কোপেনকৃত জলবায়ু অঞ্চল, 1918 (Köppen's climatic classification, 1918)
1900 সালে তৈরি করা বিশ্ব জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের ভিত্তিগুলিকে কিছুটা পরিমার্জিত করে কোপেন 1918 সালে জার্মান ভাষায় প্রকাশিত "Klassifikation der klimate nach temperature, Nicderschlag und Jahreslauf!" প্রতিবেদনে পুনরায় বিশ্ব জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন করেন এবং পৃথিবীর মানচিত্রে অঞ্চলগুলিকে তুলে ধরেন। 1918 সালে জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজনের সময় কোপেন এর ভিত্তি হিসেবে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে কার্যকরী বৃষ্টিপাতের ধারণাকে যুক্ত করেন। কারণ তিনি উপলব্ধি করেন যে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি কেবলমাত্র মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ওপরই নির্ভর করে না। বরং এটি বাষ্পীভবনের হারের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাঁর মতে, কার্যকরী বৃষ্টিপাত হল কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত মোট বৃষ্টিপাত থেকে মোট বাষ্পীভবন ও বাষ্পীয় মোচনের বিয়োগ ফল। এ ছাড়া 1918 সালে শ্রেণিবিভাজনটিতে কোলেন উপজলবায়ু অঞ্চলগুলিকে ঋতুভেদে আর্দ্রতা, উয়তা, বাষ্পীভবনের হার, তুষারপাত ইত্যাদি আরও অন্যান্য জলবায়ুগত উপাদানগুলির স্থানিক পার্থক্যের ভিত্তি কে অনেকগুলি অণুজলবায়ু অঞ্চলে (micro climatic regions) বিভক্ত করেন। কোপেন তাঁর এই নতুনতম শ্রণিবিভাজনটিতে পূর্বের উল্লিখিত স্থানীয় অঞ্চল কিংবা উদ্ভিদ ও প্রাণীদের নাম আর ব্যবহার করেনি। বরং তিনি প্রতিটি অণুজলবায়ুর ক্ষেত্রেই ছোটো বা বড়ো হাতের অক্ষর (Lower or Upper Case) ব্যবহার করেছেন। জলভরূপ কোপেনকৃত 1918 সালের শ্রেণিবিভাজনটি আনকটাই বিজ্ঞানসম্মত ও সকলের কাছে বোধগম্য হয়েছে 1918 খ্রিস্টাব্দের শ্রেণিবিভাজনে কোপেন সমগ্র পৃথিবীকে ৩টি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চলগুলি হল-
আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু (Tropical rainy climate):মোটামুটিভাবে ক্রান্তীয় উয়ুমণ্ডলের অধিকাংশ ভূভাগই এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে শীত ঋতু অনুপস্থিত এবং সবমাসেরই গড় তাপমাত্রা থাকে 18° সেঃ-এর ওপরে। এই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য মেগাথার্মাস জাতীয় উদ্ভিদ লক্ষ করা যায়। বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বণ্টনের পার্থক্যের ভিত্তিতে জলবায়ু অঞ্চল A-কে কোপেন পুনরায় 4টি উপবিভাগে বিভক্ত করেন। যথা-
• কোনো বৃহৎ জলবায়ু অঞ্চলের উপবিভাগের সময় সেই অঞ্চলটির জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা সহজেই ছোটো হাতের অক্ষরটি দেখে বোঝা যায়-
'f'-বৃহৎ জলবায়ুর সঙ্গে। অক্ষর যুক্ত হলে সবসময় মনে রাখতে হবে অঞ্চলটিতে সারাবছর ধরে অধঃক্ষেপণ হয়। (বৃষ্টিপাত অথবা তুষারপাত) অর্থাৎ, অঞ্চলটিতে কোনো শুষ্ক ঋতু নেই। যেমন- Af. Cbi ইত্যাদি।
's'- এই অক্ষরটি থাকলে ধরে নিতে হবে গ্রীষ্মকাল শুদ্ধ এবং বৃষ্টিপাত প্রধানত শীতকালেই হয়।
