্ট বিশ্বাসী ছিলেন। সেই কারণে, ফ্রান্সের তৎকালীন সমৃদ্ধ কোনও একটি কেন্দ্রীয় উৎপাদনক্ষেত্রের প্রতি বিশেষ আস্থা রেখে তিনি বলেছেন- centrifugal forces emitted and to which centripetal forces an attracted. Each centre, being a centre of attraction and repulsion, has its proper field which set in the field of other centre.

আঞ্চলিক উন্নয়নে এই ধরনের কেন্দ্রীভূত এবং বিকেন্দ্রীভূত শক্তি প্রবণতার আপেক্ষিক সহাবস্থান ঘটিয়েই পেরন্ত 1955 খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটিকে একটি বিমূর্ত অর্থনৈতিক (Abstract economic) কাঠামোয় উপস্থাপন করেছেন। গেরস্থ অবশ্য তাঁর তত্ত্বে ভৌগোলিক দিক থেকে কোনও সরাসরি শহর বা নগরের কথা না বলে, এখানে বিনিয়োগ পরিচালিত একটি উৎপাদনক্ষেত্র বা পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয়কেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

পূর্বশর্ত (Pre-Conditions):

ভারসমাযুক্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Stationary equilibrium growth) কীভাবে উন্নয়নের একটি মেবুক্ষেত্রে উরীও হয়, সেই ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরক্স বেশকিছু মূলগত ধারণাকে শর্তস্বরূপ উপস্থাপনা করেছেন, যেমন-

(i) ভৌগোলিক দিক থেকে অঞ্চলটির প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটটি হবে প্রায় সমপ্রকৃতির।

(ii) অঞ্চলটিতে থাকা বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে সার্বিক উপযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

(iii) জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উপাদানগুলি পরিচালিত হবে।

(iv) মেবুক্ষেত্রে থাকা পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয়গুলি পার্শ্বস্থ বা প্রান্তিক অঞ্চলগুলির চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কাঠামো গড়ে তুলবে।

(v) মেবুক্ষেত্রের গতিশীলতা বজায় রাখতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিব্যাপ্ত থাকবে।

(vi) কেন্দ্রীয় উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা স্থানিক ভারসাম্যহীনতার পরিস্থিতি গড়ে তুললেও, কোনো একসময় সেটিই আবার আঞ্চলিক স্তরে অর্থনৈতিক পুঞ্জীবনের পথ প্রশস্ত করবে।

উপাদান (Components):

একটি অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্রের সহায়ক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পেরর বেশ কয়েকটি উপাদানকে চিহ্নিত করেছেন। এগুলি হল-

(1) অর্থনৈতিক উন্নতি (Economic development),

(2) বৃহদায়তন ব্যাবসালয় (Large scale firms).

(Ⅲ) উদ্ভাবনা (Innovation),

(iv) নতুন প্রযুক্তি (New technology),

(v) বিনিয়োগ (Investment).

(vi) কর্মোদ্যোগ (Entrepreneurship), প্রভৃতি।

প্রবৃদ্ধি মের সৃষ্টি (Origin of Growth Pole):

প্রবৃদ্ধি মেরু এমন একটি বিমূর্ত পরিসর, যেখানে সার্বিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রই সামগ্রিকভাবে উন্মোচিত হয়ে, কোনও অঞ্চলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে। পেরর তাই বলেছেন-"as a field of forces, economic space consists centres (or poles or foct) from which centrifugal forces emanate and to which centripetal forces are attracted."

তার মতে, যখন কোনও একটি ধানে শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে, তখন সর্বোচ্চ মুনাফালাভের জন্য নিত্যনতুন গবেষণা এ উদ্ভবনামূলক প্রকৌশলের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে সংশ্লিষ্ট শিল্পাঞ্চলের সার্বিক উন্নতি ঘটাবে। ফলে, এন্ড সময় ওই শিল্পার পেরোলের মাধ্যমে তাঁরা দেশের প্রান্তিক শিল্পক্ষেত্রগুলিকে সমৃদ্ধ করে সার্বিকভাবে একটি সুগঠিত আপলিক পরিসর গড়ে তুলবে। শেরঙ্গের মতে, প্রবৃদ্ধি মেরুস্থলে উপনীত হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত তিনটি প্রধানত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণভাবে কাজ করে থাকে। এগুলি হল-

