মানব উন্নয়নের পটভূমি (Background of Human Development)
মানব উন্নয়নের মানব উন্নয়নের ধারণাটি বিশেষজ্ঞ মহল থেকে কিন্তু হঠাৎ করে উঠে আসেনি। বাস্তবে, এই ধারণাটির দার্শনিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি দশকে মানবতাবাদ এবং মানবসম্পদের বিকাশ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রাসঙ্গিক আলোচনায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগে, উন্নয়ন এজেন্ডার অধিকাংশই ছিল সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। কিন্তু, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে গাণিতিক পদ্ধতিগুলির জটিলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্কীর্ণ এই দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে উপেক্ষিত হয় এবং সমাজকল্যাণকামী প্রচেষ্টাগুলি সার্বিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। 1948 খ্রিস্টাব্দের 10 ডিসেম্বর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে মানবাধিকার সনদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের জনগণ নিজেদের বাঁচার এবং অন্যদের বাঁচিয়ে রাখার অধিকার বা কর্তব্যগুলি সম্পর্কে আরও সচেতনভাবে মনোনিবেশ করতে শুরু করে। তৎকালীন মানবাধিকারের বেশ কয়েকটি স্বীকৃত দাবির মধ্যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের যে বীজ বপন হয়েছিল, তারই মাধ্যমে মানবসম্পদের বিকাশের ধারনাটি প্রতিটি জাতির কল্যাণকামী পথকে আরও প্রশস্ত করে দেয়। পরবর্তীকালে, অর্থাৎ পঞ্চাশ থেকে যাটের দশকে উন্নয়ন সম্পর্কে বেশ কয়েকজন নবা ধ্রুপদী তথা প্রত্যক্ষণার্থ
অর্থনীতিবিদদের "তৃপ্তিযোগ্য চাহিদা (satiable wants)" সম্পর্কে সুস্পষ্ট অভিমত এবং ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ উইলাম স্ট্যানলি জেভনস, কার্ল মেঞ্জাবর, লিওন প্রমুখ দ্বারা প্রবর্তিত উন্নয়নের বেশ কিছু সংস্কারমূলক ভাবধারা যৌথভাবে "Marginalist Welfare School”-এ স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময়, শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নয়ন ব্যতিরেকে মানবমুখী ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের ধারা পরবর্তী দশকেও কিছুটা ক্ষীণভাবে হলেও অব্যাহত ছিল। 60-এর দশকের শেষে এবং 70-এর দশকের গোড়ার দিকে উন্নয়নকে ঘিরে নতুন করে আরেক বিতর্ক দানা বাঁধে, যেখানে পুঁজি গঠনের চেয়ে "সামাজিক পরিসেবা” এবং 'মৌলিক চাহিদা' প্রধান বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে, মানবতাবাদ বিপ্লব (Humanistic Revolution)-এর হাত ধরে 1971 খ্রিস্টাব্দে দার্শনিক John Rawls-এর "A Theory of Justice" গ্রন্থে সামাজিক পরিসেবা এবং মানব উদ্ভাবনাকে একত্রিত করার যে ইতিবাচক বিধি উপস্থাপন করেন, সেটিই সমাজের ন্যূনতম সদস্যেদের মঙ্গলকরণে সচ্ছল এবং ভারসাম্যযুক্ত নতুন আরেকটি মানবমুখী উন্নয়ন ভাবনায় উপনীত হয়। 1980-এর দশকের শেষের দিকে মানুষকে উন্নয়নের কেন্দ্রে রেখে নতুন এক আদর্শবাদী নীতিকে ডাঃ মাহবুব উল এক মেনে নিয়েছিলেন। তাঁর মতে, শুধু আয় বৃদ্ধিই কোনও একটি দেশের উন্নয়নকে প্রতিফলিত করতে পারে না, বরং সুষ জীবন, সঠিক পুষ্টি, উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাধীনতা প্রভৃতি উন্নয়নের সঠিক পথ দেখায়। এইভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সচেতন এবং উদারনীতি ভাবধারা হয়।
প্রকৃত উদ্ভাবক (The real inventor):