'w'- এই অক্ষরটি থাকলে শীতকাল শুদ্ধ এবং বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালেই হয়ে থাকে।
Af: ক্রান্তীয় সিক্ত জলবায়ু (Tropical wet climate): এই অঞ্চলের শীতলতম মাসে গড় তাপমাত্রা 18° সো-এর নিচে নামে না। শুষ্কতম মাসে বৃষ্টিপাত 6 সেমির বেশি হয়। এই জলবায়ু অঞ্চলে আবহাওয়ার ঋতুগত বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। তাই ঋতুভেদে উন্নতার তারতম্য খুবই কম। তাপমাত্রার তীব্রতা সারাবছরই খুব বেশি। আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন বলয় (ITCZ), নিরক্ষীয় শান্ত বলয়, নিরক্ষীয় পশ্চিমাবায়ু বলয়-এই জলবায়ু বলয়ের সঙ্গে সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায়।
Aw : ক্রান্তীয় শুদ্ধ ও আর্দ্র জলবায়ু (Tropical wet and dry climate): এই অন্যালে শীতল শুষ্ক ঋতু সুস্পষ্ট। শুষ্ক শীত ঋতুতে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। গড় মাসিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও সেমির কম হয়ে থাকে। উন্নতা মোটামুটিভাবে Af জলবায়ু অঞ্চলের মতোই থাকে। সুতরাং এই জলবায়ু অঞ্চলটিতে ঋতুভেদে উন্নতা এবং বৃষ্টিপাতের তারতমা লক্ষ করা যায়। এই জলবায়ু অঞ্চল পর্যায়ক্রমে গ্রীষ্মকালে ITCZ সংলগ্ন অংশে এবং বছরের বাকি সময় উচ্চচাপযুক্ত আয়ন বায়ু প্রভাবিত বলয়ের অন্তর্গত হয়।
As: ক্রান্তীয় শুদ্ধ গ্রীষ্ম ঋতু (Tropical dry summer season): এখানে উয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ঋতু সুস্পষ্ট। শুদ্ধ ঋতুতে সূর্যরশ্মির তীব্রতা অত্যন্ত বেশি থাকে। শুষ্ক ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়, মাটামুটিভাবে ও সেমি বা তারও কম। তুলনামূলকভাবে শীতল মাসগুলিতে অধিক বৃষ্টিপাত হয়।
Am: ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু (Tropical monsoon climate): এই অঞ্চলের শুদ্ধ শীত ঋতু নাতিইং। শুদ্ধতম মাসে বৃষ্টিপাত 6 সেমির কম হয়। কিন্তু মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এতটাই বেশি থাকে যে ভূমিভাগ প্রায় সারাবছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে সিক্স থাকে। তাই এখানে আর্দ্র পর্ণমোচী অরণ্য গড়ে উঠাতে দেখা যায়। Am অঞ্চলটি Af ও Aw জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যবর্তী পর্যায়ভুক্ত। এখানে Af-এর মতো যেমন ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায় তেমনি Aw-এর মতো বৃষ্টিপাতের ঋতুগত তারতম্যও দেখা যায়। Aw জলবায়ু অঞ্চলের মতো Am অঞ্চলেও শুদ্ধতম ঋতুতে বৃষ্টিপাত ও সেমির কম হয়। তবে Am 6. Awকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে হলে মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও শুষ্কতম মাসের বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ভিত্তিতে করতে হয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বলা যায়, যদি একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 180 সেমি হয় তবে সেখানে Aw ও Am-এর সীমানা নির্ধারণ হবে শুষ্কতম মাসের 2.7 সেমি সমবর্ষণরেখার ভিত্তিতে। বৃষ্টিপাত 2.7 সেমির কম হলে অঞ্চলটি Aw -এর শ্রেণিভুক্ত হবে এবং 2.7-এর বেশি হলে (কিন্তু 6 সেমির কম) অঞ্চলটি Am-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
