welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পৌর সমাগম অথবা পৌর পিণ্ডীভবন (Urban agglomeration):

পৌর সমাগম অথবা পৌর পিণ্ডীভবন (Urban agglomeration):


অতি নগরায়ণের দাপটে কোনো নগর বা মহানগরগুলির অবিচ্ছিন্ন সম্প্রসারণের একটি উল্লেখযোগ্য প্রক্রিয়া হল পৌর সমাগম বা লৌর পিন্ডীভবন। অধিকাংশ ভৌগোলিক এই প্রক্রিয়াটিকে নগরীকরণের বহিমুখী বুন্দি (Out Growth) প্রবণতারূপেও উপস্থাপন করে থাকেন।

সাধারণত, আধুনিক নগরায়িত কোনও ক্ষেত্রে নতুন বসতি গঠন তথা, জনকেন্দ্রীভবনের একটি জটিল, ক্রমবর্ধনশীল এবং আন্তঃসংযোগী ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হল পৌর সমাগম। এটি মূল নগরের এমন একটি বর্ধিত এবং সংলগ্ন "Buid-up" এলাকা, যেটি আশেপাশের সংলগ্ন শহর গুলিকেও নিজস্ব পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করে সামগ্রিক একটি পৌরাঝলে উপনীত হয়। • ধারণা (Concept)। পৌর সমাগমের ধারণাটিকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়, যেমন-

• M. Babayev-এর মাতে the concept of urban agglomeration" means a compact cluster of settlements, which is based on a certain city, united into a single whole by intensive economic labour, cultural and recreational ties' অর্থাৎ, "পৌর সমষ্টি", এই ধারণাটি একটি নির্দিষ্ট নগরের। উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সংঘবন্ধ বসতিগুচ্ছের অর্থ প্রকাশ করে, যা নিবিড় অর্থনৈতিক, শ্রম, সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনমূলক বন্ধন দ্বারা একক সমগ্রে উপনীত হয়।

• E. Boze উল্লেখ করেছেন, "the urban agglomeration is characterized by the mitegrity of production and settlement systems, and the integrity of markets (labour, real estate, land), as well as the level of their functional connectivity," অর্থাৎ পৌর সমাগমকে উৎপাদন এবং জনবসতি ব্যবস্থার অখন্ডতা, বাজারের। শ্রম, রিয়েল এস্টেট, জমি। অখণ্ডতা এবং সেই সাথে তাদের কার্যকরী সংযোগের স্তর দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।

• জাতিসংঘ (UNO) পৌর সমাগমের যে সংজ্ঞাটি দিয়েছে তা হল-"এটি একটি নগর বা পৌরক্ষেত্রকে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এর বাইরে অবস্থিত শহরতলির প্রান্ত বা ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলিও এর সীমানা সংলগ্ন হয়ে থাকে।"

প্রসঙ্গঙ্গত উল্লেখ্য, 1971 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় আদমসুমারিতে দেশের মূল নগরগুলির সাথে পার্শ্ববর্তী কতকগুলি ছোটো ছোটো পৌর এলাকার সংযুক্তিকরণ বোঝাতে "Urlsan agglomeration শব্দটি প্রথম উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, 2001 সালের আদমসুমারীতে বলা হয়, একটি পৌর সমাগমের ক্ষেত্রে একটি সংবিধিবদ্ধ নগরের বিবেচ্য জনসংখ্যা কমপক্ষে 20,00000-র নীচে হওয়া কখনই উচিত নয়। যদিও, ভারতে পৌরসমাগমের ক্ষেত্রে অনুরূপ শর্তটিকে অনেকে মানতে নারাজ। যেমন- ভারতের ক্ষেত্রে বৃহত্তর মুম্বাই। বৃহত্তর দিল্লি ইত্যাদি মহানগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য পৌর সমাগম ঘটেছে।

বৈশিষ্টী (Characteristics): পৌর সমাগমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

• পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে অতি নগরায়ণ এবং সমাজ আধুনিকীকরণের অন্যতম একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হল পৌর সমাগম।

 (1) প্রশাসনিক দিক থেকে পৌর সমাভবনের ক্ষেত্রটিকে একটি অখন্ড নগরপিণ্ডরূপে বিবেচনা করা হয়।

পৌর সমাগম একটি অঞ্চলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমৃদ্ধির কার্যকরী সংযোগের প্রতিফলন ঘটায়।

(1) একটি বৃহৎ পরিসরে পৌর সমাগমকে কেন্দ্র করে সংলগ্ন বেশ কয়েকটি শহর বা নগর তাদের নিজস্ব চাহিদ অনুযায়ী সংযুক্ত হয়ে থাকে।

(২) পৌর সমাগমের এলাকাগুলিতে সমপ্রকৃতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক উপাদানের সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়।

পৌর সমাগমের বিকাশ ও অন্যতম প্রভাবকসমূহ(Development of urban agglomeration and its influencers)


পৃথিবীর যে কোনও দেশের ক্ষেত্রেই পৌর সমাগম অতি স্বাভাবিক বা অনিবার্য একটি ঘটনা কারণ, সময়ের সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন বসতি স্থাপনের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক সম্পর্কের কাঠামোগত সম্প্রসারণ, এবং গতিশীল অর্থনীতি অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণভাবে পৌর সমাগমের বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। বিভিন্ন ভৌগোলিক পৌর সমাগমের প্রেক্ষাপটে যে সমস্ত কারণকে উপস্থাপন করে থাকেন, তার কয়েকটি হল-

(i) অনেক সময় নগরাঞ্চলগুলি স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে সম্প্রসারণের এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়, যেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আর্থসামাজিক পরিষেবাগুলিকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে নগরটিতে বসবাসকারী কিছু মানুষ তাদের কর্মস্থল বা অন্য কোনও সামাজিক সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী উপকন্ঠ গুলিতে গিয়ে নতুন বাসস্থান গড়ে তুলতে থাকে। এই অবস্থায় নবাগতদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রান্তিক অঞ্চলে অনন্য মানুষ যৌন ও সেখানে নতুন বসতি গড়ে তোলার জন্য একত্রিত হয়।। ফোনে মূল নগর এবং তার পারিপার্শ্বিক উপকণ্ঠকে ঘিরে একটি সমৃদ্ধ পৌর সমাগম ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। 

(ii) যে সমস্ত নগরের একেবারে প্রান্তিক অংশগুলিতে এখনো পর্যন্ত উন্নত পরিবহন, যোগাযোগ বা অন্যান্য পরিসেবা পৌঁছোতে পারেনি, সেখানকার অধিবাসীরা দেশের দূরবর্তী স্থানে গিয়ে নতুন বসতি গড়ে তুলতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করে না। ফলে, প্রধান নগরীয় ক্ষেত্রে আশেপাশেই জনসমাগম বেড়ে গিয়ে একসময় বৃহৎ পৌরসমাগমের ক্ষেত্রে উপনীত হয়।

(iii) একটি অঞ্চলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নগর সমানভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকলে, কোনও একসময় সমগ্র অঞ্চলটি বৃহদায়তন একটি পৌরপিণ্ডে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে, দুটি নগরের সংযোগ সীমানাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায় না। নিউইয়র্ক এই ধরনের পৌর সমাগমের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

(iv) একটি নগরীয় ক্ষেত্রের বহিঃস্থ বৃদ্ধি (out growth) এমন একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া যা সমস্ত ধরনের গ্রাম বা পল্লী, আধাশহর, উপশহর, মফঃস্বল, রেলওয়ে কলোনি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বন্দরএলাকা, সামরিক ক্যাম্প প্রভৃতিকে একটি বিধিবন্ধ নগরীয় পরিসরে উপনীত করে। ফলে, সামগ্রিকভাবে প্রধান নগরাঞ্চল তার নিজস্ব সীমার বাইরেও সংশ্লিষ্ট বসতি অঞ্চল গুলির বৃদ্ধির সাথে সমানভাবে পাল্লা দিয়ে পৌর সমাগম ঘটায়। এখানে, সংশ্লিষ্ট বসতি ক্ষেত্রের বহিঃস্থ বৃদ্ধির প্রধান নির্ধারকরূপে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, যেমন- পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, জলের কল, বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডাকঘর, চিকিৎসা পরিসেবার সুবিধা, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা প্রভৃতিকে নিশ্চিতভাবেই পরিকল্পিতভাবে মনোনীত করা হয়। যেমন- 1971 খ্রিস্টাব্দে 12টি বহিঃস্থ এলাকার পিন্ডীভবন ঘটিয়েই Greater Haydrabad Municipal Corporation (GHMC) গড়ে উঠেছিল।

বিভিন্ন ভৌগোলিক বিশ্বব্যাপী পৌর সমাগমের অন্যতম প্রভাবকরূপে অতি নগরায়ণ এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন-এই দুটি প্রেক্ষাপটকেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই ধরনের দ্বৈত প্রক্রিয়া একত্রে "Urban-glomerization" প্রক্রিয়া- রূপে নতুন একটি আধুনিক পৌর ক্ষেত্রের গঠন, বৃদ্ধি এবং প্রসারণ ঘটিয়ে সেখানকার উন্নয়নকে স্পষ্টতই তুলে ধরেছে।

প্রসঙ্গত, একটি নগর কীভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে সম্প্রসারিত করে পৌর সমাগমের সহায়ক হয়ে ওঠে, যেটিকে 15.24 নং ধারণাচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হল।

পরিশেষে বলা যায়, পৌর সমাগম এমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা প্রায় প্রতিটি দেশের নগরাঞ্চলগুলিতে দ্রুত জনসান্ধ্যা বৃদ্ধি এবং বিপুল পরিসেবাগত সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে চিরকাল বজায় রাখবে। 2050 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার 75% বা তারও বেশি আধুনিক নগরগুলিতে বসবাস করবে। ভৌগোলিকরা মনে করেন এই সময়কালের মধ্যে মাত্র ৫০টি বৃহত্তম মেগালোপলিস-এ বিশ্বের মোট জনসংখ্যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভবের প্রায় কেন্দ্রীভূত থাকবে. 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01