1970 এবং 1980 এর দশকে GDP-কেন্দ্রিক উন্নয়নের বিতর্কটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমদিকে মদন্তে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যান্য সমাজ-সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির উপর সথাকে বেরিয়ে আমার জন্য প্রত প্রবৃদির সাথে পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রগুলি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলিকে ঠিক কতটা পরমবার্ষিক নজর দেওয়া হয়। মূলত্তর গবেষণা শুর হয়। উন্নয়নের মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষ প্রতিফলন স্বরূপ নীল হরিণ করতে পারছে সে বিষয়ে বিয়ে একটি আপ্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কবে, মানব উন্নয়নের ধারনাটির প্রকৃত উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন মেহেবুব উল হক (1995 খ্রিঃ), এক চালে (1997 খ্রিঃ), অমর্ত্য সেন (1999 খ্রিঃ), গুস্তাভ রানিস(1999 খ্রিঃ), ফ্রান্সেস স্টুয়ার্ট (2001 খ্রিঃ) প্র অর্থনীতিবিদ।
প্রলাত উল্লেখ্য, বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মেহবুব উল হক, অমর্ত্য সেন, মার্থা ক্লেভেন নুসবাউম এবং অন্যান্য বেশ কয়েকজন প্রতিকারে বাক্তির সম্মিলিত গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত মানবমুখী বিকাশের প্রয়োগমূলক বিষয়গুলি প্রতিবেদন আকারে, 1998) খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রথম উপস্থাপিত হয়।
মনের উন্নয়ন পুনর্বিবেচনা (Rethinking Human Development): সম্প্রতি মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রটিকে পুনর্বিবেচনা করার এক্স 2020 খ্রিস্টাব্দে International Science Council se Human Development Programme-এর এক যৌথ কর্মসূচীতে প্রকৃত মানব উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়, এমনকি মানব উন্নয়ন সম্পর্কিত একাধিক মাত্রা বা দৃষ্টিভঙ্গি স্থির করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নয়নকে প্রতিফলিত করতে পারেনা বাস খায়। এইভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সা ড়ে তোলে।
■ বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
(i) মানব উন্নয়ন এমন একটি প্রগতিশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সার্বিক মঙ্গল কামনার লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং সক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করে থাকে।
(ii) উন্নয়নের প্রচলিত এবং আধুনিক কর্মপন্থাগুগলির সমন্বয় ঘটিয়েই মানব উন্নয়নসংক্রান্ত প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হয়েছে।
(iii) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে সক্রিয়ভাবে বাঁচিয়ে রাখা অথবা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানব উন্নয়নকে একটি কৌশলী পদক্ষেপ বলে মানা হয়।
(iv) সমাজে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে মানব উন্নয়নের যত্নশীল প্রচেষ্টায় সর্বদা একটি সমতাপূর্ন বলে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রাখা হয়
(v) মানব উন্নয়নের পরিসরটি সর্বজনীন হওয়ায়, এখানে ধনী-দরিদ্র, সহায়-অসহায় সকলের জন্যই একটি উন্মুক্ত এবং শালীন জীবন উপভোগ করার সুযোগ দেয়।
(vi) মানব উন্নয়নমূলক ধারণাটি বহুমাত্রিক এবং যার মধ্যে থাকা উপাদানগুলো পরস্পরের সাথে গভীর আন্তঃসম্পর্কযুক্ত।
আাজার গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য বলে দিয়ে গিতায়ন রণায় যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন গণ দারিদ্র্য নিরসনই না, তা সমস্যা হয়।
(vii) জনসমষ্টির সার্বিক অগ্রগতির নিরিখে মানব উন্নয়নের যুগাপযোগী নীতিগুলিতে প্রায় প্রতিটি দেশের একটি বিশেষ দায়বদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়
■উদ্দেশ্য (Objectives):
উদ্ভুত মানব উন্নয়ন-স্কেলটিতে ম্যাগার শনশাস্ত্রের বিখ্যাত অধ্যানিলা ছিল। আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছিল.