1. বাহ্যিক অর্থনীতি (External economy): এটি অতিসক্রিয় বা সক্রিয়ভাবে উৎপাদনকে পরিচালিত কর 2. শিল্পগত পৃথ্বীভবন (Industrial agglomerations): এটি অন্যান্য সহযোগী শিল্পের সমম্বয় ঘটায়।

3. আন্তাশিল্প সংযোগ (Inter-industrial linkages): এটি উৎপাদনে নিয়োজিত অর্থনৈতিক শক্তির অভিমুখের পরিবর্তন ঘটায়।

পেরর আরও বলেছেন, অনেকসময় প্রধান শিল্পকেন্দ্র (Key Industry)-এর অতিসমৃদ্ধ এবং প্রভাবশী মেরুস্থলের কাছাকাছি অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবন দ্বারা আরেকটি নতুন গৌণ প্রবৃদ্ধি মেরু (Secondary growth pol গড়ে ওঠে। ফলে, মুখ্য ও গৌণ মেরুক্ষেত্রগুলির পারস্পরিক সংযোগশীলতার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি মেরুশলটির সামগ্রিক পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলরূপে আত্মপ্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, এখানে প্রাথমিকভাবে সাপিত প্রধান মেরুক্ষেত্রটি প্রভাবশীল অঞ্চল (Dominant region) এবং পার্শ্ববর্তী গৌণ বা সহায়ক মেরুক্ষেত্রটি প্রভাবিত অজ্জ্বল (Dominated region) নামে পরিচিত। বিষয়টিকে 9.24 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

পেরস্তের প্রবৃদি মেবু তত্ত্বের সাধারণ ব্যাখ্যা (General explanation of Perraur's growth pole theory):

পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরূতত্ত্বে কেন্দ্রীয় করণের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বৈষম্য সৃষ্টি এবং প্রগতির পথ হতে পুনরায় অঞ্চলটিতে আর্থিক বিকাশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়টিকে নিম্নলিখিত পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা হল।

মেরুকরণ (The polaralization): স্বকীয় অর্থনৈতিক উদ্যোগী যে প্রক্রিয়ায় কোনও স্থানে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, নতুন উদ্ভাবনা, বিপুল বিনিয়োগ, এবং বহুল কর্মসংস্থানের সুবাদে একটি মুখ্য শিল্পকেন্দ্র ('Key industry) গড়ে ওঠে, তাকেই মেরুকরণ বা কেন্দ্রীকরণ বলা হয়। সাধারণত, এই পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থবির (Stationary) বা অস্থায়ী অর্থনীতির অভিমুখ ইতিবাচকভাবেই পরিবর্তন ঘটে থাকে।

বৈশিস্ট্য (Characteristics):

(১) এই পর্বটি মূলত স্বয়ংক্রিয় অর্থনীতি বিকাশের প্রাথমিক সূচনামাত্র।

(2) মেরুকরণপর্বে সমৃদ্ধ অর্থনীতি একটি প্রধান শিল্পকেন্দ্র (Dominant Industry)-কে সমস্তদিক থেকে উৎসাহিত করবে।

(3) এন্ধানে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির আদানপ্রদানমূলক আন্তঃসম্পর্ক গাভীর থেকে গভীর তম হয়।

সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে নতুন নতুন উৎপাদনে ব্রতী হয় এবং একইসাথে নিজেদেরকে আরো সমৃদ্ধশালী করে তোলে।


পেরজের মতে, মেরুকরণ পর্যায়ে প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রীয় সম্বল (Core area)-টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেমন-লৌহ-ইস্পাত শিল্প, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন শিল্প, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক এলাকা প্রভৃতি।

অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবন পর্যায় (Economic Agglomeartion Phase): যে পরিস্থিতিতে কোনও

কেন্দ্রীয় শিল্পকেন্দ্রিক এলাকা থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক উপাদানগুলি নিয়ন্ত্রিত বা কৌশলীভাবে পরিচালিত হওয়ার দরুন সহকারী শিল্পোদ্যোগগুলিকে অব্যাহত রেখে অন্যান্য শিল্প সমাবেশের সহায়ক হয়, সেটি অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবন পর্যায় নামে পরিচিত। আসলে, প্রকৃত মেরুকরণের (Polartization)হয়

বৈশিষ্টা (Characteristics):

(i) এই পর্যায়ে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উন্নয়নের ঢেউ ক্রমশ তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে ধারাবাহিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

