welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে নগরায়ণ এবং তার প্রভাব (Urbanisation in India and its impact):

ভারতে নগরায়ণ এবং তার প্রভাব (Urbanisation in India and its impact):


(ⅰ) শহরাঞ্চলে বেকারত্ব বৃদ্ধি (Increase of unemployment in Urban Area): উন্নত দেশগুলির শিল্পায়নের হার আমাদের দেশ থেকে অনেকটাই বেশি। সাম্প্রতিক কালে ভারতে মধ্যম স্তরের চেয়ে তৃতীয় শ্রেণির অর্থনৈতিক স্তর অতিক্রম করে গেছে। ফলে নির্দিষ্ট একটি জনসংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আয়ের স্তরও নেমে গেছে।

ii) শহরে ও গ্রামে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাম্যতার অভাব ভারতে শহরগুলির বাইরের সীমানা দ্রত হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এর ফলে নগরায়ণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এমন কিছু মৌলিক সম্পদের প্রয়োজন হয় যেগুলি গ্রাম থেকে আনতে হয়। এই কারণে এসব শহর এখনও গ্রামের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। শহরে ও গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারার মধ্যে এখনও লক্ষণীয় বিষয় যে, গ্রামগুলিতে এখনও গরিব সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। তুলনায় শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের তীব্রতা অনেক কম।

নাগরিক জীবনের গুণগত মান হ্রাস সমগ্র দেশের শহরগুলিতে জনসংখ্যা খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে শিক্ষা স্বাস্থ্য, পরিসেবা, জলসম্পদ এবং বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। নাগরিকদের এইসমস্ত পরিসেবা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ, সমস্যা, জনবিস্ফোরণ এবং দূষণ-সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই কারণে একদিকে যেমন নাগরিক জীবনের গুণগত মানের হ্রাস ঘটছে তেমনি নগর সভ্যতায় তীর সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

(iv) সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীর উদ্ভব: নগরায়ণকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে। নতুন নতুন বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ ও বিক্রয়, জমি-বাড়ির প্রোমোটারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ চলে আসছে। আবার এরাই সাধারণ নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বাড়ি-জমির দাম পৌঁছে দিচ্ছেন। এমনকি এই প্রোমোটারি ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যা, তোলাবাজি প্রভৃতি বেআইনি কার্যকলাপ চলছে।

(v) পরিবেশ দূষণের হার বৃদিদ্ধ দ্রুত হারে নগরায়ণের ফলে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি নির্মাণ, শিল্প-কলকারখানা স্থাপন প্রভৃতি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রসার ঘটছে। যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে বায়ু, জল, মাটি ও বায়ুমন্ডলে দুষণের মাত্রাও বৃদ্ধি যাচ্ছে। যার সর্বশেষ পরিণতি হল গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধি এবং ওজোন স্তরের মারাত্মক অবক্ষয়। পৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলিতে নগরায়ণের হার উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। এর প্রভাব এসে পড়ছে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে।

(vi) শহরে জীবনের নিরাপত্তা হ্রাস: 1988 খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা সংকট কমিটির উদ্যোগে নগরজীবনের জন্য দশটি সূচক চিহ্নিত করা হয়েছে। এই 10টি সূচকের ওপর নির্ভর করে শহরগুলিকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলি হল-

(a) খুব ভালো শহর, (b) ভালো শহর, (c) সাধারণ শহর এবং (d) দুর্বল শ্রেণির শহর এই শ্রেণিবিভাগ অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের প্রায় শহরের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বলপ্রকৃতির বলা যায়।

শহরে নাগরিক জীবনের মান কেমন তা জানার জন্য যে 10টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলি হল-

(a) জনগণের নিরাপত্তা প্রতি এক লক্ষ মানুষ প্রতি খুনের ঘটনা। (b) খাবারের দাম সাধারণ মানুষকে আয়ের কত শতাংশ খাবার কিনতে খরচ করতে হয়? (c) বসবাসের জায়গায় পরিমাণ প্রতি বাসগৃহ পিছু কত জন লোক বাস করেন? (d) গৃহের মান গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কিনা, পানীয় জলের সংযোগ আছে কিনা? (৫) যোগাযোগ ব্যবস্থা: শতকরা কত জনের টেলিফোন/মোবাইল ফোন আছে? (1) শিক্ষার মান। শতকরা কত জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে? (g) জনস্বাস্থ্য প্রতি এক হাজার নবজাতকের মধ্যে শিশু-মৃত্যুর ঘটনা। (h) শাস্তি এবং নিরুপদ্রবে বসবাস শব্দদূষণের মাত্রা। (1) যানবাহনচলাচলের অবস্থা দিনেরবেলা খুব ব্যস্ত সময়ে ঘণ্টায় কত দূর গাড়ি যেতে পারে? (1) বিশুদ্ধ বাতাস দূষণ প্রতিকারের ব্যবস্থা কতটা আছে?

