পরিকল্পনা ক্ষেত্রের প্রকৃতি অনুসারে (According to the nature of the planning field)
1. পৌর পরিকল্পনা (Urban Planning):
কোনও শহর বা নগরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রা, শহর বা নগর ভিত্তিক কাঠামোশৈলী, ভূমিব্যবহার এরং তৎসংলগ্ন পরিবেশ-পরিস্থিতির নিরিখে যে ধরনের আঞ্চলিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, সেটি পৌর পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
• লক্ষ্য (Vision): (i) শহর বা নগরকেন্দ্রিক পরিসরে সুষ্ঠু ভূমি ব্যবহার প্রণালী গড়ে তোলা।
(ii) স্থানীয় বস্তি এলাকাগুলির পুনর্গঠন ও উন্নয়ন।
(iii) বিভিন্ন শিল্প-পরিসেবাভিত্তিক কর্মধারার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন।
(iv) পৌর এলাকার নান্দনিক এবং পরিবেশগত সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধি ঘটানো প্রভৃতি।
বিশেষত্ব (Speciality): (i) মানবসভ্যতায় উৎকর্ষতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল পৌর পরিকল্পনা।
(ii) এই ধরনের পরিকল্পনায় মানুষের সর্বোত্তম জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তি, মূলধনের সর্বাধিক প্রয়োগ ঘটে।
(iii) পৌর পরিকল্পনার উদ্দেশ্য এবং বৈচিত্রা সবচেয়ে বেশি যুগোপযোগী হয়ে থাকে।
• দৃষ্টান্ত: এই জাতীয় কোনও নগর বা শহরাঞ্চলের পয়ঃপ্রণালী, পানীয় জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ একাধিক ব্যবস্থাপনার পুনর্নবীকরণ এবং পুনঃস্থাপন প্রভৃতি এই ধরনের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।
2. গ্রামীণ পরিকল্পনা (Rural Planning):
গ্রামাঞ্চলে কোনো সম্ভাবনার বিকাশ কিংবা সেখানকার বিবিধ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যে সমস্ত আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়িত হয়, সেগুলি গ্রামীণ পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
• লক্ষ্য (Vision): (i) গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কার, (ii) দারিদ্র্য দূরীকরণ, (iii) বিদ্যুৎ পরিসেবার সম্প্রসারণ, (iv) ভূমিসম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা, (V) কৃষি অঞ্চলের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ এবং (vi) শিক্ষাও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিসেবা প্রদান প্রভৃতি।
বিশেষত্ব (Speciality): গ্রামীণ পরিকল্পনাগুলি কেন্দ্রীয় বা রাজ্যস্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। গ্রামীণ পরিকল্পনাগুলি সঠিকভাবে রূপায়ণে প্রশাসনিক নিম্নস্তরে থাকা অঞ্চল, ব্লকসহ একাধিক সরবাড়ি প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়। i) বেশির ভাগ গ্রামীণ পরিকল্পনা স্থানীয় পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখেই পরিচালিত করা হয়ে থাকে।
দৃষ্টান্ত: ভারতে কেন্দ্রীয় স্তর থেকে পরিচালিত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা অথবা MGNREGA- মাধ্যমে স্থানীয় রাস্তাঘাট ও জলাশয় সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপগুলি গ্রামীণ পরিকল্পনাভুক্ত।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার স্তর অনুযায়ী (According to the level of planning):
1. একস্তরীয় পরিকল্পনা (Single Level Planning):
• লক্ষ্য (Vision): (i) সমগ্র দেশের কল্যাণে ভারসাম্য যুক্ত বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ।
একক প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে গৃহীত এবং পরিচালিত হয়, তাকেই একস্তরীয় আঞ্চলিক পরিকল্পনা বলে। বিভিন্ন অঞ্চলের সমস্যা সমাধান অথবা সম্ভাবনাভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত পরিকল্পনা সাধারণত কোনে
জাতীয় নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিকে মজবুত করা প্রভৃতি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বাণিজ্য কৌশল নীতি প্রয়োগ।
জাতীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তামূলক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তিকরণ।
• বিশেষত্ব (Speciality): (i) একস্তরীয় পরিকল্পনা হল জাতীয় কেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা।
(ii) রাষ্ট্র নির্ধারিত বিশেষ কমিটি বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ধরনের পরিকল্পনার কর্মসূচি গ্রহণ কর হয়।
(iii) এই পরিকল্পনাগুলি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি যে-কোনও ধরনেরই হতে পারে।
(iv) জাতীয় একস্তরীয় পরিকল্পনাগুলিতে রাষ্ট্রপ্রধানের আঞ্চলিক কল্যাণকামী চিন্তাধারার সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
• দৃষ্টান্ত: ভারতবর্ষে 1951 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে একস্তরীয় পরিকল্পনা নীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
2. বহুস্তরীয় পরিকল্পনা (Multi Level Planning):
যে সমস্ত পরিকল্পনার কার্যক্রম স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোয় থাকা বিভিন্ন স্তরের মধ্যে যৌথ সমন্বয় রেখে পরিচালিত বা রূপায়িত হয়ে থাকে, সেটি বহুস্তরীয় আঞ্চলিক পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
• লক্ষা (Vision): (i) আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সার্বজনীন তথা সমন্বয়মূলক কাঠামো সৃষ্টি।
(ii) কোনও একটি রাষ্ট্রকে বিভিন্ন দিক (সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, পরিসেবাকেন্দ্রিক) থেকে সমৃদ্ধশালী করে তোলা।
(iii) আন্তলিক এবং উপ-আঞ্চলিক স্তরে সম্প্রদায়ভিত্তিক আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
(iv) নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিমূলক সমস্যাগুলির দ্রুত নিরসন প্রভৃতি।
• বিশেষত্ব (Speciality): (i) এটি জাতীয়, আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক স্তরে গৃহীত একটি অন্যতম বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা।
(ii) একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে (গ্রাম, ব্লক, জেলা, রাজ্যে প্রভৃতি) পৃথক পৃথক উদ্দেশ্য হয়।
(iii) বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে গৃহীত বিশেষ কিছু পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি এখানে স্পষ্টত লক্ষ্য করা যায়।
• দৃস্টান্ত: বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বহুস্তরীয় পরিকল্পনাগুলির হল উন্নয়নকামী উদ্যোগের অন্যতম বা আদর্শ কর্মকৌশল।
সময়কালভিত্তিক পরিকল্পনা (Planning on the basis of time period)
সময়কালের ভিত্তিতে যাবতীয় আঞ্চলিক পরিকল্পনা মূলত তিন প্রভাব, যথা-
( ১) স্বল্পমেয়াদি আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Short-term regional planning): যে সমস্ত পরিকল্পনা এক বছর। বা তারও কম সময়কাল ধার্য করে রূপায়িত হয়, তাদের স্বল্পকালীন আঞ্চলিক পরিকল্পনা বলা হয়। যেমন- কোনও সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের আর্থিক পরিসেবা প্রদান সংক্রান্ত পরিকল্পনা।
(2) মধ্যমেয়াদি আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Middle-term regional planning): যেসমস্ত পরিকল্পনাকে এক থেকে পাঁচ বছরের ধার্য সময়কালে রূপায়ণ করা হয়, তাদের মধ্যমেয়াদি বা মধ্যকালীন আঞ্চলিক পরিকল্পনা বলা হয়। যেমন-ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
(3) দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক পরিকল্পনা (Long-term regional planning): যে সমস্ত পরিকল্পনা পাঁচ বছরের অধিক সময়কাল ধার্য করে রূপায়িত হয়, তাদের দীর্ঘমেয়াদি বা দীর্ঘকালীন আঞ্চলিক পরিকল্পনা বলা হয়। যেমন-ভারতে জাতীয় সড়কপথের উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত সোনালি চতুর্ভুজ পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকৃতির।
(4) বিধিসম্মত কাঠামো অনুসারে (According to the statutory structure)
বিধিসম্মত কাঠামো অনুযায়ী প্রধান প্রধান আঞ্চলিক পরিকল্পনাগুলি হল-
(1 ) পদ্ধতিগত পরিকল্পনা (Systematic planning): নির্দিষ্ট অনুক্রমিক ধারায় একাধিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা এবং প্রযুক্তিগত মৌলিক নীতিকাঠামোয় প্রণীত বিধিসম্মত সমস্ত পরিকল্পনাকেই পদ্ধতিগত পরিকল্পনা বলা হয়। পদ্ধতিগত পরিকল্পনা রূপায়ণে যে বিষয়গুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেগুলি হল-
• আঞ্চলিক স্তরে বাস্তব সমস্যাকেন্দ্রিক সচেতনতা,
• পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মুলাবোধ তথা আদর্শের সমন্বয়সাধন।
যেমন-R. P. Mishra, Rao, Sundaram প্রমুখ। ভারতের আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত বিষয়গুলিকেই পদ্ধতিগত পরিকল্পনার অঙ্গারূপে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
(2) কৌশলগত পরিকল্পনা (Strategic planning)
কৌশলগত পরিকল্পনা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি উচ্চস্তরীয় কোনও সংগঠিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা ভবিষ্যতের কোনও উন্নয়নমূলক বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, নির্যি নীতি মেনে পরিচালিত হয়। অন্যভাবে বলা যে জারে একটি প্রতিষ্ঠান সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব সহায়-সম্পদকে ব্যবহার করে একটি নির্দিধ অভিলক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত করার সার্বিক প্রচেষ্টার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটে কৌশলগত পরিকল্পনায়।
এই ধরনের পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি দিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে, সেগুলি হল-
• * গ্রাহক এলাকার সমস্যা বা অত্যাবশ্যকীয় কিছু উপাদানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি,প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থ সুরক্ষা,
• গৃহীত কর্মসূচির ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিসেবা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান,
• ইনপুট এবং আউটপুটের কৌশলগুলির মধ্যে যৌথ সমন্বয়সাধন প্রভৃতি।
প্সঙ্গাত উল্লেখ্য, কৌশলগত পরিকল্পনায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এটিকে যেমন চক্রাকারে (cyclic way) পরিচালিত করা হয়, তেমনই এখানে পরিকল্পনার প্রতিটি কৌশলগত নীতি যাতে কঠোরভাবে বজায় থাকে, সেজন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ 1970-এর দশক থেকে 'SWOT' নামক নতুন আরেকটি অত্যন্ত বিধিসম্মত কাঠামোর প্রয়োগ ঘটিয়ে আসছে। এখানে, পরিকল্পনায় বিবেচ্য SWOT'-কে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ইংরাজি শব্দের প্রথম অক্ষরগুলিকে সংযুর করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলি হল S Strength (শক্তিসত্তা), W Weaknesses (দুর্বলতা), 0 Opportunities (সুযোগ) এবং T Threats (ভীতি)।
