welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আঞ্চলিকীকরণের ভিত্তি (The basis of Regionalization)

আঞ্চলিকীকরণের ভিত্তি (The basis of Regionalization)


ভূপৃষ্ঠে সমধর্মী বা বিষমধর্মী প্রায় প্রতিটি এলাকাই বিশেষ গুণসম্পন্ন এক একটি কার্যকরী একক হওয়ায়, তাকে কেন্দ্র করেই প্রকৃতিকেন্দ্রিক যাবতীয় ঘটনাবলির উদ্ভব এবং মানবকেন্দ্রিক হয়। এই সমস্ত অঞ্চলকে স্পষ্ট, রূপে উপস্থাপন করতে অধিকাংশ ভৌগোলিকদের যে কয়েকটি সমস্যায় পড়তে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল। অঞ্চলটির সার্বিক আয়তন তথা সীমানাগত পরিব্যাপ্তি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা। আসলে, পৃথিবীর বিভিন্ন দৈশিক সীমানাগুলিকে সাধারণভাবে উপলব্ধি করা গেলেও, সমীক্ষার প্রয়োজনে তার নিখুঁত ধারণায় যথেষ্ট ত্রুটি থেকে যায়। সেই কারণেই ভৌগোলিকরা আঞ্চলিকীকরণের প্রচেষ্টায় কয়েকটি বিশেষ নির্ধারকের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলকে খণ্ডে খন্ডে বিভক্ত এবং তার যথাযথ বিশ্লেষণ করে থাকেন। 1971 খ্রিস্টাব্দে দ্য ব্রিজ (de Blij) এ প্রসঙ্গেঙ্গ যথার্থই বলেছেন-ঐতিহাসিকরা যেমন কাল (Time)-কে খণ্ড খণ্ড করে যুগ (Periods)-এর সমীক্ষা করেন, সেরকম ভৌগোলিকগণও ভূপৃষ্ঠকে অঞ্চলরূপে ভাগ করে থাকেন (Geographers devide the earth's surface into region, and historians fragments time into periods)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাহ্যিক, ক্রিয়াশীল ও পরিকল্পিত এই তিনটি ক্ষেত্রকে আঞ্চলিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম ভিত্তি রূপে প্রতিষ্ঠা করতে ভৌগোলিকরা যে-কয়েকটি পরিমাত্রার সাহায্য নিয়ে থাকেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

• সমসত্ত্বতা (Homogenity): সমসত্ত্বতা হল এমনই একটি বিশেষ গুণ যার মধ্য দিয়ে প্রতিটি আঞ্চলিক পরিসরকে সহজেই পৃথক করা যায়। সাধারণত এই ধরনের সমসত্ত্ব গুণাবলির এককরূপে ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ বা সাংস্কৃতিক যেকোনো একটি বিশেষ উপাদানকে আঞ্চলিকীকরণের একক বা সমন্বয়ী নির্ধারকরূপে গণ্য করা হয় ।

যেমন-1926 খ্রিস্টাব্দে এল. ডি. স্টাম্প (L. D. Stamp) ভারতকে আনঞ্চলিকীকরণ প্রসঙ্গো 22-টি ভূ-প্রাকৃতিক প্রধান অঞ্চলে, এবং 10-টি উপ অঞ্চলে বিভক্ত করেছিলেন। 1957 খ্রিস্টাব্দে O. H. K Spate ভূ-প্রাকৃতিক সমরূপতার ভিত্তিতে যে 3-টি প্রধান অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছিলেন, তা হল-পার্বত্য অঞ্চল, মালভূমি অঞ্চল ও সমভূমি অঞ্চল।

প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural resources): পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্থান কোনও না কোনও সম্পদের প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ হলেও এই সম্পদগুলি কিন্তু সর্বত্র সমহারে বণ্টিত নয়। ফলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি অঞ্চলের সঙ্গে আর একটি অঞ্চলের সম্পদের বণ্টনগত বৈষম্যতার প্রেক্ষাপটটি স্পষ্টতই বিদ্যমান। এক্ষেত্রে আঞ্চলিকীকরণের ভিত্তি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক সম্পদের স্থানিক বণ্টনের বৈসাদৃশ্যতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