এই সমস্ত সূচকের সাহায্যে দেখা যায় কলকাতা ও মুম্বাই এই দুই শহরে 35%-50% মানুষ এখনও বস্তিতে বাস করেন , যেখানে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ পায় না।

(vii) কৃষিজমি ও বনভূমির পরিমাণ হ্রাস: ভারতে শহরগুলিতে জনসংখ্যা যে-হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ফলে বড়ো বড়ো শহরের পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে। দ্রুত নগরায়ণ করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে কৃষিজমি, যেগুলি শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত, তা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আবার রাস্তাঘাট নির্মাণ ও অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জঙ্গল কেটে সেই স্থান ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর কৃষিজমি এবং বনভূমি নষ্ট হচ্ছে। এই কারণে প্রচুর সংখ্যক মানুষ কৃষিজমি হারিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন।

(vii) উন্নয়ন মূলত নগরকেন্দ্রিক: আমাদের দেশের 70%-এর বেশি মানুষ কৃষিজীবী। আবার প্রায় 68% মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। অথচ, নারায়ণের ভাভাবে সমস্ত উন্নয়ন প্রধানত নগরকেন্দ্রিক। আমাদের দেশে মানুয়েলে এখনও সার্বিক ভাবে উন্নয়ন ঘটেনির ফলে গ্রাম ও শহরের উন্নয়নগত বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। গ্রামের অনেক মানুষ এখনও দারিদ্রসীমার নীচে অথচ, শহরের অধিকাংশ মানুষ বিলাসবহুলভাবে বসবাস করছেন।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং যানজট ও জলনিকালী সমস্যা: আমাদের দেশের বেশির ভাগ শহর-নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং এখনও উঠছে। এর ফলে শহরের রাস্তাঘাটে প্রত্যহ অফিস সময়ে যানজট সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করছে। হঠাৎ কয়েক ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টি কিংবা একটানা দু-এক দিনের প্রবল বর্ষণে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস ও কর্মসংস্থানের অন্যান্য ক্ষেত্র প্রায় সবই শহরে অবস্থিত। ফলে প্রত্যহ মানুষকে কর্মের জন্য শহরে আসতে হয়, যা শহরে অস্থায়ীভাবে হলেও জনসংখ্যাকে বৃদ্ধি করছে। এজন্য কিছু অফিস, আদালত এবং কর্মক্ষেত্র শহরের বিপরীত স্রোতে অর্থাৎ শহরের উপকন্ঠে, গ্রামের দিকে গড়ে তোলা দরকার।

(x) জল-সমস্যা: ভারতের প্রায় প্রত্যেক শহরে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা অত্যন্ত প্রকট।

দৈনন্দিন জীবনে মানুষ শহরের জলবাহী পাইপলাইনে সুদীর্ঘ লাইন দিয়ে জলের জন্য অপেক্ষা করেন। এমনকি ছোটো ছোটো শহরে জলসরবরাহের কোনো ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। প্রধান শহরগুলিতে প্রত্যহ যে পরিমাণে জলের জোগান দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শহরে এখনও ভূগর্ভ থেকে জলের। উত্তোলন করা হচ্ছে যা ভৌম জলের স্তরকে নীচে নামিয়ে দেয় এবং আর্সেনিক দূষণ বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন নদী-পরিকল্পনার মাধ্যমে জল পরিশোধন করেও জলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

(xi) নগরে অপরাধের সংখ্যাবৃদ্ধি শহর ও নগরগুলিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের (খুন, ধর্ষণ,

তোলাবাজি, রাজনৈতিক দাঙ্গা) সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের অপরাধ নাগরিক জীবনের শান্তি ও সংহতি নষ্ট করছে। নগরের যুবক-যুবতি সম্প্রদায়, শিক্ষার্থী, যুব নেতা-নেত্রীদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা খুবই উদ্বেগজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতেও বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিবাদ বাধছে। দেশের মধ্যভাগের শহরগুলিতে ধর্ষণ, ডাকাতি, অপহরণ, হত্যা প্রভৃতির সংখ্যা অনেক বেশি। কলকাতার সল্টলেক শহরে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। মুম্বাই এবং দিল্লি মহানগরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঘটানোর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মুম্বাইয়ের 31.8% এবং দিল্লির 30.5% মানুষ crime-এর স্বীকার হচ্ছেন। মুম্বাইয়ের 3.5% মানুষ এবং দিল্লির 1.7% মানুষ যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন।

এইসমস্ত সমস্যার একটা বড়ো কারণ হল- সরকার তাদের ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা এবং কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত নগরায়ণের মোকাবিলা করতে অক্ষম হয়েছে। পরিমিত জমির ব্যবহার, জীবনের নিরাপত্তা-বৃদ্ধি, জনসংখ্যার চাপ সামলানোর মাধ্যমে নগরায়ণকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01