welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যে "BIMARU" রাজ্যের ধারণা (The concept of 'BIMARU' state as regional Disparity in India)

ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যে "BIMARU" রাজ্যের ধারণা (The concept of 'BIMARU' state as regional Disparity in India)


ভারতের আঞ্চলিক তথা রাজ্যভিত্তিক বৈষম্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বিগত আশির দশকে "BIMARU” রাজ্যের ধারণাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এখানে "BIMARU” শব্দটি আসলে বিহার(BI), মধ্য প্রদেশ MA), রাজস্থান(R) এবং উত্তরপ্রদেশ(U)- এই চারটি রাজ্যের কয়েকটি আদ্যাক্ষরের সমন্বয়ী একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। হিন্দিতে এই শব্দটি মূলত 'অসুস্থতা'-কে নির্দেশ করে থাকে। প্রসঙ্গত, একটি বিশেষ সময়কালের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির আর্থসামাজিক দারিদ্র অবস্থাটিকে উপস্থাপনার জন্য জনসংখ্যাবিদ শ্রী আশিস বোস তাঁর একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধে এই শব্দটিকে প্রথম ব্যবহার দ্বারা ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

বিশেষত্ব (Pecularity)

ভারতের অন্তঃরাজ্যভিত্তিক বৈষম্যের নিরিখে বিমাবু রাজ্যগুলির বেশ কয়েকটি বিশেষত্ব রয়েছে, যেমন-

• জাতিসংঘের সমীক্ষা, এমনকি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে যে বিমার রাজ্যগুলির নেতিবাচক কর্মদক্ষতা (Negative performence) ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হারকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে।

• এই রাজ্যগুলিতে উচ্চ জন্মহার বা জনসংখ্যার চাপ, দারিদ্র এবং অশিক্ষার হার দেশের অন্যান্য রাজাগুলির তুলনায় যথেষ্ট বেশি।

• যে কোনো আর্থসামাজিক বা সাংস্কৃতিক কুশলতায় বিমারু তালিকাভুক্ত রাজ্যগুলি সবসময়ই পিছিয়ে রয়েছে।

• বিমার রাজ্যগুলিতে নিম্নমানের স্বাস্থ্য পরিসেবার কারণে এখানকার মানুষের গড় আয়ু ভারতের অন্যানা রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট হতাশাজনক।জনপরিসেবা, বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিমাকু রাজ্যগুলির বিনিয়োগমূলক পরিকাঠামোর দীর্ঘ অবহেলার একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে।

• এই রাজাগুলির অর্থনীতিকে চালিত করার উন্নয়ন ইঞ্জিনস্বরূপ উপযুক্ত পরিকাঠামোগুলি এখানে খুব সামান্য পরিমাণেই রয়েছে।

* দৃষ্টান্ত (Example): আশির দশক থেকে উঠে আসা বিমায়ু রাজ্যগুলির আর্থসামাজিক এবং মানবউন্নয়ন সংক্রান্ত দুরবস্থা একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত  একইভাবে ছিল। যার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হল-

(i) 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমসুমারীর প্রাক্কালে সমগ্র ভারতের উর্বরতা হার (Fertility rate) ছিল যেখানে 2.5, সেই নিরিখে বিহারের মোট উর্বরতার হার ছিল 3.9, উত্তর প্রদেশে ছিল 3.5. মধ্যপ্রদেশে ছিল 3.2 এবং রাজস্থানে ছিল 3.1. যা তৎকালীন পরিস্থিতিতে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। 

(ii) 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের গড় শিক্ষা হারের (74.04%) তুলনায়। বিহার (63.8%), মধ্যপ্রদেশ (70.6%), রাজস্থান (67 1%) এবং উত্তরপ্রদেশ (69.7%) অত্যন্ত পিছনের Educational Planning and Administration (NUEPA)-র সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিহারের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে 21 %এবং উত্তরপ্রদেশে 128 % ম্যাট্রিক লেভেল বা তার চেয়ে কম স্তরের শিক্ষার সমতুল্য দক্ষতা রয়েছে। 

(iii) বিমার রাজ্যগুলির ভৌগোলিক সীমানায় একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, অস্ত্র বা মাদক পাচার, আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা যায়। 

(iv) বৃহৎ এই রাজ্যগুলির প্রশাসনিক সমস্যাকে ঘিরে পৃথক রাজ্যের দাবিগুলি এখানে যথেষ্ট সক্রিয়।

বিমারু রাজ্যগুলির ধারাবাহিক পরিবর্তন (Continuous Changes in BIMARU States)