যেমন-1964 খ্রিস্টাব্দে ভি. নাথ (V. Nath) ভারতের সামগ্রিক ভৌগোলিক পরিসরকে মোট 15-টি সম্পদ ভিত্তিক উন্নয়ন অঞ্চলে বিভক্ত করেছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল-পশ্চিম হিমালয় অঞ্চল, পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল, গুজরাট সমভূমি ও পার্বত্য সমভূমি প্রভৃতি।

• আর্থসামাজিক পরিসর (Socio-economical extent): পৃথিবীতে মানুষকে বাদ দিয়ে অঞ্চলকে কল্পনাই করা যায় না। কারণ, প্রতিটি অঞ্চলই হল মানুষের বহুমুখী কর্মধারার এক-একটি গুরুত্বপূর্ণ আধার। তবে, বর্তমান আঞ্চলিকীকরণের ক্ষেত্রে মানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ আর্থসামাজিক পরিসরটিকে ভৌগোলিকগণ অনেক পরে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন। সাধারণত আঞ্চলিকীকরণের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যে সমস্ত পরিমণ্ডলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেগুলি হল-

(a) ভূমি ব্যবহার (Land use): মানুষের কর্মধারাভিত্তিক আঞ্চলিক পরিসরে মূলত ভূমি ব্যবহারকে কেন্দ্র করেই প্রাথমিক বৈচিত্র্য গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন যাবৎ কোনও অঞ্চলে মানুষের বসবাসের রীতি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, প্রযুক্তিগত বিকাশ এবং উৎপাদনশীল উপকরণের তারতম্য অনুযায়ী বহুমুখী ভূমিব্যবহার প্রণালী গড়ে ওঠে। ভৌগোলিকগণ প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমিব্যবহারিক প্রতিটি দৈশিক একক এবং সংশ্লিষ্ট উপ-এককের মান্যতা দিয়ে অঞ্চলকে বিভিন্নভাবে সমীক্ষা করে থাকেন।

আঞ্চলিকীকরণে সহায়তাকারী ভূমি ব্যবহার প্রণালীতে যে-সমস্ত বিষয় সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সেগুলি হল-

(i) কৃষিকাজ (Agriculture): গ্রামাণ্যলের ভূমি ব্যবহার প্রণালীর বেশির ভাগটাই অন্তর্ভুক্ত থাকে কৃষিক্ষেত্রের আওতায়। এখানে মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে কৃষিজ ফসল উৎপাদনের স্বার্থে যে বৈচিত্র্যপূর্ণ কৃষি অঞ্চল গড়ে তোলে, সেগুলি আঞ্চলিকীকরণে পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশ পায়। যেমন-ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে এই রকম একাধিক কৃষিজ অঞ্চলকে সেখানকার দৈশিক সীমানা নির্ধারণে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

(ii) শিল্প (Industry): পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশই তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিভিন্ন শিল্প কেন্দ্র গড়ে  তোলে। এই সমস্ত দেশের বহু বেদ উৎপাদনকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অন্তর সহ যোগ দ্বারা ক্রমিক একটি বৃহদাতন শিল্প বলেন সৃষ্টি হয়। ভৌগলিকগণ এই শিল্প বলারগুলি কেউ আঞ্চলিকীকরণে প্রক্রিয়ায় এক একটি বিক্ষপ্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল রূপে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। 