(2) বহু পরিন বিপু"SWOT বিশ্লেষণ কৌশলগত পরিকল্পনায় 'SWOT বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার সামর্থ্য বা মূল দক্ষতাগুলিকে বিধিবন্ধ কাঠামোয় কার্যকরী করে তুলতে একদিকে যেমন সমস্ত দূর্বলতা চিহ্নিত করা হয়, একইভাবে পরিকল্পনার বিভিন্ন সুযোগ বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে চিহ্নিত হুমকির সমস্ত বাধাকে বিচক্ষণভাবে নিরসন করা হয়। SWOT বিশ্লেষণ কাঠামোয় বিবেচনাধীন বিষয়গুলিকে পাশের ধারণাচিত্রে উপস্থাপন করা হল।
যেমন-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে
সত্তরের দশকে McKinsey &Company-কৃত পরিকল্পনাটিতে সম্পূর্ণ কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় "Master Plan"-এর আওতায় 'Zoning' পদ্ধতিতে সম্প্রদায়ভিত্তিক আঞ্চলিক পরিকল্পনাগুলিতে একচেটিয়াভাবে 'SWOT' বিশ্লেষণ পদ্ধতিটিকে বাস্তবায়িত করে আসছে।
(3) প্রশাসনিক পরিকল্পনা (Administrative planning):
পরিকল্পনা প্রক্রিয়াটি যখন কোনও একটি রাষ্ট্র স্বীকৃত সরকারি প্রতিষ্ঠান মারফৎ জনসাধারণের সার্বিক বিকাশ বা এলাকা উন্নয়নের উপলক্ষ্যে রূপায়ণ করা হয়ে থাকে, তাকেই প্রশাসনিক পরিকল্পনা বলে। এই ধরনের পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলি সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য, সেগুলি হল-
• যেমন-সরকারিভাবে প্রতিটি রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলি এই প্রকৃতির।
কার্যকরী পরিকল্পনা (Operating planning): কোনও জনকল্যাণমুখী কার্যাবলিকে সরাসরি উপমাল্য করে যে সমস্ত পরিকল্পনা দ্রুত গ্রহণ এবং বাস্তবায়িত করা হয়, তাকেই কার্যকরী পরিকল্পনা বলা হয়। অবশ্য কোথায়, কখন এবং কীভাবে এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, সেটি বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তর বা প্রতিষ্ঠানের মৌলিক নীতি এবং পরিসেবামূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল।
যেমন- উৎপাদনশীল যে-কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের গৃহীত অধিকাংশ পরিকল্পনাই এই প্রকৃতির।
উদ্দেশ্য অনুসারে (According to purpose)
উদ্দেশ্য অনুসারে আঞ্চলিক পরিকল্পনাগুলি মূলত চার প্রকার, যথা-
(1) একক উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনা (Single purpose planning): কোনও একটিমাত্র উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা রূপায়িত হলে তাকে একক উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনা বলা হয়। এই ধরনের পরিকল্পনা একটি নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর হয়।
যেমন- পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কোনও একটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা।
(2) বহু উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনা (Multipurpose planning): একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সেটি বহু উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনা নামে পরিচিত। এই সমস্ত পরিকল্পনার বাস্তবায়নে বিপুল অর্থব্যয় এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
যেমন বিশেষ কোনো নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণের দ্বারা জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্যচাষ, জল পরিবহণ অথবা পর্যটন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটানো এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত।
(3) সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা (Specific planning): যে সমস্ত পরিকল্পনা কোনও একটি নির্ধারিত পরিসরের সমৃদ্ধি তথা অবকাঠামোর সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বলা হয়। এখানে বেশ কতকগুলি সুস্পষ্ট নীতির মাধ্যমে সমগ্র পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়।
যেমন কোনও একটি দেশে সঠিক ভূমি ব্যবহার, পরিকাঠামোর উন্নয়নসহ একাধিক ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাগুলি গ্রহণ করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলসের প্রায় 50-টিরও বেশি নগরকেন্দ্রিক পরিকল্পনা সুনির্দিষ্ট প্রকৃতির।
(4) উদ্ভাবনী পরিকল্পনা (Innovative planning): প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতায় পরিচালিত যে সমস্ত পরিকল্পনায় নিত্যনতুন সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পথ উন্মুক্ত থাকে, তাকেই উদ্ভাবনী পরিকল্পনা বলা হয়। এই ধরনের পরিকল্পনাগুলিও অত্যন্ত বিধানসম্মত ও প্রযুক্তিকেন্দ্রিক হয়।
যেমন-কোনও একটি শহরাঞ্চলের যানজটের সমস্যার মোকাবিলায় উড়ালপুল নির্মাণ কৌশলটিতে উদ্ভাবনী পরিকল্পনার সাহায্য নেওয়া হয়।
(1) কার্যকরী পদক্ষেপের ভিত্তিতে (On the basis of effective measures)
আঞ্চলিক স্তরে যে সমস্ত কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সেগুলি হল-
(1) নির্দেশপূর্ণ পরিকল্পনা (Instructive planning): উন্নয়নকে লক্ষ্য রেখে যখন কোনও পরিকল্পনা রাষ্ট্রস্বীকৃত সরকার বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক (সরকারি বা বেসরকারি ভাবে) পরিচালিত হয়, তাকে নির্দেশপূর্ণ পরিকল্পনা বলা হয়।
যেমন-সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে নির্দেশমূলক পরিকল্পনার মাধ্যমেই বেশির ভাগ পরিসেবাভিত্তিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্র (যেমন-ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র) দ্রুত উন্নতিলাভ করে।
(2) অনুজ্ঞাসূচক পরিকল্পনা (Imperative planning): যখন কোনও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা ঋতুপক্ষ মারফত জারি করা বিম্বিত কৌশল পা ন্যায়সঙ্গার আদেশকে মান্যতা দিয়ে যেকোনো পরিকল্পনা রূপায়ণ ঘটে বাবে তাকেই অনুজ্ঞাসূচক বা আদেশাত্মক পরিকল্পনা বলা হয়। যেমন-ফ্রান্স, চিন সহ একাধিক দেশে একই ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
(3) ইস্তাহারমূলক পরিকল্পনা (Manifest planning): যে সমস্ত পরিকল্পনাকে কোনও রাষ্ট্রস্বীকৃত প্রতিদন বা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীনে সার্বজনীন স্বার্থে ঘোষণা মারফত গ্রহণ করা হয়, তাকে ইস্তাহারমূলক পরিকল্পন বলা হয়। যেদন রাজনৈতিক স্বার্থে গৃহীত পূর্বনির্ধারিত সমস্ত পরিকল্পনা এই প্রকৃতির।
ব্যাপ্তি ও প্রসার অনুয (According to scope and expression)
ব্যাপ্তি এবং প্রসার অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিকল্পনাগুলি হল নিম্নরূপ-
(1) প্রচ্ছন্ন পরিকল্পনা (Latent planning): কোনও একটি বৃহৎ পরিকল্পনার মধ্যে আনুষঙ্গিক অপর একট পরিকল্পনা যখন আংশিকভাবে লুক্কায়িত থাকে, তাকে প্রচ্ছন্ন পরিকল্পনা বলা হয়।
যেমন নদীবাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা।
(2 ) আংশিক পরিকল্পনা (Partial planning): যখন কোনও একটি স্থানের গৃহীত পরিকল্পনা অর্থ বা সময়ের অভাবে উন্নয়নের শুধুমাত্র কয়েকটি শর্তকেই রূপায়ণ করা যায়, তাকে আংশিক পরিকল্পনা বলা হয়।
যেমন-বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ একাধিক উন্নয়নশীল দেশের পরিকল্পনাগুলি আংশিক প্রকৃতির।
(3) স্থায়ী পরিকল্পনা (Standing plan): কোনও একটি প্রতিষ্ঠান মারফত গৃহীত যে পরিকল্পনা একবার গ্রহণ করার পর নতুন বিশেষ কোনও পরিস্থিতি বা সমস্যা। সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে, তাকেই স্বামী পরিকল্পনা বলা হয়। এ প্রসঙ্গো Ricky W. Griffin বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য বারে বারে ঘটতে থাকা প্রায় সমকাঠামোযুক্ত এমন যে-কোনও পরিকল্পনা হল স্থায়ী প্রকৃতির।
যেমন- এলাকা উন্নয়ন সংক্রান্ত আঞ্চলিক পরিকল্পনা।।
(২) সামগ্রিক পরিকল্পনা (Comprehensive planning):
কোনো একটি অঞ্চলের সর্বস্তরে উন্নয়নমূলক বিবিধ উদ্দেশ্য কার্যকর করতে যে সমস্ত পরিকল্পনা রূপায়িত হয়, তাকেই সামগ্রিক পরিকল্পনা বলা হয়। সাধারণত, সামগ্রিক পরিকল্পনাগুলি অত্যন্ত বিধিসম্মত এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে থাকে।
যেমন-জাপানের অর্থনৈতিক বিকাশের অধিকাংশ পরিকল্পনাগুলি এই প্রকৃতির। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সামগ্রিক পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রধান ক্ষেত্র রূপে যে সমস্ত পরিসরকে বেছে নওয়া হয়, সেগুলি 4.24 নং ধারণাচিত্রে উপস্থাপন করা হল।
আঞ্চলিক পরিকল্পনা নির্ধারণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান(Various Organizations Participating in Regional Planning)
কোনও একটি দেশের জাতীয় এবং স্থানীয় স্তরগুলিতে বিভিন্ন সরকারি প্রশাসনিক দপ্তর কিংবা বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠান মারফত আঞ্চলিক পরিকল্পনা নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেমন-
সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ(Governmental Institutions): আশের আতীয় তথ্য আম্মালিক ভরে উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা নির্ধারণ বা রূপায়ণের কাজটি যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের হাতে অর্ণিত থাকে, সেগুলি হল-
(১) দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিশেষ উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান, (ii) জাতীয় পরিকল্পনা পারিষদ বা কমিটি, (i) কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অধীনস্য উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠান, (১০) রাজ্য পরিকল্পনা দপ্তর, (৮) মিউনিসিপালিটি, (vi) কর্পোরেশন, (vii) জেলাপরিষদ, (viii) ব্লক, (ix) অঞ্চল প্রশাসন (২) অর্থ দপ্তর, (xi) স্বাস্থ্য-পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর, (xii) সরকারি সমাজকল্যাণ বিভাগ (xiii) জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা প্রতিষ্ঠান, (xiv) কৃষি দপ্তর প্রভৃতি।
• বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ (Non-Governmental Institutions) একটি দেশের আঝলিক পরিকল্পনায় শুধু যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অন্যতম সেকথা যেমন ঠিক, আধার কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্যানীয় তরে বাক্য বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও আঞ্চলিক পরিকল্পনার সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার গুরুত্ব (The Importance of Regional Planning)
আঞ্চলিক পরিকল্পনার গুরুত্বের সপক্ষে যে সমস্ত বিষয়কে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হয় সেগুলি হল-
• জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Improving the quality of life): একটি নির্দিষ্ট উন্নয়নমূলক লক্ষ্যকে সামনে রেখে গড়ে তোলা যুগোপযোগী পরিকল্পনা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে আর্থ-সামাজিক এবং পরিসেবা সংক্রান্ত একাধিক সুযোগ-সুবিধার প্রসার ঘটিয়ে জীবনযাত্রার সমৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে।