উপরিউক্ত চার ধরনের উপবিভাজন ছাড়াও কোপেন এ জলবায়ুকে আরো কতকগুলি অণু জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন।
w' গ্রীষ্মকালে খুব একটা বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টিপাত প্রধানত গ্রীষ্মঋতুর শেষদিকে অর্থাৎ শরৎকালে হয়
w" বছরে দুইবার বৃষ্টিপাত হয়। অর্থাৎ, বছরে দুটি আর্দ্র ঋতু ও দুটি শুদ্ধ ঋতু বিরাজ করে
উয়তম এবং শীতলতম মাসের মধ্যে উন্নতার প্রসর 5° সেঃ-এর কম হয়।
গাঙ্গেয় অববাহিকার ন্যায় উন্নতা লক্ষ করা যায়। এখানে উন্নতম মাস আসে দক্ষিণায়ণের আগে এবং গ্রীষ্মকাল আসে বর্ষাকালের আগে।
শুদ্ধ জলবায়ু অঞ্চল (Dry Climates):
এই অঞ্চলের জলবায়ু শুষ্ক মরুপ্রায় প্রকৃতির। এখানে বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবনের হার বেশি। তাই সারাবছরই জলের ঘাটতি লক্ষ করা যায়। কোনো অঞ্চলে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য যে কার্যকরী বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয় তা বাষ্পীভবনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। বাষ্পীভবন আবার সরাসরি তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে। জড়িত। তাই গ্রীষ্মকালে উন্নতা বেশি থাকায় বাষ্পীভবনের হার বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের তুলনায় শীতকালীন বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বিকাশের পক্ষে অধিক কার্যকর। গ্রীষ্মকালে বাষ্পীভবন এতটাই বেশি হয় যে ভৌম জলস্তর অনেকটাই নিচে নেমে যায়। তাই ৪ জলবায়ু অঞ্চলে নিতাবহ নদীর সংখ্যাও খুবই কম। সুতরাং বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে B জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন করা সম্ভব নয়। তাই কোপেন ৪ জলবায়ুর শ্রেণিবিভাজন করার সময় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পারস্পরিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে শুদ্ধতার মাত্রা অনুযায়ী এই জলবায়ু অঞ্চলকে দৃটি উপ-জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেন। যথা- BW এবং BS।
BW: মধু জলবায়ু (Arid climate of desert): জার্মান শব্দ 'Wuste' থেকে 'W' অক্ষরটি নেওয়া হয়েছে, যার আভিধানিক অর্থ হল মরুভূমি। এই জলবায়ু অঞ্চলটি সারাবছরই শুষ্ক থাকে। যতটুকু বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয় তা উয় মাসেই সংঘটিত হয়। এখানে শুষ্কতম শীতল মাসের তুলনায় উন্নতর মাসে 10 গুণেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতার এতটাই অভাব হয় যে একটানা কয়েক বছর অঞ্চলটি বৃষ্টিহীনও থাকতে পারে।
BS: স্তেপ জলবায়ু (Steppe/semi arid climate): 'Steppe' শব্দটি থেকে 'S' অক্ষরটি নেওয়া হয়েছে যার অর্থ হল শুদ্ধ তৃণভূমি। এই অঞ্চলটি আর্দ্র ও মরু জলবায়ুর মধ্যবর্তী একপ্রকার জলবায়ুকে নির্দেশ করে। এখানে উন্নতর মাসগুলির তুলনায় শীতলতর মাসগুলিতে তিনগুণ বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হয়। শুষ্ক গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত। সেমিরও কম হয়।
কোপেন আর্দ্র জলবায়ু থেকে ৪ জলবায়ুকে আলাদা করার জন্য এবং ৪ জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যে আর্দ্রতা ও শুদ্ধত্যার পার্থক্য তুলে ধরার জন্য বৃষ্টিপাত ও উয়তার পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একটি সমীকরণ প্রস্তুত করেন। রূপেনের ৪ জলবায়ুর সীমানা নির্ধারণকারী এই সূত্র অনুযায়ী আর্দ্র জলবায়ুর সীমানায় যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, তা কমতে কমতে শুদ্ধ মরু জলবায়ুর সীমানায় অর্ধেক বা তারও কম হয়ে যায়।
BS ৬ আর্দ্র জলবায়ুর সীমানা নির্ধারণের জন্য কোপেন (1918) প্রদত্ত সূত্রটি হল r = 2t + 20
BS BW জলবায়ু অঞ্চলের জন্য সূত্রটি হল r = t + 10
এখানে,। x = বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং। = উদ্বুতা
এখন বিভিন্ন উয়তায় কীভাবে জলবায়ু অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করা হয় তা নির্ণয় করা যাক। ধরা যাক, কোনো ভঞ্চলের উন্নতা 25° সেঃ তাহলে আর্দ্র A জলবায়ু ও ৪ জলবায়ুর সীমানা নির্দেশক সমবর্ষণরেখাটি (1) RG Rightarrow 2t 30 = (2 * 25 + 20) = 70 সেমি। আবার, একই উন্নতায় BS এবং BW জলবায়ুর সীমানা নির্দেশক একটি হবে Rightarrow t + 10 = 25 + 10 = 35 সেমি
কোপেন তার এই সমীকরণটি পরবর্তীকালে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করেন।
B' জলবায়ু অঞ্চলের উপরও দুটি শ্রেণিবিভাজন ছাড়াও কোপেন উক্ত সূত্রগুলো প্রয়োগ করে B জলবায়ুর বিভিন্ন সমন্বয় তৈরি করেন। এর ফলে B জলবায়ুকে বেশ কয়েকটি অণু জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এই বিভাজন একাংশ, স্থলভাগ ও জলভাগের অসম বণ্টনের ফলে তৈরি হওয়া উন্নতার পার্থক্যের জন্য তৈরি করা হয়।
h: (heiss) (উন্ন): বার্ষিক গড় উন্নতা এসব অঞ্চলে 18° সেঃ-এর বেশি। BW এবং BS-কে আবার এই বৈশিষ্টোর ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করা হয়-BWh বা নিম্ন অক্ষাংশীয় ক্রান্তীয় উয় মরুভূমি এবং BSh বা স্তেপ।
k: (kalt) (শীতল): বার্ষিক গড় উন্নতা এখানে 18° সেঃ-এর নিচে থাকে। কিন্তু উন্নতম মাসের তাপমাত্রা ১৪° সেঃ-এর ওপরে ওঠে। এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেও তিনি BW ও BS-কে দুটি ভাগে ভাগ করেন-BWk বা মধ্য অক্ষাংশীয় শীতল মরুভূমি এবং BSK বা স্তেপ।
K' উন্নতম মাসের তাপমাত্রা 18 deg সেঃ-এর নিচে থাকে।
S: গ্রীষ্মকালে শুষ্কতা এতটাই বেশি থাকে যে খরার প্রাদুর্ভাব হয়। 70% বৃষ্টিপাতই শীতকালে হয়।
W: শীতকালে শুষ্কতা এতটাই বেশি থাকে যে খরার প্রাদুর্ভাব হয়। 70% বৃষ্টিপাতই গ্রীষ্মকালে হয়।
N: (nebel) (কুয়াশা) প্রধানত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল যেখানে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেখানে এর প্রভাবে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে। এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে BS ও BW-কে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন-BWn ও BSn.