1990 খ্রিস্টাব্দে UNDP দ্বারা প্রকাশিত প্রথম মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "The basic objective of Human development is to create an enabling environment for people to enjoy long, healthy and creative Imes অর্থাৎ মানব উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের জন্য দীর্ঘ, স্বাস্থ্যর এবং সৃজনশীল জীবন উপভোগ করার জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করা।"সম্প্রতি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মানব উন্নয়ন পন্থাগুলির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি লক্ষ্য অর্জনকে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেগুলি হল-
•মৌলিক উপকরণ সরবরাহ (Supply basic resources): মানব উন্নয়নের মুখ্য উদ্দেশ্যই প্রতিটি হল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের জন্য বেশকিছু মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণের যথাযথ সংস্থান ঘটানো।
•অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা (Establish rights): সমৃদ্ধ জীবনযাপন তখনই সম্ভব, যখন প্রতিটি মানুষ তাদের অধিকারগুলিকে অর্থপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারে। সেই কারণে, জাতিসংঘে উন্নয়ন কর্মসূচি UNDP)-তে মানব উন্নয়নের জন্য প্রতিটি জনগোষ্ঠীর অধিকারলাভের প্রচেষ্টাকে অন্যতম শর্তরূপে উল্লে করা হয়েছে।
•স্বাধীনতার উজ্জীবন (Revival of freedom) একটি দেশের সমস্ত জনগোষ্ঠী যাতে গণতান্ত্রিকভারে স্বাধীনতার সমস্ত সুখ উপভোগ করতে পারে, সেই জন্যে মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতাকে সামাজিক কাঠানো
• জনমখী উন্নয়ন (People oriented development): মানব উন্নয়নের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ দৃষ্টিভঙ্গিাকে পুরোপুরি বদলে ফেলে ভাবধারা পুনঃস্থাপিত করা।
• যাবতীয় বঞ্চনার অবসান (End of all deprivations): উন্নয়নের পথে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক মারও অর্থনৈতিক পরিসেবার পছন্দগুলিকে যাতে সার্বিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মানব উত্তরার যাবতীয় বঞ্চনার অবসান ঘটানোকে অন্যতম লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
• সুরক্ষা (Protection): গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় মানবকল্যাণের সুরক্ষাগত দিকগুলিকে মানব উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হয়।
• দুর্নীতি হ্রাস (Reduce corruption): মানুষের ন্যায্য সুযোগসুবিধার প্রাপ্যতাকে সুনিশ্চিত করে তুলার দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা মানব উন্নয়নের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত দিক।
• মানুষের ক্ষমতায়ন (Empowering people): মানুষের সার্বিক ক্ষমতায়ন হল এমন একটি ক্ষেত্র যার অধীনে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকেই রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতাগুলিকে উপভোগ কর থাকে। তাই, মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নকে বিভিন্নভাবে উদ্দীপিত করা হয়।
• ভারসাম্য প্রতিস্থাপন (Balance replacement) দেশে সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্বাধীনতা, সুস্থতা, কাম্য জনসংখ্যা, সম্পদের বণ্টন, সুখী জীবন এবং পরিবেশগত উপাদানগুলিকে ভারসাম্যের মাপকাঠিতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
• মানব উন্নয়ন কৌশলে মূল্যবোধের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা শিক্ষা, আইন, ন্যায়পরায়ণতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-সহ একাধিক বিষয়ে মনোনিবেশ করা হয়।
• শ্রখ্য জ্ঞাপন (Tribute): মানব উন্নয়নের সফল প্রচেষ্টায় উদ্দেশ্য আরও একটা বিশেষ দিক হল নারী পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা প্রভৃতি।
মানব উন্নয়নে আনুষঙ্গিক বিষয়/উপাদানসমূহ(Matters related to human development/ Components):
বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের পরিধিতে মানব উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্তিকরণে বেশ কয়েকটি আনুষঙ্গিক বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সথে বিবেচিত হয়ে থাকে, যেমন-
• মানবীয় জ্ঞান (Human knowledge): মানবকল্যাণের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধির ক্ষেত্রে জাম বৃদ্ধি হল বিকাশের একটি সহজাত মনস্তাত্ত্বিক অর্জিত প্রক্রিয়া। বস্তুত, মানব উন্নয়নের স্বার্থে এখানে সমাজের সর্বস্তরে জনশিক্ষার প্রসার, নারী শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, এমনকি বিভিন্ন স্তরে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের প্রকৃত জামা, এমনকি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্যাবলীকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভারসাম্যের অর্থনীতি (Balanced economy)
অর্থনৈতিক ভারসাম্য রাষ্ট্র ব্যাবস্থাকে শক্তিশালী করার অন্যতম হাতিয়ার। এই ধরনের ভারসামাযুস্ত কাঠামো মানুষের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের লক্ষ্যে যে কোনো অর্থনৈতিক উৎপাদন, বণ্টন, দক্ষতা, কর্মসংস্থান, সম্পদ ভোগ এবং আয়কে ঘিরে মানবমুখী বিকাশের ধারাকে যথেষ্ট সম্প্রসারিত করে তোলে।
• রাজনৈতিক এবং সামাজিক অংশল্লাহণ (Participation and Freedom): জনসমষ্টির রাজনৈতিক এবং সামাজিক অংশগ্রহণ প্রতিটি দেশের চিরন্তন গণতান্ত্রিক ভাবধারাগুলিতে অক্ষুণ্ণ থাকে। বিশেষকরে এক্ষেত্রে, সরকার গঠন, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, জনসংযোগ, নারী ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বিষয়ক সমতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, সহায়ক গঠনমূলক কার্যাবলী প্রভৃতিকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সংযুক্ত করে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলিকে যথেষ্ট গতিশীল রাখে।
• টেকসই পরিবেশ (Sustainable environment): টেকসই পরিবেশ হল এমন একটা পরিকল্পিত আধার,
যা শুধু বর্তমান জনসংখ্যার সার্বিক প্রয়োজন মেটায় না, বরং এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা এবং সমৃদ্ধির সমস্ত পথ তৈরি করে রাখে। আসলে, উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশাগুলি তখনই সার্থকতা পায়, যখন পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত অবক্ষয় রোধ করে মানুষ তাদের প্রাপ্য সম্পদের ভান্ডারগুলিকে সুরক্ষিত রাখে। সেই কারণে, মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে টেকসই পরিবেশীয় কাঠামো বজায় রাখার বিষয়টিকে অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
• মানব নিরাপত্তা ও অধিকার (Human security): মানুষের সার্বভৌমিক কল্যাণকামী পথে নিরাপত্তা এবং অধিকার সুরক্ষিত রাখাই আজকের দিনে প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড়ো একটি দায়বদ্ধতা। তাই, মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিমণ্ডলে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্ম নিরাপত্তা, জন নিরাপত্তা, আয় সংক্রান্ত নিরাপত্তা, সমষ্টিগত অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার, আইন ও নির্দিষ্ট বিধিগুলিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
• সামাজিক উন্নয়ন (Social development): সামাজিক জীবনধারায় পরিবর্তন মানেই ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে পূর্ণসম্ভাবনার স্তরে উপনীত করে তাদের সক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানো। যেহেতু, সামাজিক সাফল্য নাগরিকের সর্বাঙ্গীন কল্যাণের সাথে প্রত্যেক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত, সেই কারণে মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও একটি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়গুলি গভীরভাবে বিবেচনা করা হয়।
■ মানব উন্নয়নের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ (The four main pillars of human development): প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ মাহবুর উল এক মানব উন্নয়নের চারটি অপরিহার্য স্তস্তের কথা উল্লেখ করেছেন, যথা-