যেমন-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইটালি, ফ্রান্স সহ একাধিক দেশে মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় সেখানকার বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।
• কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ (Effective control) যে-কোনো পরিকল্পনায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলিকে বিভিন্ন কর্মসূচি,সহায়ক সম্পদ এবং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উন্নয়নকে ঘিরে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকলে যে-কোনো আঞ্চলিক পরিকল্পনার সময় বিলম্বকে অনেকাংশে এড়ানো যায়।
যেমন- ভারতে DVC-এর অধীনে গৃহীত পরিকল্পনাটি কার্যকরী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে।
• দ্রুত শিল্পায়ন (Rapid industrialization): নির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় যে-কোনও দেশের উৎপাদন এবং বণ্টনের যৌথ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমন্বয় ঘটাতে পারলে শিল্পায়নের প্রক্রিয়াটি অতি দ্রুত কার্যকরী হয়। ফলে সামগ্রিক উৎপাদনের দক্ষতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
যেমন স্বাধীনতার পরবর্তীকালীন ভারতের বেশির ভাগ বৃহদায়তন শিল্পকেন্দ্রের সার্বিক বিকাশ বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধমেই সম্পন্ন হয়েছিল।
সম্পদের অপচয় রোষ (Prevent wastage of resources): সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদের চাহিদ ও জোগানের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য বজায় থাকে। এইভাবে, কোনও একটি দেশের সম্পদের অপচয়কে দ্রুত এক সহজেই ঠেকানো সম্ভব হয়। যেমন-অতীতে কয়লা উত্তোলন ক্ষেত্রগুলিতে মানুষের বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের জন্য প্রচুর পরিমাসে কয়লা পুড়ে নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সেই কয়লার অপচয়কে বর্তমানে অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
• বৈষম্য দূরীকরণ (Eliminate inequality): বিভিন্ন উদ্দেশ্যমূলক আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে গ্রাম-শহর, ধনী-দরিদ্র, উন্নত-অনুন্নত অঞ্চলের মধ্যে থাকা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কর্মসংস্থানসংক্রান্ত যাবতীয় বৈষম্যকে সহজেই দূর করা যায়। যেমন- পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য পূর্বের তুলনায় যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে।
• জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ (Controlling population growth): একটি দেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জনসংখ্যার বোঝা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে দারিদ্রদ্র্য, বেকারত্ব, সম্পদের অসম ভোগ ব্যবস্থা, নিরক্ষরতা সহ একাধিক প্রতিবন্ধক অবস্থা উন্নয়নের সমস্ত পথকে রোধ করে দেয়। তাই, সঠিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এই সমস্ত প্রতিকূলতাকে প্রতিরোধ করে দেশটিকে পুনরায় বিকাশের কাঙ্ক্ষিত স্তরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
যেমন- সমাজতান্ত্রিক চিনে একসময় উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমূলক পরিকল্পনা 'One child policy সফলভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
• শিক্ষার বিস্তার (The spread of education): প্রতিটি জাতির বিকাশে শিক্ষা যেহেতু একটি অন্যতম মানদণ্ড, সেই কারণে উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দেশকে প্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশ শিক্ষা সংক্রান্ত একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যথেষ্ট বন্ধপরিকর।
যেমন বর্তমানে ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতিটিকে সম্পূর্ণ পরিকল্পনাভিত্তিক উপস্থাপন করা হয়েছে।
• সুষম নগর কাঠামো সৃষ্টি (Creation of balanced urban structure) আধুনিক যুগে সুষমভাবে নগর কাঠামো সৃষ্টি কোনও একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান রূপে বিবেচিত হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের আঞ্চলিক পরিকল্পনায় তাই নগর বিকাশের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
যেমন- ফ্রান্স, ইটালি, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের প্রাদেশিক পরিকল্পনাগুলিতে নগরোন্নয়নকে বিকাশের অন্যতম মানদণ্ড ধরা হয়।
• দক্ষতা বৃদ্ধি (Increases efficiency): রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যেকোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটানো সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কাছেই একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জস্বরূপ। এক্ষেত্রে, পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য কর্মীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে যথেষ্ট উৎসাহিত করে। ফলে, আঞ্চলিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এদের সকলের দক্ষতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
• ঝুঁকির সম্ভাবনা হ্রাস (Decreases the chance of risk): উপযুক্ত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে কার্যক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্ত বিষয়কে আগাম অনুধাবন করে সর্বোত্তম ফললাভের প্রচেষ্টা করা হয়। এর ফলে যাবতীয় পরিচালনা সংক্রান্ত ঝুঁকির সম্ভাবনাকে দ্রুত হ্রাস করা যায়।
যেমন-বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে গড়ে তোলা ভারতের জাতীয় সড়ক পরিকল্পনাগুলির বাস্তবায়ন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যানজট এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি আগের চেয়ে যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে এনেছে।
দিদান্ত গ্রহণে সহায়তা (Helps in decision making)। যে যেনেও নির্দিও বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রহাজ ও পরোক্ষভাবে উন্নয়নমুখী সমস্ত ধরনের কার্যের সার্বিক মূল্যায়নে সহায়তা করে বলে এর মাধ্যমে উপযুপ্ত সিন্ধান্ত গ্রহদের তৎপরতা বাড়ে।বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে করলা পুড়িয়ে যে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গঠনের পরিকল্পনা কার্যকরী হয়েছিল, পরবর্তীকালে তার মূল্যায়ন করে দূষণজনিত সমস্যা এড়াতে পৃথিবীর একাধিক দেশে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আধুলিক পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন পর্যায় (Different stages of Regional Planning):
আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার বেশ কতকগুলি সর্বজনস্বীকৃত পর্যায় বা বাপ রয়েছে,
(A) প্রাক পরিকল্পনা পর্যায় (Pre-planning Stage)
• असा निभीরণ (Determining the problem) যে-কোনও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রথম ০ংক্ষেপটি হল সমস্যা নির্ধারণ। এখানে, অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ, পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিসরের যাবতীয় দুর্বলতাকে সমস্যা আকারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিহ্নিত করা হয়।
• প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ (Collection of relevant information): পরিকল্পনার জন্য যখন কোনো একটি খান বা অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হয়, সেখানকার সমস্যা সম্পর্কে অবগত থাকাও একান্ত প্রয়োজন। তাই, আঞ্চলিক পরিকল্পনার পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ধাপটি হল বিভিন্ন সমস্যা ও তার কারণগুলি সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য আহরণ করা।
• তথ্যের বিশ্লেষণ (Analysis of information) ঠিক কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সমগ্র পরিকল্পনাটি
পরিচালিত হবে, অথবা ঠিক কোন কোন স্থানে পরিকল্পনাটি কার্যকর করা হবে, তা বিবেচনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত অঞ্চলগুলির সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যকে যথাযথ বিশ্লেষণ করা একান্ত জরুরি।
পরিকল্পনার জন্য একটি অঞ্চল নিরীক্ষণে যে সমস্ত বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, সেগুলি হল-
প্রাকৃতিক অঞ্চল (Natural region survey) প্রাকৃতিক উপাদানরূপে ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, নদনদী, জলবায়ুর প্রকৃতি, বণ্টন এবং সেগুলির পরিমাণ নিরীক্ষণ।
(b) ভূমি ব্যবহার নিরীক্ষণ (Land use survey): খনি, কৃষি, শিল্প অথবা বসতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ।
(c) পরিকাঠামোগত নিরীক্ষণ (Infrastructual survey) পরিবহণ [রেল, সড়ক প্রভৃতি), প্রযুক্তি, যোগাযোগ, বাজার, ব্যাবসাবাণিজ্যের বিভিন্ন অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধাগুলিকে অনুধাবন।
আর্থ-সামাজিক নিরীক্ষণ (Socio-economic survey): মানুষের মাথাপিছু আয়, বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে মানুষের অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিবিধ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা।
(e) জনমিতি নিরীক্ষণ (Demographic survey): জন্মহার, মৃত্যুহার, পরিব্রাজন, নারী-পুরুষ অনুপাত প্রভৃতি সম্পর্কিত তথ্য আহরণ।
(1) বসতি অন্যূল নিরীক্ষণ (Settlement area survey): গ্রাম বা শহরাঞ্চলে মনুষ্যবসতিকেন্দ্রিক বিভিন্ন পরিসর, পরিবেশ-পরিস্থিতি, স্থানীয় সুযোগ সুবিধা, বসতির দূরত্ব এবং বসতিগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক সমীক্ষা প্রভৃতি।
কোনো একটি দেশের আঞ্চলিক পরিকল্পনায় বিভিন্ন নিরীক্ষণ ক্ষেত্রগুলি থেকে পাওয়া সংশ্লিষ্ট গুণগত রাশিতথ্য (যেমন-সাক্ষরতা, লিকা প্রভৃতি) এবং সংখ্যাগত রাশিতথ্য (যেমন কোনও বনাঞ্চলে মোট উদ্ভিদের পরিমাণ, সুপ্তপ্রায় প্রাণিদের সংখ্যা প্রভৃতি) উভয়ই সমানভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তবে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আরো দুটি বিশেষ তথ্য আহরণের ওপর জোর দেওয়া হয়, সেগুলি হল-
কচেলিক রাশিরখা বা Spatial data (যেমন-কোনও একটি খনি এলাকার প্রধান শক্তিসম্পদরূপে কাজ উত্তোলন সংক্রান্ত তথ্য, ব্লক বা জেলাভিত্তিক জনসংখ্যার বন্টন সংক্রান্ত তথ্য, রাজ্যভিত্তিক ফসল উৎপাদন সাতার তথ্য প্রতিবাদ তথ্য বা Temporal data (যেমন-প্রতি পাঁচ বা দশ বছর অন্তর জনসংখ্যা বা ফসর উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্য)। সাধারণত এই সমস্ত তথ্য আহরণে প্রায়শই Socio-Geographical Survey Socio-Economic Survey পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
• উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ধারণ (Setting objectives or goals): প্রাক-পরিকল্পনার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধাপী হল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ধারণ। এজনা, পূর্ববর্তী ধাপের থেকে পাওয়া আঞ্চলিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সমস্যাটি সমাধানের জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ বা সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার উদ্দে স্থির করা হয়।
