welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

থনথওয়েট-কৃত 1948 সালের শ্রেণিবিভাজন (Thornthwaite's 1948 Classification)

থনথওয়েট-কৃত 1948 সালের শ্রেণিবিভাজন (Thornthwaite's 1948 Classification)


1933 সালের পর দীর্ঘ দুই দশকের মধ্যে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানগুলির ওপর গবেষণার ফলশ্রুতি হিসেবে আবহাওয়ার বিভিন্ন অবস্থা নির্ণয়কারী যন্ত্রাদির আবিষ্কার ও পুরানো পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়। ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানগুলি (তাপমাত্রা, অধঃক্ষেপণ, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুর গতিবেগ ইত্যাদি) সংক্রান্ত তথ্য আহরণ আরও সহজ হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ আবহাওয়া ও জলবায়ুবিদ্যার অন্তর্গত বিষয়গুলি অধ্যায়ন অনেকটা পরিসংখ্যান নির্ভর হতে শুরু করে। এর প্রভাবে সনাতন চিন্তাভাবনা ও পরিমাপ পদ্ধতির পরিবর্তে উপযুক্ত পরিসংখ্যান নির্ভর পদ্ধতি অনুসরণ ও সূত্র গঠন শুরু হয়। আবহাওয়াবিদ্যার এই আধুনিকতা ও মাত্রিকতার প্রভাব খনথওয়েটের গবেষণাতেও পড়ে। দীর্ঘ 15 বছর ধরে জলবায়ুর ওপর প্রভাব বিস্তারকারী আবহাওয়ার উপাদানগুলি পর্যবেক্ষণ করে ও এই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ঘর্নর্থওয়েট পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণের সূচকগুলিকে পরিমার্জিত করে কিছু নতুন সূচক গঠন করেন এবং এর ভিত্তিতে পুনরায় বিশ্ব জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন করেন। এই সূচকগুলি হল

(a) সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন সূচক (Potential Evapo-transpiration Index) বা P-E সূচক

(b) আর্দ্রতা সূচক (Index of Humidity)

(c) শুদ্ধতা সূচক (Index of Aridity)

(d) আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচক (Moisture Index)

(e) তাপমান কার্যকারিতা সূচক (Thermal Efficiency Index) T-E সুচক

(f) উয়তা সূচক (Heat Index)

সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন সূচক (Potential Evapo-transpiration Index):

1931 সালে বিশ্ব জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের সময় Thornthwaite কেবলমাত্র অধঃক্ষেপণ, বাষ্পীভবন এবং তাপমাত্রা এই তিনটি নিয়ন্ত্রকের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সূচকগুলি তৈরি করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি অনুধাবন করেন যে শুধু বাষ্পীভবন একা নয় উদ্ভিদ কর্তৃক সংগঠিত প্রস্বেদন (Transpiration) প্রক্রিয়াও সমভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর চরিত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তাই তিনি মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্ট বাষ্পীভবন (Evaporation) এবং উদ্ভিদ-কৃত প্রস্বেদন প্রক্রিয়াকে একত্রিত করে বাষ্পীয়-প্রস্বেদন (Evapo-transpiration)-এর ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, বাষ্পীয়-প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় যেহেতু অধঃক্ষেপণের জল পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, তাই বাষ্পীয় প্রস্বেদন হল একটি বিপরীত অধঃক্ষেপণ প্রক্রিয়া (Reverse Preceipitation)। তবে থর্নর্থওয়েট শুধু বাষ্পীয় প্রস্বেদনেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। এর থেকে তিনি একটি উপযুক্ত ও আধুনিক নিয়ন্ত্রক-সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন (Potential Evapo-transpiration)-এর কথা বলেন। মাটিতে সীমাহীন আর্দ্রতা থাকলে যে বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সম্ভাবনা থাকে তাকেই সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন বলে। অর্থাৎ, কোনো একটি এলাকায় সম্পূর্ণ আবৃতকারী উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় সবটুকু চাহিদা মেটানোর জন্য যদি সবসময় পর্যপ্ত আর্দ্রতা উপস্থিত থাকে, তাহলে উৎপন্ন হওয়া প্রস্বেদনকে সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন বলে।

সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন নির্ণয় (Determina-tion of Potential Evapo-transpiration) অর্নর্থওয়েট, 1948 অনুসারে:

সম্ভাব্য বাষ্পীয়-প্রস্বেদন নির্ণয়ের জন্য কোনো সুচক না থাকায় থর্নর্থওয়েট গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে উদ্বুতার সাপেক্ষে বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করার জন্য উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এলাকার উদ্ভুতা ও বাষ্পীয় প্রস্বেদনের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে তুলনা করে ধাপে ধাপে কয়েকটি সূচকের সমন্বয়ে সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সূচক বা PE সূচক নির্ধারণ করেন।