P: অত্যন্ত উদ্বু প্রকৃতির জলবায়ু। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২৪° সেঃ-এর ওপর থাকে।
P' উয় প্রকৃতির জলবায়ু। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা 24-28° সেঃ-এর মধ্যে থাকে।
• নাতিশীতোয় মধ্য-অক্ষাংশীয় উদ্বু আর্দ্র জলবায়ু (Mid-latitude warm humid climate)নাতিশীতোয় মধ্য-অক্ষাংশীয় অঞ্চলের বৃষ্টিবহুল জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলগুলি কোপেন জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত করেন। এই শ্রেণিভুক্ত জলবায়ু অঞ্চলগুলির শীতলতম মাসের গড় উন্নতা 18 deg সেঃ কম থাকে, কিন্তু - 2 ^ n সেঃ-এর বেশি থাকে। তবে উন্নতম মাসের গড উদ্বুতা অবশ্যই 10 deg সেঃ-এর বেশি থাকে। ঋতুভেদে অধঃক্ষেপণের তারতম্যের ভিত্তিতে C জলবাযুকে তিনটি উপ জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
Cr: কোনো স্পষ্ট শুদ্ধ ঋতু নেই। এমনকি শ্রীষ্মের শুদ্ধতম মাসে বৃষ্টিপাত ও সেমির বেশি হয়। আর্দ্রতম ও শৃদ্ধতম মাসে বৃষ্টিপাতের পার্থকা w ও ৪-এর তুলনায় কম হয়।
Cw: শীতকাল শুষ্ক হয়। গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতম মাসের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শুদ্ধতম শীতল মাসের প্রায় 10 গুদ বেশি হয়। এই জলবায়ু দুটি তাৎপর্যপূর্ণ অঞ্চলে বলয় আকারে লক্ষ করা যায়-
(i) নিম্ন অক্ষাংশের AW জলবায়ু অঞ্চলগুলির উচ্চভূমিগুলিতে যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধিতে উন্নতা হ্রাস পায় সেখানে Cw জলবায়ু লক্ষ করা যায়। (ii) মধ্য-অক্ষাংশীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর ভারত ও চিনের দক্ষিণভাগে Cw জলবায়ু লক্ষ করা যায়।
Cs: শুভ গ্রীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল হল এই জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। উন্নতম মাসের তুলনায় শীতলতম মাসে বৃষ্টিপাত তিনগুণ হয়। গ্রীষ্মের শুষ্কতম মাসেও বৃষ্টিপাত ও সেমির বেশি হয়। শীতকালে প্রধানত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ুর প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় বৃষ্টিপাত কমে যায়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এই জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণিভুক্ত।
C জলবায়ু অঞ্চলকে আবার উদ্ভুতা ও আর্দ্রতার ঋতুগত ও স্থানগত বণ্টনের পার্থক্যের ভিত্তিতে বেশ কতকগুলি ক্ষুদ্র জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। যেমন-
a: উচু গ্রীষ্মকাল যুক্ত জলবায়ু। উন্নতম মাসের গড় তাপমাত্রা 22° সেঃ-এর ওপর থাকে।
b: শীতল গ্রীষ্মকাল যুক্ত জলবায়ু। উন্নতম মাসের গড় তাপমাত্রা 22° সেঃ-এর নিচে থাকে। তবে কমপক্ষে 4 মাস তাপমাত্রা 10° সেঃ-এর বেশি থাকে।
c: গ্রীষ্মকালের সময়সীমা খুবই কম। কমপক্ষে। থেকে মাস তাপমাত্রা 10° সেঃ-এর ওপরে থাকে। শীতলতম মাসের তাপমাত্রা-36° সেঃ-এরও কম হয়।
i: A জলবায়ু অঞ্চলের মতোই উন্নতম ও শীতলতম মাসের মধ্যে উন্নতার প্রসর 5° সেঃ-এর কম হয়।
g. এ জলবায়ু অনুরুপ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। উন্নতা ও বৃষ্টিপাতের একটি পরিবৃত্ত বলয়।
x. আর্দ্র ও শুষ্ক অঞ্চলের মধ্যবর্তী একটি পরিবর্তনশীল এলাকা যেখানে বসন্তের শেষ অথবা গ্রীষ্মের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাত সর্বাধিক। তবে গ্রীষ্মের শেষদিকে বৃষ্টিপাত কমতে থাকে।
x': x অঞ্চলের ন্যায়, তবে সব ঋতুতেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
n: B জলবায়ুর মতোই। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ যুক্ত শীতল সমুদ্রস্রোত সংলগ্ন অঞ্চল।
n': কুয়াশা খুব কম দেখা গেলেও আর্দ্রতা অনেকটাই বেশি।