(B) পরিকল্পনা পর্যায় (Planning Stages)
• পরিমাপযোগ্য বিধি স্থিরকরণ [Setting the measurable rules): পরিকল্পনার সমস্ত উদ্দেশ্য যাতে উন্নয়নের নিরিখে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাকে পরিচালিত করবে সেরকম বেশ কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকরী বিধি পরিকল্পনা পর্যায়ে স্থির করা হয়।
• ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার প্রস্তুত (Preparing for future action): পরিকল্পনার কর্মপন্থামূলক এই যাগী মূলত ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত ফলাফল বা কার্যকর পরিস্থিতির অনুমান করে স্থির করা হয়। সাধারণত, যে পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাগুলি যত স্পষ্ট তার গ্রহণযোগ্যতাও সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
• সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা চিহ্নিতকরণ (Identifying potential limitation): অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশির কর্মপন্থা প্রয়োগকালে যে সমস্ত বাধার সম্মুখীন হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তা আগে থেকেই অনুমান করে সেগুলির সঠিক সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে, নির্ধারিত পরিকল্পনাটি মাঝপথে পুনরায় বাধার সম্মুখীন হওয়া বা মাঝপথে থেমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে অনেকটাই রক্ষা পায়।
• বিকল্প কর্মপন্থা নির্ধারণ (Determining alternative approaches): নির্ধারিত পরিকল্পনাটির প্রয়োগ ক্ষেত্রে যাতে বিভিন্ন সমস্যা এড়িয়ে সেটি ধারাবাহিকভাবে কার্যকর করা যায়, সেজন্য একাধিক বিকল্প কর্মপন্থা আগে থেকেই স্থির করা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গো, Koontz বলেছেন-বিকল্প কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়নি এমন কোনও পরিকল্পনা পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি।
• বিকল্প কর্মপন্থা পর্যালোচনা (Review of alternative approaches): পরিকল্পনা পদ্ধতিতে আঞ্চলিক উন্নয়নের নির্বাচিত বিকল্প উপাদানগুলিকেও পরবর্তী ধাপে তাদের পারিপার্শ্বিকতা সম্বন্ধীয় বিভিন্ন গবেষণা এবং অঞ্চল অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাযথ বিবেচনা করা হয়।
• পরিকল্পনার উপাদান সংহতিকরণ (Integrating the elements of the plan): পর্যালোচিত বা মূল্যায়িত সামগ্রিক পরিকল্পনাটি যাতে দ্রুত প্রয়োগযোগ্য করা যায়, সেজন্য পরিকল্পনা কাঠামোয় বিভিন্ন সহায়ক সম্পদ বা উপাদানকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুসংহত করা হয়। এখানে, যে সমস্ত উপাদান সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সেগুলি হল-সম্পর সৃষ্টি, পরিকল্পনা বাজেট নির্ধারণ, পরিকাঠামো সৃষ্টি, উপযুক্ত সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রয়োগকৌশল শিরকরণ, কর্মীনিয়োগ, কার্যকরী যন্ত্রপাতি মজুতকরণ প্রভৃতি।
আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা পর্যায় (Formal Planning Stage)
• পরিকল্পনা কর্মসূচির রাস্তবায়ন (Implementation of planning programs): পরিকল্পনা সুসংগতকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টি হল আনুষ্ঠানিক ভাবে সেটির বাস্তবায়ন বা রূপায়ণ পর্যায়। এখানে, বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানিক মাত্রা অনুযায়ী পরিকল্পনামূলক প্রতিটি কর্মসূচিকে সুনিপুণভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা করা হয়।
এই পর্যায়ের প্রধান কাজগুলিকে আবার বেশ কয়েকটি উপপর্যায়ে সম্পন্ন করা হয়, যেমন- পরিকল্পনা সংহতিকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাহায্যে সর্বোত্তম কার্যক্রমটিকে বেছে নেওয়া। প্রধান পরিকল্পনাটিকে অঞ্চলভিত্তিক কাঠামোয় প্রয়োগের ক্ষেত্রে কৌশলগত সহজপথ নির্বাচন। বাস্তবায়িত পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ বা নির্দিষ্ট বাজেট স্থির করে বিভিন্ন খাতে বন্টন করে দেওয়া প্রভৃতি।
পরিকল্পনা পরবর্তী পর্যায় (Post Planning Stage or Operational Stage)
নক বিভিন্ন তথ্য শুভ শ্লিষ্ট পরিকল্পনারও কর্মসূচির একেবারে শেষ পর্যায়ে পরিকল্পনার সামগ্রিক কার্যক্রমটিকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। বস্তুত, পরিকল্পনাকালে নির্ধারিত প্রকল্প বা নীতিতে যদি কোনও ত্রুটি থেকে যায়, সেগুলিকে যেমন এখানে দ্রুত সংশোধন করা যায়, অনুরূপভাবে কার্যক্ষেত্রে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঠিক কতটা এবং কোন পথে ঘটেছে সেটিকেও এই পর্যায়ে সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়।
বিশেষ কর্মসূচি (Special assignment): অনেকসময় মূল পরিকল্পনাটির প্রয়োগক্ষেত্রের একেবারে শেষ পর্যায়ে পুনরায় যদি কোনও সমস্যার উদ্রেক ঘটে, সেটিকেও সার্বিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাটিতে কিছু বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এটিকে বিকল্প তাৎক্ষণিক কার্যক্রমরূপে গণ্য করা হয়। এখানে আঞ্চলিক পরিকল্পনা প্রণয়নের একটি বিধিসম্মত সহজ কাঠামো 4.25 নং ধারণাচিত্রে উপস্থাপন করা হল।
আঞ্চলিক পরিকল্পনায় ব্যবস্থাপক কাঠামো (Managerial Structure of Regional Planning):
ব্যাপক বা সীমিত পরিসরে আঞ্চলিক পরিকল্পনা আসলে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যপূরণ বা ফললাভের একটি কার্যকরী অনুশীলন। সেই কারণে, প্রতিটি আঞ্চলিক পরিকল্পনারই নির্দিষ্ট কিছু বিধিসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, যেগগুলি পরিকল্পনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর কয়েকটি অনুক্রমিক বিন্যাসগত শৈলী। আঞ্চলিক পরিকল্পনা স্থির করা এবং সেটিকে সঠিকপথে এখানে একটি কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য-কোনও পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ব্যবস্থাপকদের বিশেষ ভূমিকা থাকে। যেহেতু, সমস্ত পরিকল্পনা আঞ্চলিক জ্বরে পরিচালিত করার দায়ভার থাকে কোনও নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর, সেই কারণে পরিকল্পনায় গৃহীত সামগ্রিক কৌশলগুলি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন চষ্টার্ণ ই-সাংগঠনিক স্তর থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
দায়িত্ব হল পরিকল্পনার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলিকে সঠিকভাবে দেখাশোনা বা নিয়ন্ত্রণ করা। একইভাবে পরিচ্ছন নিম্ন ব্যবস্থাপক দ্রুরটি আসলে দক্ষকর্মী সমন্বিত একটি কার্যত্বরূপায়ক ক্ষেত্র, যেখান থেকে নির্দিষ্ট নীতি-পথতি মে সমগ্র পরিকল্পনাটিকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যায়। বর্তমানে, সর্বস্থরে আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে কার্যকরী করে তুলত ধরনের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আন্তলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের বিভিন্ন সম্ভাবনাতে মনোযোগ দিতে বেশি ভাগ পরিকল্পনা ব্লক স্তর বা গ্রাম স্তরের নিম্ন প্রাশাসনিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ভাবে, আঞ্চলিক পতিষয় নেতৃত্ব ও দায়বদতা উভয়ই মনে কেউ পালন করা এখানে না ধারণাচিত্রে আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থাপকদের কাঠামোটিকে উপস্থাপন করা হল। বারশাত উল্লেখ্য, সামগ্রিক ভাবে আক্সলিক পরিকল্পনার বিভিন্ন ব্যবস্থাপক কাঠামোয় যে চারটি পদ্ধতিগত বিষয়াত প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেগুলি হল-
(1) পরিকল্পনাকেন্দ্রিক সমস্যাগুলিকে স্পষ্ট করা
(ii) স্থানিক এবং আন্তঃক্ষেত্রীয় সম্পর্কগুলিকে পরীক্ষা করা
(iii) পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত পরিসর বিশ্লেষণ এবং
(iv) পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আলোচনা।
আধ্যলিক পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গি (Perspective of Regional planning):
যে পদ্ধতিতে কোনও একটি অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা বা সম্ভাবনাকে সামনে রেখে তাত্ত্বিক ভাবে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শৃঙ্খলাব্যভাবে বিভিন্ন ব্যাবহারিক নীতি-পদ্মাকে দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়, সেটির হল আঞ্চলিক পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গি। সাধারণত, সামগ্রিক এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার থাকে, যেখানে দৈশিক অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োগমূলক দক্ষতার যৌথ সংশ্লেষের মধ্যে দিয়ে আঞ্চলিক উন্নয়নের একটা ভারসাম্যযুক্ত প্রশস্ত পথ হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রতিটি দৃষ্টিভঙ্গি কার্যক্ষেত্রের উদ্দেশ্য ও নীতি অনুযায়ী পৃথক পৃষর হয়ে থাকে। এগুলি হল-
আঞ্চলিক পরিকল্পনার অনুক্রমিক দৃষ্টিভঙ্গি (Sequential Aspect of Regional Planning):
কোনও একটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতিকে সামনে রেখে গৃহীত পরিকল্পনাট তার নির্ধারণ ক্ষেত্র থেকে ঠিক কোন পথে পরিচালিত হবে, সেই সম্পর্কিত ধারাবাহিক ভাবনাগুলিকে একত্রে আকসির পরিকল্পনার অনুক্রমিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। এখানে, যেসমস্ত বিষয়কে পর্যায়ক্রমে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা নিম্নরূপ-
দূরদর্শিতা
শুরুতেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিযোজিত দক্ষ কোনো ব্যক্তির দূরদর্শিতা অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিকল্পনার একটি প্রাথমিক প্রেক্ষাপট গড়ে ওঠে।
লক্ষ্য বস্তু (Farget)
এরপর কোনও একটি অঞ্চলের এক বা একাধিক সমস্যাকেই আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্যবস্তুরূপে উপস্থাপন ধরা হয়।
উদ্দেশ্য (Objectives):
একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কী করা হবে, তার জন্য নির্ধারিত বিবৃতিই হল পরবর্তী পদক্ষেপে গৃহীত আঞ্চলিক পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য।
সংকল্প (Mission)
যেহেতু আঞ্চলিক পরিকল্পনার সংকল্পটি সম্পূর্ণরূপেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্রিক, তাই পরবর্তী পদক্ষেপরূপে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মকৌশল বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গৃহীত হয়।
কৌশল (Strategies):
কৌশল হল এমন একটি কার্যক্রম, যা দক্ষভাবে সমগ্র পরিকল্পনাটিকে বিভিন্ন সহায়-সম্পদের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে কার্যক্ষেত্রে সার্বিক প্রয়োগ ঘটায়।
বর্তমানে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার অনুক্রমিক দৃষ্টিভঙ্গিাকে সামনে রেখে মূলত দুই ধরনের আঞ্চলিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যথা-