(ii) ধারাবাহিকভাবে বিকাশের পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও একাধিক শিল্পের সমাবেশ ঘটতে থাকে।

(iii) দৃঢ় অর্থনৈতিক আস্তাসংযোগসাধনের মধ্য দিয়ে সমগ্র অঞ্চলটি ক্রমেই ভারসাম্যযুক্ত একটি উন্নত ক্ষেত্রে উপনীত হয়।

(iv) নিত্যনতুন শিল্প সমাবেশ ছাড়াও, এই পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র, হাসপাতাল, প্রথাগত শিক্ষাঙ্গন-কলেজ, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং জনপরিসেবামূলক একাধিক সমৃদ্ধক্ষেত্র গড়ে উঠতে দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, প্রাক অবস্থায় মেরুকরণ থেকে দীর্ঘকালীন ব্যাপ্তি পর্যায়ের সমস্ত বিষয়কে এখানে প্রবৃদ্ধি মেরূতত্ত্বের নিরিখে আরো স্পষ্টভাবে 9.27 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

মেনুকরণের অর্থনৈতিক কাঠামোর পারস্পরিক সংযোগস্থাপন (The Interlinking of Polarized economic structure):

আমরা ইতিপূর্বে মেরুকরণের মধ্য দিয়ে কীভাবে আঞ্চলিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটে তার একটি সম্যক ধারণা পেয়েছি। এখানে পেরক্সের মেরুকরণে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কাঠামো এবং তাদের পারস্পরিক সংযোগের বিষয়টিকে Glasson (1978 খ্রিঃ)-এর সুস্পষ্ট অভিমত অনুসারে উপস্থাপন করা হল।

গতিশীল পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয় (Dynamic propulsive firm): অর্থনৈতিক উন্নতির প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত দ্রুতবৃদ্ধি সম্পন্ন উচ্চ উদ্ভাবনক্ষম প্রতিষ্ঠান যেটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর কর্তৃত্ব বিস্তারে সক্ষম, তাকেই গতিশীল পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয় বলা হয়। 

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(i) উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামোবিশিষ্ট প্রভাবশালী এই ক্ষেত্রটি অর্থনৈতিক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রস্থল।

(ii) সাধারণত বৃহৎ স্কেলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনসাধ্য এই ব্যাবসালয়টি নিয়ন্ত্রিত হয়।

(iii) এই ক্ষেত্রটিতে প্রযুক্তি, সম্পদ, শ্রমিক প্রভৃতির

মেরুকরণ (Polarization) অতি দ্রুতগতিতে ঘটতে দেখা।

প্রসিদ্ধ পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয় (Leading propulsive industry):

সাধারণত কোনও উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন, সর্বোচ্চ আন্তঃশিল্প সংযোগরক্ষাকারী এবং চাহিদার উচ্চ স্থিতিস্থাপকতায় থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে প্রসিদ্ধ পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয় বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(1) প্রসিদ্ধ পরিচালনসাধ্য ব্যাবসালয়টি সমৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ স্থানে থেকে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলিকে পরিচালিত করে।

(ii) এখানে দক্ষতাপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, উন্নত প্রযুক্তি, সর্বোচ্চ চাহিদা এবং প্রাতিষ্ঠানিক আন্তঃসম্পর্ক যথেস্ট বেশি পরিমাণে বজায় থাকে।

(iii) উৎপাদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় অঞ্চল ছাড়াও প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও সমস্ত ধরনের লেনদেনের সম্পর্ক এখানে স্পষ্টতই বিদ্যমান।

(iv) এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে পশ্চাদগামী অর্থনৈতিক সম্পর্ক (Backward economical linkage) এবং অগ্রগামী অর্থনৈতিক সংযোগ (Forward economical linkage) পূর্বের চেয়ে আরও দৃঢ় হয়।

পশ্চাদগামী এবং অগ্রগামী সংযোগ (Backward and Forward linkage):