• উৎপাদনশীলতা (Productivity): সাধারণত উৎপাদনশীলতা অর্থে কোনো রূপান্তর বা পরিবর্তনসাধনের মাধ্যমে বস্তুর বা পরিসেবার অভাব পূরণের ক্ষমতা সৃষ্টিকে বোঝায়। উৎপাদনের মাধ্যমে সমাজ এবং অর্থনীতিতে কতটুকু উপযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন তার জন্য সর্বদা মানব পুঁজিতেই অধিক বিনিয়োগ করার
কথা বলা হয়। বস্তুত, একটি দেশে মানব পুঁজি গঠনে বিনিয়োগ প্রবণতা যত বাড়বে, মানবসম্প্যনের দক্ষত বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তা অভান্ত সহায়ক হয়ে উঠবে।
সমতা (Equity): মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমতা এমন একটি নৈতিক চালিকা শস্ত্রি যেটিকে প্রতিট জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা দরকার। এর মাধ্যমে, জনগণ তাদের ন্যায়সঙ্গ সুযোগসুবিধাগুলিকে সহজেই উপভোগ করতে হয়।
দীর্ঘস্থায়িত্ব (Sustainability): মানব উন্নয়নের দীর্ঘস্থায়ী ধারণায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিটি চাহিদাৎ অক্ষুন্ন রাখতে প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি সামাজিক প্রয়োজনগুলিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্টে কারণে, মানব উন্নয়নের পরিসর শুধু অর্থনৈতিক কাঠামোকেই পুনর্গঠিত করে না, বরং সামাজিক ন্যায়বিচং সংরক্ষণবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং সমৃদ্ধ জীবনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়েও এরই সামগ্রিক বিধিবদ্ধ নীতি স্থির করে রাখে। আন্তঃপ্রজন্ম সমতা অর্জনে দীর্ঘস্থায়িত্বের ধারণাটিকে মানব উন্নয়AেS স্বার্থে আজ প্রতিটি রাষ্ট্রই বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করছে।
• ক্ষমতায়ন (Empowerment): প্রকৃত মানব বিকাশের জন্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে সার্বিক ক্ষমতায়ন এগয় ক্ষমতায়ন সঠিকভাবে একটি দেশে ক্ষমতায়নের পরিবেশ গড়ে তুলতে ওপারলে, সমাজে নারী শক্তির বিকাশের প্রয়োজন। মুমিনের সিন্ধান্ত গ্রহন, রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা উপভোগ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে মানমূদ্ধ উন্নয়নের পথ আরও প্রশস্ত এবং কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়। সেই কারণে, মানব উন্নয়নে ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গটিংরে সর্বদা 'জেন্ডার-সেনসিটিভ' করে গড়ে তোলা হয়।
■ মানব উন্নয়নের কৌশলগত প্রক্রিয়া (Strategic process of human development):
আন্তর্জাতিক স্তরে মানব উন্নয়নসংক্রান্ত প্রতিটি কর্মসূচী বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসঙ্ঘ বেশ কতকগুলি কৌশারে পর্যায়ক্রমিক অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। যেগুলি হল-
• মানবসম্পদ বিশ্লেষণ (Human Resource Analysis): মানব উন্নয়ন কৌশলের প্রাথমিক ভিত্তি হল মানবসম্পদের কার্যকারীতা বিশ্লেষণ। এটি হল এমন একটি অন্তর্দৃষ্টি, যেখানে মানব মূলধনকে তার সক্ষমতার স্তর অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ মানবসম্পদের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহায়ক সম্পদ এবং মানুষের বেশকিছু মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
• মানবমুখী কর্মপন্থা নির্ধারণ (Determining human-oriented approach): সাংগঠনিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানবমুখী কর্মপন্থাগুলিকে শুরুতেই যদি স্থির করে রাখা যায়, তাহলে সংস্কারমূলক ভাবধারায় মানব উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাই সার্থকতা লাভ করে। এক্ষেত্রে, দক্ষ কার্যনির্বাই পরিচালকেরা জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা এবং সন্তুষ্টির নিরিখে উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কর্মপন্থাগুলি ন্দিঃ করেন। আসলে, মানবমুখী কর্মপন্থা নির্ধারণকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মুখ্য স্তম্ভ বলা যায়।
• নির্দেশিকা স্থিরীকরণ (Fixation of Guidelines): মানব উন্নয়ন কৌশলে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘ এবং স্থিতিশীল জীবনযাত্রার সবচেয়ে মূল্যবান নির্দেশিকাগুলিকে মান্যতা দেওয়া হয়। বিশেষ করে, একটি বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মানব উন্নয়নের এই নির্দেশিকাগুলিকে আরো প্রভাবশালী রূপে গড়ে তুলতে মানবীয় জ্ঞান, পছন্দ, সুযোগ, সৃজনশীলতা, স্বচ্ছতা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীল অবমা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।
• সূচক পরিমাপ (Index measure): মানব উন্নয়ন সূচক(HDI) হল সার্বিক উন্নয়নের কয়েকটি প্রত্যাশির বা কাঙ্ক্ষিত জীবনের সংখ্যাগত মাত্রা, যার মাধ্যমে মানুষের আয়ু শিক্ষার স্তর, জনপ্রতি মোট দেশজ উৎপাদন অন্নেতি সাধিষ্ট পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে গণনা করা হয়। মানব উন্নয়নের সূচকগুলিকে পরিমাপ বা অনুশীলন করে, কীভাবে জীবনকে আরও উন্নত করা যায়, তা সহজেই এখানে স্থির করা যায়।
সংশোধনমূলক পদক্ষেপ (Corrective Action): মানব উন্নয়নের কৌশলগুলিতে কোনও ধরনের ত্রুটি যাতে না থেকে যায়, তা নিশ্চিত করতে এখানে মানবমুখী উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছালোনের ত্রুটি বিবেচিত বেশ কিছু নতুন পরিবর্তিত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়।।
• বাস্তবায়ন (Implementation): মানব উন্নয়নের কৌশলগত পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলিকে যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায়, সেই লক্ষ্যে সংঘটিতভাবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, দায়িত্ব, পরিসেবাগুলিকে রাষ্ট্র কাঠামোর নীতি নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মানৰ উন্নয়ন প্রতিবেদন (Human Development Report): 1990 খ্রিস্টাব্দে UNDP(United Nations Development Programme)-র দ্বারা সর্বপ্রথম "Global Human Development Report" চালু হয়েছিল। বিশ্বের প্রায় 100টিরও বেশি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রায় 12টি ভাষায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমানে মানব উন্নয়নের প্রতিবেদনটি প্রায় 700টিরও বেশি আঞ্চলিক এবং উপআঞ্চলিক ভাষায় 140-টিরও বেশি দেশের উন্নয়ন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় একাধিক থিমকে সামনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে hdr. undp.org নামক ওয়েবসাইটের প্রাপ্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য থিমের তালিকাটিকে হয়।
মানব উন্নয়নের সাথে মানব পুঁজির সম্পর্ক (The relationship of human capital to human development):
মানব পুঁজি এবং মানব উন্নয়ন ধারণা দুটি আপাত দৃষ্টিতে কিন্তু পুরোপুরি অভিন্ন নয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তাদের সার্বিক উন্নয়নের প্রাসঙ্গিকতায় মানব উন্নয়নের পাশাপাশি, মানব পুঁজি (Human capital) বা মানব সম্পদের (Human resource) কয়েকটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। আসলে মানব উন্নয়নের উপাদানগত পরিধি শুধু যে নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন জীবনযাত্রার ওপর নির্ধারিত তা বলা যায় না,দেখা যায়, একটি দেশে মানব পজির দিকটি যদি অবহেলিত থাকে, তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রেন এসে পড়বে। কারণ, মানুষ যদি তাদের কর্মপ্রচেষ্টা এবং উপার্জনের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানব পড়ি অনুৎপাদনশীল বলে গণ্য হবে, যেটিকে আবার মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে কখনোই সমর্থন করা হয় না।
তবে সম্প্রতি মানব উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি যেহেতু সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠার লমে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকে, সেই দিক থেকে মানব পার্থকোর সীমারেখা টানা সম্ভব। পুঁজি এবং মানব উন্নয়নের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য সীমারেখা টানা সম্ভব।