Top-down planning এটি একটি কেন্দ্রীভূত আঞ্চলিক পরিকল্পনা কৌশল, যা কোনও একটি রাষ্ট
আঞ্চলিক পরিকল্পনার 'SMART' দৃষ্টিভলি ('SMART' Approaches of Regional)
আঞ্চলিক পরিকল্পনার কৌশলগত দশতিটিতে দ্রুত গতি আনতে অথবা, কার্যক্ষেত্রে যে কোনও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এটিকে আরও সহজভাবে বাস্তবায়িত করতে বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ SMART পরিকল্পনার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এখানে, বহুমুখী উদ্দেশাকে সামনে রেখে জ্ঞান, দক্ষতা, সরঞ্জাম এবং অনুমোদনের সাময়িক কৌশলী প্রক্রিয়াগুলি অত্যন্ত সময়সাশ্রয়ী হয়ে ওঠায় আঞ্চলিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার ক্ষেত্রটি আরও বাস্তবসম্মত (Realistic) হয়ে ওঠে।
অষ্ঠানিক পরিকল্পনার SMART দৃষ্টিভঙ্গির অভিমুখ আঞ্চলিক পরিকল্পনার "SMART দৃষ্টিভঙ্গির একটি কার্যকরী অভিমুখ বা প্রধান বিষয়গুলিকে উপস্থাপন করা হল।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রস্তাবসমূহ
(Proposals for Implementation of Regional Plans According to Expert Perspective)
অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের সমস্ত আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা নানাভাবে রূপায়িত হয়েছে। একসময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পুনগঠনমূলক প্রকল্পে মার্শালীয় দৃষ্টিভঙ্গি (Marshalling approach) যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছিল। বিশেষ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন দেশগুলিতে উন্নয়নমূলক সহায়তা প্রদান, আঞ্চলিক অর্থনীতির পুনর্গঠন, শিল্পের আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের একাধিক প্রচেষ্টা জর্জ মার্শালের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে গড়ে তোলাই ছিল আঞ্চলিক পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু, মার্শাল প্রদর্শিত পরিকল্পনার নির্দেশিত পথে যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করতে হত, তাতে একদিকে যেমন অধিক সময় অপব্যয় হয়ে যেত, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার মূল সমস্যাটাই তথ্যের ভারে চাপা পড়ে থাকতো। সেই কারণে, 1960-এর দশক থেকে পৃথিবীর বহু দেশ আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণে মার্শালীয় পদ্ধতি থেকে সরে এসে, উপযুক্ত রাশিতথ্য ব্যবহার ভিত্তিক আঞ্চলিক পরিকল্পনা গ্রহণের পথটিকে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত মনে করে। এখানে শুধুমাত্র ব্যবহারযোগ্য তথাগুলিকেই পরিকল্পনা কাঠামোর জন্য গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
কয়েকজন অঞ্চল বিশেষায় তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভলি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশসে উপস্থাপিত করেছেন।
যেমন- • কি এফ চামটইক প্রস্তাবিত কৌশল (The strategy proposed by G. F. Chadwick):
G. F. Chadwick (197) খ্রিঃ) আঞ্চলিক পরিকল্পনা কৌশলের চারটি প্রধান পর্যায়কে উল্লেখ করেছেন। এগুজি
• প্রথম পর্যায় (First stage): চাদউইক প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে কোনও একটি কার্যকরী স্থানের। মিথস্ক্রিয়াগত প্রতিটি উপাদানকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। এখানে, যাবতীয় সমস্যাকে একটি সিস্টেম মডেলে উপনীত করতে স্থানভিত্তিক সহযোগী সম্পর্কের প্রবাহটিকে পরিকল্পনার স্বার্থে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়। প্রসঙ্গান্ত উল্লেখ্য, সমানের সঙ্গে সহযোগী কর্মধারা বিশ্লেষণ প্রসঙ্গো যে সমস্ত তথ্যকে সংগ্রহ করা হয়, সেগুলিই আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রাথমিক স্তম্ভটি গড়ে দেয়।
• দ্বিতীয় পর্যায় (Second stage): আঞ্চলিক পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়টিকে লক্ষ্য প্রস্তুতির (goa) formulation) পদক্ষেপ বলা হয়। এখানে, প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিসরের বিভিন্ন পরিস্থিতিকে অনুধাবন করে Factor diagram মারফত পরিকল্পনার নির্বাচিত উদ্দেশ্যগুলিকে স্থির করা হয়।
• বৃত্তীয় পর্যায় (Third stage) আঞ্চলিক পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়টি প্রকল্প রূপায়ণ (Project imple mentation) নামে পরিচিত। এই পর্যায়ে দুটি বিশেষ দিক প্রাধান্য পেয়ে থাকে, যেমন- প্রথমটি হল প্রকল্পের সন্ধ্যে জড়িত বর্তমান পরিকল্পনা ব্যবস্থার রূপরেখা নির্ধারণ, এবং দ্বিতীয়টি হল-ভবিষ্যতে উন্নয়নের জন্য সম্ভাব্য বিবর। পথ্য স্থিরিকরণ। এখানে, পরিকল্পনাকারী নির্বাচিত ক্ষেত্রগুলির সমস্যা ও সহায়ক সম্পদের সমন্বয় ঘটিয়ে ভবিষ্যতের পূর্বাভাস অনুযায়ী বেশ কতকগুলি কার্যকরী মানদণ্ড প্রস্তুত করে থাকেন। কাজেই, এই পর্যায়টি হল আঞ্চলিক পরিকল্পনার মূল কাঠামোটিকে বাস্তবে রূপদান করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
* চতুর্থ পর্যায় (Fourth stage) চাদউইক মনে করেন, আঞ্চলিক পরিকল্পনায় যেহেতু সর্বাধিক পছন্দের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তাই পরিকল্পনামূলক কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্র ঠিক কতটা লক্ষ্যপূরণ করতে সামর্থ্য হল, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন এই স্তরেই করা দরকার।
• আর. পি. মিশ্র প্রস্তাবিত কৌশল (The strategy proposed by R. P. Mishra):
বিশিষ্ট অধ্যাপক তথা পরিকল্পনাবিদ আর পি. মিশ্র আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মোট ৮-টি ক্রমানুসারী পদক্ষেপের কথা প্রস্তাব করেছিলেন। যেগুলি হল-
(i) বর্তমান প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিকতা অনুধাবন,
(ii) যথাযথ বিজ্ঞানসম্মত কৌশল মেনে অন্ঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ,
(iii) পরিকল্পনার জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চল ভিত্তিক কৌশল পদ্ধতি সিম্বরীকরণ,
(iv) চিহ্নিত অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ,
(v) কেন্দ্র এবং প্রাদেশিক অঞ্চলের যৌথ সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় পরিকল্পনাটির যথাযথ বাস্তবায়ন, এবং
(vi) গৃহীত পরিকল্পনার মূল্যায়ন বা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ।
• অমিতাভ মুখার্জি প্রস্তাবিত কৌশল (The stragety proposed by A. Mukherjee):
বিশিষ্ট অধ্যাপক অমিতাভ মুখার্জি বিকেন্দ্রীভূত আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন, সেগুলি হল-
(i) পরিকল্পনা অঞ্চলের যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য আহরণ,
(ii) পরিকল্পনা রূপায়ণের কার্যপ্রণালী স্থিরিকরণ,
পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং পূর্বানুমানের সমন্বয়,
(iv) পরিকল্পনার উদ্দেশ্য স্থিরীকরণ,
(v) পরিকল্পনার কৌশল নির্ধারণ,
(vi) পরিকল্পনার বিকল্প কর্মপন্থার সমীক্ষা,
(vii) পরিকল্পনার পুনঃমূল্যায়ন প্রভৃতি।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার পদ্ধতিগত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৌশল (Some of the Notable Systematic Techiniques of Regional Planning):
আঞ্চলিক পরিকল্পনার আরও বেশ কিছু কৌশল রয়েছে, যেগুলি পৃথিবীর একাধিক দেশ বিশিস্ট কয়েকজন পরিকল্পনাবিদদের সুচিন্তিত ভাবাদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োগ করে এসেছে। এখানে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার জনপ্রিয় কৌশলগুলিকে R. C. Chandana se "Regional Planning A Comprehensive Text' নামক প্রশ্নের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আলোচনা করা হল।
(A) বিশ্লেষণাত্মক কৌশল (Analytical Techniques):
অঞ্চল অনুধাবন পর্ব থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যগুলি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করে পরিকল্পনামূলক সিন্ধান্তকে বাস্তবায়িত করতে সাধারণত বিশ্লেষণাত্মক কৌশলের সাহায্য নেওয়া হয়। আঞ্চলিক পরিকল্পনায় প্রাপ্ত তথ্যগুলির বিশ্লেষণ যত ধারাবাহিক এবং বিজ্ঞানসম্মত হবে, ততই পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজটি আরো সহজ ও দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।
বিশ্লেষণাত্মক কৌশলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল-
• পূর্বাভাস কৌশল (Forecasting techniques): আঞ্চলিক পরিকল্পনার পূর্বাভাস কৌশলটি আসলে একটি যৌথ সমন্বয়ী পদক্ষেপ, যেখানে বিভিন্ন অর্থবোধক পরিকল্পনার সিদ্ধান্তগুলিকে পূর্বাভাসভিত্তিক বিভিন্ন মডেলে বিশ্লেষণ করা হয়। এই ধরনের পদক্ষেপের সাফল্য নির্ভর করে ইনপুট আকারে ব্যবহারকারী সংগৃহীত আঞ্চলিক বিভিন্ন তথ্য, পরিকল্পনা মডেলের উপাদান এবং পরিকল্পনার কার্যকরী অভিমুখের ওপর।
• যেমন-কোনও একটি স্থানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার অগ্রগতি, আবাসন ব্যবস্থাপনা, পানীয় জল সরবরাহ এমনকি জনশক্তির প্রকৃতি সংক্রান্ত যাবতীয় প্রবণতাগুলি থেকে পাওয়া তথাগুলিকে আঞ্চলিক পরিকল্পনার পূর্বাভাসভিত্তিক পরবর্তিত জনসংখ্যার উপাদান বা প্রবণতাগুলি (বিশেষ করে জন্মহার বা মৃত্যুহার) এত দ্রুত বদলে যায়, যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক পূর্বাভাসগুলিকে স্থানিক একত্রীকরণ ঘটিয়ে বিশ্লেষণ করেও পরিকল্পনায় সাফল্য পাওয়া যায় না। সেই কারণে,
মডেলে বিশ্লেষণ করা যায়। তবে, কার্যক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিকল্পনায় পূর্বাভাস কৌশলে জনশপ্তির মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষ করে, কোনো ভৌগোলিক এলাকায় জনসংখ্যার পূর্বাভাষ প্রদানে এমন কি উদ্যোত্বা ভিত্তিক শ্রমশক্তির চাহিদা বা জোগানের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান বা পরিসংখ্যা গ্রহণের দ্বারা পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে।
বিভিন্ন আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞগণ জনসংখ্যাকেন্দ্রিক পরিকল্পনায় বেশকিছু বিকল্প ভাবনাকে সংযোজন করার পাশাপাশি একাবিক কার্যকরী ভৌগোলিক পদ্ধতিকেও ব্যবহার করে থাকেন। এগুলি হল- 'Ratio and Apportionment method, Chohort survival method, Migration and Natural increase method, Simple exploration method, Inquery method প্রভৃতি।
• শিল্পের অবস্থান বিশ্লেষণ (Industrial Location Analysis): কোনও একটি স্থানে শিল্পের সঠিক অবস্থান বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মূলত তিনটি মৌলিক প্রশ্নকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, যথা-
• সংশ্লিন্ট অঞ্চলের শিল্পের কাঠামোটি বিশেষায়িত না বৈচিত্র্যময়।
• যদি বিশেষায়িত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক সামর্থ্য বা দুর্বলতাটি ঠিক কোথায়
বর্তমানে শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হারের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলি দায়ী?
