ঋতুকালীন আর্দ্রতার পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে জলবায়ুর উপবিভাগ
ধর্মথওয়েট নির্ণীত আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচকটি কেবলমাত্র কোনো অঞ্চলের জলবায়ু কতটা আর্দ্র এবং কতটা শুদ্ধ-তার হার পরিমাপ করে। কিন্তু এই সূচকটি ঋতুভেদে আর্দ্রতার হ্রাসবৃদ্ধি পরিমাপ করতে ব্যর্থ। যেমন আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে যদি শুষ্কমাস থাকে তবে ওই শুষ্ক মাসগুলিতে জলের ঘাটতি কতটুকু হবে ইত্যাদি। শুদ্ধ জ অঞ্চলের ক্ষেত্রেও ওই একইভাবে আর্দ্র মাসের সময়কাল, জলের উদ্বৃত্তের হার ইত্যাদি সংক্রান্ত মাপকাঠি জলবায়ু শ্রেণিবিভাজনে থাকা প্রয়োজন। এই সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান কল্পে Thornthwaite আর্দ্রতা প্রদেশগুলিকে ঋতুগত আর্দ্রতার বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করার জন্য কতকগুলি চিহ্নের উপস্থাপনা করেন এবং তাদের সন্নিহিত সূচক মানও নির্ধারণ করেন। নীচে একটি সারণির মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরা হল
তাপমান কার্যকারিতা সূচক (Thermal Efficiency Index বা TE সূচক):
1931 সালের তাপমান কার্যক্ষম সূচকের মতো 1948-এ ঘর্নর্থওয়েট উন্নতা ও অধঃক্ষেপণের কার্যকারিতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণের জন্য তাপমান কার্যকারিতা সূচক নির্ণয় করেন। এখানে তিনি সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনকে তাপমান কার্যকারিতা নির্ণয়ের শুরু হিসেবে ব্যবহার করেন। এই সূচকটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ধর্নথওয়েট দিনের দৈর্ঘ্যাকে বাষ্পীয় প্রস্বেদনের ভিত্তি হিসেবে ধরেন। নিরক্ষরেখা সংলগ্ন অঞ্চল যেখানে ঋতুবৈচিত্রা প্রায় দেখাই যায় না, দিনের দৈর্ঘ্যেরও তেমন বিশেষ পার্থক্য হয় না এবং বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 23 deg সেঃ, সেখানে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনও স্থির থাকে। তাই 114-0 সেমি সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনকে মেগাখামাল ও মেসোথার্মাল অঞ্চলের সীমানা ধরে সমগ্র পৃথিবীকে তিনি 5টি জলবায়ু অঞলে বিভক্ত করেন। প্রতিটি জলবায়ু অঞ্চলের সীমান্তে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের হার জ্যামিতিক হারে (Geometric Progression) পরিবর্তিত হয়।
তাপমান কার্যক্ষম সূচকের মতো ঘর্নথওয়েট তাপমান কার্যকারিতা সূচক নির্দেশক অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রেও একই চিহ্ন ব্যবহার করেন।
কিন্তু তাপমান কার্যকারিতা সূচক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ঘর্নর্থওয়েট ঋতুভেদে তাপমাত্রার পরিবর্তনকেও গুরুত্ব দেন। কারণ তাপমাত্রার পার্থক্য ঋতুভেদে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনেরও পরিমাণকে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে ধর্মথওয়েট।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে মাসিক উন্নতার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় সারাবছর ধরেই গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। তাই এখানে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের কোনো পরিবর্তন হয় না। এভাবে যে-কোনো তিনমাসের সন্ধাত্ত বাষ্পীয় প্রস্বেদনের হার হবে 25%। অন্যদিকে আমরা যদি মেরু অঞ্চলের কথা চিন্তা করি সেখানে কেবল তিনমাসই শ্রীষ্মকালের উপস্থিতি দেখা যায়। সুতরাং ওই তিনমাসের মধ্যেই মেরু অঞ্চলে 100% বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সম্ভাবনা থাকে। এই বিষয়টির ওপর ভিত্তি করে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন গ্রীষ্মকালে স্থায়িত্ব অনুসারে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের হার 25% থেকে 100%-এর মধ্যে থাকতে পারে। এই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে কোনো অঞ্চল কোন্ শ্রেণির তাপমান সূচক যুক্ত জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত হবে থর্নথওয়েট সেই সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রস্তুত করেন।
গ্রীষ্মকালীন সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের ভিত্তিতে কোনো অঞ্চল কী ধরনের তাপমান সূচক জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত হবে তা সানফ্রান্সিস্কোর উদাহরণ দিয়ে থর্নওঘয়েট বোঝানোর চেষ্টা করেন। সানফ্রান্সিসকোর সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন 27-09 ইঞ্চি এবং শ্রীষ্মকালীন বাষ্পীয় প্রস্বেদনের হার 33-3%। গ্রীষ্মকালীন অবস্থা অনুযায়ী সানফ্রান্সিসকো এ' অর্থাৎ মেগাথার্মাল জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত হবে। যদিও পূর্বের T-E সূচক অনুযায়ী অঞ্চলটি B_{-1}' অর্থাৎ মেসোথার্মাল জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা।