welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদ(Water Resources of West Bengal)

পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদ(Water Resources of West Bengal)


পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদ

পশ্চিমবঙ্গে ভারতের ৮ শতাংশ লোকের বাস এবং ভারতের মোট জলসম্পদের ৭.৫ শতাংশ রয়েছে এই রাজ্যে। তবে উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এই জলসম্পদের উপর চাপ বাড়ছে। কৃষি ক্ষেত্রে জলের যোগান দিতে, পানীয় জলের যোগান দিতে, কল কারখানায় জলের যোগান দিতে ও অন্যান্য কাজে। যে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ একসময় জলে উদ্বৃত্ত ছিল, বর্তমানে তা জল সংকটের দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে। সেচ ও জলপথ দপ্তর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদের পরিমাণ ১.৩৩ কোটি হেক্টোমিটার, যার ২/৫ ভাগ কেবল ব্যবহারযোগ্য। ২৬টি নদী অববাহিকার জলসম্পদের হিসাব করে সমীক্ষক দল এই মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্তিযোগ্য ভৌমজলের পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য। ভারত সরকারের সেচ কমিশন পশ্চিমবঙ্গোর ভৌমজলের পরিমাণ ২৩.৮ লক্ষ হেক্টোমিটার বলে হিসেব করেছেন। এখানে কেন্দ্রীয় ভৌম জলদপ্তর এই হিসেব দিয়েছেন ১৭.৬ লক্ষ হেক্টোমিটার। রাজ্যের সর্বোচ্চ জলসম্পদের পরিমাণ সমান নয়। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে জলসম্পদের পরিমাণ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদ এর তুলনায় অনেক কম। ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ হেক্টোমিটার, যার প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবহারযোগ্য। যদি এই জল প্রাপ্তির পরিমাণ জল সঞ্চয় এর মাধ্যমে বাড়ানো যায়, তবে জনপ্রতি জল প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল শস্যবীজ ব্যবহারের ফলে জলসেচের জলের চাহিদা বিপুল বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি সরকারি হিসেবে বলা হয়েছে যে, কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান জলের চাহিদা ৭৭.১ লক্ষ হেক্টরমিটার থেকে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে জল চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ১.১ কোটি হেক্টোমিটার। এজন্য জল সঞ্চয় করে রাখার ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হবে এবং জলের অপচয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে জলের চাহিদা সর্বাধিক। রাজ্যের সেচ দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১.৩ কোটি হেক্টোমিটার জলের চাহিদার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রেই প্রয়োজন ৭৭ লক্ষ হেক্টর মিটার।


পশ্চিমবঙ্গের মোট জলসম্পদের প্রায় ৬৩ ভাগ উত্তরবঙ্গের নদী অববাহিকাগুলিতে রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে রাঢ় অঞ্চলের ২২ শতাংশ এবং পূর্ব দিকের সমভূমিতে ১৫ শতাংশ জলসম্পদ রয়েছে। উত্তরবঙ্গের নদীগুলো হিমালয় থেকে প্রচুর জল বহন করে নিয়ে আসে বলে উত্তরবঙ্গ জলসম্পদে সমৃদ্ধ। দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার জল মূল জলের ভাণ্ডার বলা চলে। উত্তরবঙ্গের নদীগুলি একই সঙ্গে বরফ গলা জল ও বর্ষার জলে সমৃদ্ধ। বর্ষার জল ধরে রাখার ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে অপ্রতুল এবং যে জলাধারগুলো রয়েছে তার মধ্যে উপত্যকা পরিকল্পনায় বা কংসাবতী প্রকল্পে বা ময়ূরাক্ষী প্রকল্পে জলাধারগুলিতে পলি সঞ্চয়ের ফলে জল ধারণ ক্ষমতা অনেকখানি সংকুচিত হয়েছে। বাষ্পীভবনের কারণে প্রচুর জলহ্রাস ঘটে এই জলাধারগুলি থেকে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে জনপ্রতি জলপ্রাপ্তি ছিল ২৫৭৪ কিউবিক মিটার, ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭২০ কিউবিক মিটার।


জল উত্তোলনের সমস্যা ও জলদূষণ: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং সেচকার্যে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শুখা মরসুমে জলের ঘাটতির কারণ হয়। ফলস্বরূপ শুখা মরসুমে অথবা দেরিতে বর্ষা এলে কৃষিখরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে জলসমস্যার অন্যতম কারণ জলের অপব্যবহার। এই অপব্যবহারের অন্যতম ক্ষেত্র উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ, যা করতে গিয়ে প্রায়শই মাত্রারিক্তভাবে ভৌমজল উত্তোলন করা হয়।


ভৌমজল দূষণ: জলসেচে গভীর নলকূপ খনন করে অতিরিক্ত জল উত্তোলন করায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষতঃ দক্ষিণবঙ্গে নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া ইত্যাদি জেলায় জলে আর্সেনিকের সমস্যা এবং আর্সেনিক ঘটিত রোগের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোন কোন অঞ্চলে বিশেষত বীরভূম, বাঁকুড়ায় ফ্লুয়োরাইড ঘটিত জলদূষণও ঘটছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভৌমজলের অতিরিক্ত উত্তে ালনের ফলে ভৌমজল ও মৃত্তিকার লবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার মিশ্রিত জলের অনুস্রাবনে ভৌমজল দুষিত হচ্ছে। এছাড়া, শিল্পের বর্জ্য জল নিষ্কাশনে ত্রুটির জন্যে ভৌমজলদূষণ ঘটছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01