সর্বপ্রথম থর্নথওয়েটই মাসিক বাষ্পীয় প্রস্বেদন(Monthly Evapotranspiration) নির্ণয়ের সূচক উপস্থাপনা করেন। 30 দিনে একমাস ও 12 ঘণ্টা দিনের দৈর্ঘ্য ধরে খড় মাসিক তাপমাত্রা ও দিনের দৈর্য্যোর সম্পর্কের ভিত্তিতে মাসিক বাষ্পীয় প্রস্বেদনের সূচকটি উপস্থাপন করেন। বাষ্পীয় প্রস্বেদন সূচকটি হল-

e = c * t deg

f = মাসিক বাষ্পীয় প্রস্বেদন cm-এ

t = মাসিক গড় তাপমাত্রা সেলসিয়াসে

a = ধ্রুবক, এর মান হল: :0.00000675*I^ prime prime - 0.0000771I ^ 2 + 0.01792 * 1 + 0.49239

c = গুণাঙ্ক, যা নিম্নে বর্ণিত উন্নতাসূচক (1)-এর সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে সম্পর্কিত

2. তবে এ ও. এই দুটি সহগ (coefficient) স্থানভেদে পরিবর্তিত হওয়ায় ঘর্নর্থওয়েট লক্ষ করেন যে অতি উচু বা শীতল জলবায়ু অঞ্চলের সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন নির্ণয় ত্রুটিপূর্ণ হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের 6টি অঞ্চলের উন্নতা ও সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ করেন যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সম্ভাব্য বাষ্পীভবনের হারগুলির মধ্যে পার্থক্য ক্রমশ কমতে থাকে এবং মোটামুটি 26-5° সেঃ উন্নতায় এবং 13-5 সেমি বাষ্পীয় প্রস্বেদনে এই দুটি চলকের (variables) সহসম্পর্ক (regression) রেখাগুলি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় (চিত্র: 21.6)। তাই তিনি এই সিদ্ধান্তে আসন যে উন্নতা ও সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের মধ্যে অসমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে (চিত্র: 21.6)। তাই যে সকল অঞ্চলগুলি গ্রীষ্মকালে অধিক উয় ও শীতকালে অধিক শীতল হয় এবং তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে, সেখানে গড় বার্ষিক উন্নতা দ্বারা কিছুতেই বাষ্পীয় প্রস্বেদন নির্ণয় করা যুক্তিযুক্ত নয়। এই ত্রুটিকে দূর করার জন্য থর্নর্থওয়েট মাসিক উদ্বৃতা সূচক (Monthly heat Index) নির্ণয় করেন। এই সূচকটি হল-

i =(\%)^ 1.504

12 মাসের ।-এর মান দ্বারা নির্ণয় করা হয় উন্নতা সূচক (Heat Index)। একে । দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

I = sum n = 1 to 12 i

উন্নতা সূচকটির মান থেকে 160-এর মধ্যে হয়। গুণাঙ্ক সহগ 'a'-এর মান 0 থেকে 4-25-এর মধ্যে পাওয়া যায়।

3. 'c' সহগ (coefficient)-এর সঙ্গে উদ্বুতা সূচক '1'-এর ঋণাত্মক সম্পর্কের ভিত্তিতে থর্নথওয়েট একটি নতুন সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন সূচক বা P-E Index তৈরি করেন। এটি হল-

PE = 1.6 * (m/1) ^ 2

যেহেতু এক-একটি মাসে দিনের সংখ্যা 28 থেকে 31-এর মধ্যে হয় এবং দিবাভাগের দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে তাই PE সূচকটির factors-গুলি ঋতুভেদে ও অক্ষাংশভেদে হ্রাসবৃদ্ধি করে সামঞ্জসবিধান (adjust) করা হয়।

• আর্দ্রতা ও শৃদ্ধতা সূচক নির্ণয় (Determination of Index of Humidity and Aridity)