পেরন্স মনে করতেন, Production or services of one industry or firm is linked with other industry or firms।" তিনি এ প্রসঙ্গে প্রধান শিল্পকেন্দ্রের সাথে তার পার্শ্বস্থ অঞ্চলে গড়ে ওঠা অন্যান্য শিল্প বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির গাভীর অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগের গতিশীল অবস্থা বোঝাতে মূলত দুই ধরনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন, যথা- স্যামগামী সংযোগ (Backward linkage): কোনও বৃহদায়তন কেন্দ্রীয় শিক্কল্পটি যখন তার উৎপাদনের কাঁচামাল বা অন্য কোনও অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা বজায় রাখতে পার্শ্বস্থ অঞ্চলের সাথে সহযোগী এবং একমূরী আন্তঃসম্পর্কে লিপ্ত থাকে, তাকেই পশ্চাদগামী সংযোগ (Backward linkage) বলা হয়। সাধারণত, একট দেশের মূল শিল্পকেন্দ্রের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকা বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, পরিকাঠামো এমনকি শ্রমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গড়ে ওঠা সংযোগটি এই প্রকৃতির। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, কোনও একটি স্থানে নতুন লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠলে, তখন তার উৎপাদনকে ঘিরে বিভিন্ন ধাতব ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, অবকাঠামো নির্মীয়মান শিল্প অথবা অন্যান্য পাইকারী কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক আন্তঃসম্পর্কটি পশ্চাৎগামী সংযোগ দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বানুযায়ী, কোনও অনঞ্চলে পশ্চাৎ সংযোগটি যত শক্তিশালী হবে, শিল্পের মেরুস্থলটির আরও দ্রুত এবং ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকবে। অগ্রগামী সংযোগ (Forward linkage): যে অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থায় প্রধান শিল্পভিত্তিক সার্বিক উৎপাদনকে ঘিরে সমস্ত অপ্রধান সহযোগী Phc. 929 পশ্চাদগামী ও অগ্রগামী শিল্পসংযোগ শিল্পগুলি ধারাবাহিকভাবে বিস্তার লাভ করে থাকে, তাকেই অগ্রগামী সংযোগ (Forward linkage) বলা হয়। যেমন-পেট্রোরসায়ন শিল্পকে মূল শিল্পক্ষেত্র বিবেচনা করলে, তার সহযোগী পলিমার, প্লাসটিক, কীটনাশক, পিচ্ছিলকারক তেল প্রভৃতি উৎপাদনকারী বিভিন্ন শিল্পগুলি অগ্রগামী সংযোগ দ্বারা তাদের উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধরনের সংযোগ প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির ইতিবাচক প্রভাবগুলি ধীরে ধীরে প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র অঞ্চলটিকে একটি উন্নয়ন মেরুক্ষেত্রে উপনীত করে। অবশ্য, কোনও একটি স্থানে দুটি অর্থনৈতিক মেরু পাশাপাশি গঠিত হলে, যে উৎপাদন ক্ষেত্রটির সাথে আন্তঃশিল্পযোগ (Inter-industrial linkage) সবচেয়ে বেশি ঘটবে, সেখানেই প্রসিদ্ধ পরিচালনসাধ্য শিল্পের (Leading propulsive industry) মেরুকরণ ঘটতে দেখা যাবে। সাধারণত, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় তথা প্রধান শিল্পটির বিকাশের সাথে পশ্চাৎ সংযোগ (Backward linkage) এবং চতুষ্পার্শ্বের সহযোগী শিল্পগুলির বিকাশের সাথে অগ্রগামী সংযোগ (Forward linkage) প্রক্রিয়া দুটি যৌথভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, যখন কোনও একটি অঞ্চলে অগ্রগামী আন্তঃশিল্প সংযোগ শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তখন প্রধান শিল্প (Key industry) থেকে পাওয়া উৎপাদিত দ্রব্য বা Output'-এর মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। আবার, এই সময় বিভিন্ন সহযোগী শিল্পগুলি প্রধান শিল্প থেকে পাওয়া উপাদানগুলিকে পুনরায় কাঁচামাল বা 'Input' রূপে ব্যবহার করতে থাকায়, সামগ্রিকভাবে তাদের উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা এবং বিক্রিত পণ্যের লাভ উভয়ই যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের আন্তঃশিল্পসংযোগের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক স্তরে একটি শক্তিশালী কাঠামোবিশিষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মেরু গড়ে ওঠে।

তত্ত্বটির বাস্তব প্রয়োগক্ষেত্র (The real application of the theory):

কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে উন্নয়নের কেন্দ্রীয়স্থল গড়ে উঠলে, তা কীভাবে সেই স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে সুদূরপ্রসারীভাবে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিকে সমৃদ্ধ করে।