এই প্রশ্নগুলির পরিপ্রেক্ষিতে কোনও একটি স্থানে শিল্পের অবস্থানগত পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করেই যাগীয় শিল্পভিত্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
যেমন-প্রথম দৃষ্টান্তমূলক প্রশ্নানুসারে কোনও এলাকার আন্দুলিক শিল্পের কাঠামো (Regional industrial structure)-কে জাতীয় শিল্পকাঠামোয় বিচার করার ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় উপ-অঞ্চলে থাকা শিল্পকাঠামোটি স্বততা হয়ায় যেখানে বৃহদায়তন অঞ্চলের শিল্পকাঠামোটি আঞ্চলিক পরিকল্পনায় উপ-পশ্চতি হিসেবে গৃহীত হবে। এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আঞ্চলিক পরিকল্পনা কৌশল গ্রহণে সর্বদা 'Location quotient' পদ্ধতির ব্যবহার দেখ যায়। এক্ষেত্রে, সংশ্লিন্ট শিল্পাঞ্চলের যে-কোনও দুটি উপাদানের অনুপাত নির্ণয় করে তাদের বণ্টনগত কেন্দ্রীভ (Concentration)-কে সহজেই উপস্থাপন করা যায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 1960-এর দশকে পরিকল্পনাবিদ Stillwel যুক্তরাজ্যে শিল্পের অবস্থানভিত্তিক এই কৌশলটিবে আঞ্চলিক পরিকল্পনায় ব্যবহার করেছিলেন।
• অর্থনৈতিক ভিত্তি বিশ্লেষণ (Economic Base Analysis): এই প্রচেস্টাটি বিভিন্ন পণ্য পরিসেবাভিত্তির অর্থনৈতিক পরিসরে মৌলিক (basic) এবং মৌলিকতাহীন (non-basic) (বেশ কয়েকটি কাঠামোর ওপর নির্ভরশীদ, যেটি কোনও একটি নগর বা শিল্পাঞ্চলের প্রবৃদ্ধিকে নির্দিষ্ট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণের মাধ্যামে পরিকল্পন রূপায়ণের নির্দিষ্ট পথ প্রশস্ত করা হয়।
• যেমন-এই পদ্ধতিতে কোনও একটি শিল্পাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার নিরিখে অর্থাৎ সংশ্লিস্ট উৎপাদন ব কর্মসংস্থানের কাঠামোয় নিয়োজিত জনসংখ্যা ঠিক কী ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে, সেই সম্পর্কিত ইঙ্গিতরে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পরিকল্পনার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করা হয়।
• আঞ্চলিক পরিকল্পনার এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বলা হয়ে থাকে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক মূলধন বিনিয়োগ ঘটালে, তার ফলাফলকে নির্দিষ্ট গুণক হিসেবে ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট বা পারিপার্শ্বিক এলাকার অর্থনৈতিক অসম্পূর্ণতা কাটিয়ে সেখানকার উন্নয়নকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করা যায়। এই ধরনের মূলধন বিনিয়োগ কৌশল সর্বদা নির্ভর করে ওই এলাকার ভোগের মাত্র এবং সংশ্লিন্ট রাষ্ট্রের সরকারি বা বেসরকারি লগ্নীকরণের সদিচ্ছার ওপর। ফলে, যে অঞ্চলটিতে এই ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা যত বেশি থাকবে, খুব স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আঞ্চলিক পরিকল্পনার পথটি আরও প্রশস্ত হবে।
• যেমন-কোনও দেশের সরকার যদি একটি অঞ্চলের রাস্তাঘাট সম্প্রসারণের কাজে 10 কোটি টাকা বায় করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট নির্মাণমূলক অর্থনৈতিক খাতে 10 কোটি টাকা আয় বৃদ্ধি ঘটবে। সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি যদি তাদের মোট বিনিয়োগের ৪0% খরচ ও 20% সাশ্রয় করে, তাহলে সমগ্র বিনিয়োগমূলক পরিসেবা ক্ষেত্র থেকে নতুন করে আয়ের পথ পুনরায় সম্প্রসারিত হয়। এইভাবে আঞ্চলিক বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলিতে গুণক হিসেবে আয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকে, যা নতুন আরেকটি পরিকল্পনায় সহায়ক হয়ে ওঠে।
• ইনপুট-আউটপুট বিশ্লেষণ (Input-output Analysis) : আঞ্চলিক পরিকল্পনায় উৎপাদন এবং বিনিয়োগমূলক ভাবধারা ভিত্তিক এই পদ্ধতিটিকে 1930 খ্রিস্টাব্দে W. W. Leontieff অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতের মধ্যে গড়ে ওঠা সংযোগকে পরীক্ষা করার জন্য Input-Output Table-টিকে Model আকারে সর্বপ্রথম উপস্থাপন করেছিলেন। প্রাসঙ্গিক এই পদ্ধতিটিকে জাতীয়, আঞ্চলিক অথবা উপ-আঞ্চলিক স্তরে সদর্থকভাবে ব্যবহার করে পরিকল্পনামূলক ক্ষেত্রগুলিকে সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। ধারণামূলক এই মডেলটিতে 4-টি অর্থনৈতিক খাতকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এখানে একটি শিল্পখাতের উৎপাদন (output) অপর একটি শিল্পখাতে নিয়োজিত বিনিয়োগ (input) রাগ বিবেচিত হয়েছে।
কোনও একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত মিথস্ক্রিয়ায় উল্লিখিত এ-টি খাত কী ধরনের ভূমিকা পালন করে তা নীড় দেখানো হল (চিত্র-429)
1 নং খাত বৃহৎ আন্তঃশিল্প সম্পর্কিত, যেখানে প্রথম শিল্পক্ষেত থেকে উৎপাদিত প্রয়াসমী (আউটপুট আকারে) অন্যান্য শিল্পে বাঁচামাল (ইনপুট আকারে) রূপে ব্যবহৃত হয়।
হনা খাত এই ক্ষেত্রের শিল্পগুলির উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অন্যত্র বিক্রীত হয়। এই ধরনের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি এটা প্রমাণ করে, এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের তুলনায় সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রাধান্য। অনেক বেশি। 3 নং খাত কাঁচামাল, শ্রমিক সংশ্লিস্ট শিল্পকেন্দ্রগুলিতে সরবরাহ করাই এই ক্ষেত্রের অন্যতম দায়িত্ব।
এনং খাত বহিঃক্ষেত্রীয় অঞ্চলের সঙ্গে। অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা এই খাতের মুখ্য দায়িত্ব। তা ছাড়া, কয়েকটি অঞ্চলে এই ধরনের সমন্বয়ী প্রিনিয়োগ এবং উৎপাদন সারণিকে আরও কয়েকটি ধারণার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়, যেটি আঞ্চলিক কখনা এবং উৎপাদনের সামগ্রিক পরিসরগুলিকে একত্রিভূত করে একটি নির্দিষ্ট ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগে (Hieracical class) বিশ্লেষণযোগ্য।
• যেমন- 1950-এর দশকে গ্রেট ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত আঞ্চলিক পরিকল্পনায় এই দশতিটিকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল।
ও সামাজিক গণনাকরণ এবং সামাজিক এলাকা বিশ্লেষণ(Social Accounting and Social Area Analysist আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অবস্থা উপলব্দি করে আঞ্চলিক পরিকল্পনা প্রহণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণমূলক পদক্ষেপ হল সামাজিক গণনাকরণ এবং সামাজিক এলাকা বিশ্লেষণ।
সামাজিক গণনা হল এমন একটি পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতি যেখানে কোনও একটি এলাকার জনসংখ্যা বা প্রতিষ্ঠান মারফত পণ্য এবং পরিসেবার উৎপাদনভিত্তিক অভীক্ষা অতি সহজেই উপস্থাপন করা যায়। সাধারণত, জাতীয় এবং আন্দালিক স্তরে GDP (Gross Domestic Product) সংক্রান্ত তুলনামূলক পরিসংখ্যা বিচারে এই পদ্ধতিটি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। এই কৌশলটিকে কাজে লাগিয়ে কোনও একটি নির্দিস্ট সময়ে জাতীয় তথা আধ্যালিক উৎপাদন এবং পরিসেবার মাত্রা বিচার করে পরিকল্পনার যথাযথ সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করা যায়।
• যেমন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে এই ধরনের বিশ্লেষণ পশ্চতিটি আঞ্চলিক পরিকল্পনার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি কৌশল।
ভূগোলে স্থানিক আলোচনায় সামাজিক এলাকা বিশ্লেষণ পশুতি 1955 খ্রিস্টাব্দে E. Shevkey এবং W. Bell যারা প্রতিষ্ঠিত হলেও, আঞ্চলিক পরিকল্পনাতেও এটির বাদিত ব্যাবহার রয়েছে। এখানে, নিদিধ্য পাশতি মেনে সামাজিক বিভিন্ন চাহিদা ও সমস্যাকে পরিমাপ করে নির্ধাদির। সূচকগুলিকে আঞ্চলিক পরিকল্পানায় প্রয়োগ করা হয়। বিশেষ করে, বিভিন্ন শহরের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেঃ সংস্তকরণ এবং সামাজিক উপাদানগুলির পারস্পরিক তুলনা করার জন্য এই পদ্ধতিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ ভিন্ন সুচক ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলি হল-সামাজিক পদমর্যাদা, নগরায়ণ এবং বিচ্ছিন্নতা। এখানে, প্রথম সূচকটিতে কোনও একটি অম্বুলে দক্ষতার বণ্টনগত পরিবর্তনের মূল্যায়ন করার জন্য পেশা এবং শিক্ষাগত দিককে যথেষ্ট প্রাধনা। দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সূচকটিতে নগরাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ, উৎপাদনলীজ কার্যকলাপের পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত করে। তৃতীয় সূচকটিতে জনসংখ্যার পুনর্বণ্টন, বয়স এবং লিঙ্গ গঠনের ওপর ভিত্বি করে বিচ্ছিন্নতার বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করা হয়। তবে, এই ধরনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তিনটি সূচককেই একই অঞ্চলেং এবং একটি নির্দিষ্ট সময়কালের পরিসংখ্যাভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। বিগত পঞ্চাশ বছরে Cluster analysis, Factor analysis, Multi-variate analysis পদ্মতির প্রয়োগ বিশ্বের একাধিক দেশের শহরে এলাকার পরিকল্পনায় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
• মডেল নিমাণ (Model building) যে-কোনও তাত্ত্বিক কল্পনার (Hypothesis) বাহ্যিক এবং আদর্শ প্রতিরূপ হল মডেল। কোনও একটি অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যাকে অনুধাবন করে সেটিকে একটি বিজ্ঞানসম্মত মডেলে ফেলে তার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সংশ্লিন্ট আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানমূলক বিভিন্ন পরিকল্পনা দ্রুত গৃহীত হয়।
যেমন- W. J. Rilley (1973 খ্রিঃ) প্রস্তাবিত 'Gravity model', George K. Zipf (1947) wafes Model of Least Effort, S. A. Stouffer প্রস্তাবিত 'Computing Migrants Model' প্রভৃতি আঞ্চলিক পরিকল্পনায় বহুল ব্যবহৃত হয়।
(B) পদ্ধতিগত কৌশল (Proceedural Techniques):
আঝলিক পরিকল্পনা নির্বাচন তথা পরিকল্পনার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নবগত সংযোজনরূপে পদ্ধতিগত কৌশলগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই কৌশলটি নিয়ে এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই কৌশলের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ইতিপূর্বে আঞ্চলিক পরিকল্পনার দক্ষতাকে অনেকাংশেই সমৃদ্ধ করেছে। এই কৌশলের কয়েকটি বিশেষ প্রয়োগমূলক দৃষ্টিভঙ্গি হল-