w': বৃষ্টিবহুল অঞ্চল তবে শরৎকালের পর।
অতিশীতল আর্দ্র জলবায়ু (Sub-arctic climate):
কোপেন মধ্য ও উচ্চ-অক্ষাংশীয় অঞ্চলের অতিশীতল আর্দ্র জলবায়ুকে এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এখানে শীতলতম মাসের গড় উন্নতা-3° সেঃ-এর কম এবং উন্নতম মাসের গড় উন্নতা 10° সেঃ-এর বেশি হয়। এই অঞ্চলের অধিকাংশ ভূভাগই বছরের প্রায় 7 মাস বরফাবৃত থাকে। এখানে বরফ আচ্ছাদিত সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনভূমির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অধঃক্ষেপণের তারতম্য অনুসারে D জলবায়ু অঞ্চলকে কোপেন দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যেমন-
DF: শীতল ও আর্দ্র জলবায়ু। সারাবছরই আবহাওয়া আর্দ্র প্রকৃতির থাকলেও শীতকালে অধঃক্ষেপণের পরিমাণ বেশি।
Dw: শুষ্ক ও অতিশীতল জলবায়ু। অত্যধিক শৈত্যের জন্য এখানে প্রায় সারাবছরই উচ্চচাপ বিরাজ করে উচ্চচাপের কারণে এখানে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। উত্তর-পূর্ব এশিয়া এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত।
উয়তার তারতম্যের ভিত্তিতে আবার Df এবং Dw অঞ্চলকে a, b, c, d এবং e অর্থাৎ পাঁচটি অণু জলবায়ু একলে ভাগ করা হয়। a, b, c অণু জলবায়ু অঞ্চলগুলির বৈশিষ্ট। C জলবায়ু অঞ্চলের ন্যায়।
d: শীতলতম মাসের উদ্ভতা সবসময় - 36 deg সেঃ-এর নিচে থাকে।
e: সারাবছরই - 36 deg সেঃ-এর ওপর থাকে। তবে বছরে অন্তত 1 থেকে 4 মাসের উয়তা 10 deg সেঃ-এর ওপর ওঠে। বাকি a, b এবং জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য পূর্বের জলবায়ুর ন্যায়।
তুষারময় অঞ্চল (Snow climate):
চির তুষারময় মেরু জলবায়ু অঞ্চল 'E' জলবায়ুর অন্তর্গত। এখানে উন্নতম মাসের তাপমাত্রা 10 deg সেঃ-এর কম থাকে। বছরের অধিকাংশ সময়ই উয়তা হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে। তাই মৃত্তিকাস্থিত জলও বরফে পরিণত হয়।
ফলে এখানে উদ্ভিদের জন্ম হয় না। উয়তার নিরিখে E জলবায়ুকে কোপেন দুটি উপবিভাগে বিভক্ত করেন-
ET: তুন্দ্রা জলবায়ু (Tundra Climate): উন্নতম মাসের গড় তাপমাত্রা 10 deg সেঃ-এর নিচে থাকলেও রিমাঙ্কের ওপরেই থাকে। তাই এই জলবায়ু অঞ্চলে উন্নতার প্রসর 5° সেঃ-এর কম হয়।
EH উচ্চ অক্ষাংশীয় পার্বত্য জলবায়ু (High latitude mountain climate): 3000 মিটারের অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট উচ্চ অক্ষাংশীয় পার্বত্য বলয়। তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত চিরতুষারাবৃত পাহাড়ের চূড়াগুলিকে রোপেন এই জলবায়ুর অন্তর্গত করেন। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানকার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। মাউন্ট ওয়াশিংটন, সেন্টিস প্রভৃতি চূড়াগুলিকে কোপেন এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করেন।
EHi: এই বলয়ে 3000 মিটারের অধিক উচ্চতাসম্পন্ন পাহাড়ের চূড়াগুলিকে ধরলেও যেখানে। জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য দেখা যায় অর্থাৎ উদ্ভতার প্রসর 5 deg সেঃ-এর কম থাকে, সেই অংশগুলিকেই কোপেন এই গোষ্ঠীভুক্ত করেন।
চির তুষারাবৃত অঞ্চল (Climate of eternal frost):
যে সকল অঞ্চলে ভূমিভাগ সারাবছরই বরফাবৃত থাকে এবং তাপমাত্রাও সারাবছর ধরে হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে সেগুলি কোপেন F জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করেন।
FH : চির তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চল, মোটামুটি পর্বতের হিমরেখা (snowline)-এর ওপরে অবস্থিত অঞ্চল।
FHi: বরফাবৃত পাহাড়ের চূড়া যেখানে সারাবছর ধরে উন্নতার খুব একটা পরিবর্তন হয় না।