সম্ভাব্য বাষ্পীয়প্রস্বেদন যেহেতু কোনো অঞ্চলে প্রাপ্ত সৌরশক্তির পরিমাণ এবং অধঃক্ষেপণের হারের ওপর নির্ভর করে তাই সম্ভাব্য বাষ্পীয়প্রস্বেদন জানা থাকলেই ওই অঞ্চলের বার্ষিক মোট জলের চাহিদা কতটা তা সহজেই বোঝা যায়। মোট অধঃক্ষেপণ যদি জলের চাহিদা অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে ওই অঞ্চলকে জলের উদ্বৃত্ত অঞ্চল (Water Surplus area) বলা হয়। আবার, যদি মোট অধঃক্ষেপণ জলের চাহিদা অপেক্ষা কম হয় তাহলে ।ঢকে ঘাটতি জলের অঞ্চল (Water deficient area) হিসেবে গণ্য করা হয়। এভাবে কোনো অঞ্চল আর্দ্র না এক হবে-তা নির্ণয় করা যায়। যদি কোনো অঞ্চলে সম্ভাব্য বাষ্পীয়প্রস্বেদনের জন্য যতটুকু বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই বৃষ্টিপাত হয়, সেই অঞ্চলকে তখন আর্দ্র বা শুদ্ধ কোনোটিই বলা যাবে না। যদি কোনো অঞ্চলে সম্ভাব্য বাষ্পীয়প্রস্বেদনের তুলনায় অধিক উদবৃত্ত জল থাকে তখন ওই অঞ্চলের জলবায়ু অধিক আর্দ্র হিসেবে গণ্য করা হবে। এবার যদি সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদনের তুলনায় জলের ঘাটতি অধিক হয় তখন ওই অঞ্চলের জলবায়ুকে ততটাই শুদ্ধ এলে গণ্য করা হবে। এই শুষ্কতা ও আর্দ্রতার মাত্রা পরিমাপের জন্য থর্নথওয়েট শৃঙ্কতা সূচক (Index of Aridity) ওজাষ্ট্রতা সূচক (Index of Humidity) নামে দুটি সূচকের উদ্ভাবন করেন। যখন জলের পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত অবস্থা থেকে অর্থাৎ ঘাটতির কোনো অবস্থা নেই সেই অবস্থা উদ্‌বৃত্ত জলের পরিমাণ ও জলের চাহিদার আনুপাতকে যারা সূচক (Index of Humidity) বলে। অনুরূপভাবে যখন জলের ঘাটতি থাকে এবং জলের উদ্বৃত্ত হওয়ার কোনো পরিস্থিতিই থাকে না সেই অবস্থাতে জলের ঘাটতির পরিমাণ ও জলের চাহিদার অনুপাতই হল শুষ্কতা সূচক (Index of Aridity)। এই দুই সূচককেই শতাংশে প্রকাশ করা হয়। এই সূচক দুটি হল-

I_{h} = (100s)/n I_{x} = (100d)/n

I_{h} = আর্দ্রতা সূচক

I_{2} = শুষ্কতা সূচক

s = উদ্‌বৃত্ত জলের পরিমাণ

d = জলের ঘাটতির পরিমাণ

এক্ষেত্রে, s = (r - n) d = (n - r) এবং ] r = 2 বৃষ্টিপাতের পরিমাণ

n = জলের চাহিদা

• আর্দ্রতার উপস্থিতির সূচক নির্ণয় (Determination of Moisture Index)

ঘর্নর্থওয়েট এই আর্দ্রতা ও শুষ্কতার সূচকের ভিত্তিতে 1948 সালে আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচক (Moisture Index) নাম আরও একটি নতুন সূচকের উদ্ভব করেন। তবে এই আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে থর্নথওয়েটের শুদ্ধতা সূচকের তুলনায় আর্দ্রতা সূচকে গুরুত্বমান (Weight) বেশি দেন। থর্নথওয়েটের মতে, পৃথিবীতে বেশির ভাগ অঞ্চলই এমন যেখানে কোনো মাস শুষ্ক হলে অন্য মাস আর্দ্র হতে পারে। তাই শুদ্ধ ও আর্দ্র উভয় সূচককেই আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচকের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ এক মাসে জলের উদ্‌বৃত্ত অন্য মাসে জলের ঘাটতিকে প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে উদ্‌বৃত্ত মাসে উপমৃত্তিকা স্তরে (subsoil) পর্যাপ্ত জলের সঞ্চয় হওয়ায় তা অনেকসময় শুদ্ধ শুরুতে সূচনাপর্বে উদ্ভিদকে জলের সংকুলান ঘটিয়ে প্রস্বেদন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে খরা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ জলের ঘাটতির সময়কালকে সংকুচিত করে। এই পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে Thornthwaite ধরে নেন কোনো ঋতুতে 6 ইঞ্চি জলে উদ্বৃত্ত অন্য ঋতুতে 10 ইঞ্চি জলে ঘাটতির সমান। এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে 1948 সালে Thornthwaite নির্ণীত আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচকটি (Moisture Index) হল-

[ l_{m} =] আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচক।]

I in =I h -0.6I x বা. I_{m} = (100s - 60d)/n

এই সূচকের মান-60 থেকে 100-এর মধ্যে হয়

আর্দ্র অঞ্চলে I - এর মান সর্বদা ধনাত্মক ও শুদ্ধ অঞ্চলে ঋণাত্মক হয়। এই আর্দ্রতা উপস্থিতির সূচকের মানের ওপর ভিত্তি করে ধর্মথওয়েট ও ধরনের জলবায়ুর উল্লেখ করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01