তোলে সে বিষয়ে বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে পেরশ্নের প্রবৃশি মেবু তত্ত্বে। 1963 খ্রিস্টাব্দে মেরুকরণকে সামনে রেখে ইউরোপে প্রশাসনিক কাঠামোর গুনর্বিন্যাসের ঘটনা উত্তর- পূর্ব ল্যাঙ্কাশায়ার, পশ্চিম লন্ডন, স্কটল্যান্ডের সেন্ট্রাল ভ্যালি, মধ্য ওয়েলেস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আঞ্চলিক অর্থনীতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে ছিল। পরবর্তীকালে অর্থাৎ বিংশ শতকের বিভিন্ন সময়কাল জুড়ে পৃথিবীর উন্নত এবং উন্নয়নশীল অধিকাংশ দেশ, যেমন ফ্রান্স, ইটালি, ভেনেজুয়েলা, চিন, জাপান এমনকি ভারতের বিভিন্ন শিল্পসমৃদ্ধ মেট্রোপলিটন অঞ্চল গঠনের ক্ষেত্রেও বিকাশের এই তত্ত্বটির যথেষ্ট বাস্তবসম্মতভাবে প্রয়োগ ঘটেছে।

তত্ত্বের সমালোচনা (Criticism of Theory):

পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি বিভিন্ন কারণে আবার সমালোচনারও সম্মুখীন হয়েছে, যেমন-

• প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বে যে কেন্দ্রীয় বা প্রধান শিল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে, তার উদ্ভব বা প্রকৃতি ঠিক কীরূপ হবে, সেই বিষয়ে পেরক্সের ব্যাখ্যা খুবই অস্পস্ট বা যথাযথ নয়।

• তত্ত্বটিতে কোনও একটি কেন্দ্রীয় শিল্পবলয়ের সমৃদ্ধির সাথে প্রান্তবর্তী স্থানগুলির সম্পর্ক সামগ্রিক উন্নতির ঠিক কোন্ কোন্ ক্ষেত্রের সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা অনুধাবন করাও খুব সহজ নয়।

• অনেকসময় দেখা গেছে, পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে একাধিক ছোটো ছোটো শিল্পের কেন্দ্রীয়স্থলগুলিও কার্যক্ষেত্রে একটি বৃহদায়তন শিল্পবলয় গঠনেও যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। কিন্তু, পেরক্সের তত্ত্বে এইরকম দৃষ্টান্তের কোনও সত্যতাই স্বীকৃতি পায়নি। যেমন, সমগ্র জাপানের আঞ্চলিক বিকাশে সেখানকার ক্ষুদ্র প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলির ভূমিকা ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয়।

• রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণবশত কেন্দ্রীয় শিল্পবলয়ের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে বাজার বা অন্যান্য ছোটো শিল্পগুলির সাথে কীরকম অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে, এমনকি প্রধান শিল্পটির ভবিষ্যৎ বিষয়ক কোনও ইঙ্গিত এই তত্ত্বটিতে নেই।

• কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতিতে সেখানকার কেন্দ্রীয় শিল্পসস্থল এবং প্রান্তবর্তী অঞ্চলের অন্যান্য বিকাশশীল আর্থিক ক্ষেত্রগুলিতে ঠিক কী প্রভাব পড়তে পারে, সে সম্পর্কেও এই তত্ত্বে কোনও সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করা হয়নি।

• ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার এমন কিছু উন্নত অঞ্চল রয়েছে যেগুলি তিনটি বা তারও অধিক দেশের।

রাজনৈতিক সীমানার মধ্যে পড়ে যায়। ফলে যৌথ সীমানায় থাকা সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে ঠিক কোন অঞ্চলের মেরুকরণের মধ্যে ফেলা হবে তা নির্ধারণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য একটি বিষয়।

• মেরু বিকাশের মাধ্যমে কোনও অঞ্চল সমৃদ্ধ হলেও, অনেক সময় প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে থাকা শিল্পগুলি সমানভাবে উন্নতি করতে পারে না। ফলে, প্রান্তিক অঞ্চলের তুলনামূলক বৃহদায়তন শিল্পগুলি ছোটো ছোটো শিল্পগুলিকে অধিগ্রহণ করে নেয়। পেরক্সের তত্ত্বটিতে এই বিষয়ে কোনও ধারণাই দেওয়া হয়নি। অবশ্য, এটাও দেখা গেছে প্রান্তিক বা সীমান্ত (Frontier) এলাকাগুলিও কখনো কখানো উন্নয়নের কেন্দ্রভূমিতে উপনীত হয়েছে। যেমন-দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের ব্রাসেলসের কেন্দ্রীয় সমৃদ্ধি এবং ভেনেজুয়েলার 'Ciudad Guayana project'-এর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মেরুকরণের ধারণাটিই পালটে দিয়েছে।