বর্তমানে, ভারতের আর্থসামাজিক পরিবর্তনের একাধিক সুফল বিমাবু রাজ্যগুলিকে তাদের অতীতের দুরবস্থা থেকে অনেকটাই ওপরের সারিতে তুলে এনেছে। বিশেষ করে; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিকাঠামোগত প্রায় সমস্ত দিক থেকে এই রাজ্যগুলির আঞ্চলিক উন্নয়নের সম্ভাবনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন-

বিহার 2000-এর দশকের গোড়ার দিকে বৃদ্ধির গতিথে প্রকৃত যাত্রা শুরু করে। 1999-2000 খ্রিস্টাব্দে এর রাজধানী শহর পাটনা অর্থনীতিতে প্রায় 21 শতাংশের বেশি অবদান রেখেছিল। 2011-12 খ্রিস্টাব্দে ধারাবাহিকভাবে এটি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 26 শতাংশে উপনীত হয়। মাথাপিছু আয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, পাটনার জিডিপি ছিল 1999-2000 খ্রিস্টাব্দের রাজ্য জিডিপির গড়ের প্রায় 3.7 গুণ। আবার, জয়পুর হল রাজস্থানের 33টি জেলার মধ্যে উন্নয়নের নিরিখে শীর্ষস্থানীয়। যেখানে, বছরের পর বছর ধরে 12-13 শতাংশ আর্থিকপুঁজি বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। জয়পুরের সীমান্তবর্তী আলওয়ার জেলা রাজস্থানের অর্থনীতিতে প্রায় 6-৪ শতাংশ অবদান রেখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের 75টি জেলাকে আবার চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে যেমন-পশ্চিম, পূর্ব, মধ্য এবং বুন্দেলখণ্ড অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানকার পশ্চিম অঞ্চলটি অবশ্য অন্যান্য অঞ্চলের নিরিখে তুলনামূলকভাবে উন্নত, যা উত্তরপ্রদেশের মোট অর্থনীতির অর্ধেকেরও বেশি সৃষ্টিতে অবদান রাখে (2017-18 খ্রিস্টাব্দ)। উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ-10 জেলার মধ্যে 'টিই উন্নত পশ্চিম অঞ্চলের অন্তর্গত। 1999-2000 খ্রিস্টাব্দে, নয়ডা নগরটি (রাজ্যের অর্থনীতিতে 2.6 )শতাংশ বৃদ্ধি খাটিয়েছিল। আবার, মধ্যপ্রদেশের মাটি জেলার মধ্যে ইন্ডোর হল সবচেয়ে শীর্জপ্যানটায় উন্নত জেলা 1999-2000 খ্রিস্টাব্দে, এটি রাজ্যের অর্থনীতিতে মাত্র 10 শতাংশের কাছাকাছি অবদান রেখেছিল।।

** কয়েকটি ইতিবাচক দিক (A few perspectives): 

(i) BIMARU রাজ্যগুলির সাম্প্রতিক পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞরা এখানকার বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। এগুলি হল-

(ii) 2008 খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই ভারতের BIMARU রাজ্যগুলিতে মানব উন্নয়নের নিরিখে কিছুটা হলেও প্রত্যাশিত ফলাফল প্রদান করেছে।

(iii) 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারির পরিসংখ্যানে শিক্ষার দিক থেকে এই সকল রাজ্যগুলি যথেষ্ট সম্ভাবনাসুর স্থানে রয়েছে। যেমন-বিহার (63.৪%), মধ্যপ্রদেশ (70.6%), রাজস্থান (67.1%), উত্তরপ্রদেশ (71.7%) BIMARE রাজাগুলিতে বর্তমানে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে। উন্নয়নমূলক একাধিক পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়িং.

(iv) আধুনিক প্রযুক্তিগত কৃৎকৌশলের ধারাবাহিক ব্যবহার বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য দুর্ভিক্ষ বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে চলেছে।

(v) সংশ্লিষ্ট রাজাগুলিতে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পঞ্চায়েতিরাজ ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

(vi) বর্তমানে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে BIMARLI রাজাগুলি দেশের বড়ো বড়ো শিল্পপতিদের ভীষণভাবে। ( দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

(vii) তাছাড়া, এই সমস্ত রাজ্যগুলিতে রেল, সড়ক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিসেবা, এমনকি পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনায় যথেষ্ট বেশি। তাই সমস্ত দিক বিচার করলে বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশকে বর্তমানে আর BIMARU রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হয় না।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01