(iii)উৎপাদনশীলতা (Productivity): ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি উৎপাদন কাঠামোরই নির্দিষ্ট কিছু স্থানিক পরিসর থাকে। সাধারণত উন্নয়নের সঙ্গ্যে জড়িত সাধারণ উৎপাদনশীলতা (প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ) এবং মানুষের ক্রিয়ামূলক উৎপাদনশীলতা (শিল্পোৎপাদন)- উভয়কেই আঞ্চলিকীকরণের নির্ধারণকরূপে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে আঞ্চলিকীকরণ প্রসঙ্গে ভৌগোলিকগণ প্রায়শই দেখে থাকেন অধিক উৎপাদনের নিরিখে কোন অঞ্চল উন্নয়নে এগিয়ে রয়েছে এবং কোন অঞ্চলগুলি স্বল্প উৎপাদনের। নিরিখে উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ছে। এইভাবে ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পিত উন্নয়নের স্বার্থে আঞ্চলিক বিভাজনের একটি স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি করা হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শ্রম, মূলধন এবং প্রযুক্তিকে input এবং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীকে। output রূপে বিবেচনা করে, এদের আনুপাতিক হারের প্রাপ্ত মাত্রাগুলিকে আঞ্চলিকীকরণ কৌশলে প্রয়োগ করা হয়।

যেমন-আঞ্চলিকীকরণের প্রচেষ্টায় ভৌগোলিকরা যেমন স্বাভাবিক উৎপাদনশীল ক্ষেত্ররূপে প্রাকৃতিক সম্পদশীল অঞ্চলগুলিকে বিবেচনা করেছেন, একইভাবে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে লন্ডন বা টোকিয়োর মতো সমৃদ্ধশালী অঞ্চলগুলিকেও সামনের সারিতে রেখেছেন। এইভাবে শুধুমাত্র উৎপাদনশীলতার নিরিখেই পৃথিবীতে একাধিক পৃথক সত্ত্বাবিশিষ্ট অঞ্চলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

(iv) উন্নয়ন (Development): আঞ্চলিকীকরণের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল উন্নয়ন। পৃথিবীর অধিকাংশ আঞ্চলিক পরিসরের তাদের নিজস্ব সহায়ক সম্পদ, পরিকাঠামো, ও সমৃদ্ধির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট দ্বারা আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারিত হয়। 

সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা (Continuity of culture): আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন জনজাতি যে সমস্ত সংস্কৃতিকে ধারণ এবং বহন করে থাকে, সেগুলি পরোক্ষভাবে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণে বহুল ব্যবহৃত হয়। সাধারণত সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে যে সমস্ত এককগুলি প্রাধান্য পায় তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ভাষা এবং ধর্ম।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভাষা এবং ধর্মের ভিত্তিতে চিহ্নিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অঞ্চল হল-

ভাষা অঞ্চল-যেমন, ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা অঞ্চল, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান ভাষা অনঞ্চল প্রভৃতি।

ধর্মীয় অঞ্চল-যেমন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অঞ্চল, হিন্দু ধর্মাবলম্বী অঞ্চল, ইসলাম ধর্মাবলম্বী অঞ্চল প্রভৃতি।

 রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটি (Political background): প্রকৃতিগত দিক থেকে মানুষ রাজনৈতিক জীব হওয়ায় গণতান্ত্রিক তথা প্রশাসনিক আধিপত্যের পরিসরটি পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই দীর্ঘকাল থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই কারণে কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিসরে বিভিন্ন সক্রিয় গণতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক আদর্শবোধগুলি অঞ্চল নির্ধারণের অন্যতম নিয়ামকরূপে বিবেচনা করা হয়।

যেমন: মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণের প্রেক্ষাপটটি এক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

• Biosier (1969)-র দৃষ্টিভলিাতে আঞ্চলিকীকরণের ভিত্তি। ভৌগোলিক দিক থেকে কোনও একটি অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ তথা বিন্যাসকরণের ক্ষেত্রে প্রখ্যাত অঞ্চল বিশারদ Boisier যে-কয়েকটি উপাদানগত ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন, সেইগুলিকে নিম্নলিখিত সারণিতে উপস্থাপন করা হলো। 







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01