• যখন নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মেরুস্থল গড়ে ওঠে, সেখানে পরিবেশগত বা বাস্তুতান্ত্রিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ধারণাটিও পেরক্সের তত্ত্বে যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে।

• কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পেরক্সের এই প্রাদেশিক অর্থনৈতিক তত্ত্বটি কোনও অঞ্চলের সম্পূর্ণ উন্নয়ন না ঘটিয়ে, শুধুমাত্র "Sectoral growth"-কেই প্রভাবিত করে থাকে।

• প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বে কোনও একটি দেশের আঞ্চলিক বিকাশে শুধুমাত্র শিল্পপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিকাশের পথ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমেও সম্প্রসারিত হয়। যেমন-ভারতে পাঞ্জাবে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গড়ে তোলা সবুজ বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সেখানকার আঞ্চলিক উন্নয়নের চেহারাটাই বদলে গিয়েছিল।

• বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাঁচ বছর অন্তর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একাধিক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এমনকি বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী পরিষদীয় উন্নয়ন খাত মারফত কোনও অঞ্চলের একাধিক পরিকল্পনামুখী প্রচেষ্টা প্রথাগত মেরুসস্থল সৃষ্টির ধারণাটিকে বেশ কিছুটা ম্লান করে দেয়।

• পৃথিবীর সমস্ত দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটির সাধারণ ব্যাখ্যা, বা মেরু শব্দটি সমানভাবে প্রযোজ্য হয় না। যেমন, সুইজারল্যান্ডের পর্যটনভিত্তিক সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সেখানকার কোনও বিশেষ প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্রের একক ভূমিকা ছিল না। ঠিক সেই কারণেই D. F. Darwent বলেছেন-'the whole of growth pole literature is badly in need.

আঞ্চলিক উন্নয়নে প্রবৃদ্ধি মের তত্ত্বের গুরুত্ব (Significance of the Growth Pole theory in regional development):

আঞ্চলিক উন্নয়নের নিরিখে পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি বিভিন্ন কারণে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ-

( 1) পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের শহরাঞ্চল বা শিল্পাঞ্চলগুলিকে উন্নয়ন কেন্দ্ররূপে আত্মপ্রকাশ ঘটানো এবং পরিসরগত ব্যাপ্তির ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি মেরুর অন্যতম ভূমিকা রয়েছে।

(2) কোনও একটি বিস্তৃত অঞ্চলের চারপাশে যখন দু একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং বণ্টন ঘিরে স্থানগুলিতেও অর্থনৈতিক শক্তির নিরন্তর প্রবাহ অব্যাহত থাকে। ফলে, অঞ্চলটিতে বিকাশের যাবতীয় পরিসেবার পথ যথেষ্ট সুগম হয়।

(3) কোনও একটি কেন্দ্রীয় অঞ্চল যখন বিকাশের চরম পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সামগ্রিকভাবে তার উৎপাদন খরচ আশানুরূপভাবে কমে যায়। ফলে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উৎপাদিত সমস্ত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বাজার সম্প্রসারণের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে।

(4) লক্ষ্য করে দেখা গেছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের আঞ্চলিক উন্নয়ন তার সংস্পর্শে থাকা কোনও না কোনও একটি কেন্দ্রীয় তথা সমৃদ্ধ মেরুক্ষেত্রের অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগের মাধ্যমেই ঘটেছে।

(5) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মেরুকরণ এবং শিল্প-পরিসেবার সম্প্রসারণকে ঘিরে যে পশ্চাদবর্তী (Backward) এবং অগ্রবর্তী (Forward) আন্তঃশিল্প সংযোগ ঘটে তা এলাকাভিত্তিক সুষম উন্নয়ন ঘটাতে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে ওঠে।

(6) এই তত্ত্বে অর্থনৈতিক পুঞ্জীভবনের যে কথা বলা হয়েছে, তা পরোক্ষভাবে কোনো একটি অনালের কর্মসংস্থান এবং বাজার সম্প্রসারণকে যথেষ্ট উৎসাহ দেয়।

(7) অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন আর্থসামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে সচল রেখে উন্নয়ন সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে প্রবৃদ্ধি মেনুই অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

(8) কখনো কখনো বিভিন্ন অনুন্নত অঞ্চল সংলগ্ন কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছাকাছি থাকার সুবাদে যে অর্থনৈতিক অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে, তার মাধ্যমে উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া অথবা তাদের যাবতীয় সমস্যাগুলি অনিবার্যভাবেই স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পায়।

মন্তব্য (Remarks): পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি ইউরোপের উন্নত আর্থসামাজিক এবং প্রশাসনিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাসমূলক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠলেও, বর্তমানে উচ্চতর প্রযুক্তিকেন্দ্রিকতা এবং নতুন উদ্ভাবনীমূলক কর্মকাণ্ডের নিরিখে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশের ক্ষেত্রেই তত্ত্বটি সমানভাবে প্রযোজ্য। বিশেষ করে, একটি অঞ্চলের সুসংহত শিল্প কাঠামো তথা গতিশীল অর্থনীতির বিকাশে এই তত্ত্বটি বহু সম্ভাবনাময় পথের সন্ধান দেয়। বিশেষ করে, শিল্পায়নের আঞ্চলিক গন্ডি পেরিয়েও প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি নগরায়িত আর্থসামাজিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত প্রতিষ্ঠিত করে।

ভারতীয় প্রেক্ষাপটে পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেবু তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা (The relevence of Perraux's growth pole theory in Indian context):

ভারতের আঞ্চলিক বিকাশের প্রেক্ষাপটেও পেরক্সের প্রবৃদ্ধি মেরু তত্ত্বটি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। কারণ, স্বাধীনতা- পূর্ব এবং স্বাধীনোত্তর ভারতের বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় সুষম আঞ্চলিক বিকাশ এবং নগরকেন্দ্রিক সুগঠিত অর্থনীতির প্রসঙ্গাটিকে বেশ কয়েকটি প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্রের (Growth pole area) দৃষ্টান্তের সাপেক্ষে আকারে উপস্থাপন করা হয়।

গুজরাটের আংকেলেশ্বরের প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্র:

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দেশে সুসংহত ও পরিকল্পিত শিল্প বিকাশের পথ অনুসরণ করে পশ্চিম ভারতে যে কয়েকটি প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্র গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে গুজরাটের ব্রোচ জেলার আংকেলেশ্বর শিল্পশহরটি অন্যতম। ONGC-এর সহায়তায় 1968 খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের এই ছোট্ট শহরটিতে সর্বপ্রথম Atul Chemical and Pharmaceuticals Ltd গড়ে ওঠে। বিশেষ করে, উচ্চ বিনিয়োগ, সমগ্র দেশের সাথে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, উন্নত পরিকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তির সার্বিক ব্যবহার, বিপুল চাহিদা প্রভৃতির সুবাদে শিল্পকেন্দ্রটি ক্রমেই একটি শিল্পগুচ্ছে (Cluster industry) উপনীত হয়। এই অবস্থায়, গুজরাটের পার্শ্বস্থ জেলাগুলি থেকে অগণিত শ্রমিক আংকেলেশ্বর শিল্পাঞ্চল অভিমুখী হয়ে পড়ায় সেখানে অর্থনৈতিক পৃথ্বীভবনের মাত্রা যথেষ্ট বেড়ে যায়। এর পরিণতি স্বরূপ সংশ্লিষ্ট উৎপাদন কাঠামোয় পাইপ নির্মাণ, প্লাস্টিক নির্মাণ, অটোমোবাইল প্লান্ট স্থাপন প্রভৃতি পেট্রোরসায়ন শিল্প সহায়ক কেন্দ্র গড়ে উঠতে শুরু করে। পরবর্তীকালে Gujarat Industrial Development Corporation-এর মাধ্যমে এই অঞ্চলটি আরও বিকশিতভাবে একটি প্রবৃদ্ধি মেরুতে উপনীত হয়। বর্তমানে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটিতে উন্নত নগরীয় পরিসেবা, একাধিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষালয় এবং 2000-এর বেশি পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে।

বাস্তবায়নের সমস্যা Implementation Problem):

ভারতবর্ষের কয়েকটি অঞ্চলে পেরঞ্জের প্রবৃদ্ধি মেরূতত্ত্বটির সফলভাবে প্রয়োগ না ঘটার নেপথ্যে R. P. Mishra, K. V. Sundaram, V. L. 5. Prakasa Rao, Joyshree Roy Chowdhuri প্রমুখ বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

বর্ধিত জনসংখ্যা (Expanded population): বর্তমানে ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। সার্বিকভাবে এখানকার বর্ধিত জনসংখ্যার নিরিখে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির বিস্তার যেভাবে ঘটার কথা তা হয়নি। বিশেষ করে, এখানকার বিপুল জনসংখ্যার নিরিখে ভোগবাদী অর্থনীতির অসামঞ্জস্যতায় উৎপাদন কাঠামোর ভারসাম্য কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে, এই প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলি সর্বদা সীমাবন্ধই থেকে গেছে।

চিরাচরিত পশ্চাদগামিতা (Traditional backwardness): কৃষিনির্ভর ভারতের চিরাচরিত তথা জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক অর্থনীতিকে সামনে রেখে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন শিল্পক্ষেত্র গড়ে উঠলেও, সেগুলির সাথে প্রান্তিক অঞ্চলগুলির সম্পর্ক খুবই দুর্বল। তা ছাড়া, এই সকল ক্ষেত্রগুলিতে প্রশাসনিক পরিচালনাগত ত্রুটির প্রভাবে পৌরায়ণ প্রক্রিয়াও যথেষ্ট বাধা পেয়েছে। এইভাবে, ভারতের চিরাচরিত পরজীবী অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্র স্থাপনে অন্তরাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, উত্তর বিহার, উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশ, তেলেঙ্গানার বেশকিছু অংশে এই ধরনের প্রভাব অত্যন্ত সুস্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।

গ্রামীণ এলাকার প্রাধান্য (Dominance of rural areas): পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ উন্নত দেশগুলিতে প্রবৃদ্ধি মেরুক্ষেত্রগুলি শিল্পভিত্তিক নগরায়িত পরিকাঠামোয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রামীণ অর্থনীতিনির্ভর আঞ্চলিক পরিসরে বিকাশের এই পরিকাঠামোটি যথেষ্ট মন্থর। বিশ্বব্যাঙ্কের উন্নয়নের নির্দেশকসূচক 2020 খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যানে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 65.07 শতাংশ মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রথাগত অর্থনীতি অবলম্বন মারফত জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে। ফলে, গ্রামভিত্তিক চিরাচরিত অর্থনীতির কারণে এখানকার মানুষের পিছিয়ে থাকার মনোভাব বা দক্ষ মানবসম্পদের অভাব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও প্রবৃদ্ধি মের গঠনে সহায়ক হয়নি।

পরিযানের প্রভাব (The effect of migration): ভারতবর্ষের অধিকাংশ রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোয় জীবিকা বণ্টন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সাধারণত, দেশের যে সমস্ত অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে বঙ্গ মানবসম্পদ থাকলেও, পার্শ্ববর্তী রাজ্য এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান এবং সর্বাধিক বেতনের সুযোগ-সুবিধার কারণে ব্যাপক হারে পরিব্রাজন ঘটতেও দেখা যায়। এর ফলে, পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিতে দক্ষ শ্রমিকের অভাবে উৎপাদনমুখী কর্মোদ্যোগে যথেষ্ট ভাটা পড়ে। এইভাবে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি মেরু ক্ষেত্রের গঠন সমৃদ্ধ হয়। 

গোলিক বি, (aphical bariers): ভারতে সম্পদপাত প্রাচুর্যতা থাকলেও, এখানকার দুয়ালয় পার্বত্যভূমির জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিমের মতো বেশকিছু রাজ্যে, ওলেও এখানকার যা এখলে ভৌগোলিক একাধিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় বিকাশের ক্ষেত্রগুলি সেখানে সমাজোমেনকি পনি

শিল্প সংযোগের অভাব (Lack of industrial linkages): ভারতে আঞ্চলিক মেরুকরণে আরও একটি বাড়া বাধা হল আন্তঃশিল্প সংযোগের অভাব। বিশেষ করে, জামশেদপুর, বাঁচি, সিদ্ধি, ধানবাদ, আসানসোল, লাপুর, চিত্তরঞ্জন সহ একাধিক শিল্পাঞ্চল উন্নয়নের এক-একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধি ক্ষেত্র হলেও, পার্শ্বস্থ অঞ্চলগুলির যথে আন্তঃশিল্প সংযোগের দুর্বলতার কারণে সার্বিকভাবে এদেশে অধিক সংখ্যক প্রবৃদ্ধি মেরু গঠনে করা হয়।













একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01