• তুলনামূলক খরচ বিশ্লেষণ (Comperative Cost Analysis): এই কৌশলটি যদিও শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বা কোনও উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তুলনামূলক খরচ পদ্ধতিটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ একটি পদ্ধতি।
• প্রবেশস্থল বিশ্লেষণ (Threshold analysis) কোনও একটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক উন্নয়নের অনাকাঙ্ক্ষিত এবং চরম বাধাগুলিকে দূর করে সেখানকার প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে সর্বোত্তমভাবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রবেশস্যাল বিশ্লেষণ পদ্ধতিটিকে কাজে লাগানো হয়। যদিও, এই ধরনের পদ্ধতিটি জীব-বিজ্ঞান এবং পদার্থবিদ্যার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ধারণা, কিন্তু তা সত্ত্বেও জনপ্রিয় এই কৌশলটিকে 1960-এর দশকে পোল্যান্ডের আঞ্চলিক পরিকল্পনায় Malisz প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
আঞ্চলিক পরিকল্পনায় পদ্ধতিগত কৌশল প্রয়োগের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল-
• পরিকল্পনা গঠনকালে সরকারি বিনিয়োগ বা লগ্নির নির্দেশিকা তৈরি।
• পরিকল্পনার বিকল্প পদক্ষেপগুলিতে দক্ষতা অর্জন।
• জনবহুল শহরগুলিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা ধারণক্ষম পরিকল্পনা কীভাবে করা সম্ভব তা নির্ধারণ করা।
* আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে তার বাস্তবসম্মত ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রণয়ন করা প্রভৃতি।
রূপে কাজ করছে তা সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা হয়। অর্থাৎ, যদি দেখা যায় স্থানীয় ভূপ্রকৃতি (Relief) এবং ভূমি নামে পরিচিত।
যেমন সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোগত প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি এই পরিকল্পনা পদ্ধতিটিকে সর্বাধিক ব্যবহার করে থাকে।
• ব্যয় ও লাভ বিশ্লেষণ (Cost Benefit Analysis) যখন কোনও একটি অঞ্চল একাধিক সমস্যায় জজরিত থাকে, তা নিরসনে ঠিক কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলিকে সহজেই দূর করা সম্ভব হয়।
এই পদাতিটিতে খরচ এবং লাভ দুটিকেই সামনে রেখে আঞ্চলিক তথা এলাকাগত সুবিধা অনুযায়ী সমগ্র পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে, এই পদ্ধতিটির একাধিক সীমাবদ্ধতাও লক্ষ্য করা যায়।
• লক্ষ্য পূরণের ধাঁচ (Goal Achievement Matrix) আঞ্চলিক পরিকল্পনায় লক্ষ্যপূরণ ধাঁচটিকে পরিকল্পনাবিদ Hill সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেছিলেন। এখানে তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার লক্ষ্যের সন্তুষ্টির মাত্রা বিবেচনাভিত্তিক যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা বলেছেন। আজ্বলিক পরিকল্পনায় লক্ষ্য- পূরণের বাঁচ প্রয়োগের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল-
আঞ্চলিক পরিকল্পনার দক্ষতা বৃদ্ধি, সম্পদের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, শহরাঞ্চলের স্থিতিশীল বিকাশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমূলক স্থানের সংরক্ষণ, প্রভৃতি।
বর্তমান পরিকল্পনার এই পদ্ধতিতে যে কয়েকটি পদক্ষেপ প্রাধান্য পেয়ে থাকে, সেগুলি হল-
• পরিকল্পনার সঠিক লক্ষ্য স্থির করা এবং কিছু লক্ষ্যকে যথেস্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।
• বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে দ্বন্দ্বের মৌলিক ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করে একটি ভারসামাযুক্ত ধাঁচ গড়ে তোলা।
• সম্পদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সমন্বয় ঘটিয়ে কোনও আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা।
• চূড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট লক্ষাভিত্তিক পরিকল্পনা কৌশল প্রস্তুতকরণ, প্রয়োগ ও তার মূল্যায়ন করা প্রভৃতি।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার সরঞ্জাম (Tools for Regional Planning):
আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণের কাজগুলি যাতে আরও সহজ করা যায়, সেই কারণে প্রতিটি পরিকল্পনায় বেশকিছু কার্যকরী সরঞ্জাম বা উপাদানের সাহাযা নেওয়া হয়। আসলে, পরিকল্পনা গ্রহণের প্রকৃতি ও পদক্ষেপ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সরপ্তাম ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সরঞ্জাম পরিকল্পনামূলক কার্যক্রমের সময়কে যেমন কমিয়ে আনে, একইভাবে সামগ্রিক প্রকৌশলটি আরো শৃঙ্খলাবন্ধ হয়ে ওঠে। ফলে, গৃহীত আঞ্চলিক পরিকল্পনাটি স্বচ্ছভাবে একটি উপযুক্ত অঠামোয় উপনীত হয়।
আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হল-
প্রাক পরিকল্পনার পর্যায়ে ব্যবহৃত সরঞ্জামসমূহ:
(i) পরিকল্পনা অনুধাবক বিভিন্ন নথিপত্র সরকারি দলিল, প্রাচীন কোনও পরিকল্পনার দলিল বা নকশা, ইয়ার বুক, আঞ্চলিক তথ্য সমৃদ্ধ বিশেষ জার্নাল প্রভৃতি।
(ii) নিরীক্ষণের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ডাম্পি লেভেল, থিওডোলাইট, প্রিজমেট্রিক, প্লেন টেবিল, লেভেল টিউব, লেভেল স্টাফ, ট্রাইপড, রেঞ্জিং রড, মেজারিং টেপ, ক্লাইনোমিটার, লেজার ডিসটান্স মিটার, জিওডিমিটার, ট্যাকিমিটার, গ্রাফোমিটার, ইঞ্জিনীয়ার্স চেন, ডিওপট্রা, অ্যালিডেড, রেনগজ, হাইড্রোফোন, কোশ্চেনারিস সিডিউল প্রভৃতি।
(iii) বিভিন্ন মানচিত্র: স্থানীয় ভূমি ব্যবহারমূলক মানচিত্র, ভৌগোলিক উপাদানগত এবং রাজনৈতিক মানচিত্র, টোপো মানচিত্র, ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র, মৌজা বা মেট্রোপলিটন এলাকার মানচিত্র, উপগ্রহ বা বিমান চিত্র প্রভৃতি।
পরিকল্পনার প্রণয়ন, মূল্যায়ন এবং কাঠামো বিশ্লেষণকারী সরঞ্জামসমূহ:
1) Gengraphical Information Systein (Charles (1) Decision Diagram, (iv) Tree Diagram, (v) Prioritization Matrics, (vi) Process, Decision Program Dag (PDPC) () Activity Network Diagram, (viii) Interrelationship Diagram,
আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণের সমস্যাসমূহ
(Problems in the Implementation of Regional Planning):
আঞ্চলিক পরিকল্পনা বা উন্নয়নমূলক যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সময় যে সমস্ত সমস্যা উদ্ভুত হয়, তার কয়েকটিতে প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্তসহ উল্লেখ করা হল।
• প্রথাগত চিন্তাধারা (Traditional ideology): পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই প্রাচীনপন্থী বেশকিছু মানুষজন থাকেন, যাঁরা কখনোই আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নতুন কোনও উদ্ভাবনা বা প্রকৌশলকে সহজে মেনে নিয়ে চান না। ফলে, মানুষের এই ধরনের পিছিয়ে পড়ার ঐতিহ্যগত চিন্তাধারাগুলি আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রচেষ্টাগুলিতে বিভিন্নভাবে ব্যাহত করে।
যেমন আন্দামানের জারোয়া প্রজাতির মানুষদের প্রথাগত চিন্তাধারা ও আদিম জীবন প্রণালীর কারণে সেখানে তাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কোনওরকম পরিকল্পনাকেই পুরোপুরি বাস্তবায়িত করা যায়নি।
অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা (Economic backwardness): যে সমস্ত দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে উপযুক্ত পরিকল্পনার প্রেক্ষাপট থাকলেও পরিকল্পনা রূপায়ণের নির্ধারিত সরঞ্জামের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দকরণের কোনো রকম পরিস্থিতি না থাকার কারণে সেটি একটি প্রধান সমস্যায় উপনীত হয়। যেমন- আফ্রিকার ঘানা, মোজাম্বিক, গিনি সহ একাধিক দেশের আঞ্চলিক পরিকল্পনা অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত।
• সহায় সম্পদের অভাব (Lack of supportive resources) আঞ্চলিক পরিকল্পনা তখনই উন্নয়নের স্তরকে ছুঁতে পারে, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায় সম্পদ রয়েছে। অন্যথায় আঞ্চলিক পরিকল্পনার সমস্ত প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যাহত হয়ে যায়।
যেমন- আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বেশকিছু দেশের আঞ্চলিক পরিকল্পনা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। • অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি (More population growth): যদিও আঞ্চলিক পরিকল্পনার যাবতীয় প্রচেষ্টী মানুষেরই কল্যাণেই নিয়োজিত, কিন্তু অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রকোপ বেশকিছু পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে দেয় না। কারণ, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বাসস্থান সমস্যা, খাদ্য সমস্যা, কর্মসংস্থানের সমস্যা, দুষণ সমস্যা প্রভৃতি আনুষঙ্গিক ভাবে জড়িয়ে থাকে, যেগুলি আঞ্চলিক পরিকল্পনার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান এমনকি ভারতের আঞ্চলিক পরিকল্পনায় এই প্রভাবটি সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করা যায়।
• রাজনৈতিক অস্থিরতা (Political discomposure) পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চল রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট অস্থির সেখানে কোনও ধরনেরই আঞ্চলিক পরিকল্পনার রূপায়ণ ঘটানো অত্যন্ত দুঃসাধ্য একটি প্রচেষ্টা। যেমন-সম্প্রতি তুরস্কে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেখানকার বহু জনকল্যাণকামী পরিকল্পনা প্রায় স্তিমিত হয়ে গেছে।
• দুর্যোগ বা বিপর্যয় (Hazard or Disaster): প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে সংঘটিত যে-কোনও আকস্মিক দুর্যোগ বা বিপর্যয় এমনই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যেটি এক মুহূর্তে সমস্ত ধরনের আঞ্চলিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাতে বাধার সৃষ্টি করে।
যৌথ সমন্বয়ের অভাব (Lack of joint coordination): পরিকল্পনার নির্ধারক, পরিকল্পনার
পরিকল্পনাই তার বাস্তব রূপ পায় না। যেমন- ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের সঙ্গো কেন্দ্রের সংঘাত আঞ্চলিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নে কখনো কখনো যথেষ্ট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
• সঠিক দিকছোর অভাব (Lack of proper alternatives): উন্নয়নশীল বেশির ভাগ দেশের পরিকল্পনা শুধুমাত্র সঠিক বিকল্প কৌশলনীতি না গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে মাঝপথেই থেমে যায়।
যেমন-তৃতীয় বিশ্বের যানা, গিনি, কঙ্গো প্রভৃতি দেশগুলিতে নতুন শিল্পকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনায় কোনও বিকল্প ব্যবস্থাপনা না রাখার কারণে হঠাৎ করেই সেগুলি মাঝপথেই বন্দ হয়ে যায়।
• পরিবেশ বিরূপ পরিকল্পনা (Environmentally adverse planning)
পরিবেশকে উপেক্ষা করে
অথবা পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনও আঞ্চলিক পরিকল্পনার রূপায়ণ করলে তা কখনোই সফল হয় না।
যেমন-ভারতে সর্দার সরোবর প্রকল্প গ্রহণ করার সময় স্থানীয় পরিবেশ পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। ফলে, সেটি নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে উপনীত হয়ে সমগ্র পরিকল্পনাটিকে ভেস্তে দেয়।
• প্রতিবাদী ভাবধারা (Defendant ideology) জনস্বার্থ ক্ষুন্ন হতে পারে এরকম যদি কোনও আঞ্চলিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ সেই পরিকল্পনাটিকে ভালোভাবে নেয় না, বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাবধারা বা বিভিন্ন গণআন্দোলনের পটভূমিতে সংশ্লিস্ট পরিকল্পনাটি মুখ থুবড়ে পড়ে।
যেমন-বিভিন্ন শহরাঞ্চলগুলির ভিতরে নতুন কোনও শিল্পান্জ্বল অথবা বিভিন্ন নদীবাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনাকে ঘিরে প্রায়শই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখা যায়।
দুর্নীতি (Corruption) আধালিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যেহেতু বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকে, তাই কখনো কখনো আর্থিক দুর্নীতির কারণে সমগ্র পরিকল্পনাটি সঠিকভাবে রূপায়িত হতে পারে না।
• নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা এবং কুসংস্কার (Illiteracy, ignorance and superstition) কোনও একটি অঞ্চলে মানুষের নিরক্ষরতা, স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং উন্নয়নের বিপক্ষে বাধা সৃষ্টিকারী প্রচলিত বেশকিছু কুসংস্কার আঞ্চলিক পরিকল্পনাটিকে একাধিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেয়।
আঞ্চলিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (Implementation of Regional Planning):
কোনও একটি দেশে জনসাধারণের নিরাপত্তা, বসবাসযোগ্যতা, সুস্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন পরিসেবা সুনিশ্চিত করতে আঞ্চলিক পরিকল্পনা। প্রণয়ন এবং সেটিকে বাস্তবায়িত করা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রীয় অথবা স্থানীয় স্তরে গৃহীত আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রতিটি পদক্ষেপ পূর্ব নির্ধারিত সংকল্প তথা সুচিন্তিত কৃৎকৌশলে একাধিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে রূপায়িত হয়। সফল এবং প্রয়োগমুখী পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সবসময়ই যুগপোযোগী সর্বোত্তম কর্মপস্থাগুলিকে বেছে নিলে পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল উন্নয়ন অভিমুখী হয়ে ওঠে। সেই বিধিসম্মত এই কার্যক্রমটি প্রসঙ্গে বলা হয়- Regional planning is a process of improvement,.
বর্তমানে, আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে প্রাতিযার করে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত রাষ্ট্র বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনে সচেষ্ট হয়েছে।
এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল- (1) জীবনধারার মানের সার্বিক উন্নতি (Overall improvement of quality of life)
সুষম নগরায়ণ এবং নতুন শহর তৈরি (Balanced urbanization and creating new cities
দ্রুত শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি (Rapid industrialization and increased employment opportunities)
সম্পদের চাহিদা এবং বন্টনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা (Maintain a balance between demand and distribution of resources)/
খাদ্য, কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন (Acheive self-sufficiency in providing food, raw materials and services)
জাতীয় আয়ের সর্বাধিক বিকাশ (Maximum development of national income)
আঞ্চলিক আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ (Elemination of regional socieo-economic inequality)
জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ (Prevent popuation growth)!
পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন (Improving transport and communication system)
শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ (Expansion of education system)।
স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা (Maintain a sustainable development) প্রভৃতি।
'Agenda-21' অনুযায়ী স্থিতিশীল পরিকল্পার দিকে যাত্রা
(Journey towards a Sustainable Plan According to 'Agenda-21'):
সমস্ত পরিকল্পনাতেই একটি নির্দিস্ট বিধিসম্মত দার্শনিক তথা নৈতিক ভিত্তি বিশেষ বিধিরূপে কাজ করে থাকে। এই ধরনের ভিত্তি আঞ্চলিক পরিকল্পনার প্রয়োগমূলক ক্ষেত্রটিকে আরও বহুমুখী করে তোলে। সেই কারণে, অনেকসময় দেখা যায় পরিকল্পনার সুফলগুলি তাৎক্ষণিক দিক থেকে সীমাবন্ধ হলেও, ভবিষ্যতের নিরিখে যথেষ্ট সুদূরপ্রসারী হয়ে ওঠে। বর্তমানে, আঞ্চলিক পরিকল্পনার সামগ্রিক কার্য ক্রমশ পরিবেশ অভিমুখী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, বিগত দুই দশকে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তাদের স্থানীয় পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে আঞ্চলিক পরিকল্পনাগুলিকে স্থিতিশীল উন্নয়নমূলক কাঠামোয় প্রতিস্থাপিত করেছে। 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরো শহরে স্থিতিশীল উন্নয়নকে সামনে রেখে যে বাধ্যতামূলক একুশ দফা কর্মসূচি (Agenda-21) আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণ করা হয়েছিল, সেগুলি আঞ্চলিক পরিকল্পনা রূপায়ণের সাথে অত্যন্ত সঙ্গঙ্গতিপূর্ণ। যেমন-
• প্রকৃতির একাত্মতার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে উন্নয়নের পথ সম্প্রসারিত করা।
• জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে অনুন্নত গোষ্ঠী বা জনসম্প্রদায়ের সমৃদ্ধি ঘটানো
• পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সক্ষমতাকে গুরুত্ব প্রদান।
• প্রকৃতির নিয়মমাফিক সমস্ত ধরনের আঞ্চলিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
• বিভিন্ন পরিবেশগত দুর্যোগ বা বিপর্যয় প্রশমনে উন্নয়নের ক্ষয়ক্ষতির দিকটিকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা।
• সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনকে মাথায় রেখে ভারসাম্যযুক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া প্রভৃতি। সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখে 1998 খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে "Federal Regional Planning Act and the Building Code আইনি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলস্বরূপ, "North-Rhine Westphalia (NRW)এমক আঞ্চলিক পরিকল্পনা সংখ্যা জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় পরিবেশের প্রসারমানকে অক্ষুন্ন রাখতে বিশেষভাবে সডেন্ট হয়। 2014 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের পর জাপানের নগরকেন্দ্রিক আঞ্চলিক পরিকল্পনায় শ্যানীয় পরিবেশের গুণগত মানকে বজায় রাখার কৌশলটিতে নতুন আলিতে প্রণয়ন করা হয়। এরপর, ১২০ খ্রিস্টান্ডে ইউরোপীয় মন্ত্রীসভা পরিষদ আয়োজিত এক বিশেষ অধিবেশনে pling the En Continentক ইউরোপের বেশির ভাগ রাগরি মেনে দিয়ে আঞ্চলিক পরিকল্পনায় রতী হয়। বর্তমানে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে আঞ্চলিক পরিকল্পনাকে হরণটির ভারতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, চিন, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল, মায়ানমার, বাংলাদেশ সহ বিশোর একাধিক প্রিয়নশীল দেশগুলিও যথেষ্ট বন্ধপরিকর। এই সমস্ত দেখে নগরকেন্দ্রিক পরিকল্পনায় গ্রিন বেস্ট (Green Clean Technology-এর বাস্তবায়ন সার্বিক ভাবে ফলপ্রসু হয়েছে।(Green belt) বা সবুজ করিডোর তৈরি, Eco city Project এবংClean Technology এর বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে।
এ ছাড়াও, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রচেষ্টায় পৃথিবীর একাধিক দেশে Entamanmesital Managemcit Capacity Building -কে আঞ্চলিক পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যার মাধ্যমে Agenda-21 অনুযায়ী স্থিতিশীল উন্নয়নের একাধিক প্রচেষ্টা সার্থকভাবে রূপায়িত হয়ে চলেছে। যেমন-1995 খ্রিস্টাব্দে ভারতের মোট 14-টি রাজ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবেশকেন্দ্রিক পরিকল্পনামূলক কর্মসূচি বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় রূপায়িত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে- Tedual stemnin stitutioanl capacities needed for profacing spatial wironmental amor plamang purposes are established or strengthened in order to produce the targeted studies where mad be used to effectively promote the enenroumeritally compatible